কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৬. জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪৩৭
আন্তর্জাতিক নং: ১৪৩৭
রোগীর পরিচর্যা প্রসঙ্গে
১৪৩৭। হিশাম ইবন 'আম্মার (রাহঃ) .... আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ) তিন দিন পর রোগীর পরিচর্যা করতেন।
بَاب مَا جَاءَ فِي عِيَادَةِ الْمَرِيضِ
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ حَدَّثَنَا مَسْلَمَةُ بْنُ عَلِيٍّ حَدَّثَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ عَنْ حُمَيْدٍ الطَّوِيلِ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَا يَعُودُ مَرِيضًا إِلَّا بَعْدَ ثَلَاثٍ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রোগী দেখতে যাওয়া
عِيَادَةُ الْمَرِيضِ (রোগীর 'ইয়াদাত করা)। অর্থাৎ রোগী দেখতে যাওয়া ও তার খোঁজখবর নেওয়া। এটা ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। কোনও কোনও হাদীছে একে মুসলিম ব্যক্তির হক বলা হয়েছে। এটা যখন মুসলিম ব্যক্তির হক, তখন অবশ্যপালনীয়ও বটে। কারও অসুস্থতার সংবাদ পেলে তার খোঁজখবর নিতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাকে দেখতেও যেতে হবে। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্বেরও দাবি। এর দ্বারা পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। এটা অনেক বড় ছাওয়াবের কাজও বটে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ما من مسلم يعود مسلما غدوة, إلا صلى عليه سبعون ألف ملك حتى يمسي, وإن عاده عشية إلا صلى عليه سبعون ألف ملك حتى يصبح, وكان له خريف في الجنة
'যে-কোনও মুসলিম ব্যক্তি সকালবেলা কোনও অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে গেলে عَادَهُ সত্তর হাজার ফিরিশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করে। যদি সন্ধ্যাবেলা তাকে দেখতে যায় তবে সত্তর হাজার ফিরিশতা সকাল পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান করা হয়’।
(জামে তিরমিযী: ৯৬৯; সুনানে আবু দাউদ: ৩০৯৮; মুসনাদে আহমাদ: ৯৭৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান: ৮৭৪২; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৪১০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَيُّمَا رَجُلٍ يَعُودُ مَرِيضًا، فَإِنَّمَا يَخُوضُ فِي الرَّحْمَةِ، فَإِذَا قَعَدَ عِنْدَ الْمَرِيضِ غَمَرَتْهُ الرَّحْمَةُ، قَالَ : فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ ، هَذَا لِلصَّحِيحِ الَّذِي يَعُودُ الْمَرِيضِ، فَالْمَرِيض مَا لَهُ؟ قَالَ: تُحَطَّ عَنْهُ ذُنُوبُهُ.
'যে ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে যায় সে রহমতের ভেতর ডুব দিতে থাকে। যখন সে রোগীর কাছে গিয়ে বসে তখন রহমত তাকে নিমজ্জিত করে ফেলে। বর্ণনাকারী (হযরত আনাস রাযি.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা তো ওই সুস্থ ব্যক্তির জন্য, যে রোগী দেখতে যায়। তা অসুস্থ ব্যক্তি কী পাবে? তিনি বললেন, তার পাপরাশি মিটিয়ে দেওয়া হয়’।
(মুসনাদে আহমাদ: ১২৭৮২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ১০৮৩৯; মুসান্নাফ আব্দুর রায্ যাক : ৬৭৬৪; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা: ৬৫৮৩; তাবারানী, আল মুজামুল আওসাত: ২২০৫; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৪৫২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
.مَنْ عَادَ مَرِيضًا أَوْ زَارَ أَخا لَهُ فِي اللهِ نَادَاهُ مُنَادٍ أَنْ طِبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الجَنَّةِ مَنْزِلاً
‘যে ব্যক্তি কোনও রোগী দেখতে যায় বা তার কোনও মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়, তার উদ্দেশে এক ঘোষক ঘোষণা করে, তুমি শুভ হও, তোমার যাত্রা শুভ হোক এবং জান্নাতে তোমার ঠিকানা হোক’।
(জামে তিরমিযী: ২০০৮; সুনানে ইবন মাজাহ: ১৪৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ৮৫৩৬; সহীহ ইবনে হিব্বান : ২৯৬১; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান: ৮৬১০; আল-আদাবুল মুফরাদ : ৩৪৫; শারহুস্ সুন্নাহ: ২৪৭৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
عَائِدُ الْمَرِيضِ فِي مَخْرَفَةِ الْجَنَّةِ
'যে ব্যক্তি রোগী দেখতে যায় সে জান্নাতের ফলের বাগানে (অথবা এর অর্থ সে জান্নাতের পথে) থাকে’।
(সহীহ মুসলিম : ২৫৬৮; সুনানে ইবন মাজাহ: ১৪৪২; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৩৭৫০; মুসনাদে আহমাদ: ২২৪০৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৬৫৮০; শুআবুল ঈমান : ৮৭৩৮)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রোগী দেখতে যাওয়া ও রোগীর খোঁজখবর নেওয়া মুসলিম ব্যক্তির এক বিশেষ দায়িত্ব।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে ইবনে মাজা - হাদীস নং ১৪৩৭ | মুসলিম বাংলা