কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ
২৯. রোগব্যধি ও চিকিৎসা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৫২৩
আন্তর্জাতিক নং: ৩৫২৩
নবী (ﷺ) এর ঝাড়ফুঁকের বিবরণ
৩৫২৩। বিশর ইবন হিলাল (রাহঃ)...... আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, (একদা) জিবরাঈল (আ) নবী (ﷺ) এর নিকট এসে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! আপনি কি ব্যথা অনুভব করছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ! জিবরাঈল (আ) বললেনঃ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنٍ أَوْ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
“আল্লাহর নামে সবকিছু থেকে আপনাকে আমি ঝাড়ফুঁক করছি, প্রতিটি নফসের এবং প্রতিটি চোখের এবং প্রতিটি হিংসুকের অনিষ্টতা থেকে। আল্লাহ আপনাকে শিফা দান করবেন। আল্লাহর নামে আপনাকে আমি ঝাড়ফুঁক করছি"।
“আল্লাহর নামে সবকিছু থেকে আপনাকে আমি ঝাড়ফুঁক করছি, প্রতিটি নফসের এবং প্রতিটি চোখের এবং প্রতিটি হিংসুকের অনিষ্টতা থেকে। আল্লাহ আপনাকে শিফা দান করবেন। আল্লাহর নামে আপনাকে আমি ঝাড়ফুঁক করছি"।
بَاب مَا عَوَّذَ بِهِ النَّبِيُّ ﷺ وَمَا عُوِّذَ بِهِ
حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ هِلاَلٍ الصَّوَّافُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ صُهَيْبٍ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّ جِبْرَائِيلَ، أَتَى النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ اشْتَكَيْتَ قَالَ " نَعَمْ " . قَالَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنٍ أَوْ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলেন। তিনি মানুষ ছিলেন। তাই মানুষের স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক বিষয়সমূহ তাঁর মধ্যেও পাওয়া যেত। তাঁর ক্ষুধা লাগত। ঘুম পেত। রোগ-ব্যাধি হত। হাসি-কান্না, ভাবাবেগ ইত্যাদি সবই তাঁর দেখা দিত। বরং রোগ-ব্যাধি তাঁর একটু বেশিই হত। যেমন একবার তাঁর জ্বর হল। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি. তাঁকে দেখতে আসলেন। বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার তো প্রচণ্ড জ্বর দেখা দিয়েছে। তিনি বললেন-
أَجَلْ، إِنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلَانِ مِنْكُمْ
‘হাঁ, আমার জ্বর হয় তোমাদের মধ্যকার দুই ব্যক্তির জ্বরের সমান’।
(সহীহ বুখারী : ৫৬৪৮; সহীহ মুসলিম: ২৫৭১; মুসনাদে আহমাদ: ৩৬১৭; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা : ১০৮০০; সুনানে দারিমী: ২৮১৩; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা : ৭৪৬১)
প্রিয় বান্দাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার এটাই নিয়ম। যে তাঁর যত বেশি প্রিয়, তিনি তাকে ততো বেশি অসুখ-বিসুখ দিয়ে থাকেন আর এভাবে তার মর্যাদা উঁচু থেকে উঁচুতে নিয়ে যান। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা'আলার সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয় ছিলেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়মটি তাঁর বেলায় বেশিই প্রযোজ্য হত। তবে অধিকতর প্রিয় হওয়ায় তাঁর ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত ও দয়ার দৃষ্টিও হত অনেক বেশি। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে আল্লাহ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামকে তাঁর চিকিৎসার জন্যে পাঠিয়ে দেন।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন? তিনি বললেন, হাঁ। বোঝা গেল রোগীকে তার অসুস্থতা জিজ্ঞেস করলে তা বলতে কোনও দোষ নেই। বলাটা দোষ হয় তখনই, যখন আপত্তিমূলকভাবে বলা হয়। যেমন আমার কেন এমন রোগ, আমি এমন কী পাপ করেছি, অন্য কারও তো হল না ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যদি পরামর্শ গ্রহণের জন্য বা চিকিৎসার জন্য কিংবা দু'আ পাওয়ার জন্য বলা হয়, তবে কোনও অসুবিধা নেই।
অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিকিৎসা শুরু করলেন। তিনি বললেন-
