কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

২৩. হজ্ব - উমরার অধ্যায়

হাদীস নং: ৩০৯০
আন্তর্জাতিক নং: ৩০৯০
মুহরিম ব্যক্তির জন্য যে ধরনের শিকার নিষিদ্ধ
৩০৯০। আবু বাকর ইবন আবু শাইবা, হিশাম ইবন আম্মার (রাহঃ)...... ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা'ব ইব্‌ন জাসসামা (রাযিঃ) আমাদের অবহিত করে বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তখন আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান এলাকায় ছিলাম। আমি তাঁকে বন্য গাধার গোশত পেশ করলাম। তিনি তা আমাকে ফেরত দিলেন। তিনি আমার চেহারায় অনুতাপের লক্ষণ দেখে বললেনঃ আমরা অন্য কোন কারণে তা ফেরত দেইনি বরং আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি ।
بَاب مَا يُنْهَى عَنْهُ الْمُحْرِمُ مِنْ الصَّيْدِ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَهِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رُمْحٍ، أَنْبَأَنَا اللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ، جَمِيعًا عَنِ ابْنِ شِهَابٍ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ أَنْبَأَنَا صَعْبُ بْنُ جَثَّامَةَ، قَالَ مَرَّ بِي رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ وَأَنَا بِالأَبْوَاءِ أَوْ بِوَدَّانَ فَأَهْدَيْتُ لَهُ حِمَارَ وَحْشٍ فَرَدَّهُ عَلَىَّ فَلَمَّا رَأَى فِي وَجْهِيَ الْكَرَاهِيَةَ ‏.‏ قَالَ ‏ "‏ إِنَّهُ لَيْسَ بِنَا رَدٌّ عَلَيْكَ وَلَكِنَّا حُرُمٌ ‏"‏ ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সফরে ছিলেন। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ সময় হযরত সা'ব ইবন জাছ্ছামা রাযি. একটি বন্য গাধা, সম্ভবত জেব্রা, তাঁকে হাদিয়া দিলেন। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায় সেটি জবাই করা ছিল এবং তিনি তার গোশত হাদিয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় থাকার কারণে তা গ্রহণ করলেন না। এতে হযরত সা'ব রাযি. দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তবে কি কোনও কারণে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি নারাজ? না হয় তার হাদিয়া ফেরত দিলেন কেন? খুবসম্ভব তখনও পর্যন্ত তার এ মাসআলা জানা ছিল না যে, মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা কিংবা শিকারের কাজে সহযোগিতা করা জায়েয নয়। এমনিভাবে এভাবে পশু শিকার করে তার গোশত খাওয়াও তার জন্য হালাল নয়।

যাহোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন হাদিয়া ফেরত দেওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তার চেহারা মলিন হয়ে গেছে। বলাবাহুল্য সাহাবায়ে কেরাম যেমন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন, তেমনি তিনিও তাদেরকে গভীরভাবে স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। প্রিয় সাহাবীর মনোবেদনা দীর্ঘ হতে দিলেন না। তিনি তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, দেখো, আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি। কেবল এ কারণেই তোমার এ হাদিয়া ফেরত দিয়েছি, অন্য কোনও কারণে নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মুহরিম ব্যক্তির জন্য পশু শিকার করা ও শিকারকৃত পশুর গোশত খাওয়া হালাল নয়।

খ. বুনো গাধা খাওয়া জায়েয।

গ. হাদিয়া দেওয়া ও গ্রহণ করা সুন্নত, যদি না তাতে নিষিদ্ধতার কোনও কারণ থাকে।

ঘ. অকারণে হাদিয়া ফেরত দেওয়া উচিত নয়। তাতে হাদিয়াদাতা মনে কষ্ট পায়।

ঙ. কারও দিক থেকে কেউ মনে কষ্ট পেলে যত দ্রুত সম্ভব তার সে কষ্ট দূর করে দেওয়া উচিত।

চ. কারও আচরণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তার উচিত সে ভুল ভাঙ্গিয়ে দেওয়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন