কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৯. বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ১৮৫৪
আন্তর্জাতিক নং: ১৮৫৪
স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
১৮৫৪। আবু বকর ইবন আবু শায়বা (রাহঃ) …. উম্মে সালামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছিঃ যে স্ত্রী এমন অবস্থায় মারা গিয়েছে যে, তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
بَاب حَقِّ الزَّوْجِ عَلَى الْمَرْأَةِ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ عَنْ أَبِي نَصْرٍ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ مُسَاوِرٍ الْحِمْيَرِيِّ عَنْ أُمِّهِ قَالَتْ سَمِعْتُ أُمَّ سَلَمَةَ تَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ أَيُّمَا امْرَأَةٍ مَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتْ الْجَنَّةَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে যে স্বামীর সন্তুষ্টি নিয়ে মারা যাওয়া স্ত্রীকে জান্নাতলাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, এর অর্থ প্রথমেই জান্নাতে যাওয়া। কেননা ঈমান নিয়ে যে ব্যক্তি মারা যাবে, সে একবার না একবার জান্নাতে যাবেই। আর যে ব্যক্তির মৃত্যু ঈমানের সঙ্গে হবে না, সে কখনওই জান্নাতে যেতে পারবে না। কাজেই যে স্ত্রীলোক জান্নাতে যাবে বলে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তার ঈমান থাকা নিশ্চিত। এখন সে যদি শাস্তিভোগের পর জান্নাতে যায়, তবে সে যাওয়াটা ঈমানের কারণেই। এ অবস্থায় স্বামীর সন্তুষ্টি নিয়ে মারা যাওয়ার ফায়দা থাকল কোথায়? সে ফায়দা তখনই হয়, যখন তার জান্নাতে যাওয়াটা হবে প্রথমেই।
প্রশ্ন থাকে, তার যদি কোনও কবীরা গুনাহ থাকে অথবা কোনও বান্দার হক নিয়ে মারা গিয়ে থাকে, তখনও কি তার শুরুতেই জান্নাত লাভ হবে?
এর উত্তর হচ্ছে, হয়তো প্রথমেই তার জান্নাতলাভের জন্য এ শর্ত প্রযোজ্য যে, তার কোনও কবীরা গুনাহ না থাকতে হবে এবং বান্দার হক নষ্ট করা হতেও মুক্ত থাকতে হবে। এ অবস্থায় তার যেসব সগীরা গুনাহ থাকবে, তা স্বামীর সন্তুষ্টির অসিলায় ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তাআলা স্বামীর সন্তুষ্টির অসিলায় তার কবীরা গুনাহও ক্ষমা করে দেবেন এবং কোনও বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে আল্লাহ তাআলা নিজের তরফ থেকে প্রতিদান দিয়ে সেই বান্দাকে খুশি করে দেবেন। ফলে সে আর তার হকের দাবি উত্থাপন করবে না।
এ হাদীছ যখন বলছে স্বামী সন্তুষ্ট থাকলে সে স্ত্রী জান্নাতবাসিনী হবে, তখন এর ফল দাঁড়ায় স্বামী যদি নারাজ থাকে, তবে তার জান্নাতে যাওয়া আটকে যাবে। অবশ্য এটা তখনই প্রযোজ্য, যখন তার অসন্তুষ্টির কারণ ন্যায়সম্মত হবে অর্থাৎ স্ত্রী যদি তার কোনও হক নষ্ট করে থাকে আর এ কারণে সে নারাজ হয়। পক্ষান্তরে স্ত্রী যদি তার কোনও হক নষ্ট না করে থাকে আর অন্যায়ভাবে সে তার প্রতি নাখোশ হয়, সে ক্ষেত্রে তার নাখোশ হওয়াটাই নাহক। এর জন্য তার জান্নাতে যাওয়া আটকাবে না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ দ্বারা শরীআতসম্মত হক আদায়ের মাধ্যমে স্বামীকে খুশি রাখার গুরুত্ব বোঝা গেল। প্রত্যেক স্ত্রীর উচিত এ গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং সে অনুযায়ী স্বামীকে খুশি রাখতে সচেষ্ট থাকা।

৩৫৮, জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৫১১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৫৯৮; কানযুল উম্মাল, হাদীছ নং ৬৬৩১
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
সুনানে ইবনে মাজা - হাদীস নং ১৮৫৪ | মুসলিম বাংলা