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ، أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম চিকিৎসা শুরু করেছেন আল্লাহর নামে। বলেছেন- بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ (আল্লাহর নামে আপনাকে রুকয়া করছি)। আল্লাহর নামে শুরু করার দ্বারা এক তো আল্লাহ তা'আলার নামের বরকত লাভ হয়। দ্বিতীয়ত তাঁর সাহায্য পাওয়ারও আশা থাকে। তাঁর ইচ্ছা ও সাহায্য ছাড়া কোনও ঝাঁড়ফুক ও চিকিৎসা ফলপ্রসূ হতে পারে না। কাজেই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম যেন তাঁর এ চিকিৎসাপদ্ধতির দ্বারা আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন যে, তোমরা ঝাঁড়ফুক বা অন্য যে- কোনও উপায়ে রোগীর চিকিৎসা করবে, তখন অবশ্যই আল্লাহ তা'আলার নাম নিয়ে তা শুরু করো। প্রত্যেক চিকিৎসকের এদিকে লক্ষ রাখা উচিত। এমনকি প্রেসক্রিপশন লেখার সময়ও তা শুরু করা উচিত বিসমিল্লাহ বলে। হযরত জিবরীল তারপর বলেন-
مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ (ওইসকল জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়)। এ কথাটি ব্যাপক। সর্বপ্রকার কষ্টদায়ী বস্তু এর মধ্যে এসে গেছে। তা প্রকাশ্য হোক বা গুপ্ত। শারীরিক কষ্ট হোক বা মানসিক। এমনিভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শারীরিক রোগে কষ্ট পাচ্ছিলেন তাও এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং যা-কিছু দ্বারা তাঁর কষ্ট পাওয়ার আশঙ্কা ছিল তাও। তারপর এ দু'আর মধ্যে বিশেষ দু'টি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। যথা-
من شر كل نفس (প্রত্যেক প্রাণীর অনিষ্ট থেকে)। তা ক্ষতিকর মানুষ হোক বা দুই জিন্ন। কিংবা হোক কোনও জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গ, যেমন সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি। রুকয়া দ্বারা এ সকল ক্ষেত্রেই উপকার পাওয়া যায়। রুকয়া দ্বারা যে বিষাক্ত প্রাণীর বিষ নামে, এটা একটা পরীক্ষিত বিষয়। একে অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই। এমনিভাবে এর দ্বারা জিনে পাওয়া রোগীরও নিরাময় হয়। জিনের আছরে মানুষের অসুস্থ হওয়াটা একটি সত্য ও প্রমাণিত বিষয়। আধুনিক চিকিৎসায় এমন রোগীর ভালো হওয়াটা অসম্ভব নয়, যেমন অবাস্তব নয় রুকয়ার মাধ্যমে তার নিরাময়লাভ।
أَوْ عَيْنِ حَاسِيدٍ (অথবা প্রত্যেক ঈর্ষান্বিত ব্যক্তির দৃষ্টি থেকে)। ঈর্ষান্বিত ব্যক্তির দৃষ্টি অনেক সময় বড় বড় ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। একে বদনজর বলে। এরূপ ব্যক্তির নজর মানুষ, জীবজন্তু, ফল-ফসল, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সবকিছুতেই লাগে। তার চোখে যাই সুন্দর, ভালো, সফল ও পর্যাপ্ত মনে হয়, তাতেই তার ঈর্ষাবোধ হয় আর ঈর্ষার দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়। তার সে তাকানো এমনই বিষাক্ত হয়ে থাকে যে, সঙ্গে সঙ্গেই তার কুফল তাতে দেখা দেয়। হয়তো শিশুর ভেদবমি দেখা দেয়, যুবক-যুবতীর সুন্দর চেহারায় ফোসকা পড়ে যায়, ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যায়, গাছের ফল ঝরে যায় ইত্যাদি। এ সকল ক্ষেত্রেই রুকয়া করার দ্বারা সুফল পাওয়া যায়।
اللهُ يَشْفِيكَ (আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন)। অর্থাৎ আমি তো রুকয়া করলাম। কিন্তু এর দ্বারাই যে আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন এমন নয়। সুস্থতাদানের মালিক আল্লাহ তা'আলা । তাই তাঁর কাছে দু'আ করছি তিনি যেন আপনাকে সুস্থতাদান করেন।
بسم الله أرقيك (আল্লাহর নামে আপনাকে রুকয়া করছি)। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এ বাক্যটি শুরুতেও বলেছিলেন এবং শেষেও এর পুনরাবৃত্তি করেছেন। এর দ্বারা যেন দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে যে, রুকয়া অবশ্যই আল্লাহ তা'আলার সত্তাবাচক নাম বা তাঁর গুণবাচক নাম কিংবা তাঁর কোনও যিকিরের দ্বারা হতে হবে। এর বরকতে আল্লাহ তা'আলা চাহেন তো রোগী নিরাময় লাভ করবে এবং জিন্নের আছর ও কুদৃষ্টির ক্ষতি কেটে যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পরামর্শ, চিকিৎসা বা দু'আলাভের উদ্দেশ্যে নিজ রোগ-ব্যাধির কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করা জায়েয।
