কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ
২৬. বিবাহ-শাদীর অধ্যায়
হাদীস নং: ৩২৪৮
আন্তর্জাতিক নং: ৩২৪৮
কোন ব্যক্তির স্বীয় কন্যাকে পছন্দনীয় ব্যক্তির কাছে বিবাহ দেয়ার প্রস্তাব করা
৩২৫১. ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খুনায়স অর্থাৎ ইবনে হুযাফ, যিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সাহাবী এবং বদরের যুদ্ধে অংশ গ্ৰহণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন, মদীনায় তাঁর ইন্তিকাল হলে হাফসা বিনতে উমর (রাযিঃ) বিধবা হলেন। উমর (রাযিঃ) বলেনঃ আমি উসমান ইবনে আফফানের সঙ্গে সাক্ষাত করে হাফসার কথা উল্লেখ করে তাকে বললামঃ যদি তুমি ইচ্ছা কর, তাহলে হাফসাকে আমি তোমার নিকট বিবাহ দিব। তিনি বললেনঃ এ ব্যাপারে আমি চিন্তা করব। আমি কিছুদিন অতিবাহিত করলাম, পুনরায় তার সাথে সাক্ষাত করলে তিনি বললেনঃ এসময় আমার বিবাহ করার ইচ্ছা নেই। উমর (রাযিঃ) বলেনঃ এরপর আমি আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাঁকে বললামঃ যদি আপনি ইচ্ছা করেন, তাহলে হাফসাকে আপনার সাথে বিবাহ দিব। তিনি আমার এ প্রশ্নের কোন উত্তর দিলেন না। এতে উসমান (রাযিঃ)-এর উপর আমার যে ক্ৰোধ হয়েছিল, তাহাতে অধিক ক্ৰোধ হলো তার উপর। এভাবে আমি কিছুদিন অতিবাহিত করলাম।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার কাছে তার বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। আমি তাকে তাঁর বিবাহে সোপর্দ করলাম। এরপর আবু বকর (রাযিঃ)-এর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হলে তিনি বললেনঃ আপনি আমার নিকট হাফসার বিবাহের প্রস্তাব দিলে আমি কিছু না বলায় হয়তো আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আপনি যখন প্রস্তাব দিলেনঃ তখন আপনাকে কোন উত্তর না দেওয়ার কারণ এ ব্যতীত আর কিছুই ছিল না যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তার আলোচনা করতে শুনেছি। আর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর গোপন কথা প্ৰকাশ করতে চাইনি। যদি তিনি তাকে বাদ দিতেন তবে আমি তাকে বিবাহ করতাম।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার কাছে তার বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। আমি তাকে তাঁর বিবাহে সোপর্দ করলাম। এরপর আবু বকর (রাযিঃ)-এর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হলে তিনি বললেনঃ আপনি আমার নিকট হাফসার বিবাহের প্রস্তাব দিলে আমি কিছু না বলায় হয়তো আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আপনি যখন প্রস্তাব দিলেনঃ তখন আপনাকে কোন উত্তর না দেওয়ার কারণ এ ব্যতীত আর কিছুই ছিল না যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তার আলোচনা করতে শুনেছি। আর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর গোপন কথা প্ৰকাশ করতে চাইনি। যদি তিনি তাকে বাদ দিতেন তবে আমি তাকে বিবাহ করতাম।
بَاب عَرْضِ الرَّجُلِ ابْنَتَهُ عَلَى مَنْ يَرْضَى
أَخْبَرَنَا إِسْحَقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ قَالَ أَنْبَأَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ قَالَ أَنْبَأَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ سَالِمٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ عَنْ عُمَرَ قَالَ تَأَيَّمَتْ حَفْصَةُ بِنْتُ عُمَرَ مِنْ خُنَيْسٍ يَعْنِي ابْنَ حُذَافَةَ وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا فَتُوُفِّيَ بِالْمَدِينَةِ فَلَقِيتُ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ حَفْصَةَ فَقُلْتُ إِنْ شِئْتَ أَنْكَحْتُكَ حَفْصَةَ فَقَالَ سَأَنْظُرُ فِي ذَلِكَ فَلَبِثْتُ لَيَالِيَ فَلَقِيتُهُ فَقَالَ مَا أُرِيدُ أَنْ أَتَزَوَّجَ يَوْمِي هَذَا قَالَ عُمَرُ فَلَقِيتُ أَبَا بَكْرٍ الصِّدِّيقَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَقُلْتُ إِنْ شِئْتَ أَنْكَحْتُكَ حَفْصَةَ فَلَمْ يَرْجِعْ إِلَيَّ شَيْئًا فَكُنْتُ عَلَيْهِ أَوْجَدَ مِنِّي عَلَى عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَلَبِثْتُ لَيَالِيَ فَخَطَبَهَا إِلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَنْكَحْتُهَا إِيَّاهُ فَلَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ لَعَلَّكَ وَجَدْتَ عَلَيَّ حِينَ عَرَضْتَ عَلَيَّ حَفْصَةَ فَلَمْ أَرْجِعْ إِلَيْكَ شَيْئًا قُلْتُ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي حِينَ عَرَضْتَ عَلَيَّ أَنْ أَرْجِعَ إِلَيْكَ شَيْئًا إِلَّا أَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُهَا وَلَمْ أَكُنْ لِأُفْشِيَ سِرَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَوْ تَرَكَهَا نَكَحْتُهَا
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত হাফসা রাযি.-এর স্বামী হযরত খুনায়স ইবন হুযাফা রাযি.-এর ইন্তিকাল হয়ে গেলে হযরত উমর রাযি. তাঁর পুনর্বিবাহের জন্য চিন্তা করতে থাকেন। প্রথমে তিনি হযরত উছমান রাযি.-এর কাছে প্রস্তাব রাখেন। তারপর হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. -এর কাছে, যেমনটা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা কেউ তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। এতে তিনি মনে খুব কষ্ট পান। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর প্রতি কষ্টটা একটু বেশিই পান। কারণ হযরত উছমান রাযি. তো তাঁর এখন বিবাহের ইচ্ছা নেই বলে একটা জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. কোনও উত্তরই দেননি। বাহ্যত তিনি তাঁর প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন বলে মনে হচ্ছিল। এভাবে একজন অভিজাত ব্যক্তির বিবাহের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে মনে হলে অন্তরে অনেক বেশি কষ্ট লাগারই কথা, তাও যদি হয় অন্তরঙ্গ ও বিশেষ আস্থাভাজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যখন হযরত হাফসা রাযি.-কে বিবাহ করেন, তখন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. জবাব না দেওয়ার কারণ প্রকাশ করেন। কারণটা হল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যে হযরত হাফসা রাযি.-কে বিবাহ করবেন, এটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বিবাহ করবেন বলে বোঝা যাচ্ছে, তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. কীভাবে গ্রহণ করতে পারেন? আবার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু এ কথা অন্য কারও সামনে স্পষ্ট করেননি, তাই হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-ও তা প্রকাশ করা সমীচীন মনে করছেন না। তাই জবাব না দিয়ে তিনি প্রস্তাবটা এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু হযরত উমর রাযি.-এর তো এসব কথা জানা নেই। ফলে তাঁরও মনে কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। প্রিয় সাথী ও বন্ধুর মনের এ কষ্ট দূর করা দরকার। সুতরাং যথাসময়ে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং রহস্য প্রকাশ করে দিয়ে তাঁর মনের কষ্ট দূর করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের গোপন কোনও কথা জানা থাকলে তা প্রকাশ করা উচিত নয়।
খ. ইসলামে বিধবা বিবাহ দূষণীয় নয়; বরং এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কাজেই কারও মেয়ে বা বোন বিধবা হলে যথাশীঘ্র তার পুনর্বিবাহের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গ. কারও আচরণ অপ্রীতিকর মনে হলে তাতে মনে কষ্ট পাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়।
ঘ. কারও আচরণে অন্য কেউ কষ্ট পেলে তার উচিত যথাশীঘ্র সে কষ্ট দূর করে দেওয়া।
ঙ. সঠিক পন্থায় বন্ধুকন্যাকে বিবাহ করলে তাতে দোষের কিছু নেই।
চ. কন্যার পিতা সরাসরি যদি যোগ্য পাত্রের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তা লজ্জার কোনও বিষয় নয়। হযরত শু'আয়ব আলাইহিস সালাম নিজেই তাঁর কন্যাকে বিবাহ করার জন্য হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সামনে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। কুরআন মাজীদে আছে-
إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنْكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ
আমি আমার এই দুই মেয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই। (সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ২৭)
ছ. বড় কোনও ব্যক্তি কোনও নারীকে বিবাহের আগ্রহ প্রকাশ করলে ছোট'র পক্ষ থেকে তাকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করা সমীচীন নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের গোপন কোনও কথা জানা থাকলে তা প্রকাশ করা উচিত নয়।
খ. ইসলামে বিধবা বিবাহ দূষণীয় নয়; বরং এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কাজেই কারও মেয়ে বা বোন বিধবা হলে যথাশীঘ্র তার পুনর্বিবাহের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গ. কারও আচরণ অপ্রীতিকর মনে হলে তাতে মনে কষ্ট পাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়।
ঘ. কারও আচরণে অন্য কেউ কষ্ট পেলে তার উচিত যথাশীঘ্র সে কষ্ট দূর করে দেওয়া।
ঙ. সঠিক পন্থায় বন্ধুকন্যাকে বিবাহ করলে তাতে দোষের কিছু নেই।
চ. কন্যার পিতা সরাসরি যদি যোগ্য পাত্রের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তা লজ্জার কোনও বিষয় নয়। হযরত শু'আয়ব আলাইহিস সালাম নিজেই তাঁর কন্যাকে বিবাহ করার জন্য হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সামনে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। কুরআন মাজীদে আছে-
إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنْكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ
আমি আমার এই দুই মেয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই। (সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ২৭)
ছ. বড় কোনও ব্যক্তি কোনও নারীকে বিবাহের আগ্রহ প্রকাশ করলে ছোট'র পক্ষ থেকে তাকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করা সমীচীন নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
