কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

ভূমিকা অধ্যায় (ইত্তেবায়ে সুন্নাহ,ইলম ও সাহাবা রাঃ এর মর্যাদা সংশ্লিষ্ট)

হাদীস নং: ১৮৩
আন্তর্জাতিক নং: ১৮৩
জাহমিয়া সম্প্রদায় যা অস্বীকার করে, সে প্রসঙ্গে
১৮৩। হুমায়দ ইবন মাস'আদাহ (রাহঃ) …… সাফওয়ান ইবন মুহরিয মাযিনী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার আমরা 'আব্দুল্লাহ ইবন 'উমর (রাযিঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তখন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। তখন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বললোঃ হে ইবন 'উমর! আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে সেই হাদীস কিভাবে শুনেছেন, যা তিনি গোপন আলাপ সম্পর্কে বলেছেন? তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন ঈমানদার ব্যক্তি তার পরওয়ারদিগারের খুব নিকটবর্তী হবে, এমন কি আল্লাহ্ তা'আলা তার উপর থেকে পর্দা তুলে নেবেন। এরপর তিনি তার গুনাহগুলি তার সামনে তুলে ধরবেন এবং বলবেনঃ তুমি কি এগুলো জান? তখন সে বলবেঃ হে আমার রব! হ্যাঁ। আমি তা জানি। শেষ পর্যন্ত যতখানি আল্লাহর মঞ্জুর হবে, সে স্বীকার করে নেবে। তিনি বলবেনঃ আমি এগুলো তোমার থেকে দুনিয়াতে গোপন রেখেছিলাম এবং আজ আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। রাবী বলেনঃ তারপর তার ডান হাতে নেক আমলের একটি দপ্তর প্রদান করা হবে। রাবী বলেনঃ কাফির অথবা মুনাফিকদের বিষয়ে সমস্ত মানুষের সামনে ঘোষণা দেওয়া হবে যে, هؤلاء الذين كذبوا على ربهم ألا لعنة الله على الظالمين "এরাই সে সব লোক, যারা তাদের রবের উপর মিথ্যা আরোপ করেছে। জেনে রাখ! সীমালংঘনকারীদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হবে।" (১১ঃ১৮)
بَاب فِيمَا أَنْكَرَتْ الْجَهْمِيَّةُ
حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ مَسْعَدَةَ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ الْحَارِثِ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ مُحْرِزٍ الْمَازِنِيِّ، قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ مَعَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ وَهُوَ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ إِذْ عَرَضَ لَهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا ابْنَ عُمَرَ كَيْفَ سَمِعْتَ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَذْكُرُ فِي النَّجْوَى قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏"‏ يُدْنَى الْمُؤْمِنُ مِنْ رَبِّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يَضَعَ عَلَيْهِ كَنَفَهُ ثُمَّ يُقَرِّرُهُ بِذُنُوبِهِ فَيَقُولُ هَلْ تَعْرِفُ فَيَقُولُ يَا رَبِّ أَعْرِفُ ‏.‏ حَتَّى إِذَا بَلَغَ مِنْهُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَبْلُغَ قَالَ إِنِّي سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ ‏.‏ قَالَ ثُمَّ يُعْطَى صَحِيفَةَ حَسَنَاتِهِ أَوْ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ ‏.‏ قَالَ وَأَمَّا الْكَافِرُ أَوِ الْمُنَافِقُ فَيُنَادَى عَلَى رُءُوسِ الأَشْهَادِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ خَالِدٌ فِي ‏"‏ الأَشْهَادِ ‏"‏ ‏.‏ شَىْءٌ مِنِ انْقِطَاعٍ ‏.‏ ‏(هَؤُلاَءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلاَ لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ)‏ ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার খাস রহমতের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন তিনি মুমিনদেরকে কাছে ডেকে পর্দা ফেলে দেবেন। অর্থাৎ সকলের থেকে আড়ালে নিয়ে যাবেন। তারপর এক এক করে তার ওইসকল গুনাহ তার সামনে উল্লেখ করবেন, যা সে গোপনে করেছিল, কোনও মানুষ তা জানত না। প্রত্যেকটি সম্পর্কে সে স্বীকার করবে যে, সে তা করেছিল। আল্লাহ তা'আলা তার সামনে আমলনামাও খুলে দেবেন। তাতেও সে তার গোপন গুনাহসমূহ দেখতে পাবে। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, এ অবস্থায় সে ডানে-বামে তাকাবে। সে তাকানোটা হবে চরম ভয় ও আতঙ্কের কারণে। সে ধরেই নেবে আজ তার মুক্তির কোনও উপায় নেই। কিন্তু পরম দয়ালু আল্লাহ তাকে নির্ভয় দেবেন। বলবেন, দুনিয়ায় তোমার এসব গুনাহ আমি গোপন রেখেছিলাম, আজ আমি ক্ষমা করে দিলাম। এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ বলবেন, তোমার কোনও ভয় নেই। তুমি আমার পর্দার ভেতর রয়েছ। আমি ছাড়া তোমার গুনাহ সম্পর্কে কেউ জানতে পারবে না।

প্রকাশ থাকে যে, এটা হবে হাক্কুল্লাহ সম্পর্কিত গুনাহের ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে কেউ যদি গোপনে কোনও বান্দার হক নষ্ট করে, তবে তা এভাবে ক্ষমা করা হবে না; বরং বান্দার পক্ষ থেকেও তাকে ক্ষমা পেতে হবে। এমনিভাবে মানুষ যেসব গুনাহ প্রকাশ্যে করে, সে ক্ষেত্রেও এরকম খাস রহমত করা হবে না। প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ সম্পর্কে হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا، ثم يصبح وقد ستره الله عليه، فيقول: يا فلان، عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه، ويصبح يكشف ستر الله عنه، متفق عليه
আমার উম্মতের প্রত্যেকেই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে, কিন্তু প্রকাশ্যে গুনাহকারীগণ নয়। এটাও প্রকাশ্য গুনাহের অন্তর্ভুক্ত যে, কোনও ব্যক্তি রাতের বেলা কোনও (পাপের) কাজ করে তারপর এ অবস্থায় তার ভোর হয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার কাজটি গোপন রাখেন, কিন্তু সে নিজেই বলে, হে অমুক! (শোন) আমি গতরাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে রাত যাপন করেছিল এ অবস্থায় যে, তার প্রতিপালক তার দোষ আড়ালে রেখেছিলেন। আর সে সকালবেলা আল্লাহর আড়াল উন্মোচন করে দেয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছটি দ্বারা মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার বিশেষ দয়ার পরিচয় পাওয়া যায়।

খ. আরও জানা যায়, আল্লাহ তা'আলা যাকে চান নিজ দয়ায় ক্ষমা করবেন।

গ. যেসকল গুনাহ গোপনে হয়ে যায়, সে ব্যাপারে ক্ষমালাভের বেশি আশা থাকে।

ঘ. কোনও গুনাহ গোপনে হয়ে গেলে নিজের পক্ষ থেকে তা কারও কাছে প্রকাশ করতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন