আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৩১- চাষাবাদ ও বর্গাচাষের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৩২০
১৪৪৫. আহারের জন্য ফসল ফলানো এবং ফলবান বৃক্ষ রোপণের ফযীলত। মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তাকে অংকুরিত কর, না আমিই অংকুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে খড়-কুটায় পরিনত করতে পারি (৫৬ : ৬৩-৬৪)।
২১৬৯। কুতায়বা ইবনে সাঈদ ও আব্দুর রহমান ইবনে মুবারক (রাহঃ) ....আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, যে কোন মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা থেকে পাখি কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ থেকে সাদ্কা বলে গণ্য হবে। মুসলিম (রাহঃ) আনাস (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আমাদের এ দীনে সৎকর্ম যে কত ব্যাপক ও কত বিচিত্র, এ অধ্যায়ের হাদীছসমূহ দ্বারা তা কিছুটা অনুমান করা যায়। পূর্বের হাদীছসমূহ দ্বারা আমরা বিভিন্ন রকম সৎকর্ম সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ হাদীছে এমন একটি নেক আমলের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যা নিয়ে আধুনিক কালের মানুষ অনেক ঘটা করে কর্মসূচী পর্যন্ত পালন করে। তারা এর নাম দিয়েছে ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী’। তারা ‘বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ’ উদযাপন করে। চারদিকে গাছ লাগানোর ধুম পড়ে যায়। এটা যে একটা ভালো কাজ তা তারা সবে বুঝতে পেরেছে। তাও বুঝতে পেরেছে কেবলই দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকে। তাই যত সমারোহের সাথেই এ কাজ করুক না কেন, আল্লাহ তা'আলাকে খুশি করার নিয়ত না থাকলে এতে কোনও ছাওয়াব হবে না।
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই কবে এ কাজ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি এ কাজকে একটি নেক আমলের মহিমা দিয়েছেন। তিনি এ কাজকে সদাকা সাব্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ সদাকা করলে যেমন ছাওয়াব হয়, তেমনি গাছ লাগালেও ছাওয়াব পাওয়া যায়। আবার এ ছাওয়াবেরও কত বৈচিত্র্য। সাধারণ ভাবনা তো এটাই যে, এর ফল মানুষ খাবে, তাতে মানুষের উপকার হবে আর সেজন্যই এটা একটি ভালো কাজ। কিংবা এটা ভালো কাজ এজন্য যে, বড় হলে বিক্রি করে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। কেবলই বৈষয়িক ভাবনা! কিন্তু এ হাদীছে এ কাজকে একটি সৎকাজ গণ্য করেছে এ দৃষ্টিকোণ থেকেও যে, এটা জীববৈচিত্র্য রক্ষার পক্ষেও সহায়ক, যে জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য আজকাল রীতিমত আন্দোলন চলছে। এটাও পরিবেশবাদীরা সম্প্রতি বুঝেছে। অথচ ইসলাম এর পথ দেখিয়েছে সেই কবে।
এ হাদীছ বলছে, গাছের ফল ও জমির ফসল কেবল মানুষ খেলে ছাওয়াব হবে তা-ই নয়; পশুপাখিতে খেলেও ছাওয়াব পাওয়া যাবে। তাও সদাকার ছাওয়াব! এভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃক্ষরোপণের প্রতি উম্মতকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। সে উৎসাহদান পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; বরং আখিরাতের জন্য। যে কাজ আখিরাতের জন্য করা হয় তা নিঃস্বার্থ হয়। সুতরাং বৃক্ষরোপণ মু'মিনের চারিত্রিক উন্নতির পক্ষেও সহায়ক। তো বৃক্ষরোপণ দ্বারা মানুষের উপকার হওয়া, জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাওয়া ও পরিবেশের হেফাজত—এসব কাজ তো আপনা-আপনিই হয়ে যাবে, সেইসঙ্গে ইখলাস ও সহীহ নিয়ত থাকলে আখিরাতে ছাওয়াবও পাওয়া যাবে।
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃক্ষরোপণকে এমন সদাকা সাব্যস্ত করেছেন, যার ছাওয়াব কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকে। অর্থাৎ এটা একটা সদাকায়ে জারিয়া, যার ছাওয়াব বৃক্ষ রোপণকারী মৃত্যুর পরও পেতে থাকবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত পাবে।
এরকম সদাকায়ে জারিয়ার কাজ আরও আছে, যেমন দীনী ইলম প্রচারে ভূমিকা রাখা; এমন কোনও নেক সন্তান রেখে যাওয়া, যে তার জন্য দু'আ করবে; সীমান্ত পাহারা দেওয়া ইত্যাদি।
বৃক্ষরোপণের ছাওয়াব পাওয়ার জন্য সরাসরি নিজে গাছ লাগানো শর্ত নয়। যদি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্য কাউকে দিয়ে করায় তাতেও ছাওয়াব লাভ হবে। এমনিভাবে যে জমিতে গাছ লাগানো হয়েছে তা নিজ মালিকানাধীন হওয়াও শর্ত নয়। মালিকের অনুমতিক্রমে অন্য কেউ লাগালেও সে এর ছাওয়াব পাবে। সে ক্ষেত্রে ছাওয়াব পাবে মালিক নিজেও। সরকারি জমিতে লাগানোর অনুমতি থাকলে তাতেও ছাওয়াব হাসিল হয়। নিজ মালিকানাধীন জমিতে লাগানোর পর যদি জমি বিক্রি করে দেয়, তখনও ছাওয়াব জারি থাকবে।
এ হাদীছ দ্বারা আরও জানা গেল, জীবিকা হিসেবে জমি চাষাবাদ করা এবং তাতে ফল ও ফসলের গাছ লাগানো কেবল জায়েযই নয়, একটি ছাওয়াবের কাজও বটে। এমনিতেও হালাল উপার্জন করা শরী'আতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ। ভিক্ষাবৃত্তি হারাম। হালাল উপার্জনের মধ্যে কোন্ পেশা সর্বোত্তম তা নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেছেন ব্যবসা করা, কারও মতে হস্তশিল্প এবং কারও মতে চাষাবাদ করা। সবটার পক্ষেই দলীল আছে। বলা যায় এসব কাজের মধ্যে যার যেটা করার দক্ষতা ভালো, তার জন্য সেটা বেছে নেওয়াই উত্তম। তো চাষাবাদ করা অর্থাৎ জমিতে ফসল করা বা গাছ লাগানোর দ্বারা যেমন নিজের ও পারিবারিক জীবিকার ব্যবস্থা হয়, তেমনি এর দ্বারা নেকীও অর্জিত হয়। কাজেই একে কেবল দুনিয়াবী বিষয় না মনে করে দীনী দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা উচিত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারাও নেক আমল যে কত বিচিত্র সে শিক্ষা লাভ হল।
খ. জানা গেল বৃক্ষরোপণ ও ফসল করা একটি সদাকায়ে জারিয়া।
গ. আরও জানা গেল আখিরাতের পুরস্কার কেবল ঈমানদারদের জন্যই সংরক্ষিত।
ঘ. মুসলিম ব্যক্তির লাগানো গাছ থেকে পশুপক্ষী খেলেও সে তার ছাওয়াব পায়।
ঙ. পশুপাখি জমির ফসল বা গাছের ফল নষ্ট করে ফেললেও মুসলিম মালিক ছাওয়াব পেয়ে থাকে, যদি সে তাতে সবর করে।
চ. মুসলিম ব্যক্তির ফল ও ফসল চুরি হয়ে গেলেও সে ছাওয়াব পায়।
ছ. মুসলিম ব্যক্তির জন্য বৈধ কোনও কাজই নিছক দুনিয়া নয়; সহীহ নিয়ত থাকলে তা দীন হয়ে যায়।
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই কবে এ কাজ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি এ কাজকে একটি নেক আমলের মহিমা দিয়েছেন। তিনি এ কাজকে সদাকা সাব্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ সদাকা করলে যেমন ছাওয়াব হয়, তেমনি গাছ লাগালেও ছাওয়াব পাওয়া যায়। আবার এ ছাওয়াবেরও কত বৈচিত্র্য। সাধারণ ভাবনা তো এটাই যে, এর ফল মানুষ খাবে, তাতে মানুষের উপকার হবে আর সেজন্যই এটা একটি ভালো কাজ। কিংবা এটা ভালো কাজ এজন্য যে, বড় হলে বিক্রি করে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। কেবলই বৈষয়িক ভাবনা! কিন্তু এ হাদীছে এ কাজকে একটি সৎকাজ গণ্য করেছে এ দৃষ্টিকোণ থেকেও যে, এটা জীববৈচিত্র্য রক্ষার পক্ষেও সহায়ক, যে জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য আজকাল রীতিমত আন্দোলন চলছে। এটাও পরিবেশবাদীরা সম্প্রতি বুঝেছে। অথচ ইসলাম এর পথ দেখিয়েছে সেই কবে।
এ হাদীছ বলছে, গাছের ফল ও জমির ফসল কেবল মানুষ খেলে ছাওয়াব হবে তা-ই নয়; পশুপাখিতে খেলেও ছাওয়াব পাওয়া যাবে। তাও সদাকার ছাওয়াব! এভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃক্ষরোপণের প্রতি উম্মতকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। সে উৎসাহদান পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; বরং আখিরাতের জন্য। যে কাজ আখিরাতের জন্য করা হয় তা নিঃস্বার্থ হয়। সুতরাং বৃক্ষরোপণ মু'মিনের চারিত্রিক উন্নতির পক্ষেও সহায়ক। তো বৃক্ষরোপণ দ্বারা মানুষের উপকার হওয়া, জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাওয়া ও পরিবেশের হেফাজত—এসব কাজ তো আপনা-আপনিই হয়ে যাবে, সেইসঙ্গে ইখলাস ও সহীহ নিয়ত থাকলে আখিরাতে ছাওয়াবও পাওয়া যাবে।
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃক্ষরোপণকে এমন সদাকা সাব্যস্ত করেছেন, যার ছাওয়াব কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকে। অর্থাৎ এটা একটা সদাকায়ে জারিয়া, যার ছাওয়াব বৃক্ষ রোপণকারী মৃত্যুর পরও পেতে থাকবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত পাবে।
এরকম সদাকায়ে জারিয়ার কাজ আরও আছে, যেমন দীনী ইলম প্রচারে ভূমিকা রাখা; এমন কোনও নেক সন্তান রেখে যাওয়া, যে তার জন্য দু'আ করবে; সীমান্ত পাহারা দেওয়া ইত্যাদি।
বৃক্ষরোপণের ছাওয়াব পাওয়ার জন্য সরাসরি নিজে গাছ লাগানো শর্ত নয়। যদি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্য কাউকে দিয়ে করায় তাতেও ছাওয়াব লাভ হবে। এমনিভাবে যে জমিতে গাছ লাগানো হয়েছে তা নিজ মালিকানাধীন হওয়াও শর্ত নয়। মালিকের অনুমতিক্রমে অন্য কেউ লাগালেও সে এর ছাওয়াব পাবে। সে ক্ষেত্রে ছাওয়াব পাবে মালিক নিজেও। সরকারি জমিতে লাগানোর অনুমতি থাকলে তাতেও ছাওয়াব হাসিল হয়। নিজ মালিকানাধীন জমিতে লাগানোর পর যদি জমি বিক্রি করে দেয়, তখনও ছাওয়াব জারি থাকবে।
এ হাদীছ দ্বারা আরও জানা গেল, জীবিকা হিসেবে জমি চাষাবাদ করা এবং তাতে ফল ও ফসলের গাছ লাগানো কেবল জায়েযই নয়, একটি ছাওয়াবের কাজও বটে। এমনিতেও হালাল উপার্জন করা শরী'আতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ। ভিক্ষাবৃত্তি হারাম। হালাল উপার্জনের মধ্যে কোন্ পেশা সর্বোত্তম তা নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেছেন ব্যবসা করা, কারও মতে হস্তশিল্প এবং কারও মতে চাষাবাদ করা। সবটার পক্ষেই দলীল আছে। বলা যায় এসব কাজের মধ্যে যার যেটা করার দক্ষতা ভালো, তার জন্য সেটা বেছে নেওয়াই উত্তম। তো চাষাবাদ করা অর্থাৎ জমিতে ফসল করা বা গাছ লাগানোর দ্বারা যেমন নিজের ও পারিবারিক জীবিকার ব্যবস্থা হয়, তেমনি এর দ্বারা নেকীও অর্জিত হয়। কাজেই একে কেবল দুনিয়াবী বিষয় না মনে করে দীনী দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা উচিত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারাও নেক আমল যে কত বিচিত্র সে শিক্ষা লাভ হল।
খ. জানা গেল বৃক্ষরোপণ ও ফসল করা একটি সদাকায়ে জারিয়া।
গ. আরও জানা গেল আখিরাতের পুরস্কার কেবল ঈমানদারদের জন্যই সংরক্ষিত।
ঘ. মুসলিম ব্যক্তির লাগানো গাছ থেকে পশুপক্ষী খেলেও সে তার ছাওয়াব পায়।
ঙ. পশুপাখি জমির ফসল বা গাছের ফল নষ্ট করে ফেললেও মুসলিম মালিক ছাওয়াব পেয়ে থাকে, যদি সে তাতে সবর করে।
চ. মুসলিম ব্যক্তির ফল ও ফসল চুরি হয়ে গেলেও সে ছাওয়াব পায়।
ছ. মুসলিম ব্যক্তির জন্য বৈধ কোনও কাজই নিছক দুনিয়া নয়; সহীহ নিয়ত থাকলে তা দীন হয়ে যায়।
