আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ২৮২৫
আন্তর্জাতিক নং: ৩০৩৯
১৯০৫. যুদ্ধক্ষেত্রে ঝগড়া ও মতবিরোধ করা অপছন্দনীয়। কেউ যদি ইমামের আবাধ্যতা করে তার শাস্তি।
২৮২৫। আমর ইবনে খালিদ (রাহঃ) .... বারা ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উহুদ যুদ্ধের দিন আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রাযিঃ)- কে পঞ্চাশজন পদাতিক যোদ্ধার উপর আমীর নিযুক্ত করেন এবং বলেন, তোমরা যদি দেখ যে, আমাদের কে পক্ষীকুল ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে, তথাপি তোমরা আমার পক্ষ হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্ব-স্থান ত্যাগ করবে না। আর যদি তোমরা দেখ যে, আমরা শত্রু দলকে পরাস্ত করেছি এবং আমরা তাদেরকে পদদলিত করেছি, তখনও আমার পক্ষ হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্ব-স্থান ত্যাগ করবে না। অনন্তর মুসলমানগণ কাফিরদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে দিল। বারা (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি মুশরিকদের মহিলাদেরকে দেখতে পেলাম তারা নিজ পরিধেয় বস্ত্র উপরে উঠিয়ে পলায়ন করেছে। যাতে পায়ের অলঙ্কার ও পায়ের নলা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে।
তখন আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রাযিঃ)- এর সহযোগীগণ বলতে লাগলেন, ‘লোক সকল! এখন তোমরা গনীমতের মাল সংগ্রহ কর। তোমাদের সাথীরা বিজয় লাভ করেছে। আর অপেক্ষা কিসের?’ তখন আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রাযিঃ) বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তোমাদেরকে যা বলেছিলেন, তা তোমরা ভুলে গিয়েছ?’ তারা বললেন, আল্লাহর শপথ, আমরা লোকদের সাধে মিলিত হয়ে গনীমতের মাল সংগ্রহে অংশগ্রহণ করব।’ তারপর যখন তারা স্ব-স্থান ত্যাগ করে নিজেদের লোকজনের নিকট পৌঁছল, তখন (কাফিরগণ কর্তৃক) তাদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয় আর তারা পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে থাকেন। এটা সে সময় যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে পেছন থেকে ডাকছিলেন।
তখন নবী (ﷺ)- এর সঙ্গে বারজন লোক ব্যতীত অপর কেউই অবশিষ্ট ছিল না। কাফিরগণ এ সুযোগে মুসলমানদের সত্তর বক্তিকে শহীদ করে ফেলে। এর পূর্বে বদর যুদ্ধে নবী (ﷺ)- ও তাঁর সাথীগণ মুশরিকদের সত্তরজনকে বন্দী ও সত্তরজনকে নিহত করেন। এ সময় আবু সুফিয়ান তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি মুহাম্মাদ জীবিত আছে?’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উত্তর দিতে নিষেধ করেন। পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি আবু কুহাফার পুত্র (আবু বকর রাযিঃ) জীবিত আছে?’ পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি খাত্তাবের পুত্র (উমর রাযিঃ) জীবিত আছে?’ তারপর সে নিজ লোকদের নিকট গিয়ে বলল, ‘এরা সবাই নিহত হয়েছে।’ এ সময় উমর (রাযিঃ) ধৈর্যধারণ করতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ‘ওহে আল্লাহর শত্রু! আল্লাহর শপথ, তুমি মিথ্যা বলেছো। যাদের তুমি নাম উচ্চারণ করেছো তারা সবাই জীবিত আছেন। তোমাদের জন্য চরম পরিণতি অবশিষ্ট রয়েছে।’
আবু সুফিয়ান বলল, ‘আজ বদরের দিনের প্রতিশোধ। যুদ্ধ তো বালতির ন্যায়। তোমরা তোমাদের লোকদের মধ্যে নাক-কান কর্তিত দেখবে, আমি এর আদেশ করিনি কিন্তু তা আমি অপছন্দও করিনি।’ এরপর বলতে লাগল, ‘হে হুবাল (মূর্তি)! তুমি উন্নত শির হও। হে হুবাল (মূর্তি)! তুমি উন্নত শির হও।’ তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবাগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা এর উত্তর দিবে না?’ তারা বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি বলব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল, আল্লাহ তাআলাই সর্বোচ্চ মর্যাদাবান, তিনিই মাহিমান্বিত।’ আবু সুফিয়ান বলল, আমাদের জন্য উযযা (দেবতা) রয়েছে, তোমাদের উযযা নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘তোমরা কি তার উত্তর দিবে না?’ বারা (রাযিঃ) বলেন, ‘সাহাবাগণ বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি বলব?’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘তোমরা বল, আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী বন্ধু, তোমাদের কোন সাহায্যকারী বন্ধু নেই।
باب مَا يُكْرَهُ مِنَ التَّنَازُعِ وَالاِخْتِلاَفِ فِي الْحَرْبِ وَعُقُوبَةِ مَنْ عَصَى إِمَامَهُ
3039 - حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ، قَالَ: سَمِعْتُ البَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يُحَدِّثُ قَالَ: جَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الرَّجَّالَةِ يَوْمَ أُحُدٍ، وَكَانُوا خَمْسِينَ رَجُلًا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ جُبَيْرٍ، فَقَالَ: «إِنْ رَأَيْتُمُونَا تَخْطَفُنَا الطَّيْرُ فَلاَ تَبْرَحُوا مَكَانَكُمْ، هَذَا حَتَّى أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ، وَإِنْ رَأَيْتُمُونَا هَزَمْنَا القَوْمَ وَأَوْطَأْنَاهُمْ، فَلاَ تَبْرَحُوا حَتَّى أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ» ، فَهَزَمُوهُمْ، قَالَ: فَأَنَا وَاللَّهِ رَأَيْتُ النِّسَاءَ يَشْتَدِدْنَ، قَدْ بَدَتْ خَلاَخِلُهُنَّ وَأَسْوُقُهُنَّ، رَافِعَاتٍ ثِيَابَهُنَّ، فَقَالَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جُبَيْرٍ: الغَنِيمَةَ أَيْ قَوْمِ الغَنِيمَةَ، ظَهَرَ أَصْحَابُكُمْ [ص:66] فَمَا تَنْتَظِرُونَ؟ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جُبَيْرٍ: أَنَسِيتُمْ مَا قَالَ لَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالُوا: وَاللَّهِ لَنَأْتِيَنَّ النَّاسَ، فَلَنُصِيبَنَّ مِنَ الغَنِيمَةِ، فَلَمَّا أَتَوْهُمْ صُرِفَتْ وُجُوهُهُمْ، فَأَقْبَلُوا مُنْهَزِمِينَ، فَذَاكَ إِذْ يَدْعُوهُمُ الرَّسُولُ فِي أُخْرَاهُمْ، فَلَمْ يَبْقَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَيْرُ اثْنَيْ عَشَرَ رَجُلًا، فَأَصَابُوا مِنَّا سَبْعِينَ، وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ أَصَابُوا مِنَ المُشْرِكِينَ يَوْمَ بَدْرٍ أَرْبَعِينَ وَمِائَةً، سَبْعِينَ أَسِيرًا وَسَبْعِينَ قَتِيلًا، فَقَالَ أَبُو سُفْيَانَ: أَفِي القَوْمِ مُحَمَّدٌ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، فَنَهَاهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجِيبُوهُ، ثُمَّ قَالَ: أَفِي القَوْمِ ابْنُ أَبِي قُحَافَةَ؟ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: أَفِي القَوْمِ ابْنُ الخَطَّابِ؟ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ فَقَالَ: أَمَّا هَؤُلاَءِ، فَقَدْ قُتِلُوا، فَمَا مَلَكَ عُمَرُ نَفْسَهُ، فَقَالَ: كَذَبْتَ وَاللَّهِ يَا عَدُوَّ اللَّهِ، إِنَّ الَّذِينَ عَدَدْتَ لَأَحْيَاءٌ كُلُّهُمْ، وَقَدْ بَقِيَ لَكَ مَا يَسُوءُكَ، قَالَ: يَوْمٌ بِيَوْمِ بَدْرٍ، وَالحَرْبُ سِجَالٌ، إِنَّكُمْ سَتَجِدُونَ فِي القَوْمِ مُثْلَةً، لَمْ آمُرْ بِهَا وَلَمْ تَسُؤْنِي، ثُمَّ أَخَذَ يَرْتَجِزُ: أُعْلُ هُبَلْ، أُعْلُ هُبَلْ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلاَ تُجِيبُوا لَهُ» ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا نَقُولُ؟ قَالَ: " قُولُوا: اللَّهُ أَعْلَى وَأَجَلُّ "، قَالَ: إِنَّ لَنَا العُزَّى وَلاَ عُزَّى لَكُمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلاَ تُجِيبُوا لَهُ؟» ، قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا نَقُولُ؟ قَالَ: «قُولُوا اللَّهُ مَوْلاَنَا، وَلاَ مَوْلَى لَكُمْ»
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ২৮২৫ | মুসলিম বাংলা