কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

২৪. হজ্ব আদায়ের পদ্ধতির বিবরণ

হাদীস নং: ২৬৪৮
আন্তর্জাতিক নং: ২৬৪৮
শিশু সন্তানকে নিয়ে হজ্জ করা
২৬৫০. আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান ও হারিছ ইবনে মিসকীন (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হজ্জ করে ফেরার পথে যখন রাওহা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন একদল লোকের সাথে তার দেখা হলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কারা? তারা বললোঃ আমরা মুসলমান। তারা জিজ্ঞাসা করলোঃ আপনারা কারা? সাহাবায়ে কিরাম বললেনঃ ইনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)। রাবী বললেনঃ এমন সময় একজন মহিলা হাওদা থেকে একটি শিশুকে বের করে জিজ্ঞাসা করলোঃ এর জন্য কি হজ্জ আছে? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু সওয়াব তোমার।
الْحَجُّ بِالصَّغِيرِ
أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ عُقْبَةَ ح وَحَدَّثَنَا الْحَارِثُ بْنُ مِسْكِينٍ قِرَاءَةً عَلَيْهِ وَأَنَا أَسْمَعُ وَاللَّفْظُ لَهُ عَنْ سُفْيَانَ عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُقْبَةَ عَنْ كُرَيْبٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ صَدَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا كَانَ بِالرَّوْحَاءِ لَقِيَ قَوْمًا فَقَالَ مَنْ أَنْتُمْ قَالُوا الْمُسْلِمُونَ قَالُوا مَنْ أَنْتُمْ قَالُوا رَسُولُ اللَّهِ قَالَ فَأَخْرَجَتْ امْرَأَةٌ صَبِيًّا مِنْ الْمِحَفَّةِ فَقَالَتْ أَلِهَذَا حَجٌّ قَالَ نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

'রাওহা' মদীনা মুনাওয়ারার নিকটবর্তী একটি স্থানের নাম। বিদায় হজ্জের সময় এখানে একটি কাফেলার সঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখা হয়। আবূ দাউদ শরীফের বর্ণনায় আছে, তিনি প্রথমে তাদেরকে সালাম দিলেন। তারপর তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভ্যাস ছিল কোনও ব্যক্তি বা কোনও দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি প্রথমে তাদের পরিচয় নিতেন। এ ক্ষেত্রেও তাই করলেন। তারা নিজেদের পরিচয় দিল এবং জানাল যে, তারা মুসলিম। কিন্তু তিনি কে তা তারা চিনতে পারেনি। হতে পারে এ সাক্ষাৎ হয়েছিল রাতের বেলা। তাই অন্ধকারে তাঁকে চিনতে পারেনি। এমনও হতে পারে যে, দিনের বেলায়ই সাক্ষাৎ হয়েছিল, কিন্তু এর আগে তারা তাঁকে কখনও দেখেনি। হয়তো নিজ এলাকায় বসেই তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। মদীনা মুনাওয়ারায় এসে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়নি। যাহোক, তিনি নিজ পরিচয় দিয়ে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ। তিনি নিজ নাম না বলে রাসূলুল্লাহ বললেন, কারণ এটাই তাঁর বড় পরিচয়।

কাফেলার লোকজন যখন তাঁকে চিনতে পারল তখন জনৈকা মহিলা, যার সঙ্গে তার শিশুপুত্র ছিল, সে তার শিশুপুত্রটিকে উঁচু করে ধরে জিজ্ঞেস করল, সে হজ্জ করলে তা হবে কি না। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানালেন যে, তার হজ্জ হবে, তবে ছাওয়াব পাবে তার মা। মায়ের কথা বলেছেন এজন্য যে, সে তার মায়ের সঙ্গেই ছিল। সুতরাং পিতার সঙ্গে আসলে পিতাই ছাওয়াব পাবে। যদি পিতামাতা উভয়ের সঙ্গে আসে, তবে উভয়ই ছাওয়াবের অধিকারী হবে। অবশ্য এটা তখন, যখন শিশুটি এত ছোট হয় যে, হজ্জের কার্যাবলী কিছুই বোঝে না। ফলে সঙ্গে বাবা-মা যেই থাকে তাকেই তার সবকিছু করে দিতে হয়। এমনকি তার পক্ষে ইহরামও তাদেরকেই বাঁধতে হয়। তো শিশু যেহেতু নিজে নিজে হজ্জের কিছুই করতে পারে না, তার পক্ষ থেকে তার বাবা-মা তা করে দেয়, তাই হজ্জ শিশুর পক্ষ থেকে হলেও তা হয় যেহেতু বাবা-মায়ের সহযোগিতায়, তাই এর ছাওয়াব তাদের আমলনামায় লেখা হয়। কিন্তু সে যদি অত ছোট না হয়; বরং বুঝদার শিশু হয়, তবে নিজে ইহরাম বাঁধবে এবং নফল হজ্জ হিসেবে সে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তার নাম-পরিচয় জেনে নেওয়া চাই। কোনও কোনও হাদীছ দ্বারা জানা যায়, এটা পারস্পরিক মহব্বত বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক।

খ, কেউ নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তা বলতে কুণ্ঠাবোধ করা উচিত নয়।

গ. সাক্ষাৎকালে অন্য কথাবার্তার আগে সালাম দেওয়া সুন্নত।

ঘ. কোথাও কোনও আলেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সে সাক্ষাৎকে আল্লাহ তা'আলার এক নি'আমত মনে করা এবং যতটুকু সম্ভব তার কাছ থেকে দীন সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করা চাই।

ঙ. নাবালেগ শিশু কোনও নেককাজ করলে তাতে তার ছাওয়াব হয়। 'উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে একমত যে, তার দ্বারা কোনও নাজায়েয কাজ হয়ে গেলে তাতে তার গুনাহ হয় না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন