আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৩০- ওয়াকালাত (অন্যের পক্ষে কর্ম সম্পাদন) অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৩১৬
১৪৪১. (শরীআত নির্ধারিত) দণ্ড প্রয়োগের জন্য ওয়াকীল নিয়োগ
২১৬৫। ইবনে সালাম (রাহঃ) ....উকবা ইবনে হারিছ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নুআইমানকে অথবা ইবনে নুআইমানকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আনা হল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘরে উপস্থিত লোকদেরকে তাকে প্রহার করতে আদেশ দিলেন। রাবী বলেন, যারা তাকে প্রহার করেছিলো, তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আমরা তাকে জুতা দিয়ে এবং খেজুরের ডাল দিয়ে প্রহার করেছি।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে লক্ষণীয়।
ক. মদ পান করেছে এমন এক ব্যক্তিকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাজির করা;
খ. তিনি তাকে মারপিট করতে বললে সকলে মিলে তাকে মারধর করা
যে ব্যক্তি মদপান করেছিল তাকে হাজির করা হয়েছিল একজন অপরাধীরূপে। মদপান করা এক দণ্ডনীয় অপরাধ। ইসলামে এর শাস্তি হল ৪০ দোররা। সে মদপানের অপরাধ করেছিল বলে তাকে এ শাস্তিদানের জন্য হাজির করা হয়।
মদপান প্রথম দিকে নিষেধ ছিল না। এটা নিষেধ করা হয় পর্যায়ক্রমে। প্রথমে এর ক্ষতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় (দ্র: সূরা বাকারা (২), আয়াত নং ২১৯)। তারপর নামাযের সময় মদপান করতে নিষেধ করা হয় (দ্র: সূরা নিসা (৪), আয়াত নং ৪৩)। সবশেষে সুস্পষ্টভাবে এটি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এ মর্মে অবতীর্ণ হয়-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (90) إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ (91)
‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদী ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানী কাজ। সুতরাং এসব পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজই বপন করতে চায় এবং চায় তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির ও নামায থেকে বিরত রাখতে। সুতরাং, তোমরা কি (ওসব জিনিস থেকে) নিবৃত্ত হবে? ১৮৫
সঙ্গে সঙ্গে সাহাবীগণ বলে উঠলেন, আমরা নিবৃত্ত হলাম, আমরা নিবৃত্ত হলাম। তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেলেন। মদের মটকা ভেঙ্গে ফেললেন। রাস্তাঘাটে পানির মত মদ বইতে লাগল। মদের আসর উঠে গেল। বহুদিনের অভ্যাস খতম হয়ে গেল। তাঁরা মাদকাসক্তি ছেড়ে আল্লাহপ্রেমে নিমজ্জিত হলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইশক ও মহব্বত এবং দীনের অনুসরণকেই আসক্তির বিষয় বানিয়ে নিলেন। মদ ও মাদকাসক্তি নিবারণে অভূতপূর্ব বিপ্লব সূচিত হল। বলা যায় ইসলামী সমাজ থেকে মাদকাসক্তির চূড়ান্ত নির্বাসন ঘটে গেল। মাদকাসক্তি নিবারণে এরকম সফলতা কোনও রাষ্ট্রীয় আইন, কোনও নেতার নির্দেশ বা কোনও সামাজিক আন্দোলন কখনও দেখাতে পারেনি।
এ সফলতার প্রাণশক্তি ছিল আল্লাহ ও রাসূলপ্রেম এবং তাকওয়া ও পরহেযগারীর চর্চা। কাজেই এই যে ব্যক্তিকে মদপানের অপরাধে হাজির করা হল এর দ্বারা এ ধারণা নেওয়া ঠিক হবে না যে, তখনও বুঝি মদপানের ব্যাপক প্রচলন রয়ে গিয়েছিল। বা লুকাছাপা করে হলেও মানুষ ব্যাপকভাবে মদপান করত। ব্যাপারটা সেরকম নয় মোটেই। গোটা নবীজীবন এবং তারপর খেলাফতে রাশেদার চল্লিশ বছরের দীর্ঘ সময়কালে এরকম ঘটনা গোনাগুণতি কয়েকটাই ঘটেছে। এরূপ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটা মূলত না ঘটারই নামান্তর।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, লোকটিকে ধরে নিয়ে আসার দ্বারা বোঝা যায়, ইসলামে এটা একটা দণ্ডনীয় অপরাধ এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য এরূপ অপরাধীর উপর দণ্ড কার্যকর করা। হাদীছের বর্ণনা দ্বারা বাহ্যত বোঝা যায় তাকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টা তা নয়। মদপানের অপরাধে জনগণ তাকে নিজেদের ইচ্ছামত মারধর করেনি; বরং তারা তাকে ধরে আদালতে হাজির করেছে। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ছিলেন বিচারক। তিনিই উপস্থিত লোকজনকে তার উপর শাস্তি কার্যকরের হুকুম দিয়েছেন। সেই হিসেবে ইসলাম মদপানকারীর শাস্তি হিসেবে যে ৪০ দোররার ব্যবস্থা রেখেছে, তারা সেটাই প্রয়োগ করেছে। কোনও কোনও বর্ণনায় স্পষ্টই আছে যে, গুণে দেখা গেছে তাদের সকলের মারের পরিমাণ চল্লিশই হয়েছিল। সকলকে দিয়ে মারানোর উদ্দেশ্য ছিল হয়ত শাস্তিকে দৃষ্টান্তমূলক করা। যাতে ফের কেউ এ জাতীয় অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সাহস না করে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মদপান একটি শরীআতী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খ. শরীআতী শাস্তি প্রয়োগ করা আদালতের কাজ। সাধারণ জনগণ নিজেদের পক্ষ থেকে তা প্রয়োগের অধিকার রাখে না।
