কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৩. আযানের অধ্যায় ও তার সুন্নাতসমূহ

হাদীস নং: ৭০৬
আন্তর্জাতিক নং: ৭০৬
আযানের সূচনা
৭০৬। আবু 'উবায়দ মুহাম্মাদ, ইবন 'উবায়দ ইবন মায়মূন মাদানী (রাহঃ) ….. 'আব্দুল্লাহ ইবন যায়দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শিঙ্গা ধ্বনি দিয়ে লোকদের আহবান জানানোর মনস্থ করেন এবং তিনি নাকূস[১] দ্বারা লোকদের আহবান করার নির্দেশ দেন। এরপর 'আব্দুল্লাহ ইবন যায়দ (রাযিঃ)-কে স্বপ্নে দেখানো হলো। তিনি বলেনঃ আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখলাম, যার পরিধানে ছিল দুটি সবুজ বর্ণের কাপড়। সে নাকূস বহন করছিল। তখন আমি তাকে বললামঃ হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি নাকূস বিক্রি করবে ? সে বললোঃ এ দিয়ে তুমি কি করবে? আমি বললামঃ আমি এ দিয়ে সালাতের জন্য আহ্বান করবো। সে বললোঃ আমি কি তোমাকে এর চাইতে কোন উত্তম জিনিস সম্পর্কে বলে দেব না? আমি বললামঃ সেটি কি? সে বললোঃ তুমি বলবেঃ

الله أكبر ، الله أكبر، الله أكبر ، الله أكبر ، أشهد أن لا اله الا الله ، أشهد أن لا اله الا الله ، أشهد أن محمدا رسول الله ، أشهد أن محمدا رسول الله ـ حي على الصلوة ، حي على الصلوة ـ حي على الفلاح حي على الفلاح - الله أكبر الله أكبر . لا اله الا الله

“আল্লাহ মহান,আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই (২ বার)। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল (২ বার), সালাতের দিকে এসো (২ বার), কল্যাণের পানে এসো (২বার), আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। রাবী বলেন, তখন 'আব্দুল্লাহ ইবন যায়দ (রাযিঃ) বের হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আসলেন এবং যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, সে সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলেন 'আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) আমি স্বপ্নযোগে দুইখানি সবুজ কাপড় পরিহিত এক ব্যক্তিকে দেখেছি, যে বহন করছিল একটি নাকূস। এরপর তিনি তাঁর কাছে সব ঘটনা খুলে বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমাদের এই সাথী একটি স্বপ্ন দেখেছে। [তখন নবী (ﷺ) আব্দুল্লাহ (রাযিঃ)-কে বললেনঃ] তুমি বিলালের সঙ্গে মসজিদে যাও এবং তাকে এগুলো শিখিয়ে দাও। আর বিলাল (রাযিঃ) যেন আযান দেয়। কেননা সে তোমার চাইতে উঁচু কণ্ঠস্বর বিশিষ্ট। রাবী বলেনঃ তখন আমি বিলালের সঙ্গে মসজিদে গেলাম। আমি তাঁকে শিখিয়ে দিচ্ছিলাম এবং তিনি তা উঁচুস্বরে ঘোষণা দিচ্ছিলেন। রাবী বলেনঃ 'উমর ইবন খাত্তাব (রাযিঃ) এ ধ্বনি শুনে বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আল্লাহর কসম! আমিও তো এরূপ স্বপ্ন দেখেছি যেরূপ সে দেখেছে।

আবু 'উবায়দ (রাহঃ) বলেনঃ আবু বাকর হাকামী (রাহঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, 'আব্দুল্লাহ ইবন যায়দ আনসারী (রাযিঃ) এ ঘটনা সম্পর্কে বলেনঃ
أحمد الله ذا الجلال وذا الال - رام حمدا على الاذان كثيرا
১. আমি মহামহিম, গৌরবান্বিত আল্লাহর অশেষ প্রশংসা জ্ঞাপন করছি, আযান শিক্ষা দেওয়ার জন্য।
اذا أتاني به البشير من الله - فأكرم به لدى بشيرا
২. যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদদাতা (ফিরিশতা) তা নিয়ে আমার কাছে এলো, আমাকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য, তাতো সম্মানকর।
في ليال والي بهن ثلاث × كلما جاء زادنی توقیرا
৩. সে তিন রাত আমাকে আযান শিক্ষা দিচ্ছিল, যখনই সে এলো, তখনই সে আমার মান-মর্যাদা বাড়িয়ে দিল।

[১] নাকূসঃ শিঙ্গাবিশেষ।
بَاب بَدْءِ الْأَذَانِ
حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدٍ، مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدِ بْنِ مَيْمُونٍ الْمَدَنِيُّ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْحَرَّانِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيُّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَدْ هَمَّ بِالْبُوقِ وَأَمَرَ بِالنَّاقُوسِ فَنُحِتَ فَأُرِيَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ فِي الْمَنَامِ قَالَ رَأَيْتُ رَجُلاً عَلَيْهِ ثَوْبَانِ أَخْضَرَانِ يَحْمِلُ نَاقُوسًا فَقُلْتُ لَهُ يَا عَبْدَ اللَّهِ تَبِيعُ النَّاقُوسَ قَالَ وَمَا تَصْنَعُ بِهِ قُلْتُ أُنَادِي بِهِ إِلَى الصَّلاَةِ ‏.‏ قَالَ أَفَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى خَيْرٍ مِنْ ذَلِكَ قُلْتُ وَمَا هُوَ قَالَ تَقُولُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ ‏.‏ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ‏.‏ قَالَ فَخَرَجَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ حَتَّى أَتَى رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَأَخْبَرَهُ بِمَا رَأَى ‏.‏ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْتُ رَجُلاً عَلَيْهِ ثَوْبَانِ أَخْضَرَانِ يَحْمِلُ نَاقُوسًا ‏.‏ فَقَصَّ عَلَيْهِ الْخَبَرَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ إِنَّ صَاحِبَكُمْ قَدْ رَأَى رُؤْيَا فَاخْرُجْ مَعَ بِلاَلٍ إِلَى الْمَسْجِدِ فَأَلْقِهَا عَلَيْهِ وَلْيُنَادِ بِلاَلٌ فَإِنَّهُ أَنْدَى صَوْتًا مِنْكَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَخَرَجْتُ مَعَ بِلاَلٍ إِلَى الْمَسْجِدِ فَجَعَلْتُ أُلْقِيهَا عَلَيْهِ وَهُوَ يُنَادِي بِهَا ‏.‏ قَالَ فَسَمِعَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ بِالصَّوْتِ فَخَرَجَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ مِثْلَ الَّذِي رَأَى ‏.‏ قَالَ أَبُو عُبَيْدٍ فَأَخْبَرَنِي أَبُو بَكْرٍ الْحَكَمِيُّ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ زَيْدٍ الأَنْصَارِيَّ قَالَ فِي ذَلِكَ أَحْمَدُ اللَّهَ ذَا الْجَلاَلِ وَذَا الإِكْرَامِ حَمْدًا عَلَى الأَذَانِ كَثِيرًا إِذْ أَتَانِي بِهِ الْبَشِيرُ مِنَ اللَّهِ فَأَكْرِمْ بِهِ لَدَىَّ بَشِيرًا فِي لَيَالٍ وَالَى بِهِنَّ ثَلاَثٍ كُلَّمَا جَاءَ زَادَنِي تَوْقِيرًا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উপরিউক্ত হাদীসের ভিত্তিতে আমরা উক্ত পদ্ধতির আযান ও ইকামাত আমাদের আমল হিসেবে গ্রহণ করেছি। (আলমগিরী: ১/৫৫) আমাদের গৃহীত পদ্ধতিতে আযানের শুরুতে الله أَكْبَرُ চারবার বলতে হয়। কোন কোন ইমাম অন্য হাদীসের ভিত্তিতে আযানের শুরুতে দু’বার الله أَكْبَرُ বলে থাকেন। আবার আমাদের গৃহীত পদ্ধতিতে আযানের মধ্যে কোন ‘তারজী’ নেই। উল্লেখ্য, ‘তারজী’ হলো: উভয় শাহাদাত দু’বার করে নীচু আওয়াজে বলে পুনরায় দু’বার উঁচু আওয়াজে বলা।
এর বিপরীতে কোন কোন ইমাম হযরত আবু মাহজুরা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের ভিত্তিতে আযানের মধ্যে ‘তারজী’ করে থাকেন। কিন্তু আমাদের গৃহীত পদ্ধতিই উত্তম। কারণ উপরোল্লিখিত হাদীস দ্বারা আযানের সূচনা হয়েছে। আর এতে যেমন ‘তারজী’ নেই, তেমন আযানের শুরুতে الله أَكْبَرُ দু’বারও বর্ণিত নেই। এ ব্যাপারে ইবনুল জাওঝী ‘আত তাহকীক ফী আহাদীসিল খিলাফ’ কিতাবে বর্ণনা করেন যে,وَهَذَا الحَدِيث أصل التأذين و لَيْسَ فِيهِ تَرْجِيع فَدلَّ عَلَى أَنه الْمُسْتَحبّ و عَلَيْهِ عمل أهل الْمَدِينَة وَالْأَخْذ بالمتأخر من حَال رَسُول الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم এ হাদীসটি আযানের মূল। আর এখানে তারজী’ নেই। সুতরাং এ হাদীস এটা প্রমাণ করে যে, ‘তারজী’ না করা মুস্তাহাব। আর এটা মদীনাবাসীদের আমল এবং এটাকেই রসূলুল্লাহ স.-এর শেষ আমল হিসেবে গ্রহণ করা হয়। (আত তাহকীক: ৩৫৮ নাম্বার হাদীসের আলোচনায়)