আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪২- সাক্ষ্যপ্রদানের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৬৪১
১৬৪৬. ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী প্রসঙ্গেঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তোমরা তোমাদের ন্যায়পরায়ণ দু’জন ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখবে। (৬৫:২) (আল্লাহর বাণী) সাক্ষীদের মধ্যে যাদের উপর তোমরা রাযী তাদের মধ্যে। (২:২৮২)
২৪৬৫। হাকাম ইবনে নাফি (রাহঃ) .... উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যামানায় কিছু লোককে ওহীর ভিত্তিতে পাকড়াও করা হত। এখন যেহেতু ওহী বন্ধ হয়ে গেছে, সেহেতু এখন আমাদের সামনে তোমাদের যে ধরনের আমল প্রকাশ পাবে, সেগুলোর ভিত্তিতেই আমরা তোমাদের বিচার করবো। কাজেই যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভালো প্রকাশ করবে তাকে আমরা নিরাপত্তা দান করবো এবং কাছে টানবো তার অন্তরের বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় নেই। আল্লাহই তার অন্তরের বিষয়ে হিসাব নিবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের সামনে মন্দ আমল প্রকাশ করবে, তার প্রতি আমরা তাদের নিরাপত্তা প্রদান করবো না এবং সত্যবাদী বলে গ্রহণও করবো না; যদিও সে বলে যে, তার অন্তর ভাল।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রাযি. বিচার-আচার, সাক্ষ্য-প্রমাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে মূলনীতি বর্ণনা করেছেন যে, এসব ক্ষেত্রে মানুষের বাহ্যিক অবস্থা বিবেচ্য। মানুষের কথা ও কাজ দ্বারা বাহ্যত যা বোঝা যায় তাই ধর্তব্য। তার মনে কী আছে না আছে তা দেখার বিষয় নয়। মানুষের পক্ষে তা দেখা সম্ভবও নয়। মানুষের মনের অবস্থা কেবল আল্লাহ তাআলাই জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন তো ওহীর মাধ্যমে তা জানা সম্ভব ছিল। তাঁর চলে যাওয়ার দ্বারা ওহী আসাও বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং এখন যার বাহ্যিক অবস্থা ভালো মনে হবে তাকে ভালো বলা হবে। কেউ যদি বলে ওসব তার ভান, তার মনের অবস্থা এর বিপরীত, তবে তাতে কর্ণপাত করা হবে না। অপরদিকে যার বাহ্যিক অবস্থা ভালো নয় তাকে ভালো বলা হবে না, যদিও সে দাবি করে তার মন ভালো। মনের হিসাব আল্লাহ নেবেন।

অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত উমর রাযি. বলেন, আমাদের সামনে যে মন্দ অবস্থা প্রকাশ করবে, আমরা তার সম্পর্কে মন্দ ধারণা করব এবং সে কারণে তাকে অপসন্দ করব। আর যে আমাদের কাছে ভালো অবস্থা প্রকাশ করবে, তাকে আমরা ভালো গণ্য করব এবং সে কারণে তাকে ভালোবাসব। ব্যস দুনিয়ায় কারও ভালো বা মন্দ হওয়ার এটাই মাপকাঠি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যার কথাবার্তা কাজকর্ম বাহ্যত ভালো, তাকে ভালোই গণ্য করা চাই। অহেতুক তার মন নিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করা উচিত নয়।

খ. কারও বাহ্যিক কথাবার্তা ও কাজকর্ম মন্দ হলে তার এ দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না যে, আমার মন ভালো।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন