আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪১- হিবা তথা উপহার প্রদান, এর ফযীলত ও এতে উৎসাহ প্রদান

হাদীস নং: ২৪৪৩
আন্তর্জতিক নং: ২৬১৯

পরিচ্ছেদঃ ১৬৩৩. মুশরিকদেরকে হাদিয়া দেওয়া। আল্লাহ তাআলার ইরশাদঃ (মুশরিকদের মধ্যে) দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের কে স্বদেশ থেকে বের করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়নদেরকে ভালোবাসেন। (৬০:৮)

২৪৪৩। খালিদ ইবনে মাখলাদ (রাহঃ) .... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাযিঃ) জনৈক ব্যক্তিকে রেশমী কাপড় বিক্রি করতে দেখে নবী (ﷺ)- কে বললেন, এ জোড়াটি খরিদ করে নিন। জুমু‘আর দিন এবং যখন আপনার খিদমতে কোন প্রতিনিধি দল আসে, তখন তা পরিধনা করবেন। তিনি বললেন, এসব তো তারাই পরিধান করে, যাদের আখিরাতে কোন হিসসা নেই। পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে কয়েক জোড়া রেশমী কাপড় এলো। সেগুলো থেকে একটি জোড়া তিনি উমর (রাযিঃ) এর কাছে পাঠালেন। তখন উমর (রাযিঃ) বলেন, এটা আমি কিভাবে পরিধান করব। অথচ এ সম্পর্কে আপনি যা বলার বলেছেন। এতে তিনি বললেন, এটা তোমাকে আমি পরিধান করার জন্য দেইনি। হয় এটা বিক্রি করে দিবে, নয় কাউকে দিয়ে দিবে। তখন উমর (রাযিঃ) সেটা মক্কায় বসাবাসকারী তার এক (দুধ) ভাইকে ইসলাম গ্রহণের আগে হাদিয়া পাঠালেন।

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ ‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩) কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না। প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়? এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না। হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে। খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন