আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৮১০
১৭৫৬. যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা (দীন) বুলন্দ থাকার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে
২৬১৫। সুলাইমান ইবনে হারব (রাহঃ) .... আবু মুসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (ﷺ)- এর কাছে এসে বলল, এক ব্যক্তি গনীমতের জন্য, এক ব্যক্তি প্রসিদ্ধির জন্য এবং এক ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য জিহাদে শরীক হল। তাদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করল? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কলিমা বুলন্দ থাকার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করল, সে-ই আল্লাহর পথে জিহাদ করল।’

হাদীসের ব্যাখ্যা:

লাহিক ইব্‌ন যামরাহ বাহিলী রাযি. নামক জনৈক সাহাবী তিন ব্যক্তি সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছে বলে গণ্য হবে?

এক সেই ব্যক্তি, যে যুদ্ধ করে বীরত্ববশত। অর্থাৎ একজন বীরপুরুষ হওয়ার কারণে সে যুদ্ধ করতে ভালোবাসে। তাই কখন কোথায় যুদ্ধ হবে সেই অপেক্ষায় থাকে। যখনই কোথাও যুদ্ধ লেগে যায় তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা বা অন্য কিছু নয়, কেবলই যুদ্ধের আসক্তি।

দ্বিতীয় ওই ব্যক্তি, যে যুদ্ধ করে গোষ্ঠীপ্রীতি বা দেশপ্রেমের কারণে। এ ক্ষেত্রে তার ন্যায়-অন্যায়ের কোনও বালাই নেই। আল্লাহর হুকুমের প্রতি লক্ষ নেই। যেহেতু তার গোষ্ঠী বা দেশ যুদ্ধ করছে, সেই খাতিরে সেও যুদ্ধে নেমে পড়েছে।

তৃতীয় ওই ব্যক্তি, যে যুদ্ধ করে মানুষকে দেখানোর জন্য। অর্থাৎ লোকে দেখুক সে কেমন বীরপুরুষ, কত রণকুশলী। আর এভাবে চারদিকে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়ুক এবং একজন বাহাদুর হিসেবে সে পরিচিত হয়ে উঠুক।

এই তিন ব্যক্তির যুদ্ধকে কি আল্লাহর পথে যুদ্ধ হিসেবে গণ্য করা হবে? এ যুদ্ধের বিনিময়ে কি সে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ছওয়াবের অধিকারী হবে? এবং এ যুদ্ধে নিহত হলে সে কি শহীদের মর্যাদা পাবে?
উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের কাউকেই আল্লাহর পথের যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন না; বরং তিনি বললেন, আল্লাহর পথে যুদ্ধকারী সেই ব্যক্তি, যে যুদ্ধ করে কেবল এই উদ্দেশ্যে, যাতে আল্লাহর কালেমা উঁচু ও জয়যুক্ত হয়। আল্লাহর কালেমা বলতে আল্লাহর দীনকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর দীন তথা ইসলামকে রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে ব্যক্তি লড়াই করে, সেই আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে বলে গণ্য হবে। ফলে এর বিনিময়ে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ছওয়াবের অধিকারী হবে এবং মারা গেলে শহীদের মর্যাদা পাবে।

প্রকাশ থাকে যে, দেশের জন্য যুদ্ধ করাটাও প্রকৃত জিহাদ বা আল্লাহর পথের যুদ্ধরূপে গণ্য হতে পারে, যদি সে ক্ষেত্রে লক্ষ থাকে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ'র স্বার্থ। অর্থাৎ এই চেতনা থেকে যদি যুদ্ধ করে যে, এ দেশ মুসলিমদের দেশ। এ দেশে ইসলাম আছে। যদি এ দেশ কুফরী শক্তির দখলে চলে যায়, তবে ইসলাম ঝুঁকিতে পড়ে যাবে এবং মুসলিমগণের পক্ষে ইসলামী জীবনযাপন দুরূহ হয়ে পড়বে। সেই পরিস্থিতি থেকে দেশরক্ষার জন্য যুদ্ধ করলে তা ইসলামী জিহাদ বা আল্লাহর পথে যুদ্ধ বলেই বিবেচিত হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যে বিষয়ে কোনও অস্পষ্টতা থাকে বা মনে খটকা জাগে, সে সম্পর্কে জ্ঞানীজনের কাছে জিজ্ঞেস করে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা উচিত।

খ. যে-কোনও দীনী মেহনত ও ত্যাগস্বীকারে লক্ষ্য থাকবে কেবলই আল্লাহর সন্তুষ্টি,তবেই সে মেহনত আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে।

গ. প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য আল্লাহর দীন ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় ভূমিকা রাখা।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন