কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

১০. তালাক - ডিভোর্স অধ্যায়

হাদীস নং: ২০৮৯
আন্তর্জাতিক নং: ২০৮৯
পিতা পুত্রকে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বললে
২০৮৯। মুহাম্মাদ ইবন বাশশার (রাহঃ).... আবু আব্দুর রহমান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তিকে তার পিতা অথবা তার মা তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বলল। এদিকে সে কসম খেয়ে বলল যে, আমি যদি স্ত্রীকে তালাক দেই তবে একশো গোলাম আযাদ করে দেব। এমতাবস্থায় সে আবু দারদা (রাযিঃ) এর কাছে এলো। তখন তিনি চাশতের সালাত আদায় করছিলেন এবং তিনি তা দীর্ঘায়িত করেন। আর যুহর ও আসরের মাঝেও তিনি সালাত আদায় করছিলেন। লোকটি তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলো। তখন আবু দারদা (রাযিঃ) বললেনঃ তোমার মানত পূরণ কর। আর তোমার পিতামাতার হুকুমও পালন কর।
আবুদ দারদা (রাযিঃ) বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, পিত হচ্ছেন জান্নাতের উত্তম দ্বার। তুমি তোমার পিতা-মাতার অধিকার সংরক্ষণ কর, কিম্বা ছেড়ে দাও।
بَاب الرَّجُلِ يَأْمُرُهُ أَبُوهُ بِطَلَاقِ امْرَأَتِهِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ رَجُلًا أَمَرَهُ أَبُوهُ أَوْ أُمُّهُ شَكَّ شُعْبَةُ أَنْ يُطَلِّقَ امْرَأَتَهُ فَجَعَلَ عَلَيْهِ مِائَةَ مُحَرَّرٍ فَأَتَى أَبَا الدَّرْدَاءِ فَإِذَا هُوَ يُصَلِّي الضُّحَى وَيُطِيلُهَا وَصَلَّى مَا بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ فَسَأَلَهُ فَقَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ أَوْفِ بِنَذْرِكَ وَبِرَّ وَالِدَيْكَ وَقَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ الْوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ فَحَافِظْ عَلَى وَالِدَيْكَ أَوْ اتْرُكْ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছের মূল বিষয়বস্তু, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ভালোবাসত। কিন্তু মায়ের সে বধূ পসন্দ নয়। তাই ছেলেকে হুকুম করছেন যেন সে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। কিন্তু সে কী করবে বুঝতে পারছে না। তাই এ বিষয়ে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবুদ দারদা রাযি.-এর কাছে বিধান জানতে আসল। তিনি ফয়সালাস্বরূপ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীছ শুনিয়ে দিলেন। সে হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- الوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الجَنَّةِ (পিতা জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম দরজা)। অর্থাৎ পিতার আনুগত্য দ্বারা শ্রেষ্ঠতম দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা যায়। আর এটা তো জানা কথা যে, মায়ের হক পিতার তিনগুণ। কাজেই মায়ের আনুগত্য করা জান্নাতলাভের পক্ষে যে আরও বেশি সহায়ক হবে তা অতি স্পষ্ট। আকূলী রহ. বলেন, এর অর্থ- যেসকল উপায়ে জান্নাতে প্রবেশ করা যায় তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হলো পিতা-মাতার আনুগত্য।

ইমাম ইবনুল আরাবী রহ. বলেন, পিতার প্রতি সন্তানের আনুগত্য প্রদর্শনের একটা দিক এইও যে, পিতা যা অপসন্দ করবে সন্তানও তা অপসন্দ করবে, যদিও তা সন্তানের প্রিয় হয়। অবশ্য এটা তখনই, যখন পিতা দীনদার ও নেককার হবেন এবং কার ভালো লাগা ও নালাগা সবই আল্লাহ তাআলার জন্য হবে; নিজের খেয়াল-খুশিমত কিছু করবে না।

এ হাদীছ শোনানোর পর হযরত আবুদ দারদা রাযি. ওই ব্যক্তিকে বললেন- فَإِنْ شِئْتَ فَأَضِعْ ذَلِكَ البَابَ أَوْ احْفَظْهُ (এখন তুমি চাইলে সে দরজাটি ভেঙে ফেল কিংবা চাইলে হেফাজত কর)। অর্থাৎ তুমি চাইলে মায়ের অবাধ্যতা করে ও তার হুকুম অমান্য করে জান্নাতের সে দুয়ার নষ্ট করে ফেলতে পার অথবা চাইলে তার আনুগত্য করে ও তাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে সে দরজা রক্ষাও করতে পার। তোমার ক্ষেত্রে ধারণা তো এটাই যে, তুমি জান্নাতে যাওয়ার দুয়ার রক্ষাই করবে। সুতরাং তোমার কর্তব্য মায়ের কথা শোনা।

প্রকাশ থাকে যে, অন্যের প্রতি জুলুম করা কোনওক্রমেই জায়েয নয়। তালাকের বিষয়টি দেশ ও কালভেদে বিভিন্নভাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে নারীর পক্ষে তালাক কলঙ্ক বয়ে আনে। তালাকপ্রাপ্তা নারীর পুনর্বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। কাজেই বিনাদোষে তাকে তালাক দেওয়া উচিত নয় এবং পিতা-মাতারও উচিত না নিজ ছেলে-মেয়েকে তালাকে উৎসাহিত করা। কিন্তু আধুনিক ইউরোপ-আমেরিকায় এটাকে বিশেষ দোষের মনে করা হয় না। তৎকালীন আরব পরিবেশেও তালাকপ্রাপ্তা নারীর পুনর্বিবাহ আটকাত না। একাধিকবার তালাকপ্রাপ্তা নারীরও সহজেই বিয়ে হয়ে যেত। কাজেই তখনকার সে পরিবেশের সঙ্গে আমাদের সমাজবাস্তবতাকে তুলনা করা যাবে না। সুতরাং তাড়াহুড়া করে তালাক পর্যন্ত পৌঁছা ঠিক হবে না। এটা সর্বশেষ ব্যবস্থা। তাই সবশেষেই এটা বিবেচনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, হাদীছের দৃষ্টিতে বৈধ কাজসমূহের মধ্যে আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বাপেক্ষা অপসন্দ হলো তালাক। সুতরাং মায়ের কথামত স্ত্রীকে তালাক দেওয়া অবশ্যকর্তব্য হবে তখনই, যখন মায়ের সে হুকুম ন্যায়সঙ্গত হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সন্তানের কর্তব্য সর্বাবস্থায় মাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা।

খ. পিতা-মাতার আনুগত্য জান্নাতলাভের শ্রেষ্ঠতম উপায়।

গ. দীনী কোনও বিষয়ে নিজ কর্তব্য স্থির করতে না পারলে কোনও সুদক্ষ ও পরহেযগার আলেমের পরামর্শ গ্রহণ করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে ইবনে মাজা - হাদীস নং ২০৮৯ | মুসলিম বাংলা