কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ
৬. জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৫২৭
আন্তর্জাতিক নং: ১৫২৭
কবরের উপর জানাযার সালাত আদায় করা
১৫২৭। আহমদ ইবন আব্দা (রাহঃ) ….. আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক কৃষ্ণকায় মহিলা মসজিদের সন্নিকটে বসবাস করতো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে দেখতে পেলেন না। কয়েকদিন পর তার সম্পর্কে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তাকে জানান হলোঃ সে তো মারা গেছে। তিনি বললেনঃ তোমরা কেন আমাকে সংবাদ দাওনি? তারপর তিনি তার কবরের কাছে আসেন এবং তার জানাযার সালাত আদায় করেন।
بَاب مَا جَاءَ فِي الصَّلَاةِ عَلَى الْقَبْرِ
- حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدَةَ أَنْبَأَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ حَدَّثَنَا ثَابِتٌ عَنْ أَبِي رَافِعٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ كَانَتْ تَقُمُّ الْمَسْجِدَ فَفَقَدَهَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم فَسَأَلَ عَنْهَا بَعْدَ أَيَّامٍ فَقِيلَ لَهُ إِنَّهَا مَاتَتْ قَالَ فَهَلَّا آذَنْتُمُونِي فَأَتَى قَبْرَهَا فَصَلَّى عَلَيْهَا
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে মসজিদের এক ঝাড়ুদার সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে, তার মৃত্যু হয়ে গেলে সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না জানিয়ে নিজেরাই তার দাফন-কাফন সম্পন্ন করেন। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা জানতে পেরে তার কবরের কাছে চলে যান এবং তার জন্য দুআ করেন।
সে ঝাড়ুদার ছিল মহিলা। বায়হাকী শরীফের বর্ণনায় তার নাম বলা হয়েছে উম্মু মিহজান রাযি.। কোনও কোনও বর্ণনায় তার নাম বলা হয়েছে মিহজানা রাযি.। সম্ভবত মিহজানা তার মূল নাম এবং উম্মু মিহজান তার কুনয়াহ্ (উপনাম)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের খোঁজখবর রাখতেন। টানা কয়েকদিন কাউকে না দেখলে জিজ্ঞেস করতেন, তাকে কেন দেখা যাচ্ছে না? উম্মু মিহজান রাযি.-এর ক্ষেত্রেও তাই হল। যখন একাধারে কয়েকদিন তাকে দেখা যাচ্ছে না, তখন তার সম্পর্কে খোঁজ নিলেন। যখন জানতে পারলেন তার মৃত্যু হয়ে গেছে, তখন বললেন, তোমরা আমাকে জানালে না কেন? বর্ণনায় আছে, সম্ভবত তারা তার বিষয়টাকে তুচ্ছ মনে করেছিল। অর্থাৎ তিনি একজন গরীব ও সাধারণ নারী। তার মৃত্যু এমনকিছু গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, তার জানাযা পড়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেওয়া হবে। সাহাবায়ে কেরাম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। তারা তাঁর আরামের দিকে লক্ষ রাখতেন। বিশেষ প্রয়োজন না হলে তাঁকে কোথাও ডাকতেন না বা যাওয়ার অনুরোধ করতেন না। যেমন অপর এক সাহাবীর রাতের বেলা ইন্তিকাল হলে তারা তাঁকে ডাকেননি; নিজেরাই তাঁর দাফন-কাফন সম্পন্ন করেছেন।
যদিও তারা এক সাধারণ নারী হওয়ায় তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি, কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সে নারী গুরুত্বহীন ছিলেন না। তিনি গরীব ও সাধারণ মুমিনকে বিশেষ মর্যাদার দৃষ্টিতেই দেখতেন। সুতরাং উম্মুল মিহজানকেও সে মর্যাদা তিনি দান করলেন। তিনি চলে গেলেন তার কবরের কাছে এবং সেখানে তার জন্য দুআ করলেন। সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে তারপর তিনি ইরশাদ করলেন-
إن هذه القبور مملوءة ظلمة على أهلها، وإن الله تعالى ينورها لهم بصلاتي عليهم
(এ কবরগুলো তার বাসিন্দাদের নিয়ে অন্ধকারে পরিপূর্ণ থাকে। আল্লাহ তাআলা আমার দু'আর বরকতে তাদের জন্য তা আলোকিত করে দেন)। কবর যেহেতু সবদিক থেকে আবদ্ধ, তাই তার ভেতর সূর্যের আলো পৌঁছার তো কোনও উপায় নেই। তাই বাহ্যিক আলোয় তা আলোকিত থাকবে না এই-ই স্বাভাবিক। সেখানে আলোর ব্যবস্থা হতে পারে কেবল নেক আমল দ্বারা কিংবা আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য সুপারিশের দ্বারা। সেকথাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা কবরকে আলোকিত করেন আমার দু'আর দ্বারা। তাই তো তিনি প্রিয় সাহাবিয়ার অন্ধকার কবরকে আলোকিত করার লক্ষ্যে সেখানে ছুটে যান এবং তার জন্য দুআ করেন। দূর থেকে দুআ করলেও আলো হত বৈকি, কিন্তু কাছে যাওয়ার দ্বারা তাকে যে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা তো হত না। বোঝা যাচ্ছে জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় যে-কোনও মুসলিম নর-নারীকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তাঁর এ আমল দ্বারা সে শিক্ষাও পাওয়া যাচ্ছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. গায়ের রং কালো হওয়ায় কিংবা গরীব ও সাধারণ লোক হওয়ায় কোনও মুসলিমকে অবহেলা করতে নেই।
খ. নিজ সঙ্গী-সাথী, ভক্ত-অনুরক্ত এবং নিজের সম্পর্কিত যে-কোনও লোকেরই খোঁজ খবর রাখা চাই। বেশি দিন দেখা না গেলে সে কোথায় কী হালে আছে, তা সন্ধান করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
গ. কবরস্থানে যাওয়া ও কবরবাসীদের জন্য দুআ করাও একটি সুন্নত আমল।
ঘ. কবর এক অন্ধকার ঘর। ঈমান ও আমলে সালিহার দ্বারা তাতে আলোর ব্যবস্থা হয়।
ঙ. জীবিত ব্যক্তির দুআ মৃত ব্যক্তির উপকারে আসে। দুআ দ্বারা কবরের অন্ধকারও দূর হয়।
সে ঝাড়ুদার ছিল মহিলা। বায়হাকী শরীফের বর্ণনায় তার নাম বলা হয়েছে উম্মু মিহজান রাযি.। কোনও কোনও বর্ণনায় তার নাম বলা হয়েছে মিহজানা রাযি.। সম্ভবত মিহজানা তার মূল নাম এবং উম্মু মিহজান তার কুনয়াহ্ (উপনাম)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের খোঁজখবর রাখতেন। টানা কয়েকদিন কাউকে না দেখলে জিজ্ঞেস করতেন, তাকে কেন দেখা যাচ্ছে না? উম্মু মিহজান রাযি.-এর ক্ষেত্রেও তাই হল। যখন একাধারে কয়েকদিন তাকে দেখা যাচ্ছে না, তখন তার সম্পর্কে খোঁজ নিলেন। যখন জানতে পারলেন তার মৃত্যু হয়ে গেছে, তখন বললেন, তোমরা আমাকে জানালে না কেন? বর্ণনায় আছে, সম্ভবত তারা তার বিষয়টাকে তুচ্ছ মনে করেছিল। অর্থাৎ তিনি একজন গরীব ও সাধারণ নারী। তার মৃত্যু এমনকিছু গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, তার জানাযা পড়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেওয়া হবে। সাহাবায়ে কেরাম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। তারা তাঁর আরামের দিকে লক্ষ রাখতেন। বিশেষ প্রয়োজন না হলে তাঁকে কোথাও ডাকতেন না বা যাওয়ার অনুরোধ করতেন না। যেমন অপর এক সাহাবীর রাতের বেলা ইন্তিকাল হলে তারা তাঁকে ডাকেননি; নিজেরাই তাঁর দাফন-কাফন সম্পন্ন করেছেন।
যদিও তারা এক সাধারণ নারী হওয়ায় তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি, কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সে নারী গুরুত্বহীন ছিলেন না। তিনি গরীব ও সাধারণ মুমিনকে বিশেষ মর্যাদার দৃষ্টিতেই দেখতেন। সুতরাং উম্মুল মিহজানকেও সে মর্যাদা তিনি দান করলেন। তিনি চলে গেলেন তার কবরের কাছে এবং সেখানে তার জন্য দুআ করলেন। সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে তারপর তিনি ইরশাদ করলেন-
إن هذه القبور مملوءة ظلمة على أهلها، وإن الله تعالى ينورها لهم بصلاتي عليهم
(এ কবরগুলো তার বাসিন্দাদের নিয়ে অন্ধকারে পরিপূর্ণ থাকে। আল্লাহ তাআলা আমার দু'আর বরকতে তাদের জন্য তা আলোকিত করে দেন)। কবর যেহেতু সবদিক থেকে আবদ্ধ, তাই তার ভেতর সূর্যের আলো পৌঁছার তো কোনও উপায় নেই। তাই বাহ্যিক আলোয় তা আলোকিত থাকবে না এই-ই স্বাভাবিক। সেখানে আলোর ব্যবস্থা হতে পারে কেবল নেক আমল দ্বারা কিংবা আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য সুপারিশের দ্বারা। সেকথাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা কবরকে আলোকিত করেন আমার দু'আর দ্বারা। তাই তো তিনি প্রিয় সাহাবিয়ার অন্ধকার কবরকে আলোকিত করার লক্ষ্যে সেখানে ছুটে যান এবং তার জন্য দুআ করেন। দূর থেকে দুআ করলেও আলো হত বৈকি, কিন্তু কাছে যাওয়ার দ্বারা তাকে যে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা তো হত না। বোঝা যাচ্ছে জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় যে-কোনও মুসলিম নর-নারীকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তাঁর এ আমল দ্বারা সে শিক্ষাও পাওয়া যাচ্ছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. গায়ের রং কালো হওয়ায় কিংবা গরীব ও সাধারণ লোক হওয়ায় কোনও মুসলিমকে অবহেলা করতে নেই।
খ. নিজ সঙ্গী-সাথী, ভক্ত-অনুরক্ত এবং নিজের সম্পর্কিত যে-কোনও লোকেরই খোঁজ খবর রাখা চাই। বেশি দিন দেখা না গেলে সে কোথায় কী হালে আছে, তা সন্ধান করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
গ. কবরস্থানে যাওয়া ও কবরবাসীদের জন্য দুআ করাও একটি সুন্নত আমল।
ঘ. কবর এক অন্ধকার ঘর। ঈমান ও আমলে সালিহার দ্বারা তাতে আলোর ব্যবস্থা হয়।
ঙ. জীবিত ব্যক্তির দুআ মৃত ব্যক্তির উপকারে আসে। দুআ দ্বারা কবরের অন্ধকারও দূর হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
