কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৬. জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪৬২
আন্তর্জাতিক নং: ১৪৬২
মৃতের গোসলের বর্ণনা
১৪৬২। আলী ইবন মুহাম্মাদ (রাহঃ)....আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃতকে গোসল দেয়, কাফন পরায়, সুগন্ধি লাগায়, বহন করে নিয়ে যায় এবং জানাযার সালাত আদায় করে এবং তার গোপনীয় বিষয় যা দেখেছে, তা প্রকাশ না করে, সে তার গুনাহ থেকে সদ্য প্রসূত সন্তানের মত নিষ্পাপ হয়ে যায়।
بَاب مَا جَاءَ فِي غُسْلِ الْمَيِّتِ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ الْمُحَارِبِيُّ حَدَّثَنَا عَبَّادُ بْنُ كَثِيرٍ عَنْ عَمْرِو بْنِ خَالِدٍ عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ عَنْ عَلِيٍّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مَنْ غَسَّلَ مَيِّتًا وَكَفَّنَهُ وَحَنَّطَهُ وَحَمَلَهُ وَصَلَّى عَلَيْهِ وَلَمْ يُفْشِ عَلَيْهِ مَا رَأَى خَرَجَ مِنْ خَطِيئَتِهِ مِثْلَ يَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা মায়্যিতকে গোসল করায় কিংবা মায়্যিতকে দেখার সুযোগ হয়, তাদের জন্য এটি এক সতর্কবাণীও বটে। কেননা তাদের অনেকে মায়্যিতের শারীরিক দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে বেড়ায়। মৃত্যুযন্ত্রণায় অনেকের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়। বাহ্যত সে দৃশ্য প্রীতিকর হয় না। এ কারণে অনেকে মায়্যিত সম্পর্কে কুধারণাও করে বসে। বাহ্যত যা দেখা যায়, তা দ্বারা যে মায়্যিতের ঈমান, আমলের অবস্থা নির্ণয় করা যায় না, এটা অনেকেই বোঝে না। ধরে নেয় তার ঈমান-আমলের অবস্থা ভালো নয় বলেই চেহারা এরকম হয়েছে। এ সবই ভুল। বান্দার প্রকৃত হাল আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাই এ জাতীয় বিষয় প্রচার করতে নেই; বরং গোপন রাখাই বাঞ্ছনীয়। হাদীছটিতে সে উৎসাহই দেওয়া হয়েছে। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে-
مَنْ غَسَّلَ ميتا فكتَمَ عَلَيْهِ، غَفَرَ اللَّهُ لَهُ أَرْبَعِينَ مَرَّةً (যে ব্যক্তি কোনও মায়্যিতকে গোসল করায়, তারপর সে তার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা'আলা তাকে চল্লিশবার ক্ষমা করেন)। অর্থাৎ একবার একবার করে চল্লিশবার ক্ষমা করেন। প্রত্যেকবার কী পরিমাণ গুনাহ ক্ষমা করেন তা আল্লাহ তা'আলাই জানেন। তিনি সাত্তারুল 'উয়ুব। অতিশয় দোষগোপনকারী। অপর এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
من غَسَّلَ مَيّتًا، فَسَتَرَهُ سَتَرَهُ اللَّهُ مِنَ الذُّنُوبِ
'যে ব্যক্তি কোনও মায়্যিতকে গোসল করায়, তারপর তার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা'আলা তার পাপরাশি গোপন রাখবেন’। (তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৮০৭৭)

বস্তুত যে ব্যক্তি কারও দোষ জানতে পারে, তার কর্তব্য তা গোপন রাখা। তার জন্য এটা আমানত। এ কথা জীবিত ও মৃত উভয়ের বেলায় প্রযোজ্য। মৃতব্যক্তির ক্ষেত্রে অধিকতর জরুরি। আর দোষ গোপন রাখা যখন আমানত, তখন প্রকাশ করাটা খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত বৈ কি। খেয়ানত করা কঠিন গুনাহ। এজন্যই যে-কারও দ্বারা মায়্যিতকে গোসল না করানোই ভালো। সর্বোত্তম হল মায়্যিতের নিকটজনেরাই তাকে গোসল করাবে। নিকটজনেরা না পারলে এমন কোনও ব্যক্তির উপর এ কাজ অর্পণ করা উচিত, যে একজন পরহেযগার ও আমানতদার লোকরূপে পরিচিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মায়্যিতকে গোসল করানো অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ।

খ. যে ব্যক্তি মায়্যিতকে গোসল করায়, তাকে অবশ্যই আমানতদার হতে হবে। মায়্যিতের কোনও খুঁত ও দোষ দেখতে পেলে তা কিছুতেই প্রকাশ করা চলবে না।

গ. পাপ থেকে ক্ষমা পাওয়ার একটা ভালো উপায় মায়্যিতের দোষ-খুঁত গোপন রাখা। তাই এ বিষয়ে আমাদেরকে খুব সচেতন হতে হবে।

ঘ. আল্লাহ তা'আলা বড় ক্ষমাশীল। তিনি অতি সহজ সহজ কাজের অছিলায়ও বান্দার পাপরাশি ক্ষমা করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে ইবনে মাজা - হাদীস নং ১৪৬২ | মুসলিম বাংলা