আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ২৮৩৯
আন্তর্জাতিক নং: ৩০৫৪
১৯১৮. প্রতিনিধিদলের আগমন উপলক্ষে সুসজ্জিত হওয়া
২৮৩৯। ইয়াহয়া ইবনে বুকাইর (রাহঃ) .... (আব্দুল্লাহ) ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাযিঃ) একজোড়া রেশমী কাপড় বাজরে বিক্রি হতে দেখতে পেলেন। তিনি তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর নিকট নিয়ে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ রেশমী কাপড় জোড়া আপনি খরিদ করুন এবং ঈদ ও প্রতিনিধিদল আগমন উপলক্ষে এর দ্বারা আপনি সুসজ্জিত হবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘এ লেবাস তো তার (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই। অথবা (বলেন, রাবীর সন্দেহ) এরূপ লেবাস সে-ই পরিধান করে (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই।’ এমতাবস্থায় উমর (রাযিঃ) কিছু দিন অবস্থান করেন, যে পরিমাণ সময় আল্লাহ তাআলার ইচ্ছে ছিল।
এরপর নবী (ﷺ) একটি রেশমী জুব্বা উমর (রাযিঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দেন। তিনি তা নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর নিকট এসে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বলেছিলেন যে, এ তো তারই লেবাস (আখিরাতে) যার কোন অংশ নাই, কিংবা (রাবীর সন্দেহ) এ লেবাস তো সে-ই পরিধান করে, যার (আখিরাতে) কোন অংশ নাই। এরপরও আপনি তা আমার জন্য প্রেরণ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, (এজন্য প্রেরণ করেছি যে,) তুমি তা বিক্রয় করে ফেলবে অথবা (রাবীর সন্দেহ) বলেছেন, (এ জন্য প্রেরণ করেছি যে), তুমি তা তোমার কোন কাজে লাগাবে।
باب التَّجَمُّلِ لِلْوُفُودِ
3054 - حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: وَجَدَ عُمَرُ حُلَّةَ إِسْتَبْرَقٍ تُبَاعُ فِي السُّوقِ، فَأَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْتَعْ هَذِهِ الحُلَّةَ، فَتَجَمَّلْ بِهَا لِلْعِيدِ وَلِلْوُفُودِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ، أَوْ إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ» فَلَبِثَ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِجُبَّةِ دِيبَاجٍ فَأَقْبَلَ بِهَا عُمَرُ حَتَّى أَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قُلْتَ إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ أَوْ إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ، ثُمَّ أَرْسَلْتَ إِلَيَّ بِهَذِهِ، فَقَالَ: «تَبِيعُهَا أَوْ تُصِيبُ بِهَا بَعْضَ حَاجَتِكَ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)

কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।

প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।

হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।

খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)