কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

১৩. রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩৩৫
আন্তর্জাতিক নং: ২৩৩৫
প্রতিবেশীর দেয়ালের উপর লাকড়ী রাখা
২৩৩৫। হিশাম ইবন 'আম্মার ও মুহাম্মাদ ইবন সাব্বাহ (রাহঃ)....আবু হুরায়রা (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন তার প্রতিবেশীর কাছে তার দেয়ালে নিজের লাকড়ী রাখার অনুমতি চাবে, তখন সে প্রতিবেশী যেন তাকে নিষেধ না করে। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) যখন লোকদের কাছে এ হাদীস বয়ান করছিলেন তখন তারা মাথা নাড়াচ্ছিল। তিনি তাদেরকে এরকম করতে দেখে বললেনঃ কি ব্যাপার, আমি দেখছি তোমরা এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ! আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই লাকড়ী তোমাদের কাঁধের উপর নিক্ষেপ করব।
بَاب الرَّجُلِ يَضَعُ خَشَبَةً عَلَى جِدَارِ جَارِهِ
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ، قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الأَعْرَجِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِذَا اسْتَأْذَنَ أَحَدَكُمْ جَارُهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً فِي جِدَارِهِ فَلاَ يَمْنَعْهُ ‏"‏ ‏.‏ فَلَمَّا حَدَّثَهُمْ أَبُو هُرَيْرَةَ طَأْطَئُوا رُءُوسَهُمْ فَلَمَّا رَآهُمْ قَالَ مَالِي أَرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ وَاللَّهِ لأَرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أَكْتَافِكُمْ ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে বলা হয়েছে, দুই প্রতিবেশীর বাড়ির মাঝখানে যদি একটি প্রাচীর থাকে এবং সেটির মালিক তাদের একজন হয় আর সেই প্রাচীরে অন্য প্রতিবেশী নিজ ঘরের আড়কাঠ লাগাতে চায়, তবে মালিকের তাতে বাধা দেওয়া উচিত নয়। প্রতিবেশী হিসেবে এতটুকু ছাড় তাকে দেওয়া উচিত। একজনের প্রাচীরে অন্যজন আড়কাঠ তো তখনই লাগাতে চায়, যখন নিজের প্রাচীর তৈরির মত সামর্থ্য না থাকে। এ অবস্থায় তাকে যদি নিজ প্রাচীরে আড়কাঠ লাগাতে বাধা দেওয়া হয়, তবে তার পক্ষে ঘর তৈরিই কঠিন হয়ে যাবে। এতটা নিকট প্রতিবেশীকে এরকম সংকটে ফেলা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।

অবশ্য মালিকের নিজ মালিকানাধীন বস্তুতে অন্যের হস্তক্ষেপে বাধা দেওয়ার তো অধিকার থাকেই। আর বাধা দেওয়া অবস্থায় সেটি ব্যবহার করাও উচিত নয়। কেননা অন্যের মালিকানাধীন বস্তু তার অসম্মতিতে ব্যবহার করা জায়েয নয়। কিন্তু এটা হচ্ছে আইনের কথা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে আইনের ঊর্ধ্বে উঠে আখলাক ও মহানুভবতার উপর চলতে উৎসাহিত করেছেন। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। মহানুভবতা প্রদর্শনই ভ্রাতৃত্বের দাবি। সে দাবি অনুযায়ী নিজ প্রাচীর নিকটতম প্রতিবেশীকে তার ঠেকা অবস্থায় ব্যবহার করতে দেওয়াই উচিত, বাধা দেওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। সে কথাই এ হাদীছে বলা হয়েছে।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. যখন এ হাদীছটি বর্ণনা করছিলেন, তখন তিনি মদীনা মুনাউওয়ারার ভারপ্রাপ্ত শাসক। শ্রোতাদের কাছে হয়তো হাদীছটি নতুন মনে হচ্ছিল। একজনের প্রাচীর আরেকজন ব্যবহার করবে আর তাতে বাধা দেওয়া যাবে না, এ বিষয়টা তাদের কাছে হয়তো অদ্ভুত লাগছিল। তাদের হাবভাব দেখে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বুঝতে পারছিলেন তারা বুঝি তাঁর বর্ণনা গ্রহণ করছে না। তাই এই ধমক দিলেন যে, কী ব্যাপার, আমি যে তোমাদেরকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি? তারপর বললেন- والله لأرمين بها بين أكتافكم (আল্লাহর কসম! আমি এটা তোমাদের দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করব)। দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করার কথাটি একটি বাগ্ধারা। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য- এটি আমি তোমাদের মধ্যে অবশ্যই প্রকাশ করব। কাউকে সজাগ ও সচেতন করার জন্য তার দুই কাঁধের মাঝখানে আঘাত করা হয়। সুতরাং হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. এ কথা বলে তাদেরকে সজাগ করতে চেয়েছেন যে, আমি তো তোমাদেরকে হাদীছ শোনাচ্ছি। এটা আমার নিজের কথা নয়। কাজেই তোমাদের উচিত খুশিমনে গ্রহণ করে নেওয়া।

ইমাম খাত্তাবী রহ. বাক্যটির অর্থ করেছেন- তোমরা যদি এ নির্দেশ খুশিমনে গ্রহণ না কর ও সন্তুষ্টচিত্তে এর উপর আমল না কর, তবে আমি তোমাদেরকে এটা মানতে বাধ্য করব এবং আড়কাঠ দেয়ালের পরিবর্তে তোমাদের কাঁধের উপর লাগিয়ে দেব। এটা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে একটি ধমক।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা প্রতিবেশীর প্রতি মহত্ত্ব প্রদর্শনের শিক্ষা পাওয়া যায়।

খ. প্রতিবেশীর সংকট ও অভাব-অনটন অবস্থায় সচ্ছল প্রতিবেশীর উচিত তার প্রতি সহযোগিতার মনোভাব রাখা।

গ. প্রত্যেক মুমিনের উচিত হাদীছের শিক্ষা খুশিমনে গ্রহণ করা।

ঘ. দীনের কোনও শিক্ষাগ্রহণে কেউ দ্বিধাভাব প্রকাশ করলে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি প্রয়োজনে তাকে ধমক দিতে পারে এবং তাকে তা মানতে বাধ্য করতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন