কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ
২২. জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং: ২৮৬৪
আন্তর্জাতিক নং: ২৮৬৪
আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে আনুগত্য নেই
২৮৬৪। মুহাম্মাদ ইবন রুম্হ ও মুহাম্মাদ ইবনুস-সাব্বাহ্....সুওয়াইদ ইবন সাঈদ (রাহঃ), ইবন উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ যে কোন কাজে মুসলিম ব্যক্তির উপর আগত্য অপরিহার্য তা তার মনঃপূত হোক বা না হোক। কিন্তু পাপ কাজের নির্দেশ দিলে (তা স্বতন্ত্র)। অতঃএব পাপ কাজের নির্দেশ দেয়া হলে কোনরূপ শ্রবণও নাই, আনুগত্যও নাই।
بَاب لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رُمْحٍ، أَنْبَأَنَا اللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ، وَسُوَيْدُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَجَاءٍ الْمَكِّيُّ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ الطَّاعَةُ فِيمَا أَحَبَّ أَوْ كَرِهَ إِلاَّ أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ فَمَنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে পাপকর্মের হুকুম ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে শাসক-প্রশাসকের আনুগত্য করার অপরিহার্যতা বর্ণনা করা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ 'প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির (শাসকের আদেশ) শ্রবণ ও আনুগত্য করা অবশ্যকর্তব্য'। শ্রবণ করা মানে শাসক যা বলে তা গ্রহণ করা। আনুগত করা মানে তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। এটা মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য। তার মানে এটা ইসলামের নির্দেশ। কাজেই যে ব্যক্তি নিজেকে ইসলামের অনুসারী বলে দাবি করে, তার কর্তব্য মুসলিম সরকারের বৈধ সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। এটা যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় প্রযোজ্য ছিল, তেমনি তাঁর পরেও কিয়ামত পর্যন্ত সব কালেই সমান প্রযোজ্য। আমীর তথা খলীফা, তার প্রতিনিধি ও বিচারকের আদেশ-নিষেধ পালন করা সব কালেই জরুরি। তা অমান্য করা কেবল সরকারি আইন অমান্য করাই নয়; বরং ইসলামের নির্দেশ অমান্য করারও শামিল।
فِيمَا أَحَبَّ وَكَره (সে যা পসন্দ করে তাতেও এবং যা অপসন্দ করে তাতেও)। অর্থাৎ শাসকের হুকুম মনঃপূত হোক বা নাই হোক, নিজ রুচি-প্রকৃতির অনুকূল হোক বা প্রতিকূল, সর্বাবস্থায় তা মেনে চলতে হবে।
إِلَّا أَنْ يُؤْمَر بِمَعْصِية (যতক্ষণ না পাপকর্মের আদেশ করা হয়)। অর্থাৎ যদি সরকার এমন কোনও কাজের হুকুম করে, যা শরী'আত অনুমোদন করে না, ফলে তাতে আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এবং তা পাপকর্মরূপে গণ্য হয়, তবে আলাদা কথা। অর্থাৎ তা মানা যাবে না। যেমন কোনও নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যা করার হুকুম। রাষ্ট্রপ্রধান যদি তার আঞ্চলিক কোনও প্রতিনিধিকে, বিচারককে বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিংবা সাধারণ কোনও নাগরিককে হুকুম করে যে, অমুককে হত্যা করো, অথচ সে হত্যার উপযুক্ত হওয়ার মতো কোনও অপরাধ করেনি, তবে রাষ্ট্রপ্রধানের এ হুকুম পালন করা কারও জন্যই জায়েয হবে না। এমনিভাবে সাজানো মামলা দেওয়া, নামায না পড়া, অন্যায়ভাবে মালক্রোক করা, মদপান করা, নাচ-গান করা এবং অনুরূপ যে-কোনও শরী'আতবিরোধী কাজের হুকুম করা হলে কারও জন্যই সে হুকুম পালন করা জায়েয নয়। হাদীছের পরবর্তী বাক্যে সুস্পষ্টভাবেই এটা বলে দেওয়া হয়েছে যে-
فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَة (যখন কোনও পাপকর্মের আদেশ করা হবে, তখন কোনও শ্রবণ ও আনুগত্য নেই)। অর্থাৎ যে কাজ করলে আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতা হয়, সরকার যদি তা করার হুকুম দেয়, তবে তা শোনা ও মানা যাবে না। অর্থাৎ এরূপ ক্ষেত্রে তোমরা শাসকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে না। কেননা যে কাজে আল্লাহর অবাধ্যতা হয়, তাতে শাসকের আনুগত্য করা জায়েয নয়। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ
‘সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতা হয় এমন কাজে কোনও মাখলুকের আনুগত্য নেই। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩৩৭১৭; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৩৭৮৮; মুসনাদে আহমাদ: ৩৮৮৯; মুসনাদুল বাযযার: ১৯৮৮; শারহুস সুন্নাহ: ২৪৫৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর :৩৮১)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শাসক-প্রশাসকের আদেশ মনঃপূত হোক বা নাই হোক, সর্বাবস্থায় পালন কর জরুরি।
খ. সরকারের বৈধ আদেশ পালন করা কেবল রাষ্ট্রীয় বিষয় নয়; শরী'আতেরও হুকুম।
গ. সরকারের শরী'আতবিরোধী আদেশ পালন করা জায়েয নয়।
عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ 'প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির (শাসকের আদেশ) শ্রবণ ও আনুগত্য করা অবশ্যকর্তব্য'। শ্রবণ করা মানে শাসক যা বলে তা গ্রহণ করা। আনুগত করা মানে তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। এটা মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য। তার মানে এটা ইসলামের নির্দেশ। কাজেই যে ব্যক্তি নিজেকে ইসলামের অনুসারী বলে দাবি করে, তার কর্তব্য মুসলিম সরকারের বৈধ সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। এটা যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় প্রযোজ্য ছিল, তেমনি তাঁর পরেও কিয়ামত পর্যন্ত সব কালেই সমান প্রযোজ্য। আমীর তথা খলীফা, তার প্রতিনিধি ও বিচারকের আদেশ-নিষেধ পালন করা সব কালেই জরুরি। তা অমান্য করা কেবল সরকারি আইন অমান্য করাই নয়; বরং ইসলামের নির্দেশ অমান্য করারও শামিল।
فِيمَا أَحَبَّ وَكَره (সে যা পসন্দ করে তাতেও এবং যা অপসন্দ করে তাতেও)। অর্থাৎ শাসকের হুকুম মনঃপূত হোক বা নাই হোক, নিজ রুচি-প্রকৃতির অনুকূল হোক বা প্রতিকূল, সর্বাবস্থায় তা মেনে চলতে হবে।
إِلَّا أَنْ يُؤْمَر بِمَعْصِية (যতক্ষণ না পাপকর্মের আদেশ করা হয়)। অর্থাৎ যদি সরকার এমন কোনও কাজের হুকুম করে, যা শরী'আত অনুমোদন করে না, ফলে তাতে আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এবং তা পাপকর্মরূপে গণ্য হয়, তবে আলাদা কথা। অর্থাৎ তা মানা যাবে না। যেমন কোনও নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যা করার হুকুম। রাষ্ট্রপ্রধান যদি তার আঞ্চলিক কোনও প্রতিনিধিকে, বিচারককে বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিংবা সাধারণ কোনও নাগরিককে হুকুম করে যে, অমুককে হত্যা করো, অথচ সে হত্যার উপযুক্ত হওয়ার মতো কোনও অপরাধ করেনি, তবে রাষ্ট্রপ্রধানের এ হুকুম পালন করা কারও জন্যই জায়েয হবে না। এমনিভাবে সাজানো মামলা দেওয়া, নামায না পড়া, অন্যায়ভাবে মালক্রোক করা, মদপান করা, নাচ-গান করা এবং অনুরূপ যে-কোনও শরী'আতবিরোধী কাজের হুকুম করা হলে কারও জন্যই সে হুকুম পালন করা জায়েয নয়। হাদীছের পরবর্তী বাক্যে সুস্পষ্টভাবেই এটা বলে দেওয়া হয়েছে যে-
فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَة (যখন কোনও পাপকর্মের আদেশ করা হবে, তখন কোনও শ্রবণ ও আনুগত্য নেই)। অর্থাৎ যে কাজ করলে আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতা হয়, সরকার যদি তা করার হুকুম দেয়, তবে তা শোনা ও মানা যাবে না। অর্থাৎ এরূপ ক্ষেত্রে তোমরা শাসকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে না। কেননা যে কাজে আল্লাহর অবাধ্যতা হয়, তাতে শাসকের আনুগত্য করা জায়েয নয়। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ
‘সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতা হয় এমন কাজে কোনও মাখলুকের আনুগত্য নেই। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩৩৭১৭; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৩৭৮৮; মুসনাদে আহমাদ: ৩৮৮৯; মুসনাদুল বাযযার: ১৯৮৮; শারহুস সুন্নাহ: ২৪৫৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর :৩৮১)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শাসক-প্রশাসকের আদেশ মনঃপূত হোক বা নাই হোক, সর্বাবস্থায় পালন কর জরুরি।
খ. সরকারের বৈধ আদেশ পালন করা কেবল রাষ্ট্রীয় বিষয় নয়; শরী'আতেরও হুকুম।
গ. সরকারের শরী'আতবিরোধী আদেশ পালন করা জায়েয নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
