কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

৪৮. সাজসজ্জা-পরিচ্ছন্নতার অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৩০৯
আন্তর্জাতিক নং: ৫৩০৯
রেশমী কাপড় পরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
৫৩০৮. সুলাইমান ইবনে মনসুর (রাহঃ) ......... বারা ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে সাতটি বিষয়ে আদেশ করেছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেনঃ সোনার আংটি, রূপার পাত্র, মায়াসির, কাসসী, ইসতাবরাক এবং দীবাজ ও হারীর (এগুলো বিভিন্ন প্রকারের রেশমি জামা) হতে।
ذِكْرُ النَّهْيِ عَنْ الثِّيَابِ الْقَسِّيَّةِ
أَخْبَرَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ مَنْصُورٍ قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو الْأَحْوَصِ عَنْ أَشْعَثَ بْنِ أَبِي الشَّعْثَاءِ عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ سُوَيْدٍ عَنْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَبْعٍ وَنَهَانَا عَنْ سَبْعٍ نَهَانَا عَنْ خَوَاتِيمِ الذَّهَبِ وَعَنْ آنِيَةِ الْفِضَّةِ وَعَنْ الْمَيَاثِرِ وَالْقَسِّيَّةِ وَالْإِسْتَبْرَقِ وَالدِّيبَاجِ وَالْحَرِيرِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাতটি বিষয় নিষেধ করেছেন। নিচে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাদান করা যাচ্ছে।

পুরুষের জন্য স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
হযরত বারা ইব্ন আযিব রাযি. বলেন- (নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সোনার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন)। এ নিষেধাজ্ঞা পুরুষের জন্য, নারীর জন্য নয়। পুরুষের জন্য কোনওরূপ স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা জায়েয নয়, তার পরিমাণ যত অল্পই হোক না কেন। স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা জায়েয কেবল নারীর জন্য, তাও যদি অহংকার ও প্রদর্শনের জন্য না হয়। অন্যান্য হাদীছ দ্বারা জানা যায়, পুরুষের জন্য জান্নাতে স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কাজেই যেসকল পুরুষ দুনিয়ায় স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার করবে, জান্নাতে তারা তা পাবে না। এটা তাদের জন্য জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার সতর্কবাণী। কাজেই জান্নাতকামী পুরুষদের কর্তব্য দুনিয়ায় স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। তা থাকতে পারলে পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতে তাদেরকে নানারকম স্বর্ণালঙ্কার ও সাজসজ্জায় ভূষিত করা হবে। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ- يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا “তাদেরকে সেখানে স্বর্ণকঙ্কনে অলংকৃত করা হবে। আর তারা উচ্চ আসনে হেলান দেওয়া অবস্থায় মিহি ও পুরু রেশমী কাপড় পরিহিত থাকবে। কতইনা উৎকৃষ্ট প্রতিদান এবং কত সুন্দর বিশ্রামস্থল। সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ৩১
অপর এক আয়াতে ইরশাদঃ- يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ ‘সেখানে তাদেরকে সজ্জিত করা হবে সোনার কাঁকন ও মণি-মুক্তা দ্বারা। আর সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের। সূরা হজ্জ (২২), আয়াত ২৩

সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
وعن شرب بآنية الفضة এবং (নিষেধ করেছেন) রুপার পাত্রে পান করতে'। রুপার পাত্রে পানি পান করা পুরুষ ও নারী কারও জন্যই জায়েয নয়। সোনারুপার অন্যকোনও পাত্রও ব্যবহারের অনুমতি নেই। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا تشربوا في إناء الذهب والفضة، ولا تلبسوا الديباج والحرير، فإنه لهم في الدنيا وهو لكم في الآخرة يوم القيامة 'তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে পান করো না এবং রেশম ও দীবাজ (এক ধরনের রেশমী কাপড়) পরিধান করো না। কেননা এটা দুনিয়ায় তাদের (কাফেরদের) জন্য এবং তোমাদের জন্য আখেরাতে।[৮]
এক বর্ণনায় অতিরিক্ত আছেঃ- ولا تأكلوا في صحافها এবং তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে আহার করো না'।[৯]
এক হাদীছে এ নিষেধাজ্ঞার কারণ বলা হয়েছে যে, জান্নাতে পানাহারের পাত্র হবে সোনারুপার। কাজেই এটা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই নিষেধ। উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে- من شرب في إناء من ذهب، أو فضة، فإنما يجرجر في بطنه نارا من جهنم “যে ব্যক্তি সোনা-রূপার পাত্রে পান করে, সে তার পেটে কেবল জাহান্নামের আগুনই ঢোকায়।[১০]
মোটকথা, সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম ও কঠিন পাপ। কাজেই ঈমানদারদেরকে অবশ্যই এর থেকে বিরত থাকতে হবে। এ জাতীয় বিলাসিতা ঈমানদারদের জন্য শোভা পায় না।
এ নিষেধাজ্ঞা পানাহারের পাত্র ছাড়া অন্য আসবাবপত্রেও প্রযোজ্য, যেমন সুরমাদানি, কলম, চশমার ফ্রেম, আতরদানি ইত্যাদি।
বিভিন্ন রেশমী পোশাকের নিষেধাজ্ঞা
وعن المياثر এবং (তিনি নিষেধ করেছেন) মায়াছির ব্যবহার করতে”। ইমাম নববী রহ. "المياثر -এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, এ শব্দটি ميثرة এর বহুবচন। এটা একরকম গদি। রেশম দ্বারা তৈরি করা হয়। ভেতরে তুলা বা অন্যকিছুর পুর দেওয়া হয়। এটা উট, গাধা ইত্যাদি বাহনের পিঠে রেখে আরোহী তার উপর বসে। রেশমের তৈরি সব মায়াছিরই হারাম, তা যে রঙেরই হোক।

রেশম ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ, রেশমি পোশাক ব্যবহার করতে। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে - من لبس الحرير في الدنيا لم يلبسه في الآخرة 'যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখেরাতে তা পরতে পারবে না।[১১]
তবে এ নিষেধাজ্ঞা কেবল পুরুষের জন্য। নারীর জন্য রেশমী পোশাক পরা জায়েয, যেমন তাদের জন্য স্বর্ণালঙ্কারও জায়েয। হযরত উকবা ইবন আমির রাযি থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- الذهب والحرير حل لإناث أمتي وحرام على ذكورها সোনা ও রেশম আমার উম্মতের মহিলাদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম।[১২]
হযরত আলী রাযি. বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাম হাতে রেশম এবং ডান হাতে স্বর্ণ ধরলেন। তারপর দু'হাত তুলে বললেনঃ- إن هذين حرام على ذكور أمتي، حل لإناثهم ‘এ দুটি আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম, মহিলাদের জন্য হালাল।[১৩]
শায়খ আবূ মুহাম্মাদ রহ. এ নিষেধাজ্ঞার হিকমত বর্ণনা করেন যে, সাজসজ্জার ব্যাপারে নারীদের সংযম কম। তাই এটা তাদের জন্য হালাল করে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষত এ কারণেও যে, তাদের সাজসজ্জা হবে কেবল স্বামীদের জন্য। এর দ্বারা বোঝা যায় পুরুষদের জন্য বেশি সাজসজ্জা ও উপভোগের বস্তু ব্যবহার করা ভালো নয়। কেননা এটা নারীর বৈশিষ্ট্য।
والإستبرق والديباج ‘এবং (তিনি নিষেধ করেছেন) ইসতাবরাক ও দীবাজ ব্যবহার করতে। ইসতাবরাক বলা হয় মোটা রেশমী কাপড়কে। আর দীবাজ হচ্ছে চিকন রেশমী কাপড়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পুরুষের জন্য স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

খ. সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা।

গ. পুরুষের জন্য রেশমী পোশাক পরা নিষেধ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ৫৩০৯ | মুসলিম বাংলা