কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ
ভূমিকা অধ্যায় (ইত্তেবায়ে সুন্নাহ,ইলম ও সাহাবা রাঃ এর মর্যাদা সংশ্লিষ্ট)
হাদীস নং: ৪২
আন্তর্জাতিক নং: ৪২
হিদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের আদর্শ অনুসরন।
৪২। 'আব্দুল্লাহ্ ইবন আহমদ ইবন বাশীর ইবন যাকওয়ান দিমাকী (রাহঃ)...... ইয়াহইয়া ইবন আবু মুতা' (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ঃ আমি ইরবায ইবন সারিয়া (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছি ঃ একদিন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় আমাদের নসীহত করলেন। এতে আমাদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার হলো এবং চোখ থেকে অশ্রু বেরিয়ে এলো। তখন জিজ্ঞাসা করা হলো : ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি আমাদের বিদায় গ্রহণকারী ব্যক্তির ন্যায় নসীহত করলেন, সুতরাং এ ব্যাপারে আপনি আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দিন। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে আর শুনবে ও অনুসরণ করবে, যদিও তোমাদের নেতা হাবশী গোলাম হয়। আমার পরে অচিরেই তোমরা কঠিন মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উপর আমার সুন্নত এবং হিদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের আদর্শের উপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। তোমরা তা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। সাবধান! তোমরা নতুন উদ্ভাবিত জিনিস (বিদ'আত) পরিহার করবে। কেননা প্রত্যেক বিদ'আতই গুমরাহী।
بَاب اتِّبَاعِ سُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ بَشِيرِ بْنِ ذَكْوَانَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْعَلاَءِ، - يَعْنِي ابْنَ زَبْرٍ - حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ أَبِي الْمُطَاعِ، قَالَ سَمِعْتُ الْعِرْبَاضَ بْنَ سَارِيَةَ، يَقُولُ قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ذَاتَ يَوْمٍ فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَعَظْتَنَا مَوْعِظَةَ مُوَدِّعٍ فَاعْهَدْ إِلَيْنَا بِعَهْدٍ فَقَالَ " عَلَيْكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا وَسَتَرَوْنَ مِنْ بَعْدِي اخْتِلاَفًا شَدِيدًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَالأُمُورَ الْمُحْدَثَاتِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, এ হাদীছে বর্ণিত নসীহত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন ফজরের নামায আদায়ের পর করেছিলেন। বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা জানা যায় তিনি ফজরের নামায আদায়ের পর কিছুক্ষণ নামাযের স্থানে বসে থাকতেন। এ সময় যিকর ও তাসবীহ আদায় ছাড়াও কখনও স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতেন, কখনও সাহাবায়ে কিরামকে দীন শিক্ষা দিতেন এবং কখনও তাঁদেরকে লক্ষ্য করে ওয়াজ ও নসীহত করতেন। সাধারণত তাঁর নসীহতে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্ব, আখিরাতের স্থায়িত্ব ও জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা থাকত, যাতে মানুষ দুনিয়ার আসক্তি পরিহার করে আখিরাতমুখী জীবনযাপন করে। স্বভাবতই তাঁর নসীহত হত অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। তাতে মনের ওপর খুব আছর পড়ত। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি নির্দেশ ছিল-
وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَهُمْ فِي أَنْفُسِهِمْ قَوْلًا بَلِيغًا (63)
অর্থ : তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদের নিজেদের সম্পর্কে তাদের হৃদয়গ্রাহী কথা বল। সূরা নিসা (৪), আয়াত ৬৩
ওয়াজ ও নসীহত কেমন হওয়া চাই।
হযরত 'ইরবায ইবন সারিয়া রাযি. যেদিনের কথা বলছেন, সেদিনও তিনি এরকম নসীহত করছিলেন। সে নসীহতের বিষয়বস্তু কী ছিল তার উল্লেখ এ হাদীছে নেই। কেবল এতটুকুই জানা যাচ্ছে যে, এ দিনের নসীহত ছিল অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি হৃদয়স্পর্শী। তা ছিল অত্যন্ত সারগর্ভ। হাদীছে সে উপদেশকে بليغه বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে। কুরআন মাজীদের উল্লিখিত আয়াতেও তাঁকে بليغ ভাষায় উপদেশ দিতে বলা হয়েছে। এ শব্দটির উৎপত্তি بلاغة থেকে। এর শাব্দিক অর্থ পৌঁছানো। আর ভাবার্থ হচ্ছে, এমন ভাষা ও এমন বর্ণনাশৈলীতে বক্তব্যবিষয় শ্রোতার অন্তরে পৌঁছানোর চেষ্টা করা, যার শব্দাবলী হবে অর্থের সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ, শ্রুতিমধুর ও বিশুদ্ধতম এবং বাক্যগঠন হবে শিল্পমানসম্পন্ন আর হবে হৃদয়গ্রাহী ও মর্মস্পর্শী।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব বক্তব্যই এ বিশেষত্ব ধারণ করত। তবে এদিনের বক্তব্য ছিল আরও বেশি বলিষ্ঠ ও অধিকতর প্রভাববিস্তারী। উপস্থিত সাহাবীদের সামনে তিনি আখিরাতের অবস্থাদি এমনভাবে তুলে ধরেছিলেন যে, তাঁদের মনে তা দারুণ রেখাপাত করে। যেমন এ হাদীছের বর্ণনায় হযরত 'ইরবায রাযি. বলেন-
وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ
“আমাদের হৃদয় তাতে ভীত-বিগলিত হল এবং চোখ অশ্রুসজল হল।”
ওয়াজ ও নসীহতে মনে ভীতি সঞ্চার হওয়া ও চোখ থেকে পানি পড়া প্রশংসনীয় গুণ। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা এ গুণদু'টির প্রশংসা করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ
অর্থ : মুমিন তো তারাই, (যাদের সামনে) আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয়
ভীত হয়। সূরা আনফাল (৮), আয়াত ২
আরও ইরশাদ-
وَإِذَا سَمِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوا مِنَ الْحَقِّ
অর্থ : এবং রাসূলের প্রতি যে কালাম নাযিল হয়েছে তারা যখন তা শোনে, তখন দেখবে তাদের চোখসমূহকে, তা থেকে অর্থ প্রবাহিত হচ্ছে যেহেতু তারা সত্য চিনে ফেলেছে। সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৮৩
তো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের আজকের এ নসীহত শুনে সাহাবায়ে কিরামের অনুভূতি হচ্ছিল যে, এরকম মনগলানো উপদেশ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণকারী ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। তবে কি তিনি আমাদের থেকে চিরবিদায় নিতে যাচ্ছেন!? এ অনুভূতি তাঁদেরকে তাঁর অসিয়ত শুনতে বাড়তি উৎসাহ যোগাল। সুতরাং মুমূর্ষু ব্যক্তি তার প্রিয়জনদের লক্ষ্য করে সর্বশেষ যে উপদেশ দিয়ে যায়, ঠিক সেই উপদেশ তাঁরা শুনতে চাইলেন। সেমতে তাঁরা আরয করলেন, আমাদেরকে অসিয়ত করুন। সুতরাং তিনি তাঁদেরকে অসিয়তস্বরূপ কয়েকটি কথা বললেন।
সর্বপ্রথম বললেন-
أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ
'আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি তাকওয়া ও আল্লাহভীতির।'
তাকওয়া ও আল্লাহভীতি এমন এক গুণ, যা সমস্ত আমলের প্রাণশক্তি। এ গুণ যার মধ্যে পরিপূর্ণ এসে যায়, তার পক্ষেই সম্ভব শরী'আতের সমস্ত আদেশ-নিষেধ পুরোপুরি মেনে চলা। এ কারণেই সর্বপ্রথম এরই অসিয়ত করা হয়েছে। কুরআন মাজীদেও আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে বান্দাদেরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ অসিয়ত করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ
অর্থ : আমি তোমাদের আগে কিতাবীদেরকে এবং তোমাদেরকেও জোর নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। সূরা নিসা (৪), আয়াত ১৩১
তাকওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য রিয়াযুস সালেহীন গ্রন্থের 'তাকওয়া' অধ্যায় দেখুন।
আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার গুরুত্ব
তারপর উপদেশ দিয়েছেন-
وَالسَّمْع وَالطَّاعَةِ وَإِنْ تَأَمَّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ
এবং (আমীরের) পূর্ণ আনুগত্যের, যদিও তোমাদের আমীর হয়ে যায় কোনও হাবশী গোলাম।
এখানে 'আমীর' বলতে খলিফা, তাঁর অধীন কোনও প্রদেশের গভর্নর এবং পর্যায়ক্রমে সকল স্তরের প্রশাসককে বোঝানো হয়েছে। এদের সকলেরই আদেশ মেনে চলা শরী'আতের দৃষ্টিতেই অবশ্যকর্তব্য, যদি তাদের আদেশ শরী'আতবিরোধী কোনও বিষয় না হয়। কেননা আল্লাহর নাফরমানীর কাজে কোনও মাখলুকের আনুগত্য জায়েয নয়। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ
আনুগত্য কেবল শরী'আতসম্মত কাজেই হয়ে থাকে। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৪০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৬২৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৪২০৫)
প্রকাশ থাকে যে, শরী'আতসম্মত কাজ বলতে এমন কাজকে বোঝানো হয়, যে কাজের প্রতি কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, তাতে সে কাজের স্পষ্ট হুকুম কুরআন ও হাদীছে না-ই থাকুক। যেহেতু কাজটি শরী'আতবিরোধী নয়, তাই এমনিতে এ কাজটি করা জায়েয। আর আমীর যখন কোনও জায়েয কাজের হুকুম করে এবং সে হুকুমটি জনকল্যাণার্থে হয়, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য না হয়, তখন জনগণের জন্য তা পালন করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ
অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, তাঁর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল তাদেরও। (সূরা নিসা (৪), আয়াত ৫৯) সুতরাং জায়েয কাজে কর্তৃত্বশীল বা আমীরের হুকুম মানা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যও বটে।
এ আনুগত্যের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যদিও তোমাদের আমীর হয়ে যায় কোনও হাবশী গোলাম। অর্থাৎ যদি এমন কোনও অনারব কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিও তোমাদের আমীর বনে যায়, যে কিনা একসময় গোলাম ছিল এবং পরে মুক্তি লাভ করেছে আর তার শাসন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তবে তার আনুগত্য করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কেননা তার আনুগত্য না করা হলে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি হুমকির মধ্যে পড়তে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে চারদিকে নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেকে অন্যের ওপর নিজ শক্তি ও ক্ষমতা খাটাতে শুরু করে। পরিণামে কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে চারদিকে আঞ্চলিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কেন্দ্রের পক্ষে তাদের দমন করা সম্ভব হয় না। আর তা সম্ভব না হওয়ায় একেক এলাকায় একেকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, যাদের কাজ হয় পরস্পরে শক্তি পরীক্ষায় লেগে পড়া। এভাবে যে শক্তি আল্লাহর দুশমনদের দমনে নিয়োজিত থাকার কথা, তা আত্মকলহের শিকার হয়ে নিঃশেষ হতে থাকে। এমনকি সে শক্তিক্ষয়ের খেসারত দিতে হয় প্রত্যেক এলাকার নিরীহ জনগণকেও। তাদেরও একের দ্বারা অন্যের অধিকার লুন্ঠিত হতে থাকে। যখন মানুষের নিজেদের দ্বারা নিজেদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে শুরু করে, তখন তাদের দ্বারা আল্লাহর অধিকার আদায়ও বিঘ্নিত হয়ে পড়ে। কাজেই আমীর ও নেতার আনুগত্য না করার পরিণাম বড় সুদূরপ্রসারী। তাতে মুসলমানদের কেবল জাতীয় অস্তিত্বই বিপর্যস্ত হয় না, তাদের দীন ও ইসলামের অনেক কিছুই কিতাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে, তার বাস্তব কোনও প্রতিষ্ঠা থাকে না। তাই তো হযরত আলী রাযি. বলেন, একজন ইমাম ও শাসক ছাড়া মানুষের সুষ্ঠু জীবন পরিচালনা সম্ভব নয়, তাতে সে ইমাম ন্যায়পরায়ণ হোক কিংবা হোক পাপিষ্ঠ।
হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন, শাসকগণ আমাদের পাঁচটি বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেন-
১. জুমু'আ কায়েম করা,
২. জামাতের নেতৃত্ব দেওয়া,
৩. 'ঈদ অনুষ্ঠিত করা,
৪. সীমান্ত রক্ষা করা ও
৫. হুদূদ কায়েম করা।
আল্লাহর কসম! দীন কেবল তাদের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যদিও তারা জুলুম ও নিপীড়ন চালায়। আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা'আলা তাদের দ্বারা যা কিছু সুসম্পন্ন করান, তা তাদের কৃত অনর্থ ও ফাসাদ অপেক্ষা ঢের বেশি।
পারস্পরিক মতভেদকালে করণীয়
তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا
'তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে।' এটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি মু'জিযা। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। ভবিষ্যতে যা যা ঘটবে তার অনেক কিছুই তিনি ওহী মারফত জানতে পেরেছিলেন। তার মধ্যে একটা এইও যে, তাঁর উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন রকম মতভেদ দেখা দেবে। এ ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল। কখনও দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মতভেদ, কখনও আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কিত মতভেদ, কখনও ফিকহী মতভেদ। এসব মতভেদের মধ্যে সবই যে দোষের তা নয়। কোনও কোনওটি তো অবশ্যই দোষের। আর কোনও কোনওটি এমন মতভেদ, যা ঘটা অনিবার্য ছিল এবং না ঘটা ছিল অসম্ভব।
মতভেদ অনিবার্য হোক বা না হোক, যদি বাস্তবিকভাবে দেখা দেয়ই, সে ক্ষেত্রে কী করণীয়—পরবর্তী বাক্যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সম্পর্কে হিদায়াত দান করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন-
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ
তখন তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরা। অর্থাৎ আমি 'আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক এবং অন্যান্য করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়াবলী সম্পর্কে যে বিস্তারিত বিধি-বিধান তোমাদের দান করেছি এবং সুস্পষ্ট যে তরিকা তোমাদের সামনে পেশ করেছি, তোমাদের কর্তব্য হবে তা আঁকড়ে ধরা। সেইসঙ্গে তোমাদের আরও কর্তব্য হবে, আমি আমার স্থলাভিষিক্তরূপে যাদের রেখে যাচ্ছি, যারা 'ইলম ও আমল, আখলাক-চরিত্র এবং দাওয়াত ও জিহাদের ক্ষেত্রে আমার যথার্থ প্রতিনিধিত্ব করবে, সেই সাহাবীগণের সুন্নত অনুসরণ করা। সাহাবীগণের মধ্যে আবার হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি, হযরত উমর ফারূক রাযি. হযরত উছমান গনী রাযি. ও হযরত আলী রাযি. যাঁদেরকে আমরা খুলাফায়ে রাশিদীনরূপে চিনি, তাঁদের সুন্নত ও রীতি-নীতির স্বতন্ত্র মহিমা আছে। কাজেই ইখতিলাফ ও মতভেদের ক্ষেত্রে তাঁদের সুন্নত ও তরিকা বিশেষভাবে অনুসরণীয়।
সুন্নতের অনুসরণের মধ্যেই হিদায়াতের নিশ্চয়তা
তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরবে (অর্থাৎ শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে)।
মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা দ্বারা শক্তভাবে ধরা বোঝানো হয়। কারও কাছ থেকে কোনও জিনিস কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে প্রথমে সে তা হাত দিয়ে শক্তভাবে ধরে। যদি তাতেও সক্ষম না হয়, তবে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে। সুন্নত তো এমন কোনও বস্তু নয়, যা হাত দিয়ে বা মাড়ির কামড় দিয়ে ধরে রাখা যাবে। সুতরাং এস্থলে 'ধরা' দ্বারা অনুসরণে দৃঢ় থাকা বোঝানো উদ্দেশ্য। ইশারা করা হচ্ছে, তোমাদের সামনে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতি আসবে, যখন তোমাদের দ্বারা সুন্নতের অনুসরণ শিথিল হয়ে যেতে পারে। লোকে তোমাদেরকে সুন্নত অনুসরণে বাধা দিতে পারে বা নিরুৎসাহিত করতে পারে। এমনও হতে পারে যে, পরিবেশের প্রতিকূলতা দেখে তোমরা নিজেরাই সুন্নতের অনুসরণ করতে সাহস করছ না। কিন্তু অবস্থা যাই হোক না কেন, তোমরা কিছুতেই সুন্নতের অনুসরণ থেকে পিছপা হবে না। বিশেষত যখন নানারকম মত ও মতবাদ তোমাদের সামনে আসবে, তখন সত্য-সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য সুন্নতের অনুসরণ করার কোনও বিকল্প নেই। তোমরা যত মজবুতভাবে আমার সুন্নত এবং আমার খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নত অনুসরণ করে চলবে, তোমরা ততবেশি বিভ্রান্তি ও গোমরাহী থেকে বাঁচতে পারবে এবং সত্য-সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকতে সক্ষম হবে।
বিদ'আত মাত্রই গোমরাহী
এ হাদীছের সর্বশেষ উপদেশ হচ্ছে-
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ؛ فَإِنَّ كُل بِدْعَةِ صَلَالَةٌ
এবং তোমরা নব-উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ (অর্থাৎ বিদ'আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রতিটি বিদ'আতই গোমরাহী। নব-উদ্ভাবিত বিষয় দ্বারা এমন বিষয় বোঝানো উদ্দেশ্য, যা দীনের নামে নতুনভাবে সৃষ্টি করা হয়। অর্থাৎ কুরআন-হাদীছে যার কোনও ভিত্তি নেই। পরিভাষায় একে বিদ'আত বলে। ইসলামে বিদ'আত গ্রহণযোগ্য নয়। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
من أحدث في أمرنا هذا مَا لَيْسَ مِنه فهو رد
আমাদের এ দীনে যদি কেউ এমন কোনও জিনিস উদ্ভাবন করে, যা এ দীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত সাব্যস্ত হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৯৭, সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭১৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৪৬০৬; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৪৩৩৫)
এ হাদীছে নব-উদ্ভাবিত বিষয় তথা বিদ'আত থেকে বেঁচে থাকার কারণ এই বলা হয়েছে যে, সমস্ত বিদ'আতই গোমরাহী অর্থাৎ হিদায়াতের বিপরীত। হিদায়াত তো ওই দীন, যা মহানবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে পেশ করেছেন। আল্লাহ তা'আলা দীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। কাজেই দীনের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টির কোনও অবকাশ নেই। যদি কেউ নতুন কিছু সৃষ্টি করে, তবে সে যেন দাবি করছে- দীনের মধ্যে একটু কমতি রয়ে গেছে, আমি এই জিনিসটি দ্বারা সে কমতিটুকু পূরণ করে দিলাম। নাঊযুবিল্লাহ। আঘাত কোথায় গিয়ে লাগছে!
বিদ'আত চালু করার দ্বারা প্রকারান্তরে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দীন পরিপূর্ণ করে দেওয়ার ঘোষণাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। এর দ্বারা প্রশ্ন আসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক দাওয়াতের দায়িত্ব পালনের ওপরও। চিন্তা করে দেখেছেন, বিদ'আত কী মারাত্মক জিনিস!? কাজেই এর থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো উচিত, যেমনটা এ হাদীছে তাগিদ করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন পাঁচ নামাযে বার বার আল্লাহ তা'আলার কাছে যে হিদায়াত প্রার্থনা করে থাকি, তারও দাবি হচ্ছে হিদায়াতপরিপন্থী যাবতীয় বিদ'আতী কর্মকাণ্ড পরিহার করে চলা।
প্রকাশ থাকে যে, যে-কোনও নতুন বিষয়কে বিদ'আত বলা হয় না। বিদ'আত বলে কেবল এমন নতুন বিষয়কে, যাকে দীনের অংশ মনে করা হয় এবং দীন হিসেবে পালন করা হয় আর কেউ তা পালন না করলে আপত্তি তোলা হয় ও তার সমালোচনা করা হয়। যে বিষয়কে দীনের অংশ মনে করা হয় না তা বিদ'আতের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাতে তা যতই নতুন বিষয় হোক না কেন। যেমন যানবাহন আবিষ্কার ও তাতে আরোহণ কিংবা দা'ওয়াত ও তাবলীগের নতুন কোনও পন্থা উদ্ভাবন ও তা অবলম্বন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ওয়াজ ও উপদেশদান নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নত। এর মূল্যায়ন করা উচিত।
খ. উপদেশদাতার উচিত- দরদী মন নিয়ে মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দেওয়া, যাতে উপদেশ ও নসীহত শ্রোতার মনে রেখাপাত করে।
গ. উপদেশ ও নসীহতকে অগ্রাহ্য করতে নেই। সাহাবায়ে কিরামের মত তা শুনতে আগ্রহী থাকা চাই।
ঘ. তাকওয়া সমস্ত আমলের প্রাণবস্তু। তা অর্জনে সচেষ্ট থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ঙ. আমীর ও নেতা যেমনই হোক না কেন, তাঁর শরী'আতসম্মত আদেশ পালন করা অতি জরুরি।
চ. ইখতিলাফ ও মতভেদের ক্ষেত্রে সঠিক পথে থাকার প্রকৃষ্ট উপায় সুন্নতের অনুসরণ।
ছ. খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নতও আমাদের পক্ষে অনুসরণীয়।
জ. সকল বিদ'আত গোমরাহী। তা থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।
وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَهُمْ فِي أَنْفُسِهِمْ قَوْلًا بَلِيغًا (63)
অর্থ : তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদের নিজেদের সম্পর্কে তাদের হৃদয়গ্রাহী কথা বল। সূরা নিসা (৪), আয়াত ৬৩
ওয়াজ ও নসীহত কেমন হওয়া চাই।
হযরত 'ইরবায ইবন সারিয়া রাযি. যেদিনের কথা বলছেন, সেদিনও তিনি এরকম নসীহত করছিলেন। সে নসীহতের বিষয়বস্তু কী ছিল তার উল্লেখ এ হাদীছে নেই। কেবল এতটুকুই জানা যাচ্ছে যে, এ দিনের নসীহত ছিল অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি হৃদয়স্পর্শী। তা ছিল অত্যন্ত সারগর্ভ। হাদীছে সে উপদেশকে بليغه বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে। কুরআন মাজীদের উল্লিখিত আয়াতেও তাঁকে بليغ ভাষায় উপদেশ দিতে বলা হয়েছে। এ শব্দটির উৎপত্তি بلاغة থেকে। এর শাব্দিক অর্থ পৌঁছানো। আর ভাবার্থ হচ্ছে, এমন ভাষা ও এমন বর্ণনাশৈলীতে বক্তব্যবিষয় শ্রোতার অন্তরে পৌঁছানোর চেষ্টা করা, যার শব্দাবলী হবে অর্থের সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ, শ্রুতিমধুর ও বিশুদ্ধতম এবং বাক্যগঠন হবে শিল্পমানসম্পন্ন আর হবে হৃদয়গ্রাহী ও মর্মস্পর্শী।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব বক্তব্যই এ বিশেষত্ব ধারণ করত। তবে এদিনের বক্তব্য ছিল আরও বেশি বলিষ্ঠ ও অধিকতর প্রভাববিস্তারী। উপস্থিত সাহাবীদের সামনে তিনি আখিরাতের অবস্থাদি এমনভাবে তুলে ধরেছিলেন যে, তাঁদের মনে তা দারুণ রেখাপাত করে। যেমন এ হাদীছের বর্ণনায় হযরত 'ইরবায রাযি. বলেন-
وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ
“আমাদের হৃদয় তাতে ভীত-বিগলিত হল এবং চোখ অশ্রুসজল হল।”
ওয়াজ ও নসীহতে মনে ভীতি সঞ্চার হওয়া ও চোখ থেকে পানি পড়া প্রশংসনীয় গুণ। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা এ গুণদু'টির প্রশংসা করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ
অর্থ : মুমিন তো তারাই, (যাদের সামনে) আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয়
ভীত হয়। সূরা আনফাল (৮), আয়াত ২
আরও ইরশাদ-
وَإِذَا سَمِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوا مِنَ الْحَقِّ
অর্থ : এবং রাসূলের প্রতি যে কালাম নাযিল হয়েছে তারা যখন তা শোনে, তখন দেখবে তাদের চোখসমূহকে, তা থেকে অর্থ প্রবাহিত হচ্ছে যেহেতু তারা সত্য চিনে ফেলেছে। সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৮৩
তো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের আজকের এ নসীহত শুনে সাহাবায়ে কিরামের অনুভূতি হচ্ছিল যে, এরকম মনগলানো উপদেশ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণকারী ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। তবে কি তিনি আমাদের থেকে চিরবিদায় নিতে যাচ্ছেন!? এ অনুভূতি তাঁদেরকে তাঁর অসিয়ত শুনতে বাড়তি উৎসাহ যোগাল। সুতরাং মুমূর্ষু ব্যক্তি তার প্রিয়জনদের লক্ষ্য করে সর্বশেষ যে উপদেশ দিয়ে যায়, ঠিক সেই উপদেশ তাঁরা শুনতে চাইলেন। সেমতে তাঁরা আরয করলেন, আমাদেরকে অসিয়ত করুন। সুতরাং তিনি তাঁদেরকে অসিয়তস্বরূপ কয়েকটি কথা বললেন।
সর্বপ্রথম বললেন-
أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ
'আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি তাকওয়া ও আল্লাহভীতির।'
তাকওয়া ও আল্লাহভীতি এমন এক গুণ, যা সমস্ত আমলের প্রাণশক্তি। এ গুণ যার মধ্যে পরিপূর্ণ এসে যায়, তার পক্ষেই সম্ভব শরী'আতের সমস্ত আদেশ-নিষেধ পুরোপুরি মেনে চলা। এ কারণেই সর্বপ্রথম এরই অসিয়ত করা হয়েছে। কুরআন মাজীদেও আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে বান্দাদেরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ অসিয়ত করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ
অর্থ : আমি তোমাদের আগে কিতাবীদেরকে এবং তোমাদেরকেও জোর নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। সূরা নিসা (৪), আয়াত ১৩১
তাকওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য রিয়াযুস সালেহীন গ্রন্থের 'তাকওয়া' অধ্যায় দেখুন।
আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার গুরুত্ব
তারপর উপদেশ দিয়েছেন-
وَالسَّمْع وَالطَّاعَةِ وَإِنْ تَأَمَّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ
এবং (আমীরের) পূর্ণ আনুগত্যের, যদিও তোমাদের আমীর হয়ে যায় কোনও হাবশী গোলাম।
এখানে 'আমীর' বলতে খলিফা, তাঁর অধীন কোনও প্রদেশের গভর্নর এবং পর্যায়ক্রমে সকল স্তরের প্রশাসককে বোঝানো হয়েছে। এদের সকলেরই আদেশ মেনে চলা শরী'আতের দৃষ্টিতেই অবশ্যকর্তব্য, যদি তাদের আদেশ শরী'আতবিরোধী কোনও বিষয় না হয়। কেননা আল্লাহর নাফরমানীর কাজে কোনও মাখলুকের আনুগত্য জায়েয নয়। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ
আনুগত্য কেবল শরী'আতসম্মত কাজেই হয়ে থাকে। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৪০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৬২৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৪২০৫)
প্রকাশ থাকে যে, শরী'আতসম্মত কাজ বলতে এমন কাজকে বোঝানো হয়, যে কাজের প্রতি কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, তাতে সে কাজের স্পষ্ট হুকুম কুরআন ও হাদীছে না-ই থাকুক। যেহেতু কাজটি শরী'আতবিরোধী নয়, তাই এমনিতে এ কাজটি করা জায়েয। আর আমীর যখন কোনও জায়েয কাজের হুকুম করে এবং সে হুকুমটি জনকল্যাণার্থে হয়, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য না হয়, তখন জনগণের জন্য তা পালন করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ
অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, তাঁর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল তাদেরও। (সূরা নিসা (৪), আয়াত ৫৯) সুতরাং জায়েয কাজে কর্তৃত্বশীল বা আমীরের হুকুম মানা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যও বটে।
এ আনুগত্যের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যদিও তোমাদের আমীর হয়ে যায় কোনও হাবশী গোলাম। অর্থাৎ যদি এমন কোনও অনারব কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিও তোমাদের আমীর বনে যায়, যে কিনা একসময় গোলাম ছিল এবং পরে মুক্তি লাভ করেছে আর তার শাসন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তবে তার আনুগত্য করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কেননা তার আনুগত্য না করা হলে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি হুমকির মধ্যে পড়তে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে চারদিকে নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেকে অন্যের ওপর নিজ শক্তি ও ক্ষমতা খাটাতে শুরু করে। পরিণামে কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে চারদিকে আঞ্চলিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কেন্দ্রের পক্ষে তাদের দমন করা সম্ভব হয় না। আর তা সম্ভব না হওয়ায় একেক এলাকায় একেকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, যাদের কাজ হয় পরস্পরে শক্তি পরীক্ষায় লেগে পড়া। এভাবে যে শক্তি আল্লাহর দুশমনদের দমনে নিয়োজিত থাকার কথা, তা আত্মকলহের শিকার হয়ে নিঃশেষ হতে থাকে। এমনকি সে শক্তিক্ষয়ের খেসারত দিতে হয় প্রত্যেক এলাকার নিরীহ জনগণকেও। তাদেরও একের দ্বারা অন্যের অধিকার লুন্ঠিত হতে থাকে। যখন মানুষের নিজেদের দ্বারা নিজেদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে শুরু করে, তখন তাদের দ্বারা আল্লাহর অধিকার আদায়ও বিঘ্নিত হয়ে পড়ে। কাজেই আমীর ও নেতার আনুগত্য না করার পরিণাম বড় সুদূরপ্রসারী। তাতে মুসলমানদের কেবল জাতীয় অস্তিত্বই বিপর্যস্ত হয় না, তাদের দীন ও ইসলামের অনেক কিছুই কিতাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে, তার বাস্তব কোনও প্রতিষ্ঠা থাকে না। তাই তো হযরত আলী রাযি. বলেন, একজন ইমাম ও শাসক ছাড়া মানুষের সুষ্ঠু জীবন পরিচালনা সম্ভব নয়, তাতে সে ইমাম ন্যায়পরায়ণ হোক কিংবা হোক পাপিষ্ঠ।
হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন, শাসকগণ আমাদের পাঁচটি বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেন-
১. জুমু'আ কায়েম করা,
২. জামাতের নেতৃত্ব দেওয়া,
৩. 'ঈদ অনুষ্ঠিত করা,
৪. সীমান্ত রক্ষা করা ও
৫. হুদূদ কায়েম করা।
আল্লাহর কসম! দীন কেবল তাদের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যদিও তারা জুলুম ও নিপীড়ন চালায়। আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা'আলা তাদের দ্বারা যা কিছু সুসম্পন্ন করান, তা তাদের কৃত অনর্থ ও ফাসাদ অপেক্ষা ঢের বেশি।
পারস্পরিক মতভেদকালে করণীয়
তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا
'তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে।' এটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি মু'জিযা। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। ভবিষ্যতে যা যা ঘটবে তার অনেক কিছুই তিনি ওহী মারফত জানতে পেরেছিলেন। তার মধ্যে একটা এইও যে, তাঁর উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন রকম মতভেদ দেখা দেবে। এ ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল। কখনও দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মতভেদ, কখনও আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কিত মতভেদ, কখনও ফিকহী মতভেদ। এসব মতভেদের মধ্যে সবই যে দোষের তা নয়। কোনও কোনওটি তো অবশ্যই দোষের। আর কোনও কোনওটি এমন মতভেদ, যা ঘটা অনিবার্য ছিল এবং না ঘটা ছিল অসম্ভব।
মতভেদ অনিবার্য হোক বা না হোক, যদি বাস্তবিকভাবে দেখা দেয়ই, সে ক্ষেত্রে কী করণীয়—পরবর্তী বাক্যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সম্পর্কে হিদায়াত দান করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন-
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ
তখন তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরা। অর্থাৎ আমি 'আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক এবং অন্যান্য করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়াবলী সম্পর্কে যে বিস্তারিত বিধি-বিধান তোমাদের দান করেছি এবং সুস্পষ্ট যে তরিকা তোমাদের সামনে পেশ করেছি, তোমাদের কর্তব্য হবে তা আঁকড়ে ধরা। সেইসঙ্গে তোমাদের আরও কর্তব্য হবে, আমি আমার স্থলাভিষিক্তরূপে যাদের রেখে যাচ্ছি, যারা 'ইলম ও আমল, আখলাক-চরিত্র এবং দাওয়াত ও জিহাদের ক্ষেত্রে আমার যথার্থ প্রতিনিধিত্ব করবে, সেই সাহাবীগণের সুন্নত অনুসরণ করা। সাহাবীগণের মধ্যে আবার হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি, হযরত উমর ফারূক রাযি. হযরত উছমান গনী রাযি. ও হযরত আলী রাযি. যাঁদেরকে আমরা খুলাফায়ে রাশিদীনরূপে চিনি, তাঁদের সুন্নত ও রীতি-নীতির স্বতন্ত্র মহিমা আছে। কাজেই ইখতিলাফ ও মতভেদের ক্ষেত্রে তাঁদের সুন্নত ও তরিকা বিশেষভাবে অনুসরণীয়।
সুন্নতের অনুসরণের মধ্যেই হিদায়াতের নিশ্চয়তা
তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরবে (অর্থাৎ শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে)।
মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা দ্বারা শক্তভাবে ধরা বোঝানো হয়। কারও কাছ থেকে কোনও জিনিস কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে প্রথমে সে তা হাত দিয়ে শক্তভাবে ধরে। যদি তাতেও সক্ষম না হয়, তবে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে। সুন্নত তো এমন কোনও বস্তু নয়, যা হাত দিয়ে বা মাড়ির কামড় দিয়ে ধরে রাখা যাবে। সুতরাং এস্থলে 'ধরা' দ্বারা অনুসরণে দৃঢ় থাকা বোঝানো উদ্দেশ্য। ইশারা করা হচ্ছে, তোমাদের সামনে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতি আসবে, যখন তোমাদের দ্বারা সুন্নতের অনুসরণ শিথিল হয়ে যেতে পারে। লোকে তোমাদেরকে সুন্নত অনুসরণে বাধা দিতে পারে বা নিরুৎসাহিত করতে পারে। এমনও হতে পারে যে, পরিবেশের প্রতিকূলতা দেখে তোমরা নিজেরাই সুন্নতের অনুসরণ করতে সাহস করছ না। কিন্তু অবস্থা যাই হোক না কেন, তোমরা কিছুতেই সুন্নতের অনুসরণ থেকে পিছপা হবে না। বিশেষত যখন নানারকম মত ও মতবাদ তোমাদের সামনে আসবে, তখন সত্য-সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য সুন্নতের অনুসরণ করার কোনও বিকল্প নেই। তোমরা যত মজবুতভাবে আমার সুন্নত এবং আমার খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নত অনুসরণ করে চলবে, তোমরা ততবেশি বিভ্রান্তি ও গোমরাহী থেকে বাঁচতে পারবে এবং সত্য-সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকতে সক্ষম হবে।
বিদ'আত মাত্রই গোমরাহী
এ হাদীছের সর্বশেষ উপদেশ হচ্ছে-
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ؛ فَإِنَّ كُل بِدْعَةِ صَلَالَةٌ
এবং তোমরা নব-উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ (অর্থাৎ বিদ'আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রতিটি বিদ'আতই গোমরাহী। নব-উদ্ভাবিত বিষয় দ্বারা এমন বিষয় বোঝানো উদ্দেশ্য, যা দীনের নামে নতুনভাবে সৃষ্টি করা হয়। অর্থাৎ কুরআন-হাদীছে যার কোনও ভিত্তি নেই। পরিভাষায় একে বিদ'আত বলে। ইসলামে বিদ'আত গ্রহণযোগ্য নয়। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
من أحدث في أمرنا هذا مَا لَيْسَ مِنه فهو رد
আমাদের এ দীনে যদি কেউ এমন কোনও জিনিস উদ্ভাবন করে, যা এ দীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত সাব্যস্ত হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৯৭, সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭১৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৪৬০৬; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৪৩৩৫)
এ হাদীছে নব-উদ্ভাবিত বিষয় তথা বিদ'আত থেকে বেঁচে থাকার কারণ এই বলা হয়েছে যে, সমস্ত বিদ'আতই গোমরাহী অর্থাৎ হিদায়াতের বিপরীত। হিদায়াত তো ওই দীন, যা মহানবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে পেশ করেছেন। আল্লাহ তা'আলা দীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। কাজেই দীনের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টির কোনও অবকাশ নেই। যদি কেউ নতুন কিছু সৃষ্টি করে, তবে সে যেন দাবি করছে- দীনের মধ্যে একটু কমতি রয়ে গেছে, আমি এই জিনিসটি দ্বারা সে কমতিটুকু পূরণ করে দিলাম। নাঊযুবিল্লাহ। আঘাত কোথায় গিয়ে লাগছে!
বিদ'আত চালু করার দ্বারা প্রকারান্তরে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দীন পরিপূর্ণ করে দেওয়ার ঘোষণাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। এর দ্বারা প্রশ্ন আসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক দাওয়াতের দায়িত্ব পালনের ওপরও। চিন্তা করে দেখেছেন, বিদ'আত কী মারাত্মক জিনিস!? কাজেই এর থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো উচিত, যেমনটা এ হাদীছে তাগিদ করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন পাঁচ নামাযে বার বার আল্লাহ তা'আলার কাছে যে হিদায়াত প্রার্থনা করে থাকি, তারও দাবি হচ্ছে হিদায়াতপরিপন্থী যাবতীয় বিদ'আতী কর্মকাণ্ড পরিহার করে চলা।
প্রকাশ থাকে যে, যে-কোনও নতুন বিষয়কে বিদ'আত বলা হয় না। বিদ'আত বলে কেবল এমন নতুন বিষয়কে, যাকে দীনের অংশ মনে করা হয় এবং দীন হিসেবে পালন করা হয় আর কেউ তা পালন না করলে আপত্তি তোলা হয় ও তার সমালোচনা করা হয়। যে বিষয়কে দীনের অংশ মনে করা হয় না তা বিদ'আতের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাতে তা যতই নতুন বিষয় হোক না কেন। যেমন যানবাহন আবিষ্কার ও তাতে আরোহণ কিংবা দা'ওয়াত ও তাবলীগের নতুন কোনও পন্থা উদ্ভাবন ও তা অবলম্বন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ওয়াজ ও উপদেশদান নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নত। এর মূল্যায়ন করা উচিত।
খ. উপদেশদাতার উচিত- দরদী মন নিয়ে মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দেওয়া, যাতে উপদেশ ও নসীহত শ্রোতার মনে রেখাপাত করে।
গ. উপদেশ ও নসীহতকে অগ্রাহ্য করতে নেই। সাহাবায়ে কিরামের মত তা শুনতে আগ্রহী থাকা চাই।
ঘ. তাকওয়া সমস্ত আমলের প্রাণবস্তু। তা অর্জনে সচেষ্ট থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ঙ. আমীর ও নেতা যেমনই হোক না কেন, তাঁর শরী'আতসম্মত আদেশ পালন করা অতি জরুরি।
চ. ইখতিলাফ ও মতভেদের ক্ষেত্রে সঠিক পথে থাকার প্রকৃষ্ট উপায় সুন্নতের অনুসরণ।
ছ. খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নতও আমাদের পক্ষে অনুসরণীয়।
জ. সকল বিদ'আত গোমরাহী। তা থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: