কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ
৩৯. বাঈআতের অধ্যায়
হাদীস নং: ৪১৫৩
আন্তর্জাতিক নং: ৪১৫৩
ন্যায়ানুগ কথা বলার বায়আত
৪১৫৪. হারূন ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... উবাদা ইবনে সামিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট অনুকূল-প্রতিকূল এবং সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় শ্রবণ ও আনুগত্য প্রদর্শনের বায়’আত করলাম, আর একথার যে, আমরা আমাদের শাসকের সাথে বিরোধ করবো না, এবং আমরা যেখানেই থাকি না কেন, ন্যায়ানুগ কথা বলবো। আর আল্লাহ্ তাআলার ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভয় করবো না।
الْبَيْعَةُ عَلَى الْقَوْلِ بِالْعَدْلِ
أَخْبَرَنِي هَارُونُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ قَالَ حَدَّثَنِي الْوَلِيدُ بْنُ كَثِيرٍ قَالَ حَدَّثَنِي عُبَادَةُ بْنُ الْوَلِيدِ أَنَّ أَبَاهُ الْوَلِيدَ حَدَّثَهُ عَنْ جَدِّهِ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ بَايَعْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي عُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَمَنْشَطِنَا وَمَكَارِهِنَا وَعَلَى أَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ وَعَلَى أَنْ نَقُولَ بِالْعَدْلِ أَيْنَ كُنَّا لَا نَخَافُ فِي اللَّهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।
হযরত আবুল ওয়ালীদ উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে বাই'আত গ্রহণ করেছি এই মর্মে যে, সংকটে, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং সন্তুষ্টিকালে ও অসন্তুষ্ট অবস্থায় (শাসকবর্গের) কথা শুনব ও মানব, আমাদের ওপর অন্যদের অগ্রাধিকার প্রদানকে মেনে নেব এবং শাসনক্ষমতার ব্যাপারে তার অধিকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হব না। তিনি বলেন, অবশ্য তোমরা যদি (শাসকদের মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখতে পাও, যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে স্পষ্ট দলীল–প্রমাণ আছে, তবে ভিন্ন কথা। আমরা আরও বাই'আত গ্রহণ করেছি এই মর্মে যে, আমরা যেখানেই থাকি হক কথা বলব। আল্লাহর ব্যাপারে আমরা কোনও নিন্দুকের নিন্দার ভয় করব না। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭০৯)
এ হাদীছে হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে তাঁর এক বাই'আতের বিষয়বস্তু উল্লেখ করেছেন। স্পষ্টই বোঝা যায় এটা ইসলাম গ্রহণের বাই'আত ছিল না। বরং তিনি এর আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ বাই'আত ছিল সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় সম্পর্কে। এর দ্বারা প্রমাণ হয় বুযুর্গানে দীনের হাতে তাদের মুরীদগণ যে বাই'আত গ্রহণ করে থাকেন তা অভিনব কিছু নয়; বরং দীনের ওপর বা সুনির্দিষ্ট কোনও আমলের ওপর মজবুতীর সঙ্গে চলার ব্যাপারে এরকম বাই'আত খোদ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সাহাবায়ে কিরাম থেকে নিয়েছেন।
হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. থেকে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বাই'আত নিয়েছিলেন তার মূল বিষয় দু'টি
ক. আমীর ও শাসকের আনুগত্য করা এবং
খ. হক কথা বলতে কোনওকিছুর পরওয়া না করা।
আমীর ও শাসকের আনুগত্য প্রসঙ্গ
এ হাদীছে আমীর ও শাসকের আনুগত্য বজায় রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক তো বাইআত নেওয়া দ্বারাই এর গুরুত্ব স্পষ্ট হয়। সেইসঙ্গে বিষয়টাকে আরও জোরদার করার জন্য বলা হয়েছে- তুমি সংকটের অবস্থায় থাক বা সচ্ছলতার অবস্থায়, সন্তুষ্ট অবস্থায় থাক বা অসন্তুষ্ট অবস্থায়, সর্ববস্থায়ই আনুগত্য বজায় রাখবে। অর্থাৎ তুমি ধনী হও বা গরীব এবং শাসকের প্রতি তোমার সন্তুষ্টি থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায় তার হুকুম মানবে। এমনকি কখনও যদি দেখ তারা কোনও বিষয়ে তোমাদের ওপর অন্য কাউকে বা নিজেদেরকে প্রাধান্য দিচ্ছে, তখনও আনুগত্য পরিত্যাগ করবে না। কেননা আমীর ও শাসকের আনুগত্য পরিত্যাগ দ্বারা উম্মতের ঐক্য নষ্ট হয় এবং বিভেদ ও বিভক্তির পথ খুলে যায় আর তা জাতীয় অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক। ইসলাম উম্মতের ঐক্য ও সম্প্রীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। যা-কিছু দ্বারা ঐক্য ও সম্প্রীতি নষ্ট হয় তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে বহু আয়াত আছে এবং হাদীছ শরীফেও আছে বহু সুস্পষ্ট বাণী। এ হাদীছটিও তার একটি।
উল্লেখ্য, শাসকের আনুগত্য করার হুকুম কেবল ততক্ষণ পর্যন্তই প্রযোজ্য, যতক্ষণ তারা শরী'আতবিরোধী কোনও আদেশ না করে। এবং সে আদেশ জনকল্যাণবিরোধী ও শাসকের স্বার্থসিদ্ধির জন্য না হবে। শরী'আতবিরোধী কোনও আদেশ করলে সে ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য জায়েয নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ-
لا طاعة لمخلوق في معصية الله عز وجل
যে কাজে আল্লাহর অবাধ্যতা হয় তাতে কোনও মাখলূকের আনুগত্য নেই। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৩৮৮৯; মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৩৭৮৮; আত-তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৩৯১৭: বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪৫৫; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৭০৭)
বলা হয়েছে- وعلى أثرة علينا , 'আমাদের ওপর অন্যদের অগ্রাধিকার প্রদানকে মেনে নেব'। ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, এ কথাটি বিশেষভাবে আনসারদের বলা হয়েছিল। এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল হুনায়নের যুদ্ধের পর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টনকালে। তিনি সে সম্পদ কুরায়শদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছিলেন। আনসারদের কাউকে তা থেকে কিছুই দেননি। তখন কিছুসংখ্যক তরুণ আনসারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছিল যে, ইসলামে নবদীক্ষিত যে কুরায়শদের রক্তে এখনও আমাদের তরবারি রঞ্জিত আছে, আজ গনীমতের মাল বণ্টনে আমাদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ কথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কানে আসলে তিনি তাদেরকে ডাকেন এবং কেন নওমুসলিম কুরায়শদের মধ্যে তা বণ্টন করা হচ্ছে তার ব্যাখ্যা করে দেন। তাতে আনসারগণ খুশি হয়ে যান। তখন তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করেছিলেন, লোকে যুদ্ধলব্ধ উট, বকরি ইত্যাদি নিয়ে যাবে আর তোমরা তোমাদের সঙ্গে আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে যাবে—এতে কি তোমরা খুশি নও? তারা সমস্বরে নিজেদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
এ বাক্যটির সারকথা হচ্ছে, শাসকের আনুগত্য করার ব্যাপারটি তাদের পক্ষ থেকে নিজেদের হক ও অধিকার বুঝে পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং তারা যদি কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তখনও তার কর্তব্য আনুগত্য বজায় রাখা। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-
ستكون فتن وأمور تنكرونها ، قالوا يا رسول الله! فما تأمرنا؟ قال : تؤدون الحق الذي عليكم، وتسألون الله عز وجل الذي لكم
অচিরেই অনেক ফিতনা এবং এমন অনেক বিষয় দেখা দেবে, যা তোমাদের কাছে আপত্তিকর মনে হবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে ক্ষেত্রে আপনি আমাদের কী আদেশ করেন? তিনি বললেন, তোমাদের কাছে অন্যের যা প্রাপ্য তা তোমরা আদায় করবে, আর তোমাদের নিজেদের প্রাপ্য আল্লাহর কাছে চাবে। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৬০৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৪০৬৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৪৩; মুস্তাখরাজ আবী আওয়ানা, হাদীছ নং ৭১৩২)
সম্ভবত এর মধ্যে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, খেলাফতে তাদের ওপর কুরায়শ বংশ অগ্রাধিকার লাভ করবে। তারা যেন তা মেনে নেয়।
তারপর বলা হয়েছেঃ- وعلى أن لا تنازع الأمر أهله ‘এবং শাসনক্ষমতার ব্যাপারে তার অধিকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হব না। অর্থাৎ যখন যে ব্যক্তি ক্ষমতায় থাকে, তখন তার আনুগত্য বজায় রাখবে। তার কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে না। কেননা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গেলে আরও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তখন জাতীয় ঐক্য ও সংহতিতে ফাটল ধরে আত্মকলহ ও গৃহযুদ্ধ লেগে যেতে পারে। আর এর পরিণামে নিজেদের শক্তি-ক্ষমতা সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায় এবং কুফরী শক্তির আগ্রাসনের সুযোগ হয়ে যায়। বলাবাহুল্য, এ পরিণাম আজ আমরা নিজেদের চোখে দেখতে পাচ্ছি। আমরা যাতে এ পরিণামের সম্মুখীন না হই, সেজন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগেই আমাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সে সাবধানবাণীতে কর্ণপাত করিনি। আমরা ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়িতে লিপ্ত হয়েছি আর এভাবে নিজ হাতে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছি।
শাসক প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত হলে করণীয়
তারপর তিনি ইরশাদ করেনঃ- إلا أن تروا كفرا بواحا ‘অবশ্য তোমরা যদি (শাসকদের মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখতে পাও'।
এখানে কুফরের দুই অর্থ হতে পারে। ক. এমন গুনাহ ও নাফরমানীর কাজ, যা কুফরের শাখা বটে, কিন্তু তা করার দ্বারা মানুষ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায় না, যেমন মদ পান করা, কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, জুলুম-অত্যাচার করা ইত্যাদি। ইমাম নববী রহ. শব্দটির এ অর্থই গ্রহণ করেছেন। তিনি হাদীছটির অর্থ করেন যে, তোমরা শাসকদের সঙ্গে শাসনক্ষমতা নিয়ে টানাটানি করো না এবং তাদের বিরোধিতা করো না। তবে যদি এমন কোনও অন্যায়-অপরাধ করতে দেখ, যার অন্যায় হওয়াটা তোমরা শরী'আতের মূলনীতি দ্বারা প্রমাণ করতে পার, তবে তোমরা তাদের সেসকল কাজের প্রতিবাদ কর এবং তাদের সামনে হক কথা বলো।
এরূপ ক্ষেত্রে কর্তব্য হচ্ছে এসব কাজের প্রতিবাদ করা, এসব কাজ যে অন্যায় ও অপরাধ তা তাদের সামনে তুলে ধরা এবং তাদেরকে এ সকল কাজ হতে বিরত রাখার চেষ্টা করা। এরূপ ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা এবং তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা উচিত নয়। কুরআন-সুন্নাহ'র নির্দেশনা দ্বারা এরকমই প্রমাণিত হয়।
খ. এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে সত্যিকারের কুফর, যা দ্বারা মানুষ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে সম্পূর্ণ কাফের ও বেঈমান হয়ে যায়। ইমাম কুরতুবী রহ. এ অর্থই গ্রহণ করেছেন। সুতরাং আমীর ও শাসক যদি এমন কোনও আকীদা পোষণ করে বা এমন কোনও কাজ করে, যা সম্পূর্ণ কুফরী এবং যা দ্বারা মানুষ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়, তবে তাকে আমীর ও শাসক পদে বহাল রাখা জায়েয নয়। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা অবশ্যকর্তব্য। তবে সে ক্ষেত্রেও তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার শক্তি ও সামর্থ্য থাকা শর্ত। সেরকম সামর্থ্য না থাকলে সবর করাই কর্তব্য।
তারপর তিনি ইরশাদ করেনঃ- عندكم من الله تعالى فيه برهان যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ আছে, তবে ভিন্ন কথা। অর্থাৎ তাদেরকে যদি প্রকাশ্য কুফরীতে লিপ্ত দেখতে পাও, সে কুফরী কেবল পাপ স্তরের হোক কিংবা হোক বাস্তবিক কুফর স্তরের, তবে স্তরভেদে তাদের সঙ্গে যেমন আচরণ করার কথা উপরে বলা হয়েছে তেমনি আচরণ করা হবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে সে কুফর শরী'আতের দলীল-প্রমাণ দ্বারা প্রামাণিত হতে হবে। কেবল সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না।
আমীর ও শাসকের সামনে হক কথা বলা
যে সকল বিষয়ে বাই'আত নেওয়া হয়েছিল তার সর্বশেষ ধারা হল হক কথা বলা এবং সে ব্যাপারে কোনও নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া না করা। অর্থাৎ তোমরা যখন যেখানেই থাক না কেন, সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করে যাবে। এ ব্যাপারে কোনওরকম শিথিলতা করবে না এবং কারও নিন্দা-তিরস্কারের ভয় করবে না। মূলত এ অংশটির ভিত্তিতেই হাদীছটি আলোচ্য অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
এটা ইসলামেরই ঐতিহ্য যে, তার অনুসারীদেরকে কোনও দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসকের দুর্দান্ত প্রভাব বা কোনও জালেম শাসকের রক্তচক্ষু কিংবা কোনও বিত্তশালীর অর্থকড়ির প্রলোভন হক কথা বলতে কুণ্ঠিত করতে পারেনি। ন্যায় ও ইনসাফের মূর্তপ্রতীক হযরত ফারুকে আ'যম রাযি.-এর মত প্রতাপশালী খলিফার সামনেও এ উম্মতের সাধারণ স্তরের নাগরিক পর্যন্ত নির্ভিকচিত্তে হক কথা উচ্চারণ করেছে। একবার খলিফা মোটা অঙ্কের মোহর নির্ধারণের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করে বলেছিলেন, এখন থেকে যারা বেশি মোহর ধরবে, তাদের সেই বেশিটা জব্দ করে আমি বায়তুল মালে জমা করে দেব। এ কথা শুনে এক নারী তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বলে উঠলেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! আপনার কথা বেশি শিরোধার্য না আল্লাহর কথা? আল্লাহ তাআলা তো বলেছেনঃ-
وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا
‘এবং তাদের একজনকে অগাধ মোহর দিয়ে থাক, তবে তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না'। (সূরা নিসা (৪), আয়াত ২০)
এ কথায় হযরত ‘উমর রাযি. মাথা নত করে দিলেন এবং স্বগতোক্তি করলেন, হে 'উমর! তোমার চেয়ে সকলেই বেশি জানে।
আব্বাসী খলিফা আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ যখন ক্ষমতাশীন হন এবং উমাইয়া বংশের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালান, তখন তার চাচা আব্দুল্লাহ ইবনে 'আলী, যিনি একজন ভয়ানক রক্তপিপাসু গভর্নর হিসেবে কুখ্যাত ছিলেন, ইমাম আওযা'ঈ রহ-কে ডেকে পাঠান এবং তাকে জিজ্ঞেস করেন, উমাইয়া বংশের লোকজনের এ রক্তপাত সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তার মুখের ওপর জবাব ছুঁড়ে দেন যে, হারাম। এ প্রসঙ্গে তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছও শুনিয়ে দেন। তারপর আব্দুল্লাহ ইবনে 'আলী আরও কয়েকটি প্রশ্ন করেন। তার কোনওটির উত্তরে তিনি কুরআন-হাদীছ ভিত্তিক সত্য-সঠিক জবাব দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। তার প্রত্যেকটি জবাবে আব্দুল্লাহ ইবনে 'আলী সম্পূর্ণ নিরুত্তর হয়ে যান। কিন্তু লোক তো ছিল কঠিন কঠোর স্বভাবের। সুতরাং যখন ইমাম আওযা'ঈ রহ.-কে তিনি দরবার থেকে বের হয়ে যেতে বলেন এবং এ সত্যভাষী ইমাম সেখান থেকে বের হয়ে আসেন, তখন কিভাবে এসেছিলেন সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন যে, আমি এক-এক কদম সামনে রাখছিলাম আর মনে করছিলাম এই বুঝি আমার ছিন্ন মাথা আমার পায়ের ওপর গড়িয়ে পড়ল। (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৫৫১-৫৫২ নং পৃষ্ঠা)
উমাইয়া খলিফা ইয়াযীদ ইবনে আব্দুল মালিকের আমলে ইরাক ও খুরাসানের শাসনকর্তা ছিলেন উমর ইবনে হুবায়রা ফাযারী। কঠোর-কঠিন চরিত্রের এক অত্যাচারী শাসক। তিনি আরও অনেকের সঙ্গে হযরত হাসান বসরী রহ.-কেও ডেকে পাঠালেন। প্রশ্ন করলেন, আল্লাহ তাআলা ইয়াযীদ ইবনে আব্দুল মালিককে তাঁর বান্দাদের ওপর নিজ খলিফা নিযুক্ত করেছেন এবং তাদের থেকে তার প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার নিয়েছেন। আমাদের থেকেও অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে যেন তার প্রতি আনুগত্য রক্ষা করি। এখন আপনারা বলুন তিনি আমার কাছে যে সমস্ত ফরমান পাঠান সে ব্যাপারে আমার করণীয় কী? অনেকেই আত্মরক্ষামূলক জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু হাসান বসরী রহ. দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উত্তর দিলেন, হে ইবনে হুবায়রা! আপনি ইয়াযীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহর ব্যাপারে ইয়াযীদকে ভয় করা হতে বিরত থাকুন। আল্লাহ আপনাকে ইয়াযীদ থেকে রক্ষা করবেন, কিন্তু ইয়াযীদ আপনাকে আল্লাহ হতে রক্ষা করতে পারবে না। অচিরেই আল্লাহ আপনার কাছে এক ফিরিশতা পাঠাবেন, যিনি আপনাকে আপনার এ সিংহাসন ও রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে সংকীর্ণ কবরে নিয়ে যাবেন। সেখানে আপনাকে আপনার আমল ছাড়া কোনওকিছুই রক্ষা করতে পারবে না। হে ইবনে হুবায়রা! আল্লাহ তা'আলা রাজক্ষমতা দিয়েছেন তাঁর দীন ও তাঁর বান্দাদের সাহায্যার্থে। সুতরাং তাঁর অবাধ্যতা করে তাঁর দেওয়া ক্ষমতাকে তাঁর দীন ও তাঁর বান্দাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন না। মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতামূলক কাজে কোনও মাখলুকের আনুগত্য করা যায় না। তার এ দৃপ্ত ও নির্ভীক ভাষণ ইবনে হুবায়রার ওপর দারুণ প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং যেখানে গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার কথা, সেখানে তাকে সসম্মানে বিদায় করেন। (ইমাম ইবন খাল্লিকান, ওফাইয়াতুল আ'য়ান, ২য় খণ্ড, ৭১ পৃষ্ঠা।)
সত্যভাষণে বিখ্যাত তাবিঈ তাউস ইবনে কায়সান রহ.-এর বহু শ্বাসরূদ্ধকর ঘটনা বর্ণিত আছে। তার পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে তাউসও হক কথায় কোনও কিছুর পরওয়া করতেন না। একবার আব্বাসী খলিফা আবূ জা'ফর মানসুরের সামনে তিনি যে সত্যভাষণ দিয়েছিলেন তা বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম মালিক রহ. বলেন, তার কথা শুনে আমি আমার কাপড়-চোপড় গুটিয়ে নিয়েছিলাম। এই বুঝি খলিফার জল্লাদ তার গর্দানে তরবারি বসিয়ে দিল আর তার রক্তের ছিটা এসে আমার কাপড়ে পড়ল। তার ভাষণের পর খলিফা তাকে বলেছিলেন, ওই দোয়াতটা আমাকে দাও। তিন-তিনবার এ হুকুম তাকে দেওয়া সত্ত্বেও তিনি দোয়াত এগিয়ে দেননি। খলিফা বললেন, তুমি আমার এ হুকুম শুনলে না কেন? তিনি বললেন, আমার ভয় আপনি এর দ্বারা কোনও পাপকর্মের হুকুম লিখবেন আর দোয়াত এগিয়ে দেওয়ার কারণে তাতে আমারও অংশীদারিত্ব থাকবে। ফলে গুনাহে আমিও অংশীদার হয়ে যাব। (ইমাম ইবন খাল্লিকান, ওফাইয়াতুল আ'য়ান, ২য় খণ্ড, ৫১১ পৃষ্ঠা।)
সত্যভাষণের এরকম আরও বহু ঘটনা আমাদের ইতিহাস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ হানীফা রহ.,ইমাম মালিক রহ,, ইমাম আহমাদ ইব্ন হাম্বল রহ., সুফয়ান সাওরী রহ., ফুযায়ল ইব্ন ইয়ায রহ. এবং আমাদের জানা ও অজানা বহু মহামনীষী তাদের সত্যভাষণ দ্বারা ইসলামের বিশুদ্ধতা সংরক্ষণে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের সেসব ঘটনা আমাদের ইতিহাসের এক গৌরবজনক অংশ। তার পাঠ দ্বারা ঈমান তাজা হয় এবং তার পাঠ ঈমানদারদের অন্তরে সত্যভাষণের প্রেরণা যোগায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজ আমল-আখলাকের পরিশুদ্ধির লক্ষ্যে কোনও মুরশিদের হাতে বাই'আত গ্রহণ করা জায়েয।
খ. শাসক যতক্ষণ পর্যন্ত শরী'আতবিরোধী আদেশ না করে, ততক্ষণ তার আনুগত্য করা অবশ্যকর্তব্য।
গ. শাসক নিজে কোনও অন্যায়-অপরাধ করলে সে ব্যাপারে সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে উপদেশ দেওয়া এবং সে অন্যায় কাজে তাকে নিষেধ করা উচিত।
ঘ. শাসক কুফরী কাজ করলে জনগণের উচিত তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দীনদার শাসক নিযুক্ত করা।
ঙ. কারও সামনে হক কথা বলতে কোনও নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করা উচিত নয়।
হযরত আবুল ওয়ালীদ উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে বাই'আত গ্রহণ করেছি এই মর্মে যে, সংকটে, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং সন্তুষ্টিকালে ও অসন্তুষ্ট অবস্থায় (শাসকবর্গের) কথা শুনব ও মানব, আমাদের ওপর অন্যদের অগ্রাধিকার প্রদানকে মেনে নেব এবং শাসনক্ষমতার ব্যাপারে তার অধিকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হব না। তিনি বলেন, অবশ্য তোমরা যদি (শাসকদের মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখতে পাও, যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে স্পষ্ট দলীল–প্রমাণ আছে, তবে ভিন্ন কথা। আমরা আরও বাই'আত গ্রহণ করেছি এই মর্মে যে, আমরা যেখানেই থাকি হক কথা বলব। আল্লাহর ব্যাপারে আমরা কোনও নিন্দুকের নিন্দার ভয় করব না। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭০৯)
এ হাদীছে হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে তাঁর এক বাই'আতের বিষয়বস্তু উল্লেখ করেছেন। স্পষ্টই বোঝা যায় এটা ইসলাম গ্রহণের বাই'আত ছিল না। বরং তিনি এর আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ বাই'আত ছিল সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় সম্পর্কে। এর দ্বারা প্রমাণ হয় বুযুর্গানে দীনের হাতে তাদের মুরীদগণ যে বাই'আত গ্রহণ করে থাকেন তা অভিনব কিছু নয়; বরং দীনের ওপর বা সুনির্দিষ্ট কোনও আমলের ওপর মজবুতীর সঙ্গে চলার ব্যাপারে এরকম বাই'আত খোদ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সাহাবায়ে কিরাম থেকে নিয়েছেন।
হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. থেকে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বাই'আত নিয়েছিলেন তার মূল বিষয় দু'টি
ক. আমীর ও শাসকের আনুগত্য করা এবং
খ. হক কথা বলতে কোনওকিছুর পরওয়া না করা।
আমীর ও শাসকের আনুগত্য প্রসঙ্গ
এ হাদীছে আমীর ও শাসকের আনুগত্য বজায় রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক তো বাইআত নেওয়া দ্বারাই এর গুরুত্ব স্পষ্ট হয়। সেইসঙ্গে বিষয়টাকে আরও জোরদার করার জন্য বলা হয়েছে- তুমি সংকটের অবস্থায় থাক বা সচ্ছলতার অবস্থায়, সন্তুষ্ট অবস্থায় থাক বা অসন্তুষ্ট অবস্থায়, সর্ববস্থায়ই আনুগত্য বজায় রাখবে। অর্থাৎ তুমি ধনী হও বা গরীব এবং শাসকের প্রতি তোমার সন্তুষ্টি থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায় তার হুকুম মানবে। এমনকি কখনও যদি দেখ তারা কোনও বিষয়ে তোমাদের ওপর অন্য কাউকে বা নিজেদেরকে প্রাধান্য দিচ্ছে, তখনও আনুগত্য পরিত্যাগ করবে না। কেননা আমীর ও শাসকের আনুগত্য পরিত্যাগ দ্বারা উম্মতের ঐক্য নষ্ট হয় এবং বিভেদ ও বিভক্তির পথ খুলে যায় আর তা জাতীয় অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক। ইসলাম উম্মতের ঐক্য ও সম্প্রীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। যা-কিছু দ্বারা ঐক্য ও সম্প্রীতি নষ্ট হয় তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে বহু আয়াত আছে এবং হাদীছ শরীফেও আছে বহু সুস্পষ্ট বাণী। এ হাদীছটিও তার একটি।
উল্লেখ্য, শাসকের আনুগত্য করার হুকুম কেবল ততক্ষণ পর্যন্তই প্রযোজ্য, যতক্ষণ তারা শরী'আতবিরোধী কোনও আদেশ না করে। এবং সে আদেশ জনকল্যাণবিরোধী ও শাসকের স্বার্থসিদ্ধির জন্য না হবে। শরী'আতবিরোধী কোনও আদেশ করলে সে ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য জায়েয নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ-
لا طاعة لمخلوق في معصية الله عز وجل
যে কাজে আল্লাহর অবাধ্যতা হয় তাতে কোনও মাখলূকের আনুগত্য নেই। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৩৮৮৯; মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৩৭৮৮; আত-তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৩৯১৭: বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪৫৫; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৭০৭)
বলা হয়েছে- وعلى أثرة علينا , 'আমাদের ওপর অন্যদের অগ্রাধিকার প্রদানকে মেনে নেব'। ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, এ কথাটি বিশেষভাবে আনসারদের বলা হয়েছিল। এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল হুনায়নের যুদ্ধের পর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টনকালে। তিনি সে সম্পদ কুরায়শদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছিলেন। আনসারদের কাউকে তা থেকে কিছুই দেননি। তখন কিছুসংখ্যক তরুণ আনসারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছিল যে, ইসলামে নবদীক্ষিত যে কুরায়শদের রক্তে এখনও আমাদের তরবারি রঞ্জিত আছে, আজ গনীমতের মাল বণ্টনে আমাদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ কথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কানে আসলে তিনি তাদেরকে ডাকেন এবং কেন নওমুসলিম কুরায়শদের মধ্যে তা বণ্টন করা হচ্ছে তার ব্যাখ্যা করে দেন। তাতে আনসারগণ খুশি হয়ে যান। তখন তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করেছিলেন, লোকে যুদ্ধলব্ধ উট, বকরি ইত্যাদি নিয়ে যাবে আর তোমরা তোমাদের সঙ্গে আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে যাবে—এতে কি তোমরা খুশি নও? তারা সমস্বরে নিজেদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
এ বাক্যটির সারকথা হচ্ছে, শাসকের আনুগত্য করার ব্যাপারটি তাদের পক্ষ থেকে নিজেদের হক ও অধিকার বুঝে পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং তারা যদি কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তখনও তার কর্তব্য আনুগত্য বজায় রাখা। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-
ستكون فتن وأمور تنكرونها ، قالوا يا رسول الله! فما تأمرنا؟ قال : تؤدون الحق الذي عليكم، وتسألون الله عز وجل الذي لكم
অচিরেই অনেক ফিতনা এবং এমন অনেক বিষয় দেখা দেবে, যা তোমাদের কাছে আপত্তিকর মনে হবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে ক্ষেত্রে আপনি আমাদের কী আদেশ করেন? তিনি বললেন, তোমাদের কাছে অন্যের যা প্রাপ্য তা তোমরা আদায় করবে, আর তোমাদের নিজেদের প্রাপ্য আল্লাহর কাছে চাবে। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৬০৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৪০৬৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৪৩; মুস্তাখরাজ আবী আওয়ানা, হাদীছ নং ৭১৩২)
সম্ভবত এর মধ্যে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, খেলাফতে তাদের ওপর কুরায়শ বংশ অগ্রাধিকার লাভ করবে। তারা যেন তা মেনে নেয়।
তারপর বলা হয়েছেঃ- وعلى أن لا تنازع الأمر أهله ‘এবং শাসনক্ষমতার ব্যাপারে তার অধিকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হব না। অর্থাৎ যখন যে ব্যক্তি ক্ষমতায় থাকে, তখন তার আনুগত্য বজায় রাখবে। তার কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে না। কেননা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গেলে আরও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তখন জাতীয় ঐক্য ও সংহতিতে ফাটল ধরে আত্মকলহ ও গৃহযুদ্ধ লেগে যেতে পারে। আর এর পরিণামে নিজেদের শক্তি-ক্ষমতা সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায় এবং কুফরী শক্তির আগ্রাসনের সুযোগ হয়ে যায়। বলাবাহুল্য, এ পরিণাম আজ আমরা নিজেদের চোখে দেখতে পাচ্ছি। আমরা যাতে এ পরিণামের সম্মুখীন না হই, সেজন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগেই আমাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সে সাবধানবাণীতে কর্ণপাত করিনি। আমরা ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়িতে লিপ্ত হয়েছি আর এভাবে নিজ হাতে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছি।
শাসক প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত হলে করণীয়
তারপর তিনি ইরশাদ করেনঃ- إلا أن تروا كفرا بواحا ‘অবশ্য তোমরা যদি (শাসকদের মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখতে পাও'।
এখানে কুফরের দুই অর্থ হতে পারে। ক. এমন গুনাহ ও নাফরমানীর কাজ, যা কুফরের শাখা বটে, কিন্তু তা করার দ্বারা মানুষ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায় না, যেমন মদ পান করা, কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, জুলুম-অত্যাচার করা ইত্যাদি। ইমাম নববী রহ. শব্দটির এ অর্থই গ্রহণ করেছেন। তিনি হাদীছটির অর্থ করেন যে, তোমরা শাসকদের সঙ্গে শাসনক্ষমতা নিয়ে টানাটানি করো না এবং তাদের বিরোধিতা করো না। তবে যদি এমন কোনও অন্যায়-অপরাধ করতে দেখ, যার অন্যায় হওয়াটা তোমরা শরী'আতের মূলনীতি দ্বারা প্রমাণ করতে পার, তবে তোমরা তাদের সেসকল কাজের প্রতিবাদ কর এবং তাদের সামনে হক কথা বলো।
এরূপ ক্ষেত্রে কর্তব্য হচ্ছে এসব কাজের প্রতিবাদ করা, এসব কাজ যে অন্যায় ও অপরাধ তা তাদের সামনে তুলে ধরা এবং তাদেরকে এ সকল কাজ হতে বিরত রাখার চেষ্টা করা। এরূপ ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা এবং তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা উচিত নয়। কুরআন-সুন্নাহ'র নির্দেশনা দ্বারা এরকমই প্রমাণিত হয়।
খ. এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে সত্যিকারের কুফর, যা দ্বারা মানুষ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে সম্পূর্ণ কাফের ও বেঈমান হয়ে যায়। ইমাম কুরতুবী রহ. এ অর্থই গ্রহণ করেছেন। সুতরাং আমীর ও শাসক যদি এমন কোনও আকীদা পোষণ করে বা এমন কোনও কাজ করে, যা সম্পূর্ণ কুফরী এবং যা দ্বারা মানুষ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়, তবে তাকে আমীর ও শাসক পদে বহাল রাখা জায়েয নয়। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা অবশ্যকর্তব্য। তবে সে ক্ষেত্রেও তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার শক্তি ও সামর্থ্য থাকা শর্ত। সেরকম সামর্থ্য না থাকলে সবর করাই কর্তব্য।
তারপর তিনি ইরশাদ করেনঃ- عندكم من الله تعالى فيه برهان যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ আছে, তবে ভিন্ন কথা। অর্থাৎ তাদেরকে যদি প্রকাশ্য কুফরীতে লিপ্ত দেখতে পাও, সে কুফরী কেবল পাপ স্তরের হোক কিংবা হোক বাস্তবিক কুফর স্তরের, তবে স্তরভেদে তাদের সঙ্গে যেমন আচরণ করার কথা উপরে বলা হয়েছে তেমনি আচরণ করা হবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে সে কুফর শরী'আতের দলীল-প্রমাণ দ্বারা প্রামাণিত হতে হবে। কেবল সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না।
আমীর ও শাসকের সামনে হক কথা বলা
যে সকল বিষয়ে বাই'আত নেওয়া হয়েছিল তার সর্বশেষ ধারা হল হক কথা বলা এবং সে ব্যাপারে কোনও নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া না করা। অর্থাৎ তোমরা যখন যেখানেই থাক না কেন, সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করে যাবে। এ ব্যাপারে কোনওরকম শিথিলতা করবে না এবং কারও নিন্দা-তিরস্কারের ভয় করবে না। মূলত এ অংশটির ভিত্তিতেই হাদীছটি আলোচ্য অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
এটা ইসলামেরই ঐতিহ্য যে, তার অনুসারীদেরকে কোনও দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসকের দুর্দান্ত প্রভাব বা কোনও জালেম শাসকের রক্তচক্ষু কিংবা কোনও বিত্তশালীর অর্থকড়ির প্রলোভন হক কথা বলতে কুণ্ঠিত করতে পারেনি। ন্যায় ও ইনসাফের মূর্তপ্রতীক হযরত ফারুকে আ'যম রাযি.-এর মত প্রতাপশালী খলিফার সামনেও এ উম্মতের সাধারণ স্তরের নাগরিক পর্যন্ত নির্ভিকচিত্তে হক কথা উচ্চারণ করেছে। একবার খলিফা মোটা অঙ্কের মোহর নির্ধারণের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করে বলেছিলেন, এখন থেকে যারা বেশি মোহর ধরবে, তাদের সেই বেশিটা জব্দ করে আমি বায়তুল মালে জমা করে দেব। এ কথা শুনে এক নারী তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বলে উঠলেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! আপনার কথা বেশি শিরোধার্য না আল্লাহর কথা? আল্লাহ তাআলা তো বলেছেনঃ-
وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا
‘এবং তাদের একজনকে অগাধ মোহর দিয়ে থাক, তবে তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না'। (সূরা নিসা (৪), আয়াত ২০)
এ কথায় হযরত ‘উমর রাযি. মাথা নত করে দিলেন এবং স্বগতোক্তি করলেন, হে 'উমর! তোমার চেয়ে সকলেই বেশি জানে।
আব্বাসী খলিফা আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ যখন ক্ষমতাশীন হন এবং উমাইয়া বংশের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালান, তখন তার চাচা আব্দুল্লাহ ইবনে 'আলী, যিনি একজন ভয়ানক রক্তপিপাসু গভর্নর হিসেবে কুখ্যাত ছিলেন, ইমাম আওযা'ঈ রহ-কে ডেকে পাঠান এবং তাকে জিজ্ঞেস করেন, উমাইয়া বংশের লোকজনের এ রক্তপাত সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তার মুখের ওপর জবাব ছুঁড়ে দেন যে, হারাম। এ প্রসঙ্গে তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছও শুনিয়ে দেন। তারপর আব্দুল্লাহ ইবনে 'আলী আরও কয়েকটি প্রশ্ন করেন। তার কোনওটির উত্তরে তিনি কুরআন-হাদীছ ভিত্তিক সত্য-সঠিক জবাব দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। তার প্রত্যেকটি জবাবে আব্দুল্লাহ ইবনে 'আলী সম্পূর্ণ নিরুত্তর হয়ে যান। কিন্তু লোক তো ছিল কঠিন কঠোর স্বভাবের। সুতরাং যখন ইমাম আওযা'ঈ রহ.-কে তিনি দরবার থেকে বের হয়ে যেতে বলেন এবং এ সত্যভাষী ইমাম সেখান থেকে বের হয়ে আসেন, তখন কিভাবে এসেছিলেন সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন যে, আমি এক-এক কদম সামনে রাখছিলাম আর মনে করছিলাম এই বুঝি আমার ছিন্ন মাথা আমার পায়ের ওপর গড়িয়ে পড়ল। (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৫৫১-৫৫২ নং পৃষ্ঠা)
উমাইয়া খলিফা ইয়াযীদ ইবনে আব্দুল মালিকের আমলে ইরাক ও খুরাসানের শাসনকর্তা ছিলেন উমর ইবনে হুবায়রা ফাযারী। কঠোর-কঠিন চরিত্রের এক অত্যাচারী শাসক। তিনি আরও অনেকের সঙ্গে হযরত হাসান বসরী রহ.-কেও ডেকে পাঠালেন। প্রশ্ন করলেন, আল্লাহ তাআলা ইয়াযীদ ইবনে আব্দুল মালিককে তাঁর বান্দাদের ওপর নিজ খলিফা নিযুক্ত করেছেন এবং তাদের থেকে তার প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার নিয়েছেন। আমাদের থেকেও অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে যেন তার প্রতি আনুগত্য রক্ষা করি। এখন আপনারা বলুন তিনি আমার কাছে যে সমস্ত ফরমান পাঠান সে ব্যাপারে আমার করণীয় কী? অনেকেই আত্মরক্ষামূলক জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু হাসান বসরী রহ. দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উত্তর দিলেন, হে ইবনে হুবায়রা! আপনি ইয়াযীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহর ব্যাপারে ইয়াযীদকে ভয় করা হতে বিরত থাকুন। আল্লাহ আপনাকে ইয়াযীদ থেকে রক্ষা করবেন, কিন্তু ইয়াযীদ আপনাকে আল্লাহ হতে রক্ষা করতে পারবে না। অচিরেই আল্লাহ আপনার কাছে এক ফিরিশতা পাঠাবেন, যিনি আপনাকে আপনার এ সিংহাসন ও রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে সংকীর্ণ কবরে নিয়ে যাবেন। সেখানে আপনাকে আপনার আমল ছাড়া কোনওকিছুই রক্ষা করতে পারবে না। হে ইবনে হুবায়রা! আল্লাহ তা'আলা রাজক্ষমতা দিয়েছেন তাঁর দীন ও তাঁর বান্দাদের সাহায্যার্থে। সুতরাং তাঁর অবাধ্যতা করে তাঁর দেওয়া ক্ষমতাকে তাঁর দীন ও তাঁর বান্দাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন না। মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতামূলক কাজে কোনও মাখলুকের আনুগত্য করা যায় না। তার এ দৃপ্ত ও নির্ভীক ভাষণ ইবনে হুবায়রার ওপর দারুণ প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং যেখানে গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার কথা, সেখানে তাকে সসম্মানে বিদায় করেন। (ইমাম ইবন খাল্লিকান, ওফাইয়াতুল আ'য়ান, ২য় খণ্ড, ৭১ পৃষ্ঠা।)
সত্যভাষণে বিখ্যাত তাবিঈ তাউস ইবনে কায়সান রহ.-এর বহু শ্বাসরূদ্ধকর ঘটনা বর্ণিত আছে। তার পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে তাউসও হক কথায় কোনও কিছুর পরওয়া করতেন না। একবার আব্বাসী খলিফা আবূ জা'ফর মানসুরের সামনে তিনি যে সত্যভাষণ দিয়েছিলেন তা বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম মালিক রহ. বলেন, তার কথা শুনে আমি আমার কাপড়-চোপড় গুটিয়ে নিয়েছিলাম। এই বুঝি খলিফার জল্লাদ তার গর্দানে তরবারি বসিয়ে দিল আর তার রক্তের ছিটা এসে আমার কাপড়ে পড়ল। তার ভাষণের পর খলিফা তাকে বলেছিলেন, ওই দোয়াতটা আমাকে দাও। তিন-তিনবার এ হুকুম তাকে দেওয়া সত্ত্বেও তিনি দোয়াত এগিয়ে দেননি। খলিফা বললেন, তুমি আমার এ হুকুম শুনলে না কেন? তিনি বললেন, আমার ভয় আপনি এর দ্বারা কোনও পাপকর্মের হুকুম লিখবেন আর দোয়াত এগিয়ে দেওয়ার কারণে তাতে আমারও অংশীদারিত্ব থাকবে। ফলে গুনাহে আমিও অংশীদার হয়ে যাব। (ইমাম ইবন খাল্লিকান, ওফাইয়াতুল আ'য়ান, ২য় খণ্ড, ৫১১ পৃষ্ঠা।)
সত্যভাষণের এরকম আরও বহু ঘটনা আমাদের ইতিহাস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ হানীফা রহ.,ইমাম মালিক রহ,, ইমাম আহমাদ ইব্ন হাম্বল রহ., সুফয়ান সাওরী রহ., ফুযায়ল ইব্ন ইয়ায রহ. এবং আমাদের জানা ও অজানা বহু মহামনীষী তাদের সত্যভাষণ দ্বারা ইসলামের বিশুদ্ধতা সংরক্ষণে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের সেসব ঘটনা আমাদের ইতিহাসের এক গৌরবজনক অংশ। তার পাঠ দ্বারা ঈমান তাজা হয় এবং তার পাঠ ঈমানদারদের অন্তরে সত্যভাষণের প্রেরণা যোগায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজ আমল-আখলাকের পরিশুদ্ধির লক্ষ্যে কোনও মুরশিদের হাতে বাই'আত গ্রহণ করা জায়েয।
খ. শাসক যতক্ষণ পর্যন্ত শরী'আতবিরোধী আদেশ না করে, ততক্ষণ তার আনুগত্য করা অবশ্যকর্তব্য।
গ. শাসক নিজে কোনও অন্যায়-অপরাধ করলে সে ব্যাপারে সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে উপদেশ দেওয়া এবং সে অন্যায় কাজে তাকে নিষেধ করা উচিত।
ঘ. শাসক কুফরী কাজ করলে জনগণের উচিত তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দীনদার শাসক নিযুক্ত করা।
ঙ. কারও সামনে হক কথা বলতে কোনও নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করা উচিত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
