কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

২১. জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৯৮৪
আন্তর্জাতিক নং: ১৯৮৪
দু'আ
১৯৮৮। হারুন ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... জুবাইর ইবনে হাদরামী সূত্রে আউফ ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানাজার নামায আদায় করার সময দু'আ পড়তে শুনেছি। তিনি দু'আতে বলছিলেনঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ وَأَهْلاً خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَنَجِّهِ مِنَ النَّارِ

রাবী বলেন, অথবা তিনি বলেছিলেন, أَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
باب الدُّعَاءِ
أَخْبَرَنَا هَارُونُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنَا مَعْنٌ، قَالَ حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ عُبَيْدٍ الْكَلاَعِيِّ، عَنْ جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ الْحَضْرَمِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ عَوْفَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي عَلَى مَيِّتٍ فَسَمِعْتُ فِي دُعَائِهِ وَهُوَ يَقُولُ " اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ وَأَهْلاً خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَنَجِّهِ مِنَ النَّارِ - أَوْ قَالَ - وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।

হযরত আবু আব্দুর রহমান আওফ ইবন মালিক রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির জানাযা পড়েন। তাতে তিনি যে দু'আ পড়েছিলেন, আমি তা মুখস্থ করে রেখেছি। তা হল–
اللَّهُمَّ ، اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ ، وَأَهْلاً خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ، و مِنْ عَذَابِ النَّارِ.
(হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন। তার প্রতি রহমত করুন। তাকে নিরাপদ রাখুন। তাকে ক্ষমা করে দিন। জান্নাতে তাকে সম্মানজনক আতিথেয়তা দান করুন। তার কবর প্রশস্ত করে দিন। তাকে ধুয়ে দিন পানি, বরফ ও শীলা দিয়ে। তাকে পাপরাশি থেকে পরিষ্কার করে দিন, যেমন ময়লা থেকে সাদা কাপড় পরিষ্কার করে থাকেন। তাকে দান করুন উত্তম ঘর তার (দুনিয়ার) ঘর অপেক্ষা, উত্তম পরিবার তারন (দুনিয়ার) পরিবার অপেক্ষা আর উত্তম স্ত্রী তার (দুনিয়ার) স্ত্রী অপেক্ষা। তাকে প্রবেশ করান জান্নাতে। তাকে নিরাপদ রাখুন কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব থেকে)। আওফ ইবন মালিক রাযি. বলেন, তাঁর এ দু'আ শুনে আমার আকাঙ্ক্ষা জাগল ওই মায়্যিত যদি আমিই হতাম।

জানাযার নামায পড়া হয় মায়্যিতের জন্য দু'আ ও ইস্তিগফার করার উদ্দেশ্যে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন দু'আ বর্ণিত আছে। তৃতীয় তাকবীরের পর সে দু'আ পড়তে হয়। জানাযায় সেসব দু'আ পড়াই উত্তম। যদিও অন্য কোনও দু'আ পড়লেও জানাযা আদায় হয়ে যায়। আলোচ্য হাদীছটিতে যে দু'আটি বর্ণিত হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীর জানাযায় এটি পড়েছিলেন। সাহাবী হযরত আওফ ইবন মালিক রাখি, নিজে তা শুনেছেন এবং মুখস্থ করেছেন। সম্ভবত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য দু'আটি উচ্চস্বরে পড়েছিলেন। দু'আটি বড়ই পূর্ণাঙ্গ ও সারগর্ভ। আমরা দু'আটির প্রতিটি বাক্যের আলাদা আলাদা অর্থ ও ব্যাখ্যা পেশ করছি।

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَه (হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন)। অর্থাৎ তার সগীরা-কবীরা সব গুনাহই মাফ করে দিন।

وارْحمه (তার প্রতি রহমত করুন)। অর্থাৎ তার সৎকর্মসমূহ কবুল করুন। তার প্রতি বিশেষ দয়া করুন। পরম করুণার সঙ্গে তাকে গ্রহণ করে নিন। প্রথমে গুনাহমাফের দরখাস্ত করা হয়েছে, যা দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণাম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তারপর রহমত প্রার্থনা করা হয়েছে। তা দ্বারা প্রত্যাশিত বস্তু লাভ হয়। দু'টিই মানুষের প্রয়োজন। তাই সাধারণত একইসঙ্গে মাগফিরাত ও রহমত উভয়ের দু'আ করা হয়।

وَعَافهِ (তাকে নিরাপদ রাখুন)। তাকে কবরের যাবতীয় কষ্ট থেকে নিরাপদ রাখুন। মুনকার-নাকীরের সাওয়াল-জাওয়াব তার জন্য আসান করে দিন। কবরের অন্ধকার, একাকিত্ব ও আযাব থেকে তাকে রক্ষা করুন।

وَاعْفُ عَنْه (তাকে ক্ষমা করে দিন)। ইবাদত-বন্দেগীতে তার দ্বারা যে ত্রুটি হয়ে গেছে তা ক্ষমা করে দিন। সাধারণত عَافهِ এর ব্যবহার হয় নিষেধাজ্ঞা পালনে ত্রুটির ক্ষেত্রে। আর اعْفُ এর ব্যবহার হয় কর্তব্যকর্ম পালনে ত্রুটির ক্ষেত্রে। বোঝানো উদ্দেশ্য আপনি যা-কিছু করতে নিষেধ করেছেন সে ক্ষেত্রে মায়্যিতের দ্বারা যে অবহেলা হয়ে গেছে তাও ক্ষমা করে দিন এবং আপনি যা-কিছু করতে আদেশ করেছেন তা করার বেলায় তার দ্বারা যে ত্রুটি হয়ে গেছে তাও মাফ করে দিন।

وَأَكْرم نزله (জান্নাতে তাকে সম্মানজনক আতিথেয়তা দান করুন)। نزل (বলা হয় মূলত মেহমানের জন্য প্রস্তুত করা খাবার বা আতিথেয়তাকে। এখানে এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য ওই সম্মান ও পুরস্কার, যা আল্লাহ তা'আলা বান্দাকে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে দান করবেন। গুনাহ মাফ করা, ইবাদতের প্রতিদান ও পুরস্কার দেওয়া এবং সম্মানজনকভাবে জান্নাতে স্থান দান করা সবই এর অন্তর্ভুক্ত। এখানে نزل বা আতিথেয়তা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এ কারণে যে, মৃত্যু দ্বারা নেককার বান্দা দুনিয়া মাত্র ত্যাগ করে নতুন এক জগতে চলে যায়। সেখানে সে আল্লাহ তা'আলার মেহমান হয়ে এবং যায়। তাই তো জান্নাতে তার জন্য যে নাজ-নি'আমতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, সে এক সম্পর্কে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে-
نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ
'(তা দেওয়া হবে) অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (আল্লাহ)-এর পক্ষ হতে আতিথেয়তাস্বরূপ’। (সূরা হা-মীম সাজদা, আয়াত ৩২)

وَوَسع مُدْخَلَهُ (তার কবর প্রশস্ত করে দিন)। مُدْخَل এর অর্থ প্রবেশ করার জায়গা। মৃত্যুর পর বান্দা যেখানে প্রবেশ করে তা হচ্ছে কবর। কবর পাপী ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং তা হয়ে যায় জাহান্নামের একটি গর্ত। পক্ষান্তরে নেককারের জন্য তা প্রশস্ত হয়ে যায় দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত এবং হয়ে যায় তা জান্নাতের একটি উদ্যান। যদিও দুনিয়াবাসী তা দেখতে পায় না। কবরের জগৎ একটি স্বতন্ত্র জগৎ, অদৃশ্য জগৎ। ইহজগতে থেকে সে জগৎ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা লাভ করা সম্ভব নয়। এ বাক্যে দু'আ করা হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা যেন মায়্যিতের প্রতি সদয় আচরণ করেন এবং তার কবরকে প্রশস্ত করে দেন।

وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ (তাকে ধুয়ে দিন পানি, বরফ ও শীলা দিয়ে)। অর্থাৎ প্রায় মায়্যিতকে সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র ও পরিষ্কার করে দিন এবং তাকে শান্তিদান করুন। পাপ যেমন মলিনতা, তেমনি তা আগুনের উত্তাপও বটে। পাপ করার দ্বারা বান্দা যেন নিজেকে আগুনে উত্তপ্ত করে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. নবী ভয় কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-
تحترقون، تحترقون، فإذا صليتم الفجر غسلتها، ثم تحترقون تحترقون، فإذا صليتم الظهر غسلتها، ثم تحترقون تحترقون، فإذا صليتم العصر غسلتها، ثم تحترقون تحترقون، فإذا صليتم المغرب غسلتها، ثم تحترقون تحترقون، فإذا صليتم العشاء غسلتها، ثم تنامون فلا يكتب عليكم شيء حتى تستيقظون
'তোমরা জ্বলছ। তোমরা জ্বলছ। যখন ফজরের নামায পড়, তখন তা নিভিয়ে থাক।তারপর আবার জ্বলতে থাক। যখন যোহরের নামায পড়, তা নিভিয়ে দাও। ফের জ্বলতে থাক। যখন আসরের নামায পড়, তা নিভিয়ে দাও। ফের জ্বলতে থাক। যখন মাগরিবের নামায পড়, তা নিভিয়ে দাও। আবারও জ্বলতে থাক। যখন ইশার নামায পড়, তা আবার নিভিয়ে দাও। তারপর তোমরা ঘুমিয়ে পড়। জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের কোনও গুনাহ লেখা হয় না। (তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ২২২৪)

বোঝা গেল পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার দ্বারা বান্দা নিজেকে আগুনে দগ্ধ করে। তাই তার প্রয়োজন নিজের থেকে পাপের মলিনতা দূর করা এবং পাপের উত্তাপ দূর করে শান্তি ও শীতলতা লাভ করা। তাই এখানে পানির পাশাপাশি বরফ ও শীলাও যোগ করা হয়েছে। পানি দ্বারা ময়লা দূর হয় আর বরফ ও শীলার দ্বারা শীতলতা লাভ হয়। শীতলতা কেবল বরফ বা কেবল শীলা দ্বারাও অর্জিত হয়। তবুও দৃঢ়তা বোঝানোর জন্য উভয়টিই ব্যবহার করা হয়েছে। দু'আটি দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য যে, হে আল্লাহ! আপনি আপনার এ বান্দার প্রতি আপনার সর্বপ্রকার রহমতের আচরণ করুন। পাপমার্জনার দ্বারা তাকে আযাব থেকে মুক্তিদানও করুন এবং সে যাতে জান্নাতের অফুরন্ত নি'আমত দ্বারা শান্তিলাভ করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করুন।

وَنَقَه مِن الْخَطَايَا كَمَا نَقيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ (তাকে পাপরাশি থেকে পরিষ্কার করে দিন, যেমন ময়লা থেকে সাদা কাপড় পরিষ্কার করে থাকেন)। এর দ্বারা মুমিন বান্দাকে সাদা কাপড়ের সঙ্গে এবং পাপকে মলিনতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মানুষের কাছে সাদা রঙের কাপড় সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। সাদা কাপড়ে ময়লা লাগলে তা খুব বেশি দেখা যায়। অনেক সময় ময়লা পরিষ্কার হওয়ার পর তার দাগ কাপড়ে থেকে যায়। তাতে দেখতে খারাপ লাগে। তাই সাদা কাপড় মলিন হয়ে গেলে খুব যত্নের সঙ্গে তা ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়। মুমিন বান্দাও সেরকম। সে আল্লাহর প্রিয় বান্দা। অন্যায়-অপরাধের মলিনতা অন্যদের তুলনায় তার মধ্যে বেশি দেখা যায়। সংশোধন হয়ে যাওয়ার পরও তার আছর বাকি থেকে যায়। তাই দু'আ করা হচ্ছে যে, হে আল্লাহ! আপনি আপনার এ প্রিয় বান্দাকে পরম মমতার সঙ্গে গুনাহের মলিনতা থেকে পরিষ্কার করে দিন।

وَأَبْدِلُهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ "তাকে দান করুন উত্তম ঘর তার (দুনিয়ার) ঘর অপেক্ষা'। এর্থাৎ তার দুনিয়ার ঘর-বাড়ি তো ছিল সংকীর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ ও অস্থায়ী। তার বিপরীতে তাকে জান্নাতের নিখুঁত, সুপ্রশস্ত ও স্থায়ী বসতবাড়ি দান করুন। অথবা এর অর্থ- তার কবরকে তার দুনিয়ার ঘর অপেক্ষা উৎকৃষ্ট ঘর বানিয়ে দিন। যাতে সে সেখানে দুনিয়ার এর অপেক্ষা বেশি আরাম ও স্বস্তির সঙ্গে অবস্থান করতে পারে।

وَأَهْلًا خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ 'উত্তম পরিবার তার (দুনিয়ার) পরিবার অপেক্ষা'। এখানে এটা দ্বারা স্ত্রী ছাড়া ছেলেমেয়ে, ভাইবোন ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন বোঝানো হয়েছে কারও মতে এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে দাস-দাসী। স্ত্রী এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা স্ত্রীর কথা পরের বাক্যে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বোঝানো উদ্দেশ্য কবরে যেন সে একাকিত্বের কষ্ট অনুভব না করে। সেখানে যাতে স্বস্তি ও আনন্দের সঙ্গে থাকতে পারে, সেজন্য উত্তম সাথী-সঙ্গী তাকে দান করুন। কোনও কোনও হাদীছে আছে, বান্দার নেক আমলসমূহকে উত্তম আকৃতি দিয়ে কবরে তার সঙ্গী বানিয়ে দেওয়া হবে।

وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ ‘আর উত্তম স্ত্রী তার (দুনিয়ার) স্ত্রী অপেক্ষা'। অর্থাৎ ডাগর চোখের হুরদেরকে তার স্ত্রী বানিয়ে দিন। হুর মর্যাদার দিক থেকে যদিও মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, তবুও তাকে উত্তম বলা হয়েছে এ অর্থে যে, তার দ্বারা স্বামী কোনওভাবেই কষ্ট পাবে না। পক্ষান্তরে দুনিয়ার স্ত্রী শত ভালো হওয়ার পরও স্বামী তার দ্বারা কোনও না কোনওভাবে কষ্ট পেয়ে থাকে। অথবা এর অর্থ- দুনিয়ার কোনও মানবীকে তার স্ত্রী বানিয়ে দিন, যার গুণাবলি তার দুনিয়ার স্ত্রী অপেক্ষা উৎকৃষ্ট হবে। এমনও হতে পারে যে, এর দ্বারা তার দুনিয়ার স্ত্রীকেই বোঝানো হয়েছে। তখন এর অর্থ হবে যে, তার নেককার স্ত্রীকে আরও উত্তম গুণসম্পন্ন করে কবরে তার সঙ্গিনী বানিয়ে দিন।

মায়্যিত পুরুষ হলে তখন তো দু'আটি এভাবেই পড়বে। নারী হলে وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِه এর স্থলে وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهَا পড়বে। তার স্বামী যদি ঈমান নিয়ে মারা যায়, তবে তো আখিরাতে তাকেই স্বামীরূপে পাবে। সে ক্ষেত্রে তার স্বামী যদিও দুনিয়ার স্বামীই থাকবে, তবে গুণের দিক থেকে সে আরও উৎকৃষ্ট হয়ে যাবে। দুনিয়ার কোনওরকম খুঁত তখন তার মধ্যে থাকবে না। ফলে তার দ্বারা তার স্ত্রী সে জগতে কোনও কষ্ট পাবে না। দুনিয়ার স্বামী সেরকম হয় না। কেননা স্বামী যতই ভালো হোক, স্ত্রী তার দ্বারা কিছু না কিছু কষ্ট পেয়েই থাকে। জান্নাতে এরকম হবে না। আর যদি তার স্বামীর মৃত্যু ঈমানের সঙ্গে না হয়, তবে আখিরাতে এরূপ নারীকে কোনও জান্নাতী পুরুষের স্ত্রী বানিয়ে দেওয়া হবে। বলাবাহুল্য, সে তার দুনিয়ার স্বামী অপেক্ষা অনেক অনেক উত্তম হবে।

وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ (তাকে প্রবেশ করান জান্নাতে)। অর্থাৎ এমন যেন না হয় যে, পাপের কারণে কিছুকাল জাহান্নামের শাস্তিভোগ করবে, তারপর মুক্তি পেয়ে জান্নাতে যাবে। বরং তাকে শুরুতেই জান্নাতবাসী করুন। আর সে হিসেবে তার কবরকে জান্নাতের উদ্যান বানিয়ে দিন। যাতে কবর থেকেই সে জান্নাতের সুখ-শান্তি ভোগ করতে শুরু করে।

وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ (তাকে নিরাপদ রাখুন কবরের আযাব থেকে)। পাপী ব্যক্তির জন্য কবর জাহান্নামের গর্ত। সেখানে তার জন্য নানারকম শাস্তির ব্যবস্থা আছে। এ দু'আয় বলা হচ্ছে যে, হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দাকে কবরের সেসব আযাব থেকে রক্ষা করুন। তার কবরকে জান্নাতের উদ্যান বানিয়ে দিন।

وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ (এবং তাকে নিরাপদ রাখুন জাহান্নামের আযাব থেকে)। অর্থাৎ কবরের জীবনে তাকে আযাব থেকে রক্ষার পাশাপাশি আখিরাতের জীবনেও আযাব থেকে রক্ষা করুন। তাকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ রেখে জান্নাতবাসী করুন।

হযরত আওফ ইবন মালিক রাযি. যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ থেকে এ দু'আটি শুনলেন, তখন তাঁর আকাঙ্ক্ষা জাগল, আহা! ওই মায়্যিত যদি তিনি নিজেই হতেন। কেননা তাহলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন সারগর্ভ ও পূর্ণাঙ্গ দু'আটি তো তাঁর জন্যই হত। আর তাঁর দু'আ তো অবশ্যই কবুল হয়ে থাকে। তখন তাঁর আখিরাতের মুক্তি নিশ্চিত হয়ে যেত।
আল্লাহ তা'আলা আমাদের জন্যও এরূপ দু'আ কবুল করে নিন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. জানাযার নামাযে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেসব দু'আ বর্ণিত আছে তাই পড়া উচিত। তাতে মায়্যিতের উপকার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

খ. দু'আটির বাক্যসমূহ দ্বারা ইশারা পাওয়া যায়, মৃতব্যক্তির প্রতি জীবিতদের অন্তরে গভীর মমতা ও ভালোবাসা পোষণ করা উচিত।

গ. নেককারদের জন্য সংকীর্ণ কবরকে প্রশস্ত করে দেওয়া হয়, যদিও বাহ্যদৃষ্টিতে তা উপলব্ধি করা যায় না।

ঘ. কবরের আযাব সত্য। এর প্রতি বিশ্বাস রাখা জরুরি।

ঙ. কবরে নেককারদের জন্য সুখ ও আরামের ব্যবস্থা থাকে।

চ. অন্যের মধ্যে দীনী দিক থেকে উৎকৃষ্ট কিছু দেখলে নিজের জন্যও তা কামনা করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ১৯৮৪ | মুসলিম বাংলা