কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

২৩. যাকাতের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৫৫৭
আন্তর্জাতিক নং: ২৫৫৭
সাদ্‌কা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা
২৫৫৯. হারূন ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, কেউ আমার কাছে কিছু চাইলে আমি তাকে নিষেধ করে দেই যাতে তোমরা তার ব্যাপারে সুপারিশ কর এবং তোমরা সওয়াব পাও। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আরও বলেছেন, তোমরা সুপারিশ কর তাহলে তোমরাও সাওয়াব পাবে।
الشَّفَاعَةُ فِي الصَّدَقَةِ
أَخْبَرَنَا هَارُونُ بْنُ سَعِيدٍ قَالَ أَنْبَأَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرٍو عَنْ ابْنِ مُنَبِّهٍ عَنْ أَخِيهِ عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَسْأَلُنِي الشَّيْءَ فَأَمْنَعُهُ حَتَّى تَشْفَعُوا فِيهِ فَتُؤْجَرُوا وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اشْفَعُوا تُؤْجَرُوا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

اشفعوا (সুপারিশ করো)-এর উৎপত্তি الشفاعة । (শাফাআত) থেকে। শাফাআতের অর্থ ও এ সম্পর্কিত জরুরি ব্যাখ্যা ভূমিকায় চলে গেছে। এ হাদীছে প্রথমত সুপারিশের আদেশ করা হয়েছে, দ্বিতীয়ত এর ফযীলত বয়ান করা হয়েছে এবং তৃতীয়ত এর হাকীকতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সুপারিশের আদেশ করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কাজটিকে তাঁর শরীআতের একটি ঐচ্ছিক অঙ্গ বানিয়ে দিয়েছেন। কারও সুপারিশের প্রয়োজন হয় বিভিন্ন কারণে। কেউ যখন অর্থসংকটে পড়ে, তখন আর্থিক অনুদান বা ঋণ গ্রহণের জন্য অনেক সময় সুপারিশের দরকার হয়। যার কাছে তা পাওয়া যাবে, তার কাছে সে নিজে সরাসরি যেতে পারে না। এ অবস্থায় তার কাছে যার যাতায়াত আছে বা তার সঙ্গে যার সুসম্পর্ক আছে, তাকে সুপারিশের জন্য ধরা হয়। সে বলে দিলে ওই ব্যক্তি তাকে ঋণ বা আর্থিক অনুদান দেবে বলে আশা আছে। এমনিভাবে এটা প্রয়োজন হয় মিথ্যা মামলায় সুবিচারের জন্য, প্রয়োজন হয় চাকরি-বাকরি বা কোনও কাজ পাওয়ার জন্য। এমনকি সুপারিশ প্রয়োজন হয় বেচাকেনা, বিবাহশাদি ইত্যাদিতেও। যে-কোনও ঠ্যাকার ক্ষেত্রে যার দ্বারা সেই ঠ্যাকার সমাধান হতে পারে, নিজে সরাসরি তার কাছে পৌঁছার সুযোগ না পেলে বা নিজ কথায় কাজ না হলে তখন মানুষ উপযুক্ত ব্যক্তির সুপারিশ কামনা করে। সে সুপারিশ করলে তার কাজটি হয়ে যায়, অন্যথায় তার পেরেশানি চলতে থাকে। এক মুমিন আরেক মুমিনের ভাই। তাই প্রত্যেকের কর্তব্য অন্যের পেরেশানিকে নিজ পেরেশানি গণ্য করা। যদি মুখের একটি কথা দ্বারা অন্যের পেরেশানি দূর হওয়ার আশা থাকে, এক মুমিন তা করবে না কেন? এ হাদীছে তাই উৎসাহ দেওয়া হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অভাবগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত ভাইয়ের জন্য সুপারিশ করো।
সুপারিশ করার দ্বারা কারও উপকার হওয়ার আশা থাকলে নৈতিকভাবেই তা করা বাঞ্ছনীয় হয়ে যায়। তা ঈমানেরও দাবি। কাজেই একজন আদর্শ মুমিন তা করবে বৈকি। তবে যেহেতু এটা ফরয-ওয়াজিব নয়, তাই হয়তো কেউ সুপারিশের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তা করতে আগ্রহ দেখাবে না। এরূপ লোককে আগ্রহী করে তোলার জন্য হাদীছে সুপারিশ করার ফায়দাও বলে দেওয়া হয়েছে। বলাবাহুল্য আমাদের মহান দীন কোনও কাজে আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে সাধারণত পরকালীন ফায়দাই বর্ণনা করে থাকে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- تؤجروا - (তোমরা প্রতিদান পাবে)। অর্থাৎ সরাসরি প্রয়োজনগ্রস্ত ব্যক্তির প্রয়োজন মেটানোর দ্বারা যেই ছাওয়াব পাওয়া যায়, সুপারিশ করার দ্বারা তোমরাও অনুরূপ ছাওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে, তাতে তোমাদের সুপারিশ গৃহীত হোক বা নাই হোক।
হযরত মুআবিয়া রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি তাঁর কাছে কোনও অভাবী বা বিপদগ্রস্ত লোক সাহায্যের জন্য আসলে তিনি সাহায্য করতে বিলম্ব করতেন, সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তার আবেদন মঞ্জুর করতেন না। তিনি নিজেই এর কারণ ব্যাখ্যা করেন যে, আমি বিলম্ব করি এই ইচ্ছায় যে, তোমরা তার জন্য আমার কাছে সুপারিশ করবে। কেননা সুপারিশ করার দ্বারা ছাওয়াব পাওয়া যায়। এই বলে তিনি আলোচ্য হাদীছটি বর্ণনা করেন। এভাবে অন্যকে ছাওয়াব অর্জনের সুযোগ দান করাটা ছিল তাঁর এক মহত্ত্ব।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সুপারিশ করা একটি মহৎ কাজ। এর দ্বারা আখেরাতের প্রভূত ছাওয়াব লাভ করা যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ২৫৫৭ | মুসলিম বাংলা