গ. শরীআতী শাস্তিযোগ্য অপরাধ কেউ করলে শাস্তি আরোপ করা আদালতের অবশ্যকর্তব্য। আদালত তা ক্ষমার এখতিয়ার রাখে না।
১৮৫. সূরা মায়িদা (৫), আয়াত নং ৯০, ৯১
ক. মদ পান করেছে এমন এক ব্যক্তিকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাজির করা;
খ. তিনি তাকে মারপিট করতে বললে সকলে মিলে তাকে মারধর করা
যে ব্যক্তি মদপান করেছিল তাকে হাজির করা হয়েছিল একজন অপরাধীরূপে। মদপান করা এক দণ্ডনীয় অপরাধ। ইসলামে এর শাস্তি হল ৪০ দোররা। সে মদপানের অপরাধ করেছিল বলে তাকে এ শাস্তিদানের জন্য হাজির করা হয়।
মদপান প্রথম দিকে নিষেধ ছিল না। এটা নিষেধ করা হয় পর্যায়ক্রমে। প্রথমে এর ক্ষতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় (দ্র: সূরা বাকারা (২), আয়াত নং ২১৯)। তারপর নামাযের সময় মদপান করতে নিষেধ করা হয় (দ্র: সূরা নিসা (৪), আয়াত নং ৪৩)। সবশেষে সুস্পষ্টভাবে এটি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এ মর্মে অবতীর্ণ হয়-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (90) إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ (91)
‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদী ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানী কাজ। সুতরাং এসব পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজই বপন করতে চায় এবং চায় তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির ও নামায থেকে বিরত রাখতে। সুতরাং, তোমরা কি (ওসব জিনিস থেকে) নিবৃত্ত হবে? ১৮৫
সঙ্গে সঙ্গে সাহাবীগণ বলে উঠলেন, আমরা নিবৃত্ত হলাম, আমরা নিবৃত্ত হলাম। তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেলেন। মদের মটকা ভেঙ্গে ফেললেন। রাস্তাঘাটে পানির মত মদ বইতে লাগল। মদের আসর উঠে গেল। বহুদিনের অভ্যাস খতম হয়ে গেল। তাঁরা মাদকাসক্তি ছেড়ে আল্লাহপ্রেমে নিমজ্জিত হলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইশক ও মহব্বত এবং দীনের অনুসরণকেই আসক্তির বিষয় বানিয়ে নিলেন। মদ ও মাদকাসক্তি নিবারণে অভূতপূর্ব বিপ্লব সূচিত হল। বলা যায় ইসলামী সমাজ থেকে মাদকাসক্তির চূড়ান্ত নির্বাসন ঘটে গেল। মাদকাসক্তি নিবারণে এরকম সফলতা কোনও রাষ্ট্রীয় আইন, কোনও নেতার নির্দেশ বা কোনও সামাজিক আন্দোলন কখনও দেখাতে পারেনি।
এ সফলতার প্রাণশক্তি ছিল আল্লাহ ও রাসূলপ্রেম এবং তাকওয়া ও পরহেযগারীর চর্চা। কাজেই এই যে ব্যক্তিকে মদপানের অপরাধে হাজির করা হল এর দ্বারা এ ধারণা নেওয়া ঠিক হবে না যে, তখনও বুঝি মদপানের ব্যাপক প্রচলন রয়ে গিয়েছিল। বা লুকাছাপা করে হলেও মানুষ ব্যাপকভাবে মদপান করত। ব্যাপারটা সেরকম নয় মোটেই। গোটা নবীজীবন এবং তারপর খেলাফতে রাশেদার চল্লিশ বছরের দীর্ঘ সময়কালে এরকম ঘটনা গোনাগুণতি কয়েকটাই ঘটেছে। এরূপ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটা মূলত না ঘটারই নামান্তর।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, লোকটিকে ধরে নিয়ে আসার দ্বারা বোঝা যায়, ইসলামে এটা একটা দণ্ডনীয় অপরাধ এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য এরূপ অপরাধীর উপর দণ্ড কার্যকর করা। হাদীছের বর্ণনা দ্বারা বাহ্যত বোঝা যায় তাকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টা তা নয়। মদপানের অপরাধে জনগণ তাকে নিজেদের ইচ্ছামত মারধর করেনি; বরং তারা তাকে ধরে আদালতে হাজির করেছে। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ছিলেন বিচারক। তিনিই উপস্থিত লোকজনকে তার উপর শাস্তি কার্যকরের হুকুম দিয়েছেন। সেই হিসেবে ইসলাম মদপানকারীর শাস্তি হিসেবে যে ৪০ দোররার ব্যবস্থা রেখেছে, তারা সেটাই প্রয়োগ করেছে। কোনও কোনও বর্ণনায় স্পষ্টই আছে যে, গুণে দেখা গেছে তাদের সকলের মারের পরিমাণ চল্লিশই হয়েছিল। সকলকে দিয়ে মারানোর উদ্দেশ্য ছিল হয়ত শাস্তিকে দৃষ্টান্তমূলক করা। যাতে ফের কেউ এ জাতীয় অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সাহস না করে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মদপান একটি শরীআতী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খ. শরীআতী শাস্তি প্রয়োগ করা আদালতের কাজ। সাধারণ জনগণ নিজেদের পক্ষ থেকে তা প্রয়োগের অধিকার রাখে না।
গ. শরীআতী শাস্তিযোগ্য অপরাধ কেউ করলে শাস্তি আরোপ করা আদালতের অবশ্যকর্তব্য। আদালত তা ক্ষমার এখতিয়ার রাখে না।
১৮৫. সূরা মায়িদা (৫), আয়াত নং ৯০, ৯১
