কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

২২. রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ২০৯৩
আন্তর্জাতিক নং: ২০৯৩
রোযা ফরয হওয়া
২০৯৭। উবাইদুল্লাহ ইবনে সা’দ (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। ইতিমধ্যে উটের উপর আরোহণ করে এক ব্যক্তি আসলো এবং সেই উটকে মসজিদের (আঙ্গিনায়) বসিয়ে বেঁধে ফেললো। অতঃপর বললোঃ তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (ﷺ) কে? তিনি তখন আমাদের মধ্যে ঠেস দিয়ে বসা ছিলেন।

তখন আমরা তাকে বললাম, এই ঠেস দিয়ে বসা ফর্সা ব্যক্তি। তৎপর সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বললোঃ হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশজাত! তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেনঃ আমি তোমার ডাকে সাড়া দিয়েছি। অতঃপর সে বললোঃ হে মুহাম্মাদ! আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো এবং প্রশ্নের ব্যাপারে আপনার সাথে কঠোরতা অবলম্বন করবো। তখন তিনি বললেনঃ তোমার যা মনে চায় প্রশ্ন করো।

সে বললোঃ আমি আপনাকে আপনার প্রভু এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রভুর নামে শপথ দিয়ে বলছি- আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে সমস্ত মানুষের হিদায়াতের জন্য পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, নিশ্চয়ই, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর সে বললোঃ আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি- আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে প্রত্যেক বছরের এ (রমযান) মাসে রোযা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন?

রাবী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ নিশ্চয়ই, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর সে বললোঃ আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি- আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে আমাদের বিত্তশালীদের থেকে এ যাকাত নিয়ে তা আমাদের অভাবীদের মধ্যে বন্টন করার নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ নিশ্চয়ই, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর সে বললো, আপনি যা নিয়ে এসেছেন তার উপর আমি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। আর আমি নিজ গোত্রের অবশিষ্ট লোকদের জন্য দূত স্বরূপ এসেছি। আর আমার নাম হল দিমাম ইবনে ছা’লাবা, আমি সা’দ ইবনে বকর গোত্রের লোক।
باب وُجُوبِ الصِّيَامِ
أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، مِنْ كِتَابِهِ قَالَ حَدَّثَنَا عَمِّي، قَالَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ عَجْلاَنَ، وَغَيْرُهُ، مِنْ إِخْوَانِنَا عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ شَرِيكِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي نَمِرٍ، أَنَّهُ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جُلُوسٌ فِي الْمَسْجِدِ دَخَلَ رَجُلٌ عَلَى جَمَلٍ فَأَنَاخَهُ فِي الْمَسْجِدِ ثُمَّ عَقَلَهُ ثُمَّ قَالَ أَيُّكُمْ مُحَمَّدٌ - وَهُوَ مُتَّكِئٌ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ - فَقُلْنَا لَهُ هَذَا الرَّجُلُ الأَبْيَضُ الْمُتَّكِئُ فَقَالَ لَهُ الرَّجُلُ يَا ابْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ . فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " قَدْ أَجَبْتُكَ " . قَالَ الرَّجُلُ يَا مُحَمَّدُ إِنِّي سَائِلُكَ فَمُشَدِّدٌ عَلَيْكَ فِي الْمَسْأَلَةِ . قَالَ " سَلْ عَمَّا بَدَا لَكَ " . قَالَ أَنْشُدُكَ بِرَبِّكَ وَرَبِّ مَنْ قَبْلَكَ آللَّهُ أَرْسَلَكَ إِلَى النَّاسِ كُلِّهِمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " اللَّهُمَّ نَعَمْ " . قَالَ فَأَنْشُدُكَ اللَّهَ آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ تَصُومَ هَذَا الشَّهْرَ مِنَ السَّنَةِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " اللَّهُمَّ نَعَمْ " . قَالَ فَأَنْشُدُكَ اللَّهَ آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ تَأْخُذَ هَذِهِ الصَّدَقَةَ مِنْ أَغْنِيَائِنَا فَتَقْسِمَهَا عَلَى فُقَرَائِنَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " اللَّهُمَّ نَعَمْ " . فَقَالَ الرَّجُلُ إِنِّي آمَنْتُ بِمَا جِئْتَ بِهِ وَأَنَا رَسُولُ مَنْ وَرَائِي مِنْ قَوْمِي وَأَنَا ضِمَامُ بْنُ ثَعْلَبَةَ أَخُو بَنِي سَعْدِ بْنِ بَكْرٍ . خَالَفَهُ عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীসের শুরু অংশে প্রশ্ন করার যে নিষেধাজ্ঞার কথাটি বলা হয়েছে, এর দ্বারা কোরআন পাকের ঐ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছেঃ হে মুমিনগণ! তোমরা এমন বিষয় জিজ্ঞাসা করো না, যা পরিবাক্ত হলে তোমাদের কাছেই খারাপ লাগবে।। (সূরা মায়েদাহ)

বাস্তব কথাও হচ্ছে এই যে, নতুন নতুন প্রশ্ন করা মানুষের একটি স্বভাব। কিন্তু এ অভ্যাসকে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছেড়ে দিলে এই ফল হয় যে, মানুষের মন ও আকর্ষণ তখন চুলচেরা তর্ক-বিতর্কের দিকেই বেশী অগ্রসর হয়। আর এতে কথার বিশ্লেষণের প্রবণতাই বেশী সৃষ্টি হয় এবং এ তুলনায় কর্ম ও আমল খুব কমই হয়ে থাকে। তাছাড়া এতে সময়ও নষ্ট হয়। বিশেষ করে যুগের নবীর কাছে অধিক প্রশ্ন করার একটি ক্ষতিকর দিক এটাও যে, নবীর পক্ষ থেকে যখন উত্তর আসে, তখন দেখা যায়, উম্মতের অনেক পাবন্দীও বেড়ে যায়।

যা হোক, এ সকল কারণেই অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা থেকে সাহাবায়ে কেরামকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তারা নিজেরা প্রশ্ন খুবই কম করতেন এবং এ আশায় থাকতেন যে, কোন গ্রাম্য বেদুঈন এসে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করুক, আর এ সুযোগে আমরা কিছু শুনে শিখে নেই। কারণ, বেদুঈনদের জন্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে অনেক অবকাশ ছিল। এ হাদীসেরই এক বর্ণনায় হযরত আনাস (রাঃ) থেকেই বর্ণিত হয়েছে, “বেদুঈন লোকটি খুব দুঃসাহসের সাথে প্রশ্ন করে যাচ্ছিল এবং নির্দ্বিধায় যা মনে আসছিল তাই জিজ্ঞাসা করছিল।" — ফতহুল বারী।

বুখারী শরীফে এ হাদীসেরই বর্ণনায় রয়েছে যে, শেষে যাবার সময় এই বেদুঈন বলেছিল। আমি বনু সা'দ ইবনে বকর গোত্রের এক সদস্য, আমার নাম হচ্ছে যেমাম ইবনে সা'আলাবাহ। আমি আমার গোত্রের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলাম।

বুখারীর বর্ণনায় একথাও রয়েছে যে, এ লোকটি এসে প্রথমেই হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিল যে, আমি আপনার কাছে কিছু বিষয় জিজ্ঞাসা করব, তবে আমার প্রশ্নের ধরন কিছুটা শক্ত হবে। তাই বলে আপনি আমার উপর রাগ করবেন না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তোমার মনে যা আসে তাই জিজ্ঞাসা কর। তারপর ঐ প্রশ্নোত্তর হল, যা হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।

প্রশ্নকারী বেদুঈন যাওয়ার সময় কসম খেয়ে যে কথাটি বলেছিল যে, "আমি এতে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি করব না", সম্ভবত তার এ কথার এ উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি আপনার এ শিক্ষা ও দিক নির্দেশনার সম্পূর্ণ অনুসরণ করব এবং আমার মনের চাহিদায় এতে কোন প্রকার কমবেশী করব না। দ্বিতীয় অর্থ এও হতে পারে যে, আমি আপনার এই পয়গাম ও বাণী অবিকল এভাবেই আমার গোত্রের কাছে পৌঁছে দিব এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে এতে কোন সংযোজন বা বিয়োজন করব না।

অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, এ বেদুঈন লোকটি নিজ গোত্রের কাছে গিয়ে খুব উদ্যমের সাথে দ্বীন প্রচারের কাজ শুরু করে দিলেন। তিনি প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে এমন সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য বক্তব্য দিতে লাগলেন যে, তার কোন কোন নিকটাত্মীয় ও আপনজন তাকে বলল হে যেমাম। কুষ্ঠরোগ উন্মাদ হওয়া থেকে সাবধান থাক। (অর্থাৎ, দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করে কুন্ঠরোগে যেন আক্রান্ত না হয়ে যাও অথবা তুমি যেন পাগল না হয়ে যাও)

কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা তার তবলীগ ও দ্বীন প্রচারে এমন বরকত দান করলেন যে, সকাল বেলা যারা তাকে কুষ্ঠরোগ ও পাগলামীতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল, সন্ধ্যা বেলায় তারাই মূর্তিপূজা থেকে তওবা করে তওহীদের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করল। ফলে সারা গোত্রে একটি প্রাাণীও আর অমুসলিম রইল না।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান