কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৯. বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ২০১৪
আন্তর্জাতিক নং: ২০১৪
যে স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়
২০১৪। আব্দুল ওয়াহ্হাব ইবন যাহ্হাক (রাহঃ)....মু'আয ইবন জাবাল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যখন কোন স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতে তার হুর স্ত্রীগণ বলতে থাকেঃ 'ওহে' আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন! ওকে কষ্ট দিওনা। সেতো তোমার কাছে অল্পদিনের মেহমান! অতিসত্ত্বর সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”
بَاب فِي الْمَرْأَةِ تُؤْذِي زَوْجَهَا
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ الضَّحَّاكِ حَدَّثَنَا إِسْمَعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ عَنْ بَحِيرِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا تُؤْذِي امْرَأَةٌ زَوْجَهَا إِلَّا قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنْ الْحُورِ الْعِينِ لَا تُؤْذِيهِ قَاتَلَكِ اللهُ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ أَوْشَكَ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে কষ্টদানের পরিণাম বলা হয়েছে যে, এরূপ স্ত্রীকে জান্নাতের হুর অভিশাপ দিয়ে থাকে। বলাবাহুল্য এটা সে ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যখন এ কষ্ট দেওয়াটা অন্যায়ভাবে হয়ে থাকে অর্থাৎ তার কাছে স্বামীর যে অধিকার আছে, সে অধিকার আদায়ে অবহেলার কারণে যদি স্বামী কষ্ট পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে স্ত্রীর নিজের যে অধিকার স্বামীর কাছে আছে, স্বামী যদি তা আদায়ে গড়িমসি করে আর স্ত্রী তার কাছে তা দাবি করার কারণে সে মনে কষ্ট পায়, তবে এটা নাহক কষ্ট। এজন্য স্ত্রীকে দায়ী করা হবে না।
হাদীছে হুরদের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে তো তোমার কাছে অতিথি। তার মানে অতিথি যেমন মেজবানের বাড়িতে অল্পসময়ের জন্য থাকে, তেমনি তোমার এ স্বামী অল্পকালের জন্যই তোমার কাছে আছে। বাস্তবিকপক্ষে আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন অতি অল্পকালীন জীবনই বটে। আখেরাতের জীবন অনন্ত কালের আর দুনিয়ার জীবন যত দীর্ঘই হোক না কেন তা সীমিত। অসীমের বিপরীতে সীমিত যত দীর্ঘই হোক না কেন তা অতি অল্পই। বোঝানো হচ্ছে, এ অল্প কিছুদিন তোমার কাছে আছে। তাও তুমি কষ্ট দিচ্ছ! তোমার তো প্রাণভরে তার সেবা করা উচিত ছিল, যাতে সীমিত জীবনের পর অসীম জীবনেও তার সঙ্গিনী হয়ে থাকতে পার।
দ্বিতীয়ত হুরদের এ কথার দ্বারা একটা ঈমানী দায়িত্বের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কেননা স্বামীকে যখন মেহমান বলা হয়েছে, তখন স্ত্রীর কর্তব্য সম্মানজনকভাবে তার সেবাযত্ন করা। অতিথির সম্মানজনক সেবা করা ঈমানের দাবি। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-

وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ

‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।৩৬০

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল স্বামীকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া জায়েয নয়। কাজেই প্রত্যেক স্ত্রীর এর থেকে বিরত থাকা উচিত।

খ. জান্নাতে মুমিনদের হূর স্ত্রী থাকবে।

গ. দুনিয়ার জীবন সামান্য ক'দিনের। এর মায়ায় আখেরাত ভুলতে নেই।

ঘ. মেহমানকে ইজ্জত-সম্মান করা উচিত। এটা ঈমানের দাবি।

৩৬০. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬০১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৫৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৫০০; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৬৭২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৬২১; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ৩৩৪৭৩; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৫৮৫; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ২০৭৯; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১০২
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান