আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৯৬৫
১৮৫৩. নবী (ﷺ) যদি দিনের শুরুতে যুদ্ধ আরম্ভ না করতেন, তবে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ আরম্ভ বিলম্ব করতেন।
২৭৫৮। আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) .... উমর ইবনে উবাইদুল্লাহর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবু নযর (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাযিঃ) তার মনিবের নিকট পত্র লিখেন যা আমি পাঠ করলাম, তাতে ছিল যে, শত্রুদের সাথে কোন এক মুখোমুখি যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন।
এরপর তিনি তাঁর সাহাবীদের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেনঃ হে লোক সকল! শত্রুর সাথে মোকাবেলায় অবতীর্ণ হওয়ার কামনা করবে না এবং আল্লাহ্ তাআলার নিকট নিরাপত্তার দু‘আ করবে। তারপর যখন তোমরা শত্রুর সম্মুখীন হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারীর ছায়াতলে অবস্থিত। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! কুরআন অবতীর্ণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সৈন্যদলকে পরাজয় দানকারী, আপনি কাফির সম্প্রদায়কে পরাজিত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে বলা হয়েছে, কোনও এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ শুরুর জন্য সূর্য হেলে পড়ার অপেক্ষা করছিলেন। এটা কোন যুদ্ধের কথা তা জানা যায় না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল দিনের প্রথমভাগে সূর্যোদয়ের পরপর যুদ্ধ শুরু করা। দুপুরবেলা বিরতি দিতেন। তারপর আবার সূর্য হেলে যাওয়ার পর যুদ্ধ শুরু করতেন। কোনও কারণে যদি দিনের প্রথমভাগে যুদ্ধ শুরু করা না হত, তবে অপেক্ষা করতে থাকতেন, যতক্ষণ না সূর্য হেলে পড়ে। তিনি সূর্য হেলার পর যুদ্ধ কেন শুরু করতেন, উলামায়ে কিরাম তার বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কেউ বলেন, তখন যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর নামাযের ওয়াক্তসমূহে দু’আ কবুলের সম্ভাবনা বেশি। সে কারণে তিনি এ সময় দু'আ করে যুদ্ধ শুরু করতেন। কারও মতে দুপুরে প্রচণ্ড গরম থাকে। তখন যুদ্ধাস্ত্র বহন ও যুদ্ধ করা বেশি কঠিন হয়। সূর্য হেলার পর গরম কমে আসে। ফলে কষ্ট কম হয়। সঙ্গীদের যাতে কষ্ট কম হয় সে লক্ষ্যেই তিনি সূর্য হেলার অপেক্ষা করতেন। কারও মতে এ অপেক্ষা ছিল বায়ু প্রবাহের আশায়। এ সময় বায়ুপ্রবাহ দ্বারা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে সাহায্য করা হয়ে থাকে। আহযাবের যুদ্ধে সাহাবায়ে কিরামকে এভাবে সাহায্য করা হয়েছিল।

যাহোক এই অপেক্ষাকালীন সময়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে একটি মূল্যবান উপদেশ দিলেন। তিনি বললেন, তোমরা শত্রুর সংগে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ার আকাঙ্ক্ষা করো না; বরং আল্লাহর কাছে 'আফিয়াত প্রার্থনা করো। ‘আফিয়াত একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। এর দ্বারা শারীরিক রোগ-ব্যাধি ও মানসিক পেরেশানি থেকে মুক্ত থাকা, বিপদ-আপদ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও পার্থিব যে-কোনও অস্থিরতা থেকে নিরাপদ থাকা এবং দীনী ও পরকালীন সমস্ত ক্ষতি হতে বেঁচে থাকার অবস্থাকে বোঝানো হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'আফিয়াত প্রার্থনা করতে বলেছেন। এখানে বিশেষভাবে যুদ্ধ থেকে আফিয়াত বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তোমরা এই আশা করো না যে, শত্রুর সাথে যেন তোমাদের অবশ্যই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কেননা যুদ্ধ এমন কোনও বিষয় নয়, যার আকাঙ্ক্ষা করা যায়। যুদ্ধে জয়-পরাজয় উভয়েরই সম্ভাবনা থাকে। আজ এ পক্ষ জয়ী হয় তো কাল ওপক্ষ। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-

وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ

‘এ তো দিন-পরিক্রমা, যা আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে বদলাতে থাকি। এক হাদীছে আছে

فَيُنْصَرُونَ كَمَا تُنْصَرُونَ

“তারাও জয়ী হবে, যেমন তোমরা জয়যুক্ত হয়ে থাক। তো যখন যে যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা করা হবে, তাতে জয়লাভের পালা কার তা কারও জানা নেই। যে পক্ষই পরাজিত হবে তার ক্ষতির শেষ নেই। যুদ্ধে পরাজিত হলে জান মালের ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াও ইজ্জত-সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়। এমনকি যারা জয়লাভ করে, তাদেরও তা লাভ করতে হয় অনেক মূল্যের বিনিময়ে। কোনওরকম ক্ষয়-ক্ষতির শিকার ছাড়া যুদ্ধে জয়লাভ কখনও সম্ভব নয়। কিছু না কিছু ক্ষতি উভয়পক্ষের হবেই। এ হাদীছেরই কোনও কোনও বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে

فَتَضْرِبُوا رِقَابَهُمْ وَيَضْرِبُونَ رِقَابَكُمْ

‘যুদ্ধে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের হত্যা করবে আর তারাও তোমাদের হত্যা করবে।'

মহানবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের প্রতি অত্যন্ত মমতাশীল ছিলেন। প্রিয় সঙ্গীদের প্রতি সেই মমত্বের তাগিদেই তিনি এই উপদেশ দিয়েছেন যে, যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ার আকাক্ষা করো না, যাতে তাদের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বেঁচে যায়।

এ নিষেধাজ্ঞার একটা আত্মিক দিকও আছে। যুদ্ধপ্রার্থনা দ্বারা নিজ বাহুবল ও ব্যবস্থাপনার উপর যথেষ্ট আস্থা থাকা ও শত্রুর প্রতি অবহেলার ভাব প্রকাশ পায়। এটা মনের অবস্থা হলে তা তো তাওয়াক্কুলেরই পরিপন্থী। আর মনের অবস্থা না হলেও এ জাতীয় বাহ্যিক ভাব-ভঙ্গীও পসন্দনীয় নয়। এটা একরকম অসতর্কতাও বটে।

তাছাড়া যুদ্ধ একটা কঠিন পরীক্ষাও। যখন শত্রুপক্ষ থেকে আঘাত আসে, শরীর জখম হয়ে যায় এবং প্রাণে মারা পড়ারও আশংকা দেখা দেয়, তখন অনেকের পক্ষেই অবিচল থাকা সম্ভব হয় না। পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে চায়। অথচ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা কঠিন গুনাহ। এ অবস্থায় যুদ্ধ চাওয়া মানে এমন এক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে চাওয়া, যে পরীক্ষায় সফলতা ও অসফলতা উভয়েরই আশংকা থাকে। আশংকা থাকে গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ারও। তারচে' যদি সময়টা ‘আফিয়াত তথা শান্তি ও স্বস্তির ভেতর কাটে, সে অনেক ভালো। তখন নিশ্চিন্তমনে আল্লাহর শোকর আদায়ে লিপ্ত থাকা যায়, নির্বিঘ্নে প্রত্যেকের হক আদায়ে মনোযোগী হওয়া যায় এবং ঝুঁকিহীনভাবে ‘ইবাদত বন্দেগী করা সম্ভব হয়। বস্তুত ‘আফিয়াত অনেক বড় নি'আমত। তাইতো হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. বলতেন-

لَأَنْ أُعَافَى فَأَشْكُرَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أُبْتَلَى فَأَصْبِرَ

‘নিরাপদ থেকে আল্লাহর শোকর আদায় করা আমার কাছে পরীক্ষায় পড়ে ধৈর্যধারণ অপেক্ষা বেশি প্রিয়।'

হাঁ, আল্লাহ তা'আলা নিজেই যদি বান্দাকে পরীক্ষা করেন, সে ক্ষেত্রে বান্দার কর্তব্য ধৈর্যধারণ করা। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় উপদেশ দিয়েছেন- যখন তাদের সাথে তোমাদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তখন ধৈর্যধারণ কর। কারণ এ যুদ্ধ তোমরা চেয়ে নাওনি, আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এটা তাঁর পরীক্ষা। এতে সবর করা অবশ্যকর্তব্য। পরীক্ষা যখন তাঁর পক্ষ থেকে, তখন সবরের তাওফীক লাভ হবে বলেও আশা করা যায়। সবরকারীকে আল্লাহ তা'আলা সাহায্য করেন। আল্লাহ সবরকারীর সংগে থাকেন। আল্লাহ যার সংগে থাকেন, তার কি পরাজয় সম্ভব? হাঁ, বাহ্যদৃষ্টিতে পরাজয় হতে পারে, মৃত্যু ঘটতে পারে, কিন্তু মু'মিনের পক্ষে তা আদৌ পরাজয় নয়। আল্লাহর হুকুম পালন করতে পারাটাই মু'মিনের জয়। এ অবস্থায় মারা গেলে শাহাদাত লাভ হয়। শাহাদাতের ফযীলত অনেক বড়। বেঁচে থাকাও লাভজনক। তাতে নগদ তো জিহাদের ফযীলত লাভ হল, পরবর্তীতে আরও জিহাদে শরীক হয়ে কিংবা অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থেকে অধিক পুণ্যলাভের সুযোগ হয়। আর যদি বাহ্যিক বিজয় অর্জিত হয়, তবে তো নূরুন আলা নূর- পাভের উপর পাভ।

তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জেনে রেখ জান্নাত তরবারির ছায়াতলে। অর্থাৎ জিহাদে অংশগ্রহণ করে শত্রুর বিরুদ্ধে তরবারি চালনা করলে তার পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ তা'আলা জান্নাত দান করেন। সুতরাং যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে ইখলাসের সংগে তাতে অবিচল থেকো।

এখানে 'তরবারি' বলে যুদ্ধাস্ত্র বোঝানো হয়েছে। সেকালে যেহেতু তরবারিই ছিল যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র তাই তরবারির কথা বলা হয়েছে, নয়তো তীর-বর্ষাও এর অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানকালে যেসব আধুনিক সমরাস্ত্র আছে, জিহাদের মূলনীতি রক্ষা করে যথানিয়মে তা ব্যবহার করলে সে ক্ষেত্রেও এ হাদীছ প্রযোজ্য হবে।

তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করেন। দু' আয় প্রথমে তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করেন। প্রশংসা করেছেন আল্লাহ তা'আলার বিশেষ তিনটি কাজের দ্বারা কিতাব অবতীর্ণ করা, মেঘ প্রবাহিত করা ও সম্মিলিত শত্রুদলকে পরাস্ত করা। তারপর কাঙ্ক্ষিত বিষয় অর্থাৎ শত্রুর বিরুদ্ধে জয়লাভে সাহায্য করার প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ তা'আলার যে তিনটি কাজের উল্লেখ করা হয়েছে, কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের সংগে তার বিশেষ সম্পর্ক আছে। কিতাব অবতীর্ণ করার সাথে সম্পর্ক এই যে,যুদ্ধ করার উদ্দেশ্য আল্লাহর কিতাবের সংরক্ষণ, তার প্রচার ও তার বিধান প্রতিষ্ঠা করা।তাছাড়া কিভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যের ওয়াদাও আছে, যেমন

ইরশাদ হয়েছে-

وَإِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ

এবং নিশ্চয়ই আমার বাহিনীই হবে জয়যুক্ত।”

আরও ইরশাদ হয়েছে

وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِنْ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ

‘আমি যাবুরে উপদেশের পর লিখে দিয়েছিলাম, ভূমির উত্তরাধিকারী হবে আমার নেক বান্দাগণ।"

দ্বিতীয় কাজ মেঘ প্রবাহিত করা। বৃষ্টিবাদী মেঘ আল্লাহর কুদরত ও রহমতের নিদর্শন। এর দ্বারা আল্লাহ মুমিনদের নানাভাবে সাহায্য করেন। মেঘের ছায়া, বৃষ্টি ও মেঘবাহী বায়ুর ভেতর রয়েছে প্রকৃত কল্যাণ ও উপকার কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে হৃদয়গ্রাহী ভাষায় এ কল্যাণ বিবৃত হয়েছে। সুতরাং দু'আর সাথে মেঘপ্রবাহের উল্লেখ খুবই সংগতিপূর্ণ।

তৃতীয় কাজ সম্মিলিত শত্রুদের পরাস্ত করা। এর দ্বারা বিশেষভাবে খন্দকের যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। পঞ্চম হিজরীতে অনুষ্ঠিত এ যুদ্ধটি সম্মিলিত শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে হয়েছিল। আরবের বিভিন্ন কাফের গোষ্ঠী একত্র হয়ে মদীনায় অভিযান চালিয়েছিল। এ যুদ্ধে পারস্পরিক সংঘর্ষে কোনও পক্ষই জয়ী হয়নি। পরিশেষে মুমিনদের জয় ও কাফিরদের পরাজয় হয় স্রেফ আল্লাহ তা'আলার সরাসরি মদদে। তাতে আসবাব-উপকরণ ও ব্যবস্থাপনার কোনও ভূমিকা ছিল না। আল্লাহ তা'আলা প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া চালু করে দেন। তাতে কাফিরদের তাঁবু ও আসবাবপত্র সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। ফলে তারা যুদ্ধ ক্ষান্ত দিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

দু'আয় এ তিন কাজের উল্লেখপূর্বক যেন আল্লাহর কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় যে, তিনি নিজ রহমতে এই যুদ্ধেও তার দলকে অবশ্যই সাহায্য ও জয়যুক্ত করবেন। এটাই দু'আর নিয়ম। তিনি কবূল করবেন সেই আশা নিয়েই দু'আ করতে হয়। বান্দার প্রতি আল্লাহ তার আশানুরূপ আচরণ করে থাকেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের আগে দু'আ করেছেন। তিনি কেবল নিজ ব্যবস্থাপনার উপর ক্ষান্ত থাকেননি। প্রত্যেক যুদ্ধেই উপযুক্ত ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করেছেন। যতটুকু প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব তা নিয়েছেন। কিন্তু এটা কেবলই বাহ্যিক প্রস্তুতি। মু'মিনদের কেবল বাহ্যিক প্রস্তুতি গ্রহণ করলেই চলে না। তাদের আত্মিক ও অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতিও গ্রহণ করতে হয়। তা হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার প্রতি তাওয়াক্কুল। তাঁর প্রতি ভরসা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়রকম প্রস্তুতিই গ্রহণ করেছেন। তিনি বাহ্যিক উপায় অবলম্বন করেছেন, কিন্তু তার উপর নির্ভর করেননি। নির্ভর করেছেন সম্পূর্ণই আল্লাহ তা'আলার উপর। জয়-পরাজয় তিনিই দান করেন। যত সুষ্ঠু ব্যবস্থাই নেওয়া হোক না কেন, তাঁর সাহায্য ছাড়া জয়লাভ সম্ভব নয়। তিনি যাতে সাহায্য করেন সে লক্ষ্যেই তাঁর সমীপে দু'আ করা হয়েছে। বোঝানো হচ্ছে, হে আল্লাহ! আমরা বড়ই দুর্বল। আমাদের নিজেদের পক্ষে কোনওকিছুই করা সম্ভব নয়। তোমার দেওয়া আসবাবপত্র তোমার হুকুমমত কাজে লাগাতে পারি মাত্র, কিন্তু ফলাফলদান তোমারই হাতে। আমাদের ব্যবস্থাপনায় সুফললাভ তখনই অর্জিত হতে পারে, যখন তুমি সাহায্য করবে। সুতরাং হে আল্লাহ! শত্রুর বিরুদ্ধে জয়লাভে তুমি আমাদের সাহায্য কর।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যুদ্ধ-বিগ্রহসহ যে কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে সবর করা অবশ্যকর্তব্য।

খ. শত্রুর সাথে যুদ্ধ কামনা করা উচিত নয়। আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তাই প্রার্থনা করা উচিত।

গ. শরী'আতের বিধান অনুযায়ী সশস্ত্র সংগ্রামের অবকাশ আসলে আগ্রহের সাথে তাতে শরীক থাকা উচিত। তা জান্নাতলাভের একটি শ্রেষ্ঠ উপায়।

ঘ. যুদ্ধসহ যে-কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ ও সাহায্য কামনা করাও অবশ্যকর্তব্য।

ঙ. দুনিয়া আসবাব-উপকরণের জগত। এখানে আসবাব-উপকরণ অবলম্বন করাই আল্লাহর হুকুম। কিন্তু নির্ভর করতে হবে আল্লাহর উপর। আসবাব-উপকরণের ভালো মন্দ কিছুই করার শক্তি নেই। সমস্ত শক্তির মালিক আল্লাহ। তাই নির্ভর আসবাব উপকরণের উপর নয়; বরং আল্লাহ তা'আলার উপরই করা চাই। এটাই তাওয়াক্কুলের হাকীকত।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন