কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

৪৮. সাজসজ্জা-পরিচ্ছন্নতার অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৩৩৫
আন্তর্জাতিক নং: ৫৩৩৫
ইযার বা লুঙ্গি টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরা
৫৩৩৪. আলী ইবনে হুজর (রাহঃ) ......... সালিম (রাহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গর্বভরে তার কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না। তখন আবু বকর (রাযিঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! অসতর্কাবস্থায় আমার ইযারের একদিক লম্বা হয়ে যায়। কিন্তু সতর্ক হলে বোধহয় এরূপ হবে না। নবী (ﷺ) বললেনঃ যারা গর্বভরে এরূপ করে, আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত নন।
إِسْبَالُ الْإِزَارِ
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ قَالَ حَدَّثَنَا إِسْمَعِيلُ قَالَ حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ مِنْ الْخُيَلَاءِ لَا يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ أَبُو بَكْرٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَحَدَ شِقَّيْ إِزَارِي يَسْتَرْخِي إِلَّا أَنْ أَتَعَاهَدَ ذَلِكَ مِنْهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّكَ لَسْتَ مِمَّنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ خُيَلَاءَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসটিতে টাখনুর নিচে লুঙ্গি পরিধানকারী সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার দিকে তাকাবেন না। অর্থাৎ রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। বড়ই ভয়ানক কথা। রহমতের দৃষ্টিতে তাঁর না তাকানোর অর্থ তিনি এরূপ ব্যক্তির প্রতি অসন্তুষ্ট থাকবেন, তার পরিণাম নিশ্চিত জাহান্নাম। আল্লাহ তা'আলা সে পরিণাম থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

হাদীছের এ সতর্কবাণী শুনে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ভয় পেয়ে গেলেন। কারণ তাঁর লুঙ্গি অসতর্কতাবশত টাখনুর নিচে নেমে যেত। তাই তিনি আরয করলেন-- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার লুঙ্গি ঝুলে পড়ে, যদি না আমি বিশেষভাবে লক্ষ রাখি। অর্থাৎ এ অবস্থায় আমিও কি ওই সতর্কবাণীর আওতায় পড়ব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন- তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও, যারা অহংকারবশে এটা করে। অর্থাৎ এ সতর্কবাণী তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা এটা করে অহংকারবশত। তুমি যেহেতু অহংকারবশত কর না, তাই তোমার জন্য এটা প্রযোজ্য নয়।

এখন এদিকে লক্ষ করে কেউ যদি বলে আমারও টাখনুর নিচে লুঙ্গি বা প্যান্ট-পায়জামা পরাটা অহংকারের কারণে নয়, তবে তার সে কথা গ্রহণযোগ্য হবে কি? না, গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা নিজেকে অহংকারী মনে করে না কেউ, যদিও বাস্তবিকপক্ষে অহংকারী হয়ে থাকে। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. যে অহংকারী ছিলেন না, তা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেওয়া সনদ দ্বারা জানতে পারি। আমাদের কারও পক্ষে তো এরকম সনদ নেই। তাই আমাদের কারও নিজেকে নিরহংকার ভাবার কোনও সুযোগ নেই।

প্রকৃতপক্ষে কার মনে অহংকার আছে আর কার মনে তা নেই, তা আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। সাধারণত টাখনুর নিচে পরাই হয় অহংকারবশে। যাদের এরকম পরার অভ্যাস, তারা টাখনুর উপরে উঠাতে পারে না। তাতে লজ্জাবোধ করে। এটা অহংকারেরই লক্ষণ। সুতরাং সাধারণ এ অবস্থার প্রতি লক্ষ করেই হাদীছটিতে অহংকারের কথা বলা হয়েছে। না হয় কোনও কোনও হাদীছে অহংকারের উল্লেখ ছাড়াই এ নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ সতর্কবাণী কেবল লুঙ্গির জন্যই নির্ধারিত নয়; বরং জামা ও পায়জামার জন্যও প্রযোজ্য। অর্থাৎ পরিধেয় যে-কোনও বস্ত্র নিচের দিকে সর্বোচ্চ টাখনু পর্যন্ত নামানো যাবে, এর নিচে নয়। পুরুষের সতর যেহেতু হাঁটু পর্যন্ত, তাই হাঁটুর নিচে নামাতে হবে অবশ্যই। তার মানে পরিধেয় বস্ত্র হাঁটু ও টাখনুর মাঝামাঝি যে-কোনও স্থান পর্যন্ত নামানো যাবে। লুঙ্গি বা পায়জামা নলার মাঝ বরাবর হলে ভালো।
প্রকাশ থাকে যে, টাখনুর নিচে নামানোর নিষেধাজ্ঞা কেবল পুরুষদের জন্যই প্রযোজ্য, নারীদের জন্য নয়। তাদের জন্য টাখনুর নিচে নামানোই জরুরি। কেননা তাদের পা'ও সতরের অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য, মোজা দ্বারা পা ঢাকাতে কোনও অসুবিধা নেই। নিষিদ্ধ হচ্ছে পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে নামানো। মোজা তার মধ্যে পড়ে না। পায়ে মোজা পরিহিত অবস্থায়ও পরিধেয় বস্ত্র টাখনুর নিচে নামানো নিষেধ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কিয়ামতে আল্লাহ তা'আলার রহমতের দৃষ্টি আমাদের কাম্য। সুতরাং যা-কিছু সে দৃষ্টিলাভের পক্ষে বাধা, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

খ. পরিধেয় বস্ত্র, তা লুঙ্গি ও প্যান্ট-পায়জামা হোক কিংবা জামা, সর্বাবস্থায় টাখনুর উপরে পরতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ৫৩৩৫ | মুসলিম বাংলা