আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৮৪৩
১৭৭৯. যে ব্যক্তি কোন সৈনিককে আসবাবপত্র দিয়ে সাহায্য করে অথবা যুদ্ধে গমনকারী সৈনিকের পরিবার-পরিজনকে সাহায্য করে তার ফযীলত
২৬৪৬। আবু মা‘মার (রাহঃ) .... যায়দ ইবনে খালিদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর আসবাবপত্র সরবরাহ করে সে যেন জিহাদ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন জিহাদকারীর পরিবার-পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশোনা করে, সেও যেন জিহাদ করল।’
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে অতি গুরুত্বপূর্ণ দু'টি নেক আমলের কথা বলা হয়েছে, যা দ্বারা জিহাদে না গিয়েও জিহাদ করার ফযীলত লাভ হয়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মুজাহিদের যুদ্ধসামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেওয়া। কোনও এক মুজাহিদ হয়তো জিহাদে যাওয়ার নিয়ত করেছে। কিন্তু জিহাদের জন্য যেসব আসবাবের প্রয়োজন তা তার নেই। যেমন বাহন, অস্ত্রশস্ত্র, রসদ ইত্যাদি। এসব না থাকায় নিয়ত থাকা সত্ত্বেও সে জিহাদে যেতে পারছে না। অপর এক ব্যক্তির এসব আসবাব আছে কিংবা এমন সামর্থ্য আছে, যা দ্বারা সে এগুলো কিনতে পারে। কিন্তু অসুখ-বিসুখ বা অন্য কোনও ওযর থাকায় সে জিহাদে যেতে পারছে না। এ অবস্থায় সে যদি জিহাদে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে আসবাবের ব্যবস্থা করে দেয়, তবে মুজাহিদ ব্যক্তি জিহাদ করে যে ছাওয়াব অর্জন করবে অনুরূপ ছাওয়াবের অধিকারী সেও হয়ে যাবে। যদি প্রয়োজনীয় সবটা সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিতে পারে তবে তো পুরোপুরি তার মতই ছাওয়াব পাবে, আর তা দিতে না পারলে যতটুকু দিতে পারবে সেই পরিমাণ ছাওয়াব পাবে। কাজেই কোনও ব্যক্তি সবটা সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিতে না পারলে তার উচিত যতটুকু পারে ততটুকুই দেওয়া।
এমনিভাবে মুজাহিদ ব্যক্তি যুদ্ধে যাওয়ার পর তার পরিবারবর্গের দেখাশোনা করাও অনেক বড় ফযীলতের কাজ। এতে জিহাদে না গিয়েও জিহাদের ছাওয়াব পাওয়া যায়। কেননা এটাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সকল সক্ষম পুরুষ যদি জিহাদে চলে যায়, তবে নারী ও শিশুরা অসহায় হয়ে পড়বে। তখন শত্রুদের পক্ষ থেকে তাদের অনেক বড় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তো দেখা যায় তাবূক যুদ্ধের মত এক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাভিযানে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রাযি.-কে সঙ্গে না নিয়ে মদীনা মুনাওয়ারায় রেখে যান এবং তাঁর ওপর তাঁর পরিবারবর্গের দেখাশোনার দায়িত্বভার অর্পণ করেন। হযরত আলী রাযি. বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে নারী ও শিশুদের সঙ্গে রেখে যাচ্ছেন? তখন তিনি তাঁকে বলেছিলেনঃ-
أما ترضى أن تكون مني بمنزلة هارون من موسى، إلا أنه لا نبي بعدي
‘তুমি কি এতে খুশি নও যে, মূসার সঙ্গে হারূনের যে অবস্থান ছিল, আমার সঙ্গে তুমি সেই অবস্থানে থাকবে? অবশ্য আমার পরে কোনও নবী নেই। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৪১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৪০৪; জামে তিরমিযী,হাদীছ নং ৩৭২৪)
অর্থাৎ মূসা আলাইহিস সালাম তূর পাহাড়ে যাওয়ার সময় হযরত হারূন ‘আলাইহিস সালামকে কওমের মধ্যে নিজ স্থলাভিষিক্তরূপে রেখে গিয়েছিলেন। তেমনি তুমি আমার পরিবারবর্গের মধ্যে আমার স্থলাভিষিক্তরূপে দায়িত্ব পালন করবে। পার্থক্য এই যে, হারূন ‘আলাইহিস সালাম একজন নবী ছিলেন, কিন্তু তুমি নবী নও, যেহেতু আমার পর কারও নবী হওয়ার কোনও অবকাশ নেই।
যাহোক যে ব্যক্তি কোনও মুজাহিদের পরিবারবর্গের খোঁজখবর রাখবে, তাদের কোনও প্রয়োজন দেখা দিলে তার সমাধান করবে, তাদের বিপদাপদে পাশে দাঁড়াবে এবং যে-কোনও জরুরতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে, সে যুদ্ধে না গিয়েও মুজাহিদ ব্যক্তির অনুরূপ ছাওয়াব লাভ করবে। এ ক্ষেত্রেও যতটুকু সাহায্য করা সম্ভব তা করা উচিত। মুজাহিদ ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধান করতে পারলে ছাওয়াবও পরিপূর্ণ লাভ করবে, অন্যথায় যতটুকু করতে পারে ততটুকু ছাওয়াবের অধিকারী হবে।
অবশ্য উভয় ক্ষেত্রেই সহীহ নিয়ত ও ইখলাসের বিষয়টিও লক্ষণীয়। এক তো ছাওয়াব পাবে তখনই, যখন ইখলাস থাকবে। দ্বিতীয়ত যদি কারও নিয়ত থাকে যে, আমার পক্ষে মুজাহিদ ব্যক্তির সবটা আসবাবের ব্যবস্থা করে দেওয়া সম্ভব হলে আমি তা অবশ্যই করতাম কিংবা তার পরিবারের পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা থাকলে আমি পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধানই করতাম, তবে আংশিক করেও পরিপূর্ণ ছাওয়াব পেয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা মহাদাতা। তাঁর ভাণ্ডারে কোনওকিছুর অভাব নেই ।
প্রকাশ থাকে যে, হাদীছে সুনির্দিষ্টভাবে জিহাদের কথা বলা হলেও অন্যান্য দীনী কাজও এ নিয়মের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন কেউ যদি 'ইলমে দীন শেখার জন্য সফর করে, তাহলে যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গের খোঁজখবর রাখবে সেও ওই সফরকারীর মতই ছাওয়াবের অধিকারী হবে।
এমনিভাবে যে ব্যক্তি নিজে ইলমে দীন শেখার জন্য কোথাও যেতে পারে না সে যদি তালিবে ইলমকে সহযোগিতা করে, যেমন কিতাব কিনে দেওয়া, পথখরচা দেওয়া বা তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া ইত্যাদি, তবে তার আমলনামায়ও তালিবে ইলমের মত ছাওয়াব লেখা হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জিহাদের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। সুতরাং প্রত্যেকেরই উচিত কোনও না কোনওভাবে এ মহান কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকা বা থাকার নিয়ত রাখা ।
খ. যে ব্যক্তির সক্রিয় জিহাদে অংশগ্রহণের সুযোগ আছে সে তো সক্রিয়ভাবেই অংশগ্রহণ করবে, আর যে ব্যক্তির ক্ষমতা নেই তার কর্তব্য আসবাবপত্র দিয়ে মুজাহিদকে সাহায্য করা।
গ. মুজাহিদ ব্যক্তি জিহাদে চলে যাওয়ার পর অন্যদের উচিত তার পরিবারবর্গের খোঁজখবর রাখা ও তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করা।
ঘ. ইলমে দীন শেখা বা অন্য কোনও দীনী কাজের উদ্দেশ্যে কেউ সফরে যেতে চাইলে অন্যদের উচিত তার আসবাবপত্র বা অন্যান্য খরচায় সাহায্য করা। এমনিভাবে তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারবর্গের তত্ত্বাবধান করা।
এমনিভাবে মুজাহিদ ব্যক্তি যুদ্ধে যাওয়ার পর তার পরিবারবর্গের দেখাশোনা করাও অনেক বড় ফযীলতের কাজ। এতে জিহাদে না গিয়েও জিহাদের ছাওয়াব পাওয়া যায়। কেননা এটাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সকল সক্ষম পুরুষ যদি জিহাদে চলে যায়, তবে নারী ও শিশুরা অসহায় হয়ে পড়বে। তখন শত্রুদের পক্ষ থেকে তাদের অনেক বড় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তো দেখা যায় তাবূক যুদ্ধের মত এক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাভিযানে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রাযি.-কে সঙ্গে না নিয়ে মদীনা মুনাওয়ারায় রেখে যান এবং তাঁর ওপর তাঁর পরিবারবর্গের দেখাশোনার দায়িত্বভার অর্পণ করেন। হযরত আলী রাযি. বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে নারী ও শিশুদের সঙ্গে রেখে যাচ্ছেন? তখন তিনি তাঁকে বলেছিলেনঃ-
