কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

৪৮. সাজসজ্জা-পরিচ্ছন্নতার অধ্যায়

হাদীস নং: ৫২৯৯
আন্তর্জাতিক নং: ৫২৯৯
ইসতাবরাক বা রেশমী কাপড় পরিধান করা নিষেধ
৫২৯৮. ইসহাক ইন ইবরাহীম (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, উমর (রাযিঃ) একবার বের হয়ে দেখলেন, বাজারে ইসতাবরাক বা রেশমী জোড়া বিক্রি হচ্ছে। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট হাযির হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি এটা ক্রয় করুন এবং জুমআর দিন এবং আপনার নিকট বিদেশী প্রতিনিধিদল আসলে পরিধান করুন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ এটা ঐ ব্যক্তিই পরবে, যার আখিরাতে কোন অংশ নেই।

পরে এ রকম তিনজোড়া কাপড় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট পেশ করা হলে তিনি একজোড়া উমর (রাযিঃ)-কে, একজোড়া আলী (রাযিঃ)-কে এবং একজোড়া উসামা (রাযিঃ)-কে দিলেন। তখন উমর (রাযিঃ) তাঁর নিকট এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এর পূর্বে এ ব্যাপারে যা বলার তা বলেছিলেন, আর এখন এটা আমাকে দান করলেন? তিনি বললেনঃ তুমি তা বিক্রি করে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ কর অথবা তা টুকরা করে তোমার মহিলাদের ওড়না বানিয়ে দাও।
ذِكْرُ النَّهْيِ عَنْ لُبْسِ الْإِسْتَبْرَقِ
أَخْبَرَنَا إِسْحَقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ قَالَ أَنْبَأَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْحَارِثِ الْمَخْزُومِيُّ عَنْ حَنْظَلَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ يُحَدِّثُ أَنَّ عُمَرَ خَرَجَ فَرَأَى حُلَّةَ إِسْتَبْرَقٍ تُبَاعُ فِي السُّوقِ فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ اشْتَرِهَا فَالْبَسْهَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَحِينَ يَقْدَمُ عَلَيْكَ الْوَفْدُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذَا مَنْ لَا خَلَاقَ لَهُ ثُمَّ أُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلَاثِ حُلَلٍ مِنْهَا فَكَسَا عُمَرَ حُلَّةً وَكَسَا عَلِيًّا حُلَّةً وَكَسَا أُسَامَةَ حُلَّةً فَأَتَاهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قُلْتَ فِيهَا مَا قُلْتَ ثُمَّ بَعَثْتَ إِلَيَّ فَقَالَ بِعْهَا وَاقْضِ بِهَا حَاجَتَكَ أَوْ شَقِّقْهَا خُمُرًا بَيْنَ نِسَائِكَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)

কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।

প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।

হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।

খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ৫২৯৯ | মুসলিম বাংলা