কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ
৫. নামাযের আদ্যোপান্ত বর্ণনা এবং সুন্নাতসমূহ
হাদীস নং: ১১৮১
আন্তর্জাতিক নং: ১১৮১
দু'আর সময় দু'হাত উঠান এবং তা দিয়ে চেহারা মাসেহ করা
১১৮১। আবু কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবন সাব্বাহ (রাহঃ) ........... ইবন 'আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ যখন তুমি আল্লাহর কাছে দু'আ করবে, তখন তোমাদের দু'হাতের তালু সামনে রেখে দু'আ করবে এবং এর পিঠ সামনে রেখে দু'আ করবে না। আর যখন দু'আ শেষ করবে। তখন উভয় হাত দিয়ে তোমার চেহারা মাসেহ করবে।
بَاب مَنْ رَفَعَ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ وَمَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ، قَالاَ حَدَّثَنَا عَائِذُ بْنُ حَبِيبٍ، عَنْ صَالِحِ بْنِ حَسَّانَ الأَنْصَارِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ الْقُرَظِيِّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " إِذَا دَعَوْتَ اللَّهَ فَادْعُ بِبَاطِنِ كَفَّيْكَ وَلاَ تَدْعُ بِظُهُورِهِمَا فَإِذَا فَرَغْتَ فَامْسَحْ بِهِمَا وَجْهَكَ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
বিতরের কুনূতে তাকবীর ও রাফয়ে ইয়াদাইন
যারা সহীহ হাদীসসমূহের ভিত্তিতে রুকুর আগে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের নিকট কিরাত ও কুনূতের মাঝে তাকবীর দেওয়া সুন্নত। এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইন আছে। এ প্রসঙ্গে কিছু রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হল।
১.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার মা উম্মে আব্দকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে পাঠালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীনদের সাথে রাত্রিযাপন করলেন এরপর জানালেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুর আগে কুনূত পড়েছেন’।’’
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقنت في الوتر قبل الركوع قال : ثم أرسلت أمي أم عبد فباتت عند نساءه فأخبرتني أنه قنت في الوتر قبل الركوع.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০২)
হাফেয ইবনে আবদিল বার ‘আলইসতীআব ফী মা’রিফাতিল আসহাব’ কিতাবে লেখেন, ‘উম্মে আবদ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর মহিয়সী জননী। তাঁর থেকে পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেন যে, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকুর আগে কুনূত পড়তে দেখেছি।’ তাঁর সম্পর্কেই ঐ হাদীসটি প্রসিদ্ধ, যা হাফ্স ইবনে আবু সুলায়মান বর্ণনা করেন আবান ইবনে আবী আইয়াশ থেকে, তিনি ইবরাহীম নাখায়ী থেকে, তিনি আলকামা থেকে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘আমি আমার আম্মাকে বললাম তিনি যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে রাত্রিযাপন করেন এবং তাঁর বিতর পড়া দেখেন। আম্মা তা করলেন (এবং জানালেন যে,) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামায পড়লেন যে পরিমাণ আল্লাহর ইচ্ছা, রাতের শেষ অংশে। এরপর বিতর নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন পড়লেন। এরপর বৈঠক করলেন এবং সালাম না ফিরিয়ে (তৃতীয় রাকাতে) দাঁড়ালেন। এই রাকাতে সূরা ইখলাস পড়লেন। এরপর তাকবীর দিয়ে দুআয়ে কুনূত পাঠ করলেন এবং যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা দুআ করলেন। এরপর তাকবীর দিয়ে রুকু করলেন।’
وفي الإستيعاب لابن عبد البر : أم عبد أم عبد الله بن مسعود روى عنها ابنها عبد الله بن مسعود أنها قالت : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت في الوتر قبل الركوع. ويعرف أيضا بها حديث أم بن مسعود يرويه حفص بن سليمان عن أبان بن عياش عن إبراهيم النخعي عن علقمة عن عبد الله قال أرسلت أمي ليلة لتبيت عند النبي صلى الله عليه وسلم فتنظر كيف يوتر فباتت عند النبي صلى الله عليه وسلم فصلى ما شاء الله أن يصلي حتى إذا كان آخر الليل وأراد الوتر قرأ بسح اسم ربك الأعلى في الركعة الأولى وقرأ في الثانية قل يا أيها الكافرون ثم قعد ثم قام ولم يفصل بينهما بالسلام ثم قرأ بقل هو الله أحد حتى إذا فرغ كبر ثم قنت فدعا بما شاء الله أن يدعوه ثم ركع فكبر.
(আলইসতীআব ৪/৪৫০; ইসাবার টীকায়)
২.
আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত, মাসরূক রাহ., আসওয়াদ রাহ. ও ইবনে মাসউদ রা.-এর অন্য শাগরিদগণ বলেছেন,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতর নামাযে কুনূত পড়তেন আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত পড়ার সময় তাকবীর দিতেন।
عن مسروق والأسود وأصحاب عبد الله قالوا كان عبد الله لا يقنت إلا في الوتر وكان يقنت قبل الركوع يكبر إذا فرغ من قراءته حين يقنت
{শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪ আরো দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৭}
এই রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করার পর ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় যুক্তি ও ইস্তিম্বাতের ভিত্তিতে বলা (বা করা) যায় না। তা একমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট শিক্ষা থেকেই গৃহীত হতে পারে।
إذ كان مثله لا يقال بالاستنباط ولا بالاستخراج وإنما يقال بالتوقيف الذي وقف رسول الله صلى الله عليه وسلم الناس عليه.
শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪-৩৭৫
ইমাম তহাবী রাহ. আরো বলেন, হযরত ওমর ফারূক রা.-এর আমলও এ পদ্ধতি সমর্থন করে। কারণ তিনি ফজরের নামাযে রুকুর আগে যখন কুনূত পড়তেন তখন কুনূতের জন্য তাকবীর দিতেন।-শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৫-৩৭৬
৩.
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের কুনূতের জন্য রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’
عن الأسود قال عن عبد الله مسعود رضي الله عنه كان يرفع يديه إذا قنت في الوتر
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/২৭-২৮)
৪.
ইমাম বুখারীর ‘রিসালা রাফয়িল ইয়াদাইনে’ (পৃ. ২৪) আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের শেষ রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন, এরপর রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
أنه كان يقرأ في آخر ركعة من الوتر قل هو الله احد ثم رفع يديه فيقنت قبل الركعة
৫.
আবু উছমান বলেন, ‘উমর রা. কুনূতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’
عن أبي عثمان كان عمر رضي الله عنه يرفع يديه في القنوت
(জুয্উ রাফয়িল ইয়াদাইন পৃ. ২৮)
৬.
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেছেন, ‘বিতর নামাযে কুনূত ওয়াজিব, রমযানে ও রমযানের বাইরে। যখন তুমি কুনূত পড়ার ইচ্ছা করবে তখন তাকবীর দিবে, এরপর (কুনূতের পর) যখন রুকু করার ইচ্ছা করবে তখন পুনরায় তাকবীর দিবে।
محمد قال : أخبرنا أبو حنيفة عن حماد عن إبراهيم أن ألقنوت في الوتر واجد في شهر رمضان وغيره وإذا أردت أن تقنت فكبر وإذا أردت أن تركع فكبر أيضا
(কিতাবুল আছার ১/৫৭৯; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০০)
এই রেওয়ায়েত বর্ণনা করার পর ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, ‘আমরা এই তরীকা মোতাবেকই আমল করি। আর কুনূতের তাকবীরে সেভাবেই হাত তুলবে যেভাবে নামাযের শুরুতে তোলা হয়। এরপর হাত বেঁধে দুআ করবে। এটিই ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর সিদ্ধান্ত।’
قال محمد وبه نأخذ ويرفع يديه في التكبيرة الأولى قبل القنوت كما يرفع يديه في افتتاح الصلاة ثم يضعهما ويدعو وهو قول أبي حنيفة رضي الله عنه .
(কিতাবুল আছার ১/৫৭৯)
ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, বিতর নামাযে কুনূতের তাকবীর হল এই নামাযে একটি অতিরিক্ত তাকবীর। যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের ইজমা রয়েছে যে,এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইনও করতে হবে।
وأما التكبير في القنوت في الوتر فإنها تكبيرة زائدة في تلك الصلاة وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع معها.
(তহাবী ১/৩৩২)
দুআয়ে কুনূতে হাত বাঁধা
বিতরের কুনূতে হাত বাধা-না বাঁধার ক্ষেত্রে তিনটি সম্ভাবনা আছে :
১. দোয়ার মতো হাত ওঠানো হবে।
২. কওমার মতো দুই হাত ছেড়ে দেওয়া
৩. রাফয়ে ইয়াদাইনের তার কিয়ামের মতো দুই হাত বাঁধা।
প্রথম পদ্ধতিটি হানাফী ইমামগণের নিকট পসন্দনীয় নয়। কারণ নামাযের যত জায়গায় দোয়া আছে কোথাও হাত ওঠানোর নিয়ম নেই। যদিও হাত তুলে দোয়া করাই দোয়ার সাধারণ নিয়ম। কিন্তু নামাযের মধ্যে হাত তুলে দোয়া করার বিধান নেই। এজন্যই ইবনে উমর রা. এই পদ্ধতিকে বিদআত বলেছেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন,‘দেখ,তোমরা যে ফজরের নামাযেও ইমামের কিরাত শেষে কুনূতের জন্য দাড়াও,আল্লাহর কসম,এটা বিদআত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুধু এক মাস করেছেন। দেখ, তোমরা যে নামাযে হাত তুলে কুনূত পড়,আল্লাহর কসম,এটিও বিদআত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো শুধু কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন।
قال عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال : أرأيتم قيامكم عند فراغ الإمام من السورة هذا القنوت والله إنه لبدعة ما فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم غير شهر ثم تركه أرأيتم رفعكم في الصلاة والله إنه لبدعة ما زاد رسول الله صلى الله عليه وسلم هذا قط فرفع يديه حيال منكبيه، رواه الطبراني في الكبير وفيه شهر بن حوشب ضعفه أحمد وابن معين وأبو زرعة وأبو حاتم والناسئي ووثقه أيوب وابن عدي.
(আলমু’জামুল কাবীর তবারানী; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৩৭)
উপরোক্ত রেওয়ায়েতের সরল অর্থ এটাই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূতের জন্য যদিও রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন কিন্তু দুআর মতো হাত উঠিয়ে কুনূত পড়তেন না।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে কথা এই যে, কুনূত যদি রুকুর আগে পড়া হয়, যেমন বিতরের কুনূত, তো রুকুর আগের হালত যেহেতু কিয়ামের হালত, আর কিয়ামের হালতে হাত বাঁধা সুন্নত তাই এ সময় হাত বাঁধা থাকবে। পক্ষান্তরে কুনূতে নাযিলা যেহেতু রুকুর পর কওমার হালতে পড়া হয় আর কওমার হালতে হাত বাঁধা সুন্নত নয় এজন্য এ কুনূত হাত ছেড়ে পড়া হবে।
যারা সহীহ হাদীসসমূহের ভিত্তিতে রুকুর আগে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের নিকট কিরাত ও কুনূতের মাঝে তাকবীর দেওয়া সুন্নত। এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইন আছে। এ প্রসঙ্গে কিছু রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হল।
১.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার মা উম্মে আব্দকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে পাঠালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীনদের সাথে রাত্রিযাপন করলেন এরপর জানালেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুর আগে কুনূত পড়েছেন’।’’
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقنت في الوتر قبل الركوع قال : ثم أرسلت أمي أم عبد فباتت عند نساءه فأخبرتني أنه قنت في الوتر قبل الركوع.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০২)
হাফেয ইবনে আবদিল বার ‘আলইসতীআব ফী মা’রিফাতিল আসহাব’ কিতাবে লেখেন, ‘উম্মে আবদ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর মহিয়সী জননী। তাঁর থেকে পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেন যে, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকুর আগে কুনূত পড়তে দেখেছি।’ তাঁর সম্পর্কেই ঐ হাদীসটি প্রসিদ্ধ, যা হাফ্স ইবনে আবু সুলায়মান বর্ণনা করেন আবান ইবনে আবী আইয়াশ থেকে, তিনি ইবরাহীম নাখায়ী থেকে, তিনি আলকামা থেকে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘আমি আমার আম্মাকে বললাম তিনি যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে রাত্রিযাপন করেন এবং তাঁর বিতর পড়া দেখেন। আম্মা তা করলেন (এবং জানালেন যে,) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামায পড়লেন যে পরিমাণ আল্লাহর ইচ্ছা, রাতের শেষ অংশে। এরপর বিতর নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন পড়লেন। এরপর বৈঠক করলেন এবং সালাম না ফিরিয়ে (তৃতীয় রাকাতে) দাঁড়ালেন। এই রাকাতে সূরা ইখলাস পড়লেন। এরপর তাকবীর দিয়ে দুআয়ে কুনূত পাঠ করলেন এবং যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা দুআ করলেন। এরপর তাকবীর দিয়ে রুকু করলেন।’
وفي الإستيعاب لابن عبد البر : أم عبد أم عبد الله بن مسعود روى عنها ابنها عبد الله بن مسعود أنها قالت : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت في الوتر قبل الركوع. ويعرف أيضا بها حديث أم بن مسعود يرويه حفص بن سليمان عن أبان بن عياش عن إبراهيم النخعي عن علقمة عن عبد الله قال أرسلت أمي ليلة لتبيت عند النبي صلى الله عليه وسلم فتنظر كيف يوتر فباتت عند النبي صلى الله عليه وسلم فصلى ما شاء الله أن يصلي حتى إذا كان آخر الليل وأراد الوتر قرأ بسح اسم ربك الأعلى في الركعة الأولى وقرأ في الثانية قل يا أيها الكافرون ثم قعد ثم قام ولم يفصل بينهما بالسلام ثم قرأ بقل هو الله أحد حتى إذا فرغ كبر ثم قنت فدعا بما شاء الله أن يدعوه ثم ركع فكبر.
(আলইসতীআব ৪/৪৫০; ইসাবার টীকায়)
২.
আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত, মাসরূক রাহ., আসওয়াদ রাহ. ও ইবনে মাসউদ রা.-এর অন্য শাগরিদগণ বলেছেন,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতর নামাযে কুনূত পড়তেন আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত পড়ার সময় তাকবীর দিতেন।
عن مسروق والأسود وأصحاب عبد الله قالوا كان عبد الله لا يقنت إلا في الوتر وكان يقنت قبل الركوع يكبر إذا فرغ من قراءته حين يقنت
{শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪ আরো দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৭}
এই রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করার পর ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় যুক্তি ও ইস্তিম্বাতের ভিত্তিতে বলা (বা করা) যায় না। তা একমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট শিক্ষা থেকেই গৃহীত হতে পারে।
إذ كان مثله لا يقال بالاستنباط ولا بالاستخراج وإنما يقال بالتوقيف الذي وقف رسول الله صلى الله عليه وسلم الناس عليه.
শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪-৩৭৫
ইমাম তহাবী রাহ. আরো বলেন, হযরত ওমর ফারূক রা.-এর আমলও এ পদ্ধতি সমর্থন করে। কারণ তিনি ফজরের নামাযে রুকুর আগে যখন কুনূত পড়তেন তখন কুনূতের জন্য তাকবীর দিতেন।-শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৫-৩৭৬
৩.
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের কুনূতের জন্য রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’
عن الأسود قال عن عبد الله مسعود رضي الله عنه كان يرفع يديه إذا قنت في الوتر
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/২৭-২৮)
৪.
ইমাম বুখারীর ‘রিসালা রাফয়িল ইয়াদাইনে’ (পৃ. ২৪) আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের শেষ রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন, এরপর রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
أنه كان يقرأ في آخر ركعة من الوتر قل هو الله احد ثم رفع يديه فيقنت قبل الركعة
৫.
আবু উছমান বলেন, ‘উমর রা. কুনূতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’
عن أبي عثمان كان عمر رضي الله عنه يرفع يديه في القنوت
(জুয্উ রাফয়িল ইয়াদাইন পৃ. ২৮)
৬.
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেছেন, ‘বিতর নামাযে কুনূত ওয়াজিব, রমযানে ও রমযানের বাইরে। যখন তুমি কুনূত পড়ার ইচ্ছা করবে তখন তাকবীর দিবে, এরপর (কুনূতের পর) যখন রুকু করার ইচ্ছা করবে তখন পুনরায় তাকবীর দিবে।
محمد قال : أخبرنا أبو حنيفة عن حماد عن إبراهيم أن ألقنوت في الوتر واجد في شهر رمضان وغيره وإذا أردت أن تقنت فكبر وإذا أردت أن تركع فكبر أيضا
(কিতাবুল আছার ১/৫৭৯; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০০)
এই রেওয়ায়েত বর্ণনা করার পর ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, ‘আমরা এই তরীকা মোতাবেকই আমল করি। আর কুনূতের তাকবীরে সেভাবেই হাত তুলবে যেভাবে নামাযের শুরুতে তোলা হয়। এরপর হাত বেঁধে দুআ করবে। এটিই ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর সিদ্ধান্ত।’
قال محمد وبه نأخذ ويرفع يديه في التكبيرة الأولى قبل القنوت كما يرفع يديه في افتتاح الصلاة ثم يضعهما ويدعو وهو قول أبي حنيفة رضي الله عنه .
(কিতাবুল আছার ১/৫৭৯)
ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, বিতর নামাযে কুনূতের তাকবীর হল এই নামাযে একটি অতিরিক্ত তাকবীর। যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের ইজমা রয়েছে যে,এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইনও করতে হবে।
وأما التكبير في القنوت في الوتر فإنها تكبيرة زائدة في تلك الصلاة وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع معها.
(তহাবী ১/৩৩২)
দুআয়ে কুনূতে হাত বাঁধা
বিতরের কুনূতে হাত বাধা-না বাঁধার ক্ষেত্রে তিনটি সম্ভাবনা আছে :
১. দোয়ার মতো হাত ওঠানো হবে।
২. কওমার মতো দুই হাত ছেড়ে দেওয়া
৩. রাফয়ে ইয়াদাইনের তার কিয়ামের মতো দুই হাত বাঁধা।
প্রথম পদ্ধতিটি হানাফী ইমামগণের নিকট পসন্দনীয় নয়। কারণ নামাযের যত জায়গায় দোয়া আছে কোথাও হাত ওঠানোর নিয়ম নেই। যদিও হাত তুলে দোয়া করাই দোয়ার সাধারণ নিয়ম। কিন্তু নামাযের মধ্যে হাত তুলে দোয়া করার বিধান নেই। এজন্যই ইবনে উমর রা. এই পদ্ধতিকে বিদআত বলেছেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন,‘দেখ,তোমরা যে ফজরের নামাযেও ইমামের কিরাত শেষে কুনূতের জন্য দাড়াও,আল্লাহর কসম,এটা বিদআত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুধু এক মাস করেছেন। দেখ, তোমরা যে নামাযে হাত তুলে কুনূত পড়,আল্লাহর কসম,এটিও বিদআত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো শুধু কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন।
قال عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال : أرأيتم قيامكم عند فراغ الإمام من السورة هذا القنوت والله إنه لبدعة ما فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم غير شهر ثم تركه أرأيتم رفعكم في الصلاة والله إنه لبدعة ما زاد رسول الله صلى الله عليه وسلم هذا قط فرفع يديه حيال منكبيه، رواه الطبراني في الكبير وفيه شهر بن حوشب ضعفه أحمد وابن معين وأبو زرعة وأبو حاتم والناسئي ووثقه أيوب وابن عدي.
(আলমু’জামুল কাবীর তবারানী; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৩৭)
উপরোক্ত রেওয়ায়েতের সরল অর্থ এটাই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূতের জন্য যদিও রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন কিন্তু দুআর মতো হাত উঠিয়ে কুনূত পড়তেন না।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে কথা এই যে, কুনূত যদি রুকুর আগে পড়া হয়, যেমন বিতরের কুনূত, তো রুকুর আগের হালত যেহেতু কিয়ামের হালত, আর কিয়ামের হালতে হাত বাঁধা সুন্নত তাই এ সময় হাত বাঁধা থাকবে। পক্ষান্তরে কুনূতে নাযিলা যেহেতু রুকুর পর কওমার হালতে পড়া হয় আর কওমার হালতে হাত বাঁধা সুন্নত নয় এজন্য এ কুনূত হাত ছেড়ে পড়া হবে।
