আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৫- অছিয়াত সম্পর্কিত অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৭৬০
১৭২৪. হঠাৎ মারা গেলে তারপক্ষ থেকে সাদ্কা করা মুস্তাহাব আর মৃত ব্যক্তির তরফ থেকে তার মান্নত আদায় করা
২৫৭২। ইসমাঈল (রাহঃ) .... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, একজন সাহাবী নবী (ﷺ) কে বললেন, আমার মা হঠাৎ মারা যান। আমার ধারণা যে, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন, তাহলে সাদ্কা করতেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে সাদ্কা করতে পারি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে সাদ্কা কর।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
ইহজীবন মানুষের কর্মক্ষেত্র। মৃত্যু দ্বারা মানুষের যাবতীয় কাজকর্মের পরিসমাপ্তি ঘটে। মৃত্যুর পরের জীবন হল তার কর্মফল ভোগের সময়। ইহজীবনে ভালো কাজ করে থাকলে মৃত্যুর পর থেকেই সে তার সুফল ভোগ করতে পারবে। তেমনি মন্দ কাজ করলেও মৃত্যুর পর থেকেই তার কুফল ভোগ শুরু হয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা অশেষ দয়ার অধিকারী। মুমিনদের বেলায় তিনি এমন কিছু ব্যবস্থা দান করেছেন, যা তাদের মৃত্যুর পর তাদের পক্ষ থেকে অন্য কেউ করলেও তারা তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে। আলোচ্য হাদীছটি দ্বারা তা সুস্পষ্টভাবেই জানা যায়। এ হাদীছে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তার মা হঠাৎ করে মারা গেলে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জানতে চেয়েছিলেন যে, তিনি তার মায়ের পক্ষ থেকে দান-সদাকা করলে তার ছাওয়াব তার মা পাবে কি না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানালেন যে, হাঁ, সে তার ছাওয়াব পাবে।
অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, ওই সাহাবী হলেন হযরত সা'দ ইবন উবাদা রাযি. তাঁর মায়ের নাম 'আমরা বিনতে মাস'ঊদ। তাঁর মৃত্যুকালে হযরত সা'দ রাযি. উপস্থিত ছিলেন না। কোনও এক সফরে ছিলেন। ফিরে আসার পর তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর মা হঠাৎ করেই মারা গেছেন। কথা বলার সুযোগ পাননি। ধারণা ছিল যে, কথা বলতে পারলে হয়তো নিজেই সদাকা করতেন অথবা সদাকা করার অসিয়ত করতেন। মা যখন তা করতে পারেননি, তখন তাঁর পক্ষ থেকে তার প্রিয়পুত্রের সদাকা করার আগ্রহ হল। কিন্তু তাঁর সদাকা করার দ্বারা মা উপকৃত হবেন কি না অর্থাৎ তার ছাওয়ার তাঁর মায়ের আমলনামায় লেখা হবে কি না, সে কথা তাঁর জানা ছিল না। এজন্যই এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন। তিনি যখন জানালেন যে তাঁর দান-খয়রাত করার দ্বারা তাঁর মা উপকৃত হবেন, তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাক্ষী রেখে বললেন যে, আমি আমার 'মিখরাফ' নামক খেজুর বাগানটি তাঁর ঈসালে ছাওয়াবের জন্য সদাকা করে দিলাম। (সহীহ বুখারী: ২৭৫৬; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫৩৭০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১২৬৩১)
প্রশ্ন হতে পারে, একজনের কৃত আমলের ছাওয়াব আরেকজন কীভাবে পেতে পারে? কুরআন মাজীদে তো ইরশাদ হয়েছে-
وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى
আর এই যে, মানুষ নিজের প্রচেষ্টা ছাড়া অন্য কোনও কিছুর (বিনিময় লাভের) হকদার হয় না। (সূরা নাজম, আয়াত ৩৯)
এর উত্তর হল, মৌলিকভাবে আয়াতটির সম্পর্ক কাফেরদের সঙ্গে। ঈমান না থাকার কারণে তাদের নিজেদের আমলই তো গ্রহণযোগ্য হয় না। সেখানে অন্যের কৃত আমলের ছাওয়াব তা কি করে পেতে পারে? মুমিনদের বেলায় আল্লাহ তা'আলার রহমত ও দয়া অনেক বিস্তৃত। তিনি একান্তই নিজ মেহেরবানিতে তাদেরকে অন্যের কৃত আমলের ছাওয়াবও দান করে থাকেন। কেউ যদি এই নিয়তে কোনও সৎকর্ম করে যে, তার ছাওয়াব যেন তার পিতা-মাতা বা অন্য কোনও প্রিয়জন পায়, তবে আল্লাহ তা'আলা তার নিয়ত অনুযায়ী সে প্রিয়জনকে আমলটির ছাওয়াব দিয়ে থাকেন। পরিভাষায় একে ঈসালে ছাওয়াব (ছাওয়াব পৌঁছানো) বলে। এ হাদীছটি দ্বারা প্রমাণ হয় যে, ঈসালে ছাওয়াব শরী'আতসম্মত।
তাছাড়া এক দৃষ্টিতে সন্তানের আমল পিতা-মাতার আমলই বটে। তা এই দৃষ্টিতে যে, পিতা-মাতা সে শিক্ষাদান করার ফলেই সন্তান নেক আমল করে। এভাবে তার অনেক আমলে পিতা-মাতারও ভূমিকা থাকে। সে কারণে ঈসালে ছাওয়াব ছাড়া এমনিতেও পিতা-মাতা সন্তানের নেক আমলের ছাওয়াবে অংশীদার হয়।
হাদীছটি দ্বারা হযরত সা'দ ইবন উবাদা রাযি.-এর মাতৃভক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। সন্তানের কর্তব্য সে জীবদ্দশায় যেমন পিতা-মাতার খেদমত করে, তেমনি পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও তাদের দীনী খেদমতের চেষ্টা করা। ঈসালে ছাওয়াব করা অর্থাৎ তারা ছাওয়াব পাবে এই নিয়তে দান-খয়রাত বা অন্য কোনও সৎকর্ম করা তাদের দীনী খেদমত। এর দ্বারা কবরে ও আখিরাতে উপকৃত হয়ে থাকে, যেমনটা আলোচ্য হাদীছ দ্বারা জানা গেল।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জীবিতদের দান-খয়রাত ও সৎকর্ম দ্বারা মৃতরা উপকৃত হয়ে থাকে।
খ. সন্তানের কর্তব্য মৃত পিতা-মাতার জন্য ঈসালে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে সাধ্যমতো দান-খয়রাত, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি সৎকর্ম করা।
অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, ওই সাহাবী হলেন হযরত সা'দ ইবন উবাদা রাযি. তাঁর মায়ের নাম 'আমরা বিনতে মাস'ঊদ। তাঁর মৃত্যুকালে হযরত সা'দ রাযি. উপস্থিত ছিলেন না। কোনও এক সফরে ছিলেন। ফিরে আসার পর তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর মা হঠাৎ করেই মারা গেছেন। কথা বলার সুযোগ পাননি। ধারণা ছিল যে, কথা বলতে পারলে হয়তো নিজেই সদাকা করতেন অথবা সদাকা করার অসিয়ত করতেন। মা যখন তা করতে পারেননি, তখন তাঁর পক্ষ থেকে তার প্রিয়পুত্রের সদাকা করার আগ্রহ হল। কিন্তু তাঁর সদাকা করার দ্বারা মা উপকৃত হবেন কি না অর্থাৎ তার ছাওয়ার তাঁর মায়ের আমলনামায় লেখা হবে কি না, সে কথা তাঁর জানা ছিল না। এজন্যই এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন। তিনি যখন জানালেন যে তাঁর দান-খয়রাত করার দ্বারা তাঁর মা উপকৃত হবেন, তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাক্ষী রেখে বললেন যে, আমি আমার 'মিখরাফ' নামক খেজুর বাগানটি তাঁর ঈসালে ছাওয়াবের জন্য সদাকা করে দিলাম। (সহীহ বুখারী: ২৭৫৬; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫৩৭০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১২৬৩১)
প্রশ্ন হতে পারে, একজনের কৃত আমলের ছাওয়াব আরেকজন কীভাবে পেতে পারে? কুরআন মাজীদে তো ইরশাদ হয়েছে-
وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى
আর এই যে, মানুষ নিজের প্রচেষ্টা ছাড়া অন্য কোনও কিছুর (বিনিময় লাভের) হকদার হয় না। (সূরা নাজম, আয়াত ৩৯)
এর উত্তর হল, মৌলিকভাবে আয়াতটির সম্পর্ক কাফেরদের সঙ্গে। ঈমান না থাকার কারণে তাদের নিজেদের আমলই তো গ্রহণযোগ্য হয় না। সেখানে অন্যের কৃত আমলের ছাওয়াব তা কি করে পেতে পারে? মুমিনদের বেলায় আল্লাহ তা'আলার রহমত ও দয়া অনেক বিস্তৃত। তিনি একান্তই নিজ মেহেরবানিতে তাদেরকে অন্যের কৃত আমলের ছাওয়াবও দান করে থাকেন। কেউ যদি এই নিয়তে কোনও সৎকর্ম করে যে, তার ছাওয়াব যেন তার পিতা-মাতা বা অন্য কোনও প্রিয়জন পায়, তবে আল্লাহ তা'আলা তার নিয়ত অনুযায়ী সে প্রিয়জনকে আমলটির ছাওয়াব দিয়ে থাকেন। পরিভাষায় একে ঈসালে ছাওয়াব (ছাওয়াব পৌঁছানো) বলে। এ হাদীছটি দ্বারা প্রমাণ হয় যে, ঈসালে ছাওয়াব শরী'আতসম্মত।
তাছাড়া এক দৃষ্টিতে সন্তানের আমল পিতা-মাতার আমলই বটে। তা এই দৃষ্টিতে যে, পিতা-মাতা সে শিক্ষাদান করার ফলেই সন্তান নেক আমল করে। এভাবে তার অনেক আমলে পিতা-মাতারও ভূমিকা থাকে। সে কারণে ঈসালে ছাওয়াব ছাড়া এমনিতেও পিতা-মাতা সন্তানের নেক আমলের ছাওয়াবে অংশীদার হয়।
হাদীছটি দ্বারা হযরত সা'দ ইবন উবাদা রাযি.-এর মাতৃভক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। সন্তানের কর্তব্য সে জীবদ্দশায় যেমন পিতা-মাতার খেদমত করে, তেমনি পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও তাদের দীনী খেদমতের চেষ্টা করা। ঈসালে ছাওয়াব করা অর্থাৎ তারা ছাওয়াব পাবে এই নিয়তে দান-খয়রাত বা অন্য কোনও সৎকর্ম করা তাদের দীনী খেদমত। এর দ্বারা কবরে ও আখিরাতে উপকৃত হয়ে থাকে, যেমনটা আলোচ্য হাদীছ দ্বারা জানা গেল।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জীবিতদের দান-খয়রাত ও সৎকর্ম দ্বারা মৃতরা উপকৃত হয়ে থাকে।
খ. সন্তানের কর্তব্য মৃত পিতা-মাতার জন্য ঈসালে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে সাধ্যমতো দান-খয়রাত, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি সৎকর্ম করা।