أما ترضى أن تكون مني بمنزلة هارون من موسى، إلا أنه لا نبي بعدي
‘তুমি কি এতে খুশি নও যে, মূসার সঙ্গে হারূনের যে অবস্থান ছিল, আমার সঙ্গে তুমি সেই অবস্থানে থাকবে? অবশ্য আমার পরে কোনও নবী নেই। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৪১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৪০৪; জামে তিরমিযী,হাদীছ নং ৩৭২৪)
অর্থাৎ মূসা আলাইহিস সালাম তূর পাহাড়ে যাওয়ার সময় হযরত হারূন ‘আলাইহিস সালামকে কওমের মধ্যে নিজ স্থলাভিষিক্তরূপে রেখে গিয়েছিলেন। তেমনি তুমি আমার পরিবারবর্গের মধ্যে আমার স্থলাভিষিক্তরূপে দায়িত্ব পালন করবে। পার্থক্য এই যে, হারূন ‘আলাইহিস সালাম একজন নবী ছিলেন, কিন্তু তুমি নবী নও, যেহেতু আমার পর কারও নবী হওয়ার কোনও অবকাশ নেই।
যাহোক যে ব্যক্তি কোনও মুজাহিদের পরিবারবর্গের খোঁজখবর রাখবে, তাদের কোনও প্রয়োজন দেখা দিলে তার সমাধান করবে, তাদের বিপদাপদে পাশে দাঁড়াবে এবং যে-কোনও জরুরতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে, সে যুদ্ধে না গিয়েও মুজাহিদ ব্যক্তির অনুরূপ ছাওয়াব লাভ করবে। এ ক্ষেত্রেও যতটুকু সাহায্য করা সম্ভব তা করা উচিত। মুজাহিদ ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধান করতে পারলে ছাওয়াবও পরিপূর্ণ লাভ করবে, অন্যথায় যতটুকু করতে পারে ততটুকু ছাওয়াবের অধিকারী হবে।
অবশ্য উভয় ক্ষেত্রেই সহীহ নিয়ত ও ইখলাসের বিষয়টিও লক্ষণীয়। এক তো ছাওয়াব পাবে তখনই, যখন ইখলাস থাকবে। দ্বিতীয়ত যদি কারও নিয়ত থাকে যে, আমার পক্ষে মুজাহিদ ব্যক্তির সবটা আসবাবের ব্যবস্থা করে দেওয়া সম্ভব হলে আমি তা অবশ্যই করতাম কিংবা তার পরিবারের পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা থাকলে আমি পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধানই করতাম, তবে আংশিক করেও পরিপূর্ণ ছাওয়াব পেয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা মহাদাতা। তাঁর ভাণ্ডারে কোনওকিছুর অভাব নেই ।
প্রকাশ থাকে যে, হাদীছে সুনির্দিষ্টভাবে জিহাদের কথা বলা হলেও অন্যান্য দীনী কাজও এ নিয়মের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন কেউ যদি 'ইলমে দীন শেখার জন্য সফর করে, তাহলে যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গের খোঁজখবর রাখবে সেও ওই সফরকারীর মতই ছাওয়াবের অধিকারী হবে।
এমনিভাবে যে ব্যক্তি নিজে ইলমে দীন শেখার জন্য কোথাও যেতে পারে না সে যদি তালিবে ইলমকে সহযোগিতা করে, যেমন কিতাব কিনে দেওয়া, পথখরচা দেওয়া বা তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া ইত্যাদি, তবে তার আমলনামায়ও তালিবে ইলমের মত ছাওয়াব লেখা হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জিহাদের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। সুতরাং প্রত্যেকেরই উচিত কোনও না কোনওভাবে এ মহান কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকা বা থাকার নিয়ত রাখা ।
খ. যে ব্যক্তির সক্রিয় জিহাদে অংশগ্রহণের সুযোগ আছে সে তো সক্রিয়ভাবেই অংশগ্রহণ করবে, আর যে ব্যক্তির ক্ষমতা নেই তার কর্তব্য আসবাবপত্র দিয়ে মুজাহিদকে সাহায্য করা।
গ. মুজাহিদ ব্যক্তি জিহাদে চলে যাওয়ার পর অন্যদের উচিত তার পরিবারবর্গের খোঁজখবর রাখা ও তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করা।
ঘ. ইলমে দীন শেখা বা অন্য কোনও দীনী কাজের উদ্দেশ্যে কেউ সফরে যেতে চাইলে অন্যদের উচিত তার আসবাবপত্র বা অন্যান্য খরচায় সাহায্য করা। এমনিভাবে তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারবর্গের তত্ত্বাবধান করা।
