কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৫. নামাযের আদ্যোপান্ত বর্ণনা এবং সুন্নাতসমূহ

হাদীস নং: ১৪০২
আন্তর্জতিক নং: ১৪০২

পরিচ্ছেদঃ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত ও তার হিফাযত প্রসঙ্গে

১৪০২। 'ঈসা ইবন হাম্মাদ মিসরী (রাহঃ) ............. আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা মসজিদে বসা ছিলাম। এ সময় উটে চড়ে এক ব্যক্তি আসে এবং সে তার উটটিকে মসজিদের কাছে বসায় এরপর সেটিকে বাঁধে। তারপর সে তাদের জিজ্ঞাসা করেঃ তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (ﷺ) কে? আর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাদের মাঝে ঠেস দিয়ে বসা ছিলেন। রাবী বলেনঃ তখন তারা বললোঃ ইনি হলেন ঠেসরত সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট ব্যক্তি। লোকটি তাঁকে বললোঃ হে ইবন আব্দুল মুত্তালিব! তখন নবী (ﷺ) তাকে বললেনঃআমি তোমার (প্রশ্নের) জবাব দিব। লোকটি বললোঃ হে মুহাম্মাদ! আমি আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করতে চাই এবং জিজ্ঞাসার সময় আপনার উপর কঠোরতা আরোপ করতে চাই। কাজেই আপনি আমার উপর রাগান্বিত হবেন না। তখন তিনি বললেনঃ তোমার যা ইচ্ছা তা জিজ্ঞাসা কর। লোকটি তাঁকে বললোঃ আপনার রব এবং আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম! আল্লাহ্ কি আপনাকে সমস্ত বিশ্ববাসীর নিকট প্রেরণ করেছেন? তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ ইয়া আল্লাহ্! হ্যাঁ। এরপর সে বললোঃ আমি আপনার ব্যাপারে আল্লাহর নামে কসম করছি। আল্লাহ্ কি আপনাকে দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ ইয়া আল্লাহ্! হ্যাঁ। তারপর সে বললোঃ আমি আপনার ব্যাপারে আল্লাহর নামে কসম করছি। আল্লাহ কি আপনার উপর বছরের এই মাসের রোযা ফরয করেছেন? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ ইয়া আল্লাহ্!হ্যাঁ। সে বললোঃ আমি আপনার ব্যাপারে আল্লাহর নামে কসম করছি। আল্লাহ্ কি আপনাকে বিত্তবানদের থেকে সাদকা তুলে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ ইয়া আল্লাহ্! হ্যাঁ। তখন লোকটি বললোঃ আপনি যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি ঈমান আনলাম। আর আমি আমার কাওমের লোকদের, যারা পেছনে রয়েছে, আমি তাদের প্রতিনিধি। আমি বনু সা'দ ইবন বনু বকরের ভাই যিমাম ইবন সা'লাবা।

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

হাদীসের শুরু অংশে প্রশ্ন করার যে নিষেধাজ্ঞার কথাটি বলা হয়েছে, এর দ্বারা কোরআন পাকের ঐ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছেঃ হে মুমিনগণ! তোমরা এমন বিষয় জিজ্ঞাসা করো না, যা পরিবাক্ত হলে তোমাদের কাছেই খারাপ লাগবে।। (সূরা মায়েদাহ) বাস্তব কথাও হচ্ছে এই যে, নতুন নতুন প্রশ্ন করা মানুষের একটি স্বভাব। কিন্তু এ অভ্যাসকে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছেড়ে দিলে এই ফল হয় যে, মানুষের মন ও আকর্ষণ তখন চুলচেরা তর্ক-বিতর্কের দিকেই বেশী অগ্রসর হয়। আর এতে কথার বিশ্লেষণের প্রবণতাই বেশী সৃষ্টি হয় এবং এ তুলনায় কর্ম ও আমল খুব কমই হয়ে থাকে। তাছাড়া এতে সময়ও নষ্ট হয়। বিশেষ করে যুগের নবীর কাছে অধিক প্রশ্ন করার একটি ক্ষতিকর দিক এটাও যে, নবীর পক্ষ থেকে যখন উত্তর আসে, তখন দেখা যায়, উম্মতের অনেক পাবন্দীও বেড়ে যায়। যা হোক, এ সকল কারণেই অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা থেকে সাহাবায়ে কেরামকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তারা নিজেরা প্রশ্ন খুবই কম করতেন এবং এ আশায় থাকতেন যে, কোন গ্রাম্য বেদুঈন এসে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করুক, আর এ সুযোগে আমরা কিছু শুনে শিখে নেই। কারণ, বেদুঈনদের জন্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে অনেক অবকাশ ছিল। এ হাদীসেরই এক বর্ণনায় হযরত আনাস (রাঃ) থেকেই বর্ণিত হয়েছে, “বেদুঈন লোকটি খুব দুঃসাহসের সাথে প্রশ্ন করে যাচ্ছিল এবং নির্দ্বিধায় যা মনে আসছিল তাই জিজ্ঞাসা করছিল।" — ফতহুল বারী। বুখারী শরীফে এ হাদীসেরই বর্ণনায় রয়েছে যে, শেষে যাবার সময় এই বেদুঈন বলেছিল। আমি বনু সা'দ ইবনে বকর গোত্রের এক সদস্য, আমার নাম হচ্ছে যেমাম ইবনে সা'আলাবাহ। আমি আমার গোত্রের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলাম। বুখারীর বর্ণনায় একথাও রয়েছে যে, এ লোকটি এসে প্রথমেই হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিল যে, আমি আপনার কাছে কিছু বিষয় জিজ্ঞাসা করব, তবে আমার প্রশ্নের ধরন কিছুটা শক্ত হবে। তাই বলে আপনি আমার উপর রাগ করবেন না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তোমার মনে যা আসে তাই জিজ্ঞাসা কর। তারপর ঐ প্রশ্নোত্তর হল, যা হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। প্রশ্নকারী বেদুঈন যাওয়ার সময় কসম খেয়ে যে কথাটি বলেছিল যে, "আমি এতে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি করব না", সম্ভবত তার এ কথার এ উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি আপনার এ শিক্ষা ও দিক নির্দেশনার সম্পূর্ণ অনুসরণ করব এবং আমার মনের চাহিদায় এতে কোন প্রকার কমবেশী করব না। দ্বিতীয় অর্থ এও হতে পারে যে, আমি আপনার এই পয়গাম ও বাণী অবিকল এভাবেই আমার গোত্রের কাছে পৌঁছে দিব এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে এতে কোন সংযোজন বা বিয়োজন করব না। অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, এ বেদুঈন লোকটি নিজ গোত্রের কাছে গিয়ে খুব উদ্যমের সাথে দ্বীন প্রচারের কাজ শুরু করে দিলেন। তিনি প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে এমন সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য বক্তব্য দিতে লাগলেন যে, তার কোন কোন নিকটাত্মীয় ও আপনজন তাকে বলল হে যেমাম। কুষ্ঠরোগ উন্মাদ হওয়া থেকে সাবধান থাক। (অর্থাৎ, দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করে কুন্ঠরোগে যেন আক্রান্ত না হয়ে যাও অথবা তুমি যেন পাগল না হয়ে যাও) কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা তার তবলীগ ও দ্বীন প্রচারে এমন বরকত দান করলেন যে, সকাল বেলা যারা তাকে কুষ্ঠরোগ ও পাগলামীতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল, সন্ধ্যা বেলায় তারাই মূর্তিপূজা থেকে তওবা করে তওহীদের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করল। ফলে সারা গোত্রে একটি প্রাাণীও আর অমুসলিম রইল না।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন

সুনানে ইবনে মাজা - হাদীস নং ১৪০২ | মুসলিম বাংলা