কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

২৬. বিবাহ-শাদীর অধ্যায়

হাদীস নং: ৩২৫৯
আন্তর্জাতিক নং: ৩২৫৯
বয়স্ক কন্যার বিবাহ দেয়া
৩২৬২. মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রাহঃ) ......... উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, হাফসা বিনতে উমর (রাযিঃ) খুনায়স ইবনে হুযাফা সাহমীর ইন্‌তিকাল হওয়ায় বিধবা হলেন। খুনায়স রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবী ছিলেন এবং তিনি মদীনায় ইনতিকাল করেন। উমর (রাযিঃ) বলেন, আমি উসমান ইবনে আফফানের নিকট গিয়ে তার সাথে হাফসা বিনতে উমর-এর বিবাহ প্ৰস্তাব দিলাম। উমর (রাযিঃ) বলেন, আমি বললাম, যদি আপনি ইচ্ছা করেন, তা হলে হাফসাকে আপনার সাথে বিবাহ দিব। তিনি বললেনঃ এ ব্যাপারে আমি চিন্তা করবো। আমি কিছুদিন অপেক্ষা করলাম। এরপর তিনি আমার সাথে সাক্ষাত করে বললেনঃ আমি ঠিক করেছি, এ সময় আমি বিবাহ করবো না।

উমর (রাযিঃ) বলেন, তখন আমি আবু বকর সিদ্দীকের সাথে সাক্ষাত করলাম, বললামঃ যদি আপনার ইচ্ছা হয়, তাহলে আমি হাফসা বিনতে উমর (রাযিঃ)-কে আপনার সাথে বিবাহ দিব। আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) চুপ রইলেন। কোন উত্তরই দিলেন না। এতে উসমান (রাযিঃ)-এর উপর আমার যে ক্ৰোধ হয়েছিল, তার চাইতে অধিক ক্ৰোধ হলো তার উপর।

এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁর বিবাহের পয়গাম দিলেন, আমি তাঁর সাথে তাকে বিবাহ দেই। পরে আবু বকর (রাযিঃ)-এর সাথে সাক্ষাত হলে তিনি বললেনঃ আপনি যখন হাফসার বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন হয়তো আপনি আমার উপর রাগ করেছিলেন, কেননা আমি কোন উত্তর দেইনি। উমর (রাযিঃ) বলেন, আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আপনার প্রস্তাবে আমার কিছু না বলার কারণ এটাই ছিল যে, আমি জানতাম, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তার আলোচনা করেছেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর গোপন কথা প্রকাশ করতে চাইনি। যদি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাকে উপেক্ষা করতেন, তাহলে আমি তাকে গ্ৰহণ করতাম।
إِنْكَاحُ الرَّجُلِ ابْنَتَهُ الْكَبِيرَةَ
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُبَارَكِ قَالَ حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ سَعْدٍ قَالَ حَدَّثَنَا أَبِي عَنْ صَالِحٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّهُ سَمِعَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ يُحَدِّثُ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حَدَّثَنَا قَالَ يَعْنِي تَأَيَّمَتْ حَفْصَةُ بِنْتُ عُمَرَ مِنْ خُنَيْسِ بْنِ حُذَافَةَ السَّهْمِيِّ وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتُوُفِّيَ بِالْمَدِينَةِ قَالَ عُمَرُ فَأَتَيْتُ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ قَالَ قُلْتُ إِنْ شِئْتَ أَنْكَحْتُكَ حَفْصَةَ قَالَ سَأَنْظُرُ فِي أَمْرِي فَلَبِثْتُ لَيَالِيَ ثُمَّ لَقِيَنِي فَقَالَ قَدْ بَدَا لِي أَنْ لَا أَتَزَوَّجَ يَوْمِي هَذَا قَالَ عُمَرُ فَلَقِيتُ أَبَا بَكْرٍ الصِّدِّيقَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَقُلْتُ إِنْ شِئْتَ زَوَّجْتُكَ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ فَصَمَتَ أَبُو بَكْرٍ فَلَمْ يَرْجِعْ إِلَيَّ شَيْئًا فَكُنْتُ عَلَيْهِ أَوْجَدَ مِنِّي عَلَى عُثْمَانَ فَلَبِثْتُ لَيَالِيَ ثُمَّ خَطَبَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَنْكَحْتُهَا إِيَّاهُ فَلَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ لَعَلَّكَ وَجَدْتَ عَلَيَّ حِينَ عَرَضْتَ عَلَيَّ حَفْصَةَ فَلَمْ أَرْجِعْ إِلَيْكَ شَيْئًا قَالَ عُمَرُ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أَرْجِعَ إِلَيْكَ شَيْئًا فِيمَا عَرَضْتَ عَلَيَّ إِلَّا أَنِّي قَدْ كُنْتُ عَلِمْتُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ ذَكَرَهَا وَلَمْ أَكُنْ لِأُفْشِيَ سِرَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَوْ تَرَكَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبِلْتُهَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত হাফসা রাযি.-এর স্বামী হযরত খুনায়স ইবন হুযাফা রাযি.-এর ইন্তিকাল হয়ে গেলে হযরত উমর রাযি. তাঁর পুনর্বিবাহের জন্য চিন্তা করতে থাকেন। প্রথমে তিনি হযরত উছমান রাযি.-এর কাছে প্রস্তাব রাখেন। তারপর হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. -এর কাছে, যেমনটা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা কেউ তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। এতে তিনি মনে খুব কষ্ট পান। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর প্রতি কষ্টটা একটু বেশিই পান। কারণ হযরত উছমান রাযি. তো তাঁর এখন বিবাহের ইচ্ছা নেই বলে একটা জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. কোনও উত্তরই দেননি। বাহ্যত তিনি তাঁর প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন বলে মনে হচ্ছিল। এভাবে একজন অভিজাত ব্যক্তির বিবাহের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে মনে হলে অন্তরে অনেক বেশি কষ্ট লাগারই কথা, তাও যদি হয় অন্তরঙ্গ ও বিশেষ আস্থাভাজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যখন হযরত হাফসা রাযি.-কে বিবাহ করেন, তখন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. জবাব না দেওয়ার কারণ প্রকাশ করেন। কারণটা হল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যে হযরত হাফসা রাযি.-কে বিবাহ করবেন, এটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বিবাহ করবেন বলে বোঝা যাচ্ছে, তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. কীভাবে গ্রহণ করতে পারেন? আবার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু এ কথা অন্য কারও সামনে স্পষ্ট করেননি, তাই হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-ও তা প্রকাশ করা সমীচীন মনে করছেন না। তাই জবাব না দিয়ে তিনি প্রস্তাবটা এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু হযরত উমর রাযি.-এর তো এসব কথা জানা নেই। ফলে তাঁরও মনে কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। প্রিয় সাথী ও বন্ধুর মনের এ কষ্ট দূর করা দরকার। সুতরাং যথাসময়ে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং রহস্য প্রকাশ করে দিয়ে তাঁর মনের কষ্ট দূর করলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. অন্যের গোপন কোনও কথা জানা থাকলে তা প্রকাশ করা উচিত নয়।

খ. ইসলামে বিধবা বিবাহ দূষণীয় নয়; বরং এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কাজেই কারও মেয়ে বা বোন বিধবা হলে যথাশীঘ্র তার পুনর্বিবাহের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

গ. কারও আচরণ অপ্রীতিকর মনে হলে তাতে মনে কষ্ট পাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়।

ঘ. কারও আচরণে অন্য কেউ কষ্ট পেলে তার উচিত যথাশীঘ্র সে কষ্ট দূর করে দেওয়া।

ঙ. সঠিক পন্থায় বন্ধুকন্যাকে বিবাহ করলে তাতে দোষের কিছু নেই।

চ. কন্যার পিতা সরাসরি যদি যোগ্য পাত্রের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তা লজ্জার কোনও বিষয় নয়। হযরত শু'আয়ব আলাইহিস সালাম নিজেই তাঁর কন্যাকে বিবাহ করার জন্য হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সামনে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। কুরআন মাজীদে আছে-
إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنْكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ
আমি আমার এই দুই মেয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই। (সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ২৭)

ছ. বড় কোনও ব্যক্তি কোনও নারীকে বিবাহের আগ্রহ প্রকাশ করলে ছোট'র পক্ষ থেকে তাকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করা সমীচীন নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ৩২৫৯ | মুসলিম বাংলা