কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

৩০. ওছিয়াত সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৬২৮
আন্তর্জাতিক নং: ৩৬২৮
সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ওয়াসিয়াত করা প্রসঙ্গে
৩৬২৯. আমর ইবনে আলী (রাহঃ) ......... আমির ইবনে সা’দ (রাহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মক্কায় থাকাকালে তিনি যখন রোগাক্রান্ত হন, তখন নবী (ﷺ) তাঁকে দেখতে আসেন। তিনি যে স্থান হতে হিজরত করে গেছেন (মক্কা), সেখানে মৃত্যুবরণ করতে অপছন্দ করতেন। নবী (ﷺ) বললেন, আল্লাহ্ তাআলা সা’দ ইবনে আফরাকে রহম করুন। অথবা আল্লাহ্ সা’দ ইবনে আফরাকে রহম করুন। এক কন্যা ব্যতীত তার [সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাযিঃ)-এর] আর কোন সন্তান ছিল না।

তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার সমস্ত সম্পত্তি (দান) ওয়াসিয়াত করবো? তিনি বললেনঃ না। আমি বললামঃ অর্ধেক? তিনি বললেনঃ না। আমি বললামঃ এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, এক তৃতীয়াংশ। আর এক-তৃতীয়াংশও অনেক। যদি তুমি তোমার ওয়ারিসদেরকে ধনী রেখে যাও, তবে তাতে তাদেরকে এমন অভাবগ্রস্ত রেখে যাওয়া অপেক্ষা উত্তম যে, তারা মানুষের হাতে যা আছে তা পাওয়ার জন্য হাত পেতে বেড়াবে।
بَاب الْوَصِيَّةِ بِالثُّلُثِ
أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُهُ وَهُوَ بِمَكَّةَ وَهُوَ يَكْرَهُ أَنْ يَمُوتَ بِالْأَرْضِ الَّذِي هَاجَرَ مِنْهَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَحِمَ اللَّهُ سَعْدَ ابْنَ عَفْرَاءَ أَوْ يَرْحَمُ اللَّهُ سَعْدَ ابْنَ عَفْرَاءَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ إِلَّا ابْنَةٌ وَاحِدَةٌ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أُوصِي بِمَالِي كُلِّهِ قَالَ لَا قُلْتُ النِّصْفَ قَالَ لَا قُلْتُ فَالثُّلُثَ قَالَ الثُّلُثَ وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ إِنَّكَ أَنْ تَدَعَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে হযরত সা'দ রাযি. নিজ ঘটনা বর্ণনা করেন যে, তিনি বিদায় হজ্জের বছর মক্কা মুকার্রামায় কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সংবাদ পেয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে আসেন। কোনও সাহাবী অসুস্থ হলে তাকে দেখতে আসা তাঁর সাধারণ অভ্যাস ছিল। তিনি অন্যদেরকেও রোগী দেখতে যাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এটা তাঁর সুন্নত এবং এর অনেক ফযীলত।

হযরত সা'দ রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। আমি তাঁকে জানালাম যে, আমার ওয়ারিশ তো মাত্র আমার এক কন্যা। অন্যদিকে আমার সম্পদ প্রচুর। এ অবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের তিন ভাগের দুইভাগ সদকা করে দিতে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করলেন। তারপর তিনি অর্ধেকের কথা বললেন। তাও নিষেধ করলেন। শেষে যখন তিন ভাগের একভাগের কথা বললেন, তখন পরিমাণ হিসেবে এটাকেও বেশিই সাব্যস্ত করলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও অনুমতি দিয়ে দিলেন। সেইসংগে উপদেশ দিলেন যে, ধন–সম্পদ থাকলে তার একটা বড় অংশ সন্তানদের জন্য রেখে যাওয়া চাই। কেননা তা না হলে এ আশংকা আছে যে, তারা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। আর প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এটা অমর্যাদাকর।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদীছে অপরের কাছে হাত পেতে বেড়ানোর নিন্দা করেছেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তিকে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। তাঁর শিক্ষায় অপরের কাছে হাত পাতা অপেক্ষা খেটে খাওয়াই শ্রেয়। সেই শিক্ষা হিসেবেই তিনি হযরত সা'দ রাযি.–কে তার সম্পদের বড় অংশ ওয়ারিশদের জন্য রেখে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কেউ অসুস্থ হয়েছে জানলে তাকে দেখতে যাওয়া উচিত। এটা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।

খ. উল্লেখযোগ্য কোনও কাজ করতে চাইলে সে ব্যাপারে বিজ্ঞজনের সংগে পরামর্শ করা উচিত, যেমন হযরত সা'দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস রাযি. তার সম্পদ দান করে দেওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে পরামর্শ করেছেন।

গ. মুমূর্ষু ব্যক্তি যদি তার সম্পদ দান করতে চায় বা সে সম্পর্কে অসিয়ত করতে চায়, তবে তা সর্বোচ্চ এক–তৃতীয়াংশের ভেতর করতে পারে, এর বেশি করা জায়েয নয়। উত্তম হল এক–তৃতীয়াংশেরও নিচে রাখা

ঘ. সম্পদ যদি অল্প হয়, তবে মুমূর্ষুকালে তা দান–খয়রাত না করে ওয়ারিশদের জন্য রেখে দেওয়াই ভালো।

ঙ. অন্যের কাছে কিছু চাওয়া ও হাত পেতে বেড়ানো অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। যথাসম্ভব খেটে খাওয়াই ইসলামের শিক্ষা।

চ. দান–খয়রাতে সুনাম–সুখ্যাতি নয়, বরং একমাত্র আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি কামনাই লক্ষ হওয়া উচিত।

ছ. আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় সন্তান–সন্ততি ও আত্মীয়–স্বজনের পেছনে খরচ করলেও ছওয়াব পাওয়া যায়। এমনকি স্ত্রীর মুখে লোকমা তুলে দেওয়াটাও একটি ছওয়াবের কাজ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
rabi
বর্ণনাকারী:
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ৩৬২৮ | মুসলিম বাংলা