খ. রুকয়া দ্বারা চিকিৎসা করা বৈধ।
গ. রুকয়া অবশ্যই আল্লাহ তা'আলার নাম বা তাঁর যিকিরের দ্বারা হতে হবে।
ঘ. হাসাদ ও কুদৃষ্টির কুফল সত্য। রুকয়া দ্বারা সে কুফল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ঙ. চিকিৎসার কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা উচিত।
চ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ছিলেন। তাই মানুষের প্রাকৃতিক অনুষঙ্গসমূহ তাঁর মধ্যেও পাওয়া যেত, যেমন অসুস্থ হওয়া এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় লাভ হওয়া।
ছ. রুকয়া ও চিকিৎসার বিভিন্ন ব্যবস্থা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বর্ণিত আছে। তিনি তা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে কিংবা ওহীর অন্য কোনও পদ্ধতিতে লাভ করেছিলেন। কাজেই তার সত্যতায় কোনও সন্দেহ নেই।
জ. চিকিৎসার যে-কোনও ব্যবস্থা একটা বাহ্যিক উপায় মাত্র। তার নিজস্ব কোনও ক্ষমতা নেই। তাকে ফলপ্রসূ করেন আল্লাহ তা'আলাই। তাই সর্বাবস্থায় ভরসা রাখতে হবে আল্লাহ তা'আলার উপরই।
أَجَلْ، إِنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلَانِ مِنْكُمْ
‘হাঁ, আমার জ্বর হয় তোমাদের মধ্যকার দুই ব্যক্তির জ্বরের সমান’।
(সহীহ বুখারী : ৫৬৪৮; সহীহ মুসলিম: ২৫৭১; মুসনাদে আহমাদ: ৩৬১৭; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা : ১০৮০০; সুনানে দারিমী: ২৮১৩; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা : ৭৪৬১)
প্রিয় বান্দাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার এটাই নিয়ম। যে তাঁর যত বেশি প্রিয়, তিনি তাকে ততো বেশি অসুখ-বিসুখ দিয়ে থাকেন আর এভাবে তার মর্যাদা উঁচু থেকে উঁচুতে নিয়ে যান। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা'আলার সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয় ছিলেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়মটি তাঁর বেলায় বেশিই প্রযোজ্য হত। তবে অধিকতর প্রিয় হওয়ায় তাঁর ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত ও দয়ার দৃষ্টিও হত অনেক বেশি। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে আল্লাহ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামকে তাঁর চিকিৎসার জন্যে পাঠিয়ে দেন।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন? তিনি বললেন, হাঁ। বোঝা গেল রোগীকে তার অসুস্থতা জিজ্ঞেস করলে তা বলতে কোনও দোষ নেই। বলাটা দোষ হয় তখনই, যখন আপত্তিমূলকভাবে বলা হয়। যেমন আমার কেন এমন রোগ, আমি এমন কী পাপ করেছি, অন্য কারও তো হল না ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যদি পরামর্শ গ্রহণের জন্য বা চিকিৎসার জন্য কিংবা দু'আ পাওয়ার জন্য বলা হয়, তবে কোনও অসুবিধা নেই।
অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিকিৎসা শুরু করলেন। তিনি বললেন-
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ، أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম চিকিৎসা শুরু করেছেন আল্লাহর নামে। বলেছেন- بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ (আল্লাহর নামে আপনাকে রুকয়া করছি)। আল্লাহর নামে শুরু করার দ্বারা এক তো আল্লাহ তা'আলার নামের বরকত লাভ হয়। দ্বিতীয়ত তাঁর সাহায্য পাওয়ারও আশা থাকে। তাঁর ইচ্ছা ও সাহায্য ছাড়া কোনও ঝাঁড়ফুক ও চিকিৎসা ফলপ্রসূ হতে পারে না। কাজেই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম যেন তাঁর এ চিকিৎসাপদ্ধতির দ্বারা আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন যে, তোমরা ঝাঁড়ফুক বা অন্য যে- কোনও উপায়ে রোগীর চিকিৎসা করবে, তখন অবশ্যই আল্লাহ তা'আলার নাম নিয়ে তা শুরু করো। প্রত্যেক চিকিৎসকের এদিকে লক্ষ রাখা উচিত। এমনকি প্রেসক্রিপশন লেখার সময়ও তা শুরু করা উচিত বিসমিল্লাহ বলে। হযরত জিবরীল তারপর বলেন-
مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ (ওইসকল জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়)। এ কথাটি ব্যাপক। সর্বপ্রকার কষ্টদায়ী বস্তু এর মধ্যে এসে গেছে। তা প্রকাশ্য হোক বা গুপ্ত। শারীরিক কষ্ট হোক বা মানসিক। এমনিভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শারীরিক রোগে কষ্ট পাচ্ছিলেন তাও এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং যা-কিছু দ্বারা তাঁর কষ্ট পাওয়ার আশঙ্কা ছিল তাও। তারপর এ দু'আর মধ্যে বিশেষ দু'টি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। যথা-
من شر كل نفس (প্রত্যেক প্রাণীর অনিষ্ট থেকে)। তা ক্ষতিকর মানুষ হোক বা দুই জিন্ন। কিংবা হোক কোনও জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গ, যেমন সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি। রুকয়া দ্বারা এ সকল ক্ষেত্রেই উপকার পাওয়া যায়। রুকয়া দ্বারা যে বিষাক্ত প্রাণীর বিষ নামে, এটা একটা পরীক্ষিত বিষয়। একে অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই। এমনিভাবে এর দ্বারা জিনে পাওয়া রোগীরও নিরাময় হয়। জিনের আছরে মানুষের অসুস্থ হওয়াটা একটি সত্য ও প্রমাণিত বিষয়। আধুনিক চিকিৎসায় এমন রোগীর ভালো হওয়াটা অসম্ভব নয়, যেমন অবাস্তব নয় রুকয়ার মাধ্যমে তার নিরাময়লাভ।
أَوْ عَيْنِ حَاسِيدٍ (অথবা প্রত্যেক ঈর্ষান্বিত ব্যক্তির দৃষ্টি থেকে)। ঈর্ষান্বিত ব্যক্তির দৃষ্টি অনেক সময় বড় বড় ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। একে বদনজর বলে। এরূপ ব্যক্তির নজর মানুষ, জীবজন্তু, ফল-ফসল, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সবকিছুতেই লাগে। তার চোখে যাই সুন্দর, ভালো, সফল ও পর্যাপ্ত মনে হয়, তাতেই তার ঈর্ষাবোধ হয় আর ঈর্ষার দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়। তার সে তাকানো এমনই বিষাক্ত হয়ে থাকে যে, সঙ্গে সঙ্গেই তার কুফল তাতে দেখা দেয়। হয়তো শিশুর ভেদবমি দেখা দেয়, যুবক-যুবতীর সুন্দর চেহারায় ফোসকা পড়ে যায়, ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যায়, গাছের ফল ঝরে যায় ইত্যাদি। এ সকল ক্ষেত্রেই রুকয়া করার দ্বারা সুফল পাওয়া যায়।
اللهُ يَشْفِيكَ (আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন)। অর্থাৎ আমি তো রুকয়া করলাম। কিন্তু এর দ্বারাই যে আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন এমন নয়। সুস্থতাদানের মালিক আল্লাহ তা'আলা । তাই তাঁর কাছে দু'আ করছি তিনি যেন আপনাকে সুস্থতাদান করেন।
بسم الله أرقيك (আল্লাহর নামে আপনাকে রুকয়া করছি)। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এ বাক্যটি শুরুতেও বলেছিলেন এবং শেষেও এর পুনরাবৃত্তি করেছেন। এর দ্বারা যেন দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে যে, রুকয়া অবশ্যই আল্লাহ তা'আলার সত্তাবাচক নাম বা তাঁর গুণবাচক নাম কিংবা তাঁর কোনও যিকিরের দ্বারা হতে হবে। এর বরকতে আল্লাহ তা'আলা চাহেন তো রোগী নিরাময় লাভ করবে এবং জিন্নের আছর ও কুদৃষ্টির ক্ষতি কেটে যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পরামর্শ, চিকিৎসা বা দু'আলাভের উদ্দেশ্যে নিজ রোগ-ব্যাধির কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করা জায়েয।
খ. রুকয়া দ্বারা চিকিৎসা করা বৈধ।
গ. রুকয়া অবশ্যই আল্লাহ তা'আলার নাম বা তাঁর যিকিরের দ্বারা হতে হবে।
ঘ. হাসাদ ও কুদৃষ্টির কুফল সত্য। রুকয়া দ্বারা সে কুফল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ঙ. চিকিৎসার কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা উচিত।
চ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ছিলেন। তাই মানুষের প্রাকৃতিক অনুষঙ্গসমূহ তাঁর মধ্যেও পাওয়া যেত, যেমন অসুস্থ হওয়া এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় লাভ হওয়া।
ছ. রুকয়া ও চিকিৎসার বিভিন্ন ব্যবস্থা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বর্ণিত আছে। তিনি তা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে কিংবা ওহীর অন্য কোনও পদ্ধতিতে লাভ করেছিলেন। কাজেই তার সত্যতায় কোনও সন্দেহ নেই।
জ. চিকিৎসার যে-কোনও ব্যবস্থা একটা বাহ্যিক উপায় মাত্র। তার নিজস্ব কোনও ক্ষমতা নেই। তাকে ফলপ্রসূ করেন আল্লাহ তা'আলাই। তাই সর্বাবস্থায় ভরসা রাখতে হবে আল্লাহ তা'আলার উপরই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: