কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ
২২. রোযার অধ্যায়
হাদীস নং: ২০৯১
আন্তর্জাতিক নং: ২০৯১
রোযা ফরয হওয়া
২০৯৫। মুহাম্মাদ ইবনে মা’মার (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরআনে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে যেন নবী (ﷺ) এর কাছে কোন ব্যাপারে প্রশ্ন না করি। তাই আমরা মনে মনে আশঙ্কা করতাম যেন গ্রাম থেকে কোন জ্ঞানী ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে প্রশ্ন করে। ইতিমধ্যে একজন গ্রাম্য ব্যক্তি এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে আপনার দুত এসেছিলেন। তিনি আমাদের বললেন যে, আপনি নাকি দাবী করেন যে, আল্লাহ তাআলা আপনাকে রাসুল করে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন যে, সে সত্যই বলেছে। অতঃপর সে প্রশ্ন করলঃ তবে আসমান কে সৃষ্টি করেছে?
তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা, অতঃপর সে প্রশ্ন করলঃ যমীন কে সৃষ্টি করেছে? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা। তারপর সে প্রশ্ন করলঃ যমীনে পাহাড় সমূহ কে স্থাপন করেছে? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা। এরপর সে প্রশ্ন করলঃ তাতে উপকারী বৃক্ষসমূহ কে সৃষ্টি করেছে? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা। অতঃপর সে বললোঃ ঐ সত্তার শপথ যিনি আসমান এবং যমীন সৃষ্টি করেছেন আর তাতে পাহাড়সমুহ স্থাপন করেছেন এবং তাতে উপকারী (বৃক্ষসমূহ সৃষ্টি করেছেন- আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে রাসুল করে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
অতঃপর সে বললোঃ আপনার দুত বলেন যে, আমাদের উপর প্রত্যেক দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয? তিনি বললেনঃ সে তো সত্যই বলেছে। অতঃপর সে বললোঃ ঐ সত্তার শপথ যিনি-আপনাকে রাসুল রূপে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সে বললোঃ আপনার দুত বলেন যে, আমাদের উপর স্বীয় ধন-সম্পদের যাকাত আদায় করা ফরয? তিনি বললেনঃ সে তো সত্যই বলেছে। সে বললোঃ সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
অতঃপর সে বললোঃ আপনার দূত বলেন যে, আমাদের উপর প্রত্যেক বছর রমযানের রোযা ফরয? তিনি বললেনঃ সে তো সত্যই বলেছে। সে বলল, ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সে বললোঃ আপনার দূত বলেন যে, আমাদের মধ্যে যারা খরচ বহনে সামর্থবান তাদের উপর হজ্জ ফরয? তিনি বললেনঃ সে তো সত্যই বলেছে। সে বললো, ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সে বললোঃ ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, আমি-এগুলোর উপর কোন কিছু কখনো বৃদ্ধিও করবো না আর এর থেকে (কিছু) হ্রাসও করবো না। যখন সে ফিরে গেলো, তখন নবী (ﷺ) বললেন, যদি সে তার কথায় সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা, অতঃপর সে প্রশ্ন করলঃ যমীন কে সৃষ্টি করেছে? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা। তারপর সে প্রশ্ন করলঃ যমীনে পাহাড় সমূহ কে স্থাপন করেছে? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা। এরপর সে প্রশ্ন করলঃ তাতে উপকারী বৃক্ষসমূহ কে সৃষ্টি করেছে? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা। অতঃপর সে বললোঃ ঐ সত্তার শপথ যিনি আসমান এবং যমীন সৃষ্টি করেছেন আর তাতে পাহাড়সমুহ স্থাপন করেছেন এবং তাতে উপকারী (বৃক্ষসমূহ সৃষ্টি করেছেন- আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে রাসুল করে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
অতঃপর সে বললোঃ আপনার দুত বলেন যে, আমাদের উপর প্রত্যেক দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয? তিনি বললেনঃ সে তো সত্যই বলেছে। অতঃপর সে বললোঃ ঐ সত্তার শপথ যিনি-আপনাকে রাসুল রূপে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সে বললোঃ আপনার দুত বলেন যে, আমাদের উপর স্বীয় ধন-সম্পদের যাকাত আদায় করা ফরয? তিনি বললেনঃ সে তো সত্যই বলেছে। সে বললোঃ সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
অতঃপর সে বললোঃ আপনার দূত বলেন যে, আমাদের উপর প্রত্যেক বছর রমযানের রোযা ফরয? তিনি বললেনঃ সে তো সত্যই বলেছে। সে বলল, ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সে বললোঃ আপনার দূত বলেন যে, আমাদের মধ্যে যারা খরচ বহনে সামর্থবান তাদের উপর হজ্জ ফরয? তিনি বললেনঃ সে তো সত্যই বলেছে। সে বললো, ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সে বললোঃ ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, আমি-এগুলোর উপর কোন কিছু কখনো বৃদ্ধিও করবো না আর এর থেকে (কিছু) হ্রাসও করবো না। যখন সে ফিরে গেলো, তখন নবী (ﷺ) বললেন, যদি সে তার কথায় সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
باب وُجُوبِ الصِّيَامِ
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَعْمَرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ نُهِينَا فِي الْقُرْآنِ أَنْ نَسْأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنْ شَىْءٍ فَكَانَ يُعْجِبُنَا أَنْ يَجِيءَ الرَّجُلُ الْعَاقِلُ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ فَيَسْأَلَهُ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ أَتَانَا رَسُولُكَ فَأَخْبَرَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَرْسَلَكَ قَالَ " صَدَقَ " . قَالَ فَمَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ قَالَ " اللَّهُ " . قَالَ فَمَنْ خَلَقَ الأَرْضَ قَالَ " اللَّهُ " . قَالَ فَمَنْ نَصَبَ فِيهَا الْجِبَالَ قَالَ " اللَّهُ " . قَالَ فَمَنْ جَعَلَ فِيهَا الْمَنَافِعَ قَالَ " اللَّهُ " . قَالَ فَبِالَّذِي خَلَقَ السَّمَاءَ وَالأَرْضَ وَنَصَبَ فِيهَا الْجِبَالَ وَجَعَلَ فِيهَا الْمَنَافِعَ آللَّهُ أَرْسَلَكَ قَالَ " نَعَمْ " . قَالَ وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ قَالَ " صَدَقَ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا قَالَ " نَعَمْ " . قَالَ وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا زَكَاةَ أَمْوَالِنَا قَالَ " صَدَقَ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا قَالَ " نَعَمْ " . قَالَ وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا صَوْمَ شَهْرِ رَمَضَانَ فِي كُلِّ سَنَةٍ . قَالَ " صَدَقَ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا قَالَ " نَعَمْ " . قَالَ وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا الْحَجَّ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً . قَالَ " صَدَقَ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا قَالَ " نَعَمْ " . قَالَ فَوَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لاَ أَزِيدَنَّ عَلَيْهِنَّ شَيْئًا وَلاَ أَنْقُصُ . فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " لَئِنْ صَدَقَ لَيَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীসের শুরু অংশে প্রশ্ন করার যে নিষেধাজ্ঞার কথাটি বলা হয়েছে, এর দ্বারা কোরআন পাকের ঐ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছেঃ হে মুমিনগণ! তোমরা এমন বিষয় জিজ্ঞাসা করো না, যা পরিবাক্ত হলে তোমাদের কাছেই খারাপ লাগবে।। (সূরা মায়েদাহ)
বাস্তব কথাও হচ্ছে এই যে, নতুন নতুন প্রশ্ন করা মানুষের একটি স্বভাব। কিন্তু এ অভ্যাসকে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছেড়ে দিলে এই ফল হয় যে, মানুষের মন ও আকর্ষণ তখন চুলচেরা তর্ক-বিতর্কের দিকেই বেশী অগ্রসর হয়। আর এতে কথার বিশ্লেষণের প্রবণতাই বেশী সৃষ্টি হয় এবং এ তুলনায় কর্ম ও আমল খুব কমই হয়ে থাকে। তাছাড়া এতে সময়ও নষ্ট হয়। বিশেষ করে যুগের নবীর কাছে অধিক প্রশ্ন করার একটি ক্ষতিকর দিক এটাও যে, নবীর পক্ষ থেকে যখন উত্তর আসে, তখন দেখা যায়, উম্মতের অনেক পাবন্দীও বেড়ে যায়।
যা হোক, এ সকল কারণেই অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা থেকে সাহাবায়ে কেরামকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তারা নিজেরা প্রশ্ন খুবই কম করতেন এবং এ আশায় থাকতেন যে, কোন গ্রাম্য বেদুঈন এসে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করুক, আর এ সুযোগে আমরা কিছু শুনে শিখে নেই। কারণ, বেদুঈনদের জন্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে অনেক অবকাশ ছিল। এ হাদীসেরই এক বর্ণনায় হযরত আনাস (রাঃ) থেকেই বর্ণিত হয়েছে, “বেদুঈন লোকটি খুব দুঃসাহসের সাথে প্রশ্ন করে যাচ্ছিল এবং নির্দ্বিধায় যা মনে আসছিল তাই জিজ্ঞাসা করছিল।" — ফতহুল বারী।
বুখারী শরীফে এ হাদীসেরই বর্ণনায় রয়েছে যে, শেষে যাবার সময় এই বেদুঈন বলেছিল। আমি বনু সা'দ ইবনে বকর গোত্রের এক সদস্য, আমার নাম হচ্ছে যেমাম ইবনে সা'আলাবাহ। আমি আমার গোত্রের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলাম।
বুখারীর বর্ণনায় একথাও রয়েছে যে, এ লোকটি এসে প্রথমেই হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিল যে, আমি আপনার কাছে কিছু বিষয় জিজ্ঞাসা করব, তবে আমার প্রশ্নের ধরন কিছুটা শক্ত হবে। তাই বলে আপনি আমার উপর রাগ করবেন না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তোমার মনে যা আসে তাই জিজ্ঞাসা কর। তারপর ঐ প্রশ্নোত্তর হল, যা হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।
প্রশ্নকারী বেদুঈন যাওয়ার সময় কসম খেয়ে যে কথাটি বলেছিল যে, "আমি এতে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি করব না", সম্ভবত তার এ কথার এ উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি আপনার এ শিক্ষা ও দিক নির্দেশনার সম্পূর্ণ অনুসরণ করব এবং আমার মনের চাহিদায় এতে কোন প্রকার কমবেশী করব না। দ্বিতীয় অর্থ এও হতে পারে যে, আমি আপনার এই পয়গাম ও বাণী অবিকল এভাবেই আমার গোত্রের কাছে পৌঁছে দিব এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে এতে কোন সংযোজন বা বিয়োজন করব না।
অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, এ বেদুঈন লোকটি নিজ গোত্রের কাছে গিয়ে খুব উদ্যমের সাথে দ্বীন প্রচারের কাজ শুরু করে দিলেন। তিনি প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে এমন সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য বক্তব্য দিতে লাগলেন যে, তার কোন কোন নিকটাত্মীয় ও আপনজন তাকে বলল হে যেমাম। কুষ্ঠরোগ উন্মাদ হওয়া থেকে সাবধান থাক। (অর্থাৎ, দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করে কুন্ঠরোগে যেন আক্রান্ত না হয়ে যাও অথবা তুমি যেন পাগল না হয়ে যাও)
কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা তার তবলীগ ও দ্বীন প্রচারে এমন বরকত দান করলেন যে, সকাল বেলা যারা তাকে কুষ্ঠরোগ ও পাগলামীতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল, সন্ধ্যা বেলায় তারাই মূর্তিপূজা থেকে তওবা করে তওহীদের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করল। ফলে সারা গোত্রে একটি প্রাাণীও আর অমুসলিম রইল না।
বাস্তব কথাও হচ্ছে এই যে, নতুন নতুন প্রশ্ন করা মানুষের একটি স্বভাব। কিন্তু এ অভ্যাসকে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছেড়ে দিলে এই ফল হয় যে, মানুষের মন ও আকর্ষণ তখন চুলচেরা তর্ক-বিতর্কের দিকেই বেশী অগ্রসর হয়। আর এতে কথার বিশ্লেষণের প্রবণতাই বেশী সৃষ্টি হয় এবং এ তুলনায় কর্ম ও আমল খুব কমই হয়ে থাকে। তাছাড়া এতে সময়ও নষ্ট হয়। বিশেষ করে যুগের নবীর কাছে অধিক প্রশ্ন করার একটি ক্ষতিকর দিক এটাও যে, নবীর পক্ষ থেকে যখন উত্তর আসে, তখন দেখা যায়, উম্মতের অনেক পাবন্দীও বেড়ে যায়।
যা হোক, এ সকল কারণেই অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা থেকে সাহাবায়ে কেরামকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তারা নিজেরা প্রশ্ন খুবই কম করতেন এবং এ আশায় থাকতেন যে, কোন গ্রাম্য বেদুঈন এসে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করুক, আর এ সুযোগে আমরা কিছু শুনে শিখে নেই। কারণ, বেদুঈনদের জন্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে অনেক অবকাশ ছিল। এ হাদীসেরই এক বর্ণনায় হযরত আনাস (রাঃ) থেকেই বর্ণিত হয়েছে, “বেদুঈন লোকটি খুব দুঃসাহসের সাথে প্রশ্ন করে যাচ্ছিল এবং নির্দ্বিধায় যা মনে আসছিল তাই জিজ্ঞাসা করছিল।" — ফতহুল বারী।
বুখারী শরীফে এ হাদীসেরই বর্ণনায় রয়েছে যে, শেষে যাবার সময় এই বেদুঈন বলেছিল। আমি বনু সা'দ ইবনে বকর গোত্রের এক সদস্য, আমার নাম হচ্ছে যেমাম ইবনে সা'আলাবাহ। আমি আমার গোত্রের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলাম।
বুখারীর বর্ণনায় একথাও রয়েছে যে, এ লোকটি এসে প্রথমেই হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিল যে, আমি আপনার কাছে কিছু বিষয় জিজ্ঞাসা করব, তবে আমার প্রশ্নের ধরন কিছুটা শক্ত হবে। তাই বলে আপনি আমার উপর রাগ করবেন না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তোমার মনে যা আসে তাই জিজ্ঞাসা কর। তারপর ঐ প্রশ্নোত্তর হল, যা হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।
প্রশ্নকারী বেদুঈন যাওয়ার সময় কসম খেয়ে যে কথাটি বলেছিল যে, "আমি এতে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি করব না", সম্ভবত তার এ কথার এ উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি আপনার এ শিক্ষা ও দিক নির্দেশনার সম্পূর্ণ অনুসরণ করব এবং আমার মনের চাহিদায় এতে কোন প্রকার কমবেশী করব না। দ্বিতীয় অর্থ এও হতে পারে যে, আমি আপনার এই পয়গাম ও বাণী অবিকল এভাবেই আমার গোত্রের কাছে পৌঁছে দিব এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে এতে কোন সংযোজন বা বিয়োজন করব না।
অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, এ বেদুঈন লোকটি নিজ গোত্রের কাছে গিয়ে খুব উদ্যমের সাথে দ্বীন প্রচারের কাজ শুরু করে দিলেন। তিনি প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে এমন সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য বক্তব্য দিতে লাগলেন যে, তার কোন কোন নিকটাত্মীয় ও আপনজন তাকে বলল হে যেমাম। কুষ্ঠরোগ উন্মাদ হওয়া থেকে সাবধান থাক। (অর্থাৎ, দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করে কুন্ঠরোগে যেন আক্রান্ত না হয়ে যাও অথবা তুমি যেন পাগল না হয়ে যাও)
কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা তার তবলীগ ও দ্বীন প্রচারে এমন বরকত দান করলেন যে, সকাল বেলা যারা তাকে কুষ্ঠরোগ ও পাগলামীতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল, সন্ধ্যা বেলায় তারাই মূর্তিপূজা থেকে তওবা করে তওহীদের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করল। ফলে সারা গোত্রে একটি প্রাাণীও আর অমুসলিম রইল না।
