কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ
৪৮. সাজসজ্জা-পরিচ্ছন্নতার অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৩৭৭
আন্তর্জাতিক নং: ৫৩৭৭
চেয়ারে বসা
৫৩৭৬. ইয়াকূব ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... হুমায়দ ইবনে হিলাল (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবু রিফাআ (রাযিঃ) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! একজন মুসাফির এসেছে এবং সে তার দ্বীন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছে। সে জানে না তার দ্বীন কি? তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) খুতবা বন্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। একখানা চেয়ার আনা হলো, আমার যতটুকু মনে পড়ে, তার পায়াসমূহ ছিল লোহার। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তার উপর উপবেশন করলেন। তারপর তিনি আমাকে শিক্ষা দিতে লাগলেন, আল্লাহ্ তাআলা তাকে যা শিক্ষা দেন তা হতে। এরপর তিনি খুতবায় ফিরে গেলেন এবং তা শেষ করলেন।
الْجُلُوسُ عَلَى الْكَرَاسِيِّ
أَخْبَرَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ الْمُغِيرَةِ عَنْ حُمَيْدِ بْنِ هِلَالٍ قَالَ قَالَ أَبُو رِفَاعَةَ انْتَهَيْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَخْطُبُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ رَجُلٌ غَرِيبٌ جَاءَ يَسْأَلُ عَنْ دِينِهِ لَا يَدْرِي مَا دِينُهُ فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَرَكَ خُطْبَتَهُ حَتَّى انْتَهَى إِلَيَّ فَأُتِيَ بِكُرْسِيٍّ خِلْتُ قَوَائِمَهُ حَدِيدًا فَقَعَدَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلَ يُعَلِّمُنِي مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ ثُمَّ أَتَى خُطْبَتَهُ فَأَتَمَّهَا
হাদীসের ব্যাখ্যা:
একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিচ্ছিলেন। সে ভাষণ জুমু'আর খুতবাও হতে পারে কিংবা অন্য কোনও উপলক্ষ্যে প্রদত্ত বক্তব্যও হতে পারে। যাই হোক না কেন, তাঁর বক্তৃতাদানকালে হযরত আবূ রিফা'আ রাযি. মসজিদে উপস্থিত হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বললেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি একজন বহিরাগত ব্যক্তি। দীনের পরিচয় আমার জানা নেই। আমি তা শেখার জন্য আপনার কাছে এসেছি।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথার গুরুত্ব উপলব্ধি করলেন এবং তাঁর আগ্রহের মূল্যায়ন করলেন। সুতরাং তিনি খুতবা বন্ধ করে দিলেন। তারপর মিম্বর থেকে নেমে আবু রিফা'আ রাযি.-এর কাছে চলে গেলেন। সেখানে একটি চেয়ার নিয়ে আসা হল। তিনি তাতে বসে তাঁকে শিক্ষাদান করলেন। হযরত আবু রিফা'আ রাযি. বলেন-
وَجَعَلَ يُعَلِّمُنِي مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ (এবং আল্লাহ তা'আলা তাঁকে যা-কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিতে লাগলেন)। বলাবাহুল্য আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা-কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন তার সবটা ছিল দীন সম্পর্কিত। অর্থাৎ ঈমান-আকীদা, ইবাদত-বন্দেগী, আখলাক-চরিত্র ইত্যাদি। এক মজলিসে দীনের যাবতীয় বিষয় শেখানো তো সম্ভব নয়। এজন্যই বলেছেন “...তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিতে লাগলেন”। অর্থাৎ উপস্থিতভাবে একজন মুমিন-মুসলিমরূপে আমার জন্য যা-কিছু জরুরি মনে হয়েছিল তা শিক্ষা দিতে লাগলেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের প্রতি কতটা দরদী ছিলেন এবং তিনি কী পরিমাণ বিনয়ী ছিলেন, তা এ ঘটনা দ্বারা কিছুটা অনুমান করা যায়। কেউ যখন বক্তৃতা দেয়, তখন তার মন-মস্তিষ্ক পুরোপুরিভাবে নিজ আলোচ্য বিষয় ও উপস্থিত শ্রোতাদের উপর নিবদ্ধ থাকে। এ অবস্থায় কেউ তার বক্তব্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে সে তা আদৌ পসন্দ করে না। বরং তাতে খুব বিরক্তি বোধ করে। সাধারণ কেউ হলে তো মারমুখী হয়ে ওঠে। সাধারণ কেউ বক্তার বক্তৃতার মাঝখানে কথা বলার সাহসও করে না। কিন্তু এখানে আমরা কী দেখছি? এক সাধারণ বহিরাগত ব্যক্তি এসে মানবতার বাদশা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তির বক্তৃতার মাঝখানে কথা বলছে। আর তিনি তার সে কথায় বিরক্ত হননি; বরং তার আবদার রক্ষার্থে নিজ বক্তৃতা স্থগিত রাখছেন। তার ইচ্ছা পূরণার্থে মিম্বর থেকে নেমে তার কাছে চলে যাচ্ছেন এবং স্থির ও শান্তভাবে বসে তাকে তার প্রয়োজনীয় বিষয়ে শিক্ষাদান করছেন। মানুষকে মর্যাদা দান করা, ব্যক্তির শিখতে চাওয়ার আগ্রহকে সম্মান জানানো এবং মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও একজন সাধারণ ব্যক্তির প্রতি বিনয়-নম্র আচরণ করার এমন সুমহান আখলাক-চরিত্রের দৃষ্টান্ত নবীর শিক্ষালয় ছাড়া আর কোথায় মিলতে পারে?
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শিক্ষকের কর্তব্য শিক্ষার্থীর প্রতি নম্র-কোমল আচরণ করা।
খ. দীন সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে চাইলে তার সে আগ্রহের মূল্য দেওয়া উচিত।
গ. যে ব্যক্তি উঁচু পর্যায়ের লোক হবে, তার মধ্যে ততোটাই বিনয় থাকা বাঞ্ছনীয়।
ঘ. দীন সম্পর্কে কারও কাছে কিছু জানতে চাইলে বিনয় ও আদবের সঙ্গে জিজ্ঞেস করতে হবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথার গুরুত্ব উপলব্ধি করলেন এবং তাঁর আগ্রহের মূল্যায়ন করলেন। সুতরাং তিনি খুতবা বন্ধ করে দিলেন। তারপর মিম্বর থেকে নেমে আবু রিফা'আ রাযি.-এর কাছে চলে গেলেন। সেখানে একটি চেয়ার নিয়ে আসা হল। তিনি তাতে বসে তাঁকে শিক্ষাদান করলেন। হযরত আবু রিফা'আ রাযি. বলেন-
وَجَعَلَ يُعَلِّمُنِي مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ (এবং আল্লাহ তা'আলা তাঁকে যা-কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিতে লাগলেন)। বলাবাহুল্য আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা-কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন তার সবটা ছিল দীন সম্পর্কিত। অর্থাৎ ঈমান-আকীদা, ইবাদত-বন্দেগী, আখলাক-চরিত্র ইত্যাদি। এক মজলিসে দীনের যাবতীয় বিষয় শেখানো তো সম্ভব নয়। এজন্যই বলেছেন “...তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিতে লাগলেন”। অর্থাৎ উপস্থিতভাবে একজন মুমিন-মুসলিমরূপে আমার জন্য যা-কিছু জরুরি মনে হয়েছিল তা শিক্ষা দিতে লাগলেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের প্রতি কতটা দরদী ছিলেন এবং তিনি কী পরিমাণ বিনয়ী ছিলেন, তা এ ঘটনা দ্বারা কিছুটা অনুমান করা যায়। কেউ যখন বক্তৃতা দেয়, তখন তার মন-মস্তিষ্ক পুরোপুরিভাবে নিজ আলোচ্য বিষয় ও উপস্থিত শ্রোতাদের উপর নিবদ্ধ থাকে। এ অবস্থায় কেউ তার বক্তব্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে সে তা আদৌ পসন্দ করে না। বরং তাতে খুব বিরক্তি বোধ করে। সাধারণ কেউ হলে তো মারমুখী হয়ে ওঠে। সাধারণ কেউ বক্তার বক্তৃতার মাঝখানে কথা বলার সাহসও করে না। কিন্তু এখানে আমরা কী দেখছি? এক সাধারণ বহিরাগত ব্যক্তি এসে মানবতার বাদশা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তির বক্তৃতার মাঝখানে কথা বলছে। আর তিনি তার সে কথায় বিরক্ত হননি; বরং তার আবদার রক্ষার্থে নিজ বক্তৃতা স্থগিত রাখছেন। তার ইচ্ছা পূরণার্থে মিম্বর থেকে নেমে তার কাছে চলে যাচ্ছেন এবং স্থির ও শান্তভাবে বসে তাকে তার প্রয়োজনীয় বিষয়ে শিক্ষাদান করছেন। মানুষকে মর্যাদা দান করা, ব্যক্তির শিখতে চাওয়ার আগ্রহকে সম্মান জানানো এবং মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও একজন সাধারণ ব্যক্তির প্রতি বিনয়-নম্র আচরণ করার এমন সুমহান আখলাক-চরিত্রের দৃষ্টান্ত নবীর শিক্ষালয় ছাড়া আর কোথায় মিলতে পারে?
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শিক্ষকের কর্তব্য শিক্ষার্থীর প্রতি নম্র-কোমল আচরণ করা।
খ. দীন সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে চাইলে তার সে আগ্রহের মূল্য দেওয়া উচিত।
গ. যে ব্যক্তি উঁচু পর্যায়ের লোক হবে, তার মধ্যে ততোটাই বিনয় থাকা বাঞ্ছনীয়।
ঘ. দীন সম্পর্কে কারও কাছে কিছু জানতে চাইলে বিনয় ও আদবের সঙ্গে জিজ্ঞেস করতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: