আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৯৮২
১৮৬৪. যুদ্ধে পাথেয় বহন করা।
২৭৭৪। বিশর ইবনে মারহুম (রাহঃ) .... সালামা (ইবনে আকওয়া) (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে লোকদের পাথেয় কমে যায় এবং তারা অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তখন তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর নিকট হাজির হয়ে তাদের উট যবেহ করার অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে অনুমতি দিলেন। সে সময় উমর (রাযিঃ)- এর সাথে তাদের সাক্ষাত হল। তারা তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলো। তিনি বললেন, উট যবেহ করে তারপর তোমরা কিরূপে টিকে থাকবে? উমর (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ সকল লোক উট যবেহ করে খেয়ে ফেলার পর কিরূপে বাঁচবে? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, নিজ নিজ অবশিষ্ট পাথেয় নিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে ঘোষণা দাও। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খাবারের জন্য বরকতের দুআ করলেন। তারপর তাদেরকে নিজ নিজ পাত্র নিয়ে উপস্থিত হতে আদেশ করলেন। তারা তাদের পাত্র ভরে নিতে লাগলো অবশেষে সকলই নিয়ে নিল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আর আমি আল্লাহর রাসূল।’

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি মু'জিযা বর্ণিত হয়েছে। মু'জিযাটি প্রকাশ পেয়েছিল তাবুক যুদ্ধের সময়। এ যুদ্ধটি হয়েছিল হিজরী ৯ম সনে। তখন প্রচণ্ড অভাব-অনটন চলছিল। সাহাবায়ে কেরাম অনাহারে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উট জবাই করার অনুমতি চাইলেন, যাতে তার গোশত খেয়ে তারা ক্ষুধা নিবারণ করতে পারেন।

উট ছিল তাদের বাহন। সফরকালে বাহনের প্রয়োজন কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার এ সফর ছিলও অনেক দূরের। ক্ষুধা নিবারণের জন্য উট যবাহ করতে থাকলে কঠিন বাহন-সংকটে পড়ার আশঙ্কা ছিল। হযরত উমর রাযি. সে আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করলেন। তিনি পরামর্শ দিলেন, যার কাছে যে খাদ্য আছে তা সব একত্র করার হুকুম দেওয়া হোক। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করুন যাতে আল্লাহ তা'আলা সেই সামান্য খাদ্যে বরকত দান করেন। তাই হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আয় সে সামান্য খাদ্যে এত বরকত হল যে, বাহিনীর প্রত্যেকে আপন আপন পাত্র ভরে ফেলল এবং সকলেই তৃপ্তি সহকারে খেল, তারপরও কিছু খাদ্য অবশিষ্ট থেকে গেল।

প্রকাশ থাকে যে, তাবুকের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ত্রিশ হাজার। একটি চামড়ার দস্তরখানে সাহাবায়ে কেরাম তাদের কাছে বেঁচে থাকা যে সামান্য খাদ্য জমা করেছিলেন, কেউ একমুঠো ভুট্টা, কেউ রুটির সামান্য টুকরা, তার সর্বমোট পরিমাণ কতটুকুই বা ছিল? অথচ আল্লাহু আকবার, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আর বরকতে ত্রিশ হাজার সদস্যের সেই বিশাল বাহিনীর সকলের ক্ষুধা নিবারণ হয়ে যায়। তারপরও কিছু খাবার অবশিষ্ট থেকে যায়। এটাই মু'জিযা- অলৌকিক ব্যাপার।

মু'জিযা দ্বারা নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের সত্যতা শুরু থেকেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল। মাঝেমধ্যেই মু'জিযার প্রকাশ দ্বারা সে প্রমাণ তাজা করে তোলা হচ্ছিল। তাবুকের যুদ্ধকালীন এ মু'জিযা দ্বারা সকলের সামনে আরও একবার স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি সত্যনবী, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই তিনি বলে ওঠেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই এবং আমি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল।

অন্য বর্ণনায় আছে, তারপর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শাহাদাত ও সাক্ষ্যের ফযীলত বর্ণনা করেন যে, কেউ যদি আন্তরিক বিশ্বাসসহ এ সাক্ষ্যদান করে, তারপর এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয় আর শাহাদাতের এ কালেমা নিয়ে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে সাক্ষাত করে, তবে জান্নাতে যেতে তার কোনও বাধা থাকবে না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নবীগণের মু'জিযা সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা ফরয।

খ. নিজের তুলনায় নিম্নস্তরের কোনও ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত পরামর্শ দিলে তা গ্রহণ করা চাই, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর রাযি.-এর পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন।

গ. আন্তরিক বিশ্বাসে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠের সঙ্গে মৃত্যুবরণ দ্বারা জান্নাত লাভ নিশ্চিত হয়ে যায়। তাই এ কালেমাসহ যাতে মৃত্যু হয়, প্রত্যেকের সে আশা রাখা উচিত এবং জীবনভর এ কালেমা পাঠ করা ও এ কালেমার দাবি অনুযায়ী চলতে সচেষ্ট থাকা উচিত।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন