কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

২০. দিবারাত্রির নফল নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭৪৪
আন্তর্জাতিক নং: ১৭৪৪
কাতাদাহ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে শু’বাহ এর উপর মতানৈক্য
১৭৪৭। মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না (রাহঃ) ......... ইমরান ইবনে হুসাইন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার যোহরের নামায আদায় করছিলেন। তখন এক ব্যক্তি “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা” তিলাওয়াত করল। তিনি নামায আদায় শেষে জিজ্ঞাসা করলেন, “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” কে তিলাওয়াত করেছিল? এক ব্যক্তি বলল, আমি। তিনি বললেন, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তোমাদের কেউ নামাযে আমাকে বিরক্ত করছিলে।
باب ذِكْرِ الاِخْتِلاَفِ عَلَى شُعْبَةَ عَنْ قَتَادَةَ، فِي هَذَا الْحَدِيثِ
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ زُرَارَةَ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الظُّهْرَ فَقَرَأَ رَجُلٌ بِـ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) فَلَمَّا صَلَّى قَالَ " مَنْ قَرَأَ بِـ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) " . قَالَ رَجُلٌ أَنَا . قَالَ " قَدْ عَلِمْتُ أَنَّ بَعْضَهُمْ خَالَجَنِيهَا " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

তিনটি সূরা দিয়ে তিন রাকাত বিতরঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিত পড়তেন এবং তিন রাকাতে তিনটি সূরা তিলাওয়াত করতেন। যা সহীহ সনদে বহু সাহাবী থেকে হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। নমুনা স্বরূপ কয়েকটি বর্ণনা তুলে ধরছি

১. হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. বলেন-

أن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يوتر بثلاث ركعات، كان يقرأ في الأولى بــ سبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية بـ قل يا أيها الكافرون، وفي الثالثة بـ قل هو الله أحد، ويقنت قبل الركوع، فإذا فرغ قال عند فراغه سبحان الملك القدوس ثلاث مرات يطيل في آخرهن. وفي رواية (رقم ১৭০১) : ولا يسلم إلا فى آخرهن ويقول يعنى بعد التسليم : سبحان الملك القدوس ثلاثا، ( )

অর্থ: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাতে বিত পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন, তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনূত পড়তেন। ...’। একই হাদীসের অপর বর্ণনায়- ‘আর কেবল শেষ রাকাতেই সালাম ফিরাতেন’।

[সুনানে নাসায়ী ১/১৯১ হা.১৬৯৯ মুশকিলুল আছার ১১/৩৬৮ হাদীসটি সহীহ - আল্লামা আইনী, ইবনুল কাত্তান ও শায়খ শুআইব আরনাউত দ. আলওয়াহামু-ওয়াল ঈহাম ৩/৩৮৩। আলবানী সাহেবও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- র্ইওয়াউল গালীল ২/১৬৭]
২. সায়ীদ ইবনে জুবাইর রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন-

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاثٍ، يقرأ في الأولى سبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية قل يا أيها الكافرون، وفي الثالثة قل هو الله أحد.( )

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিত পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। [সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯ হা.১৪২৭ সুনানে তিরমিযী হা. ৪৬২ সুনানে দারিমী হা.১৫৮৯ ইবনে আবীশাইবা ৪/৫১২ হা.৬৯৫১ মুসনাদে আহমদ হা.২৭৭৬ শুআইব আরনাউত বলেন- হাদীসটি সহীহ, ইমাম নববী বলেছেন, এ হাদীস সহীহ]

৩. হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্যা রা.বর্ণনা করেন-

أنه صلى مع النبي صلى الله عليه و سلم الوترَ، فقرأ في الأولى بـ سبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية قل يا أيها الكافرون، وفي الثالثة قل هو الله أحد، فلما فرغ قال سبحان الملك القدوس ثلاثا يمدُّ صوته بالثالثة.( )

‘তিনি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিত পড়েছেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়েছেন। ...।

[তাহাবী ১/২০৫ হফেজ বদরুদদীন আইনী রহ. বলেছেন- এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য, নুখাবুল আফকার ৩/২৭১, মুসনাদে আবীহানীফা-জামেউল মাসানীদ ১/৪১৪ সুনানে নাসায়ী হা.১৭৩৩ মুসনাদে আহমদ হা. ১৫৩৫৪ ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১০ হা. ৬৯৪৪ কিতাবুলআছার ১/৩২৬ শুআইব আরনাউত ও শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামা এর সনদকে সহীহ বলেছেন। ইবনে হাজার আসকালানী র. আত-তালখীছুল হাবীরে বলেন-إسناده حسن ‘এই সনদ হাসান’]

উপরিউক্ত তিনটি বর্ণনাই নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিসগণের মতে সহীহ। তাতে এ বিষয়ে কোনরূপ অস্পষ্টতা নেই যে, নবীজী তিন রাকাত বিতর পড়তেন। আর রাকাতগুলোর বিবরণে স্পষ্টই উল্লেখ আছে- প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয়। অতঃপর অধিকাংশ সাহাবা-তাবেয়ীন এভাবেই তিন রাকাতে বিতর পড়তেন। এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রহ. সুনানে তিরমিযীতে সুস্পষ্টভাবে বলেন-

والذي اختاره أكثرُ أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم، ومن بعدهم أن يقرأ : بـ سبح اسم ربك الأعلى، وقل يا أيها الكافرون، وقل هو الله أحد، يقرأ في كل ركعة من ذلك بسورةٍ.

“সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী জ্ঞানীদের অধিকাংশই (বিতরে) সূরা আ‘লা’ কাফিরুন ও এখলাছ পড়াকেই গ্রহণ করেছেন। (তিন রাকাতের) প্রতি রাকাতে একটি করে সূরা পড়বে।” [সুনানে তিরমিযী-বিতরে কেরাত পাঠ অধ্যায়]
অনুরূপ ১৯ জন সাহাবী থেকে তিন রাকাত বিতরে তিন সূরা পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। [কাশফুস সিতর পৃ. ৪৭ আল হিদায়া ফি তাখরীজি আহাদীসিল বিদায়া ৪/১৪৮]

এক সালামে তিন রাকাত বিতর ও পথম বৈঠকে তাশাহ্হুদঃ

এক সালামে তিন রাকাত বিতর, অর্থাৎ দু’ রাকাত পড়ার পর বসে শুধু তাশাহহুদ পড়ে উঠে যাওয়া ও সালাম না ফেরানো এবং তৃতীয় রাকাতের পর সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। নিচে এর দলিল পেশ করা গেল :

১. সা‘দ ইবনে হিশাম বলেন-

عن عائشة قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث لا يسلم إلا في آخرهن، وهذا وتر أمير المؤمنين عمر بن الخطاب رضي الله عنه وعنه أخذه أهل المدينة. ( )

‘আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাতে বিত পড়তেন এবং শেষ রাকাতের পূর্বে সালাম ফেরাতেন না’। মুসতাদরাকে হাকেমের বর্ণনায় রয়েছে- ‘আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর রা.ও বিত এভাবে পড়তেন এবং তাঁর কাছ থেকেই মদীনাবাসী এ আমল গ্রহণ করেছে’।

ইমাম হাকেম, যাহাবী, আইনী, নববী ও আনওয়ার শাহ কাশমীরী প্রমুখ হাদীসটি সহীহ বলেছেন। [বিস্তারিত পর্যালোচনা অংশ দষ্টব্য] [আলমুসতাদরাক ১/৩০৪ হা.১১৮১ তহাবী ১/১৯৩ নাসায়ী ১/২২৮ হা.১৬৯৮ ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৩-৪৯৪ হা.৬৯১৩ কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনা ১/১৩৭ ৩/২১৪ বিখ্যাত অনেক হাদীসবিশারদই এটিকে সহীহ বলেছেন- আত্তা‘রীফ ৪/৪৪০]

উল্লেখ্য যে, হাদীস শাস্ত্রের বিখ্যাত ইমাম ইবনুল জাওযী, ইমাম যাহাবী ও ইবনে হাযম জাহেরী রহ. ও ইমাম বাইহাকী রহ. প্রমুখ বলেন- এ হাদীস থেকে বুঝা যায় নবীজীর বিত নামায ছিল তিন রাকাত এক সালামে। তাতে মাগরিবের নামাযের মত মাঝে বৈঠক করতেন। [আত্তানকীহ লিয্ যাহাবী ১/৩২৬ আল-মুহাল্লা ২/৮৯ আত্তাহকীক ফী মাসায়িলিল খিলাফ ও আততানকীহ লি ইবনে আব্দীল হাদী, আসসুনানুল কুবরা - ৩/৩১]

২. তিন রাকাতে তিন কেরাত পড়ার আলোচনায় হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. এর উল্লিখিত বর্ণনায় সহীহ সনদে রয়েছে-

كان يوتر بثلاث ركعات لا يسلم فيهن حتى ينصرف ( )

‘তিনি তিন রাকাতে বিতর পড়তেন। আর তিন রাকাত পূর্ণ করেই সালাম ফেরাতেন’। সুনানে নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছে- ولا يسلم إلا في آخرهن ‘তিন রাকাত পূর্ণ করেই সালাম ফেরাতেন’। [শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৬৮ হা.৪৫০১ নাসায়ী হা. ১৭০১ শুআইব বলেছেন- এর সনদ সহীহ]

৩. ছাবেত আল বুনানী র. বলেন- হযরত আনাস ইবনে মালেক রা.আমাকে বলেছেন, হে আবু মুহাম্মাদ! (ছাবেত এর উপনাম) আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করেছি। আর তিনি আল্লাহ তা‘আলা থেকে গ্রহণ করেছেন। তুমি শেখার জন্য আমার থেকে অধিক নির্ভরযোগ্য অন্য কাউকে পাবে না। ছাবেত বলেন-

ثم صلى بي العشاءَ، ثم صلى ست ركعات يُسلم بين الركعتين، ثم أوتر بثلاث يسلم في آخرهن. ( )

অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে ইশার নামায পড়লেন। এর পর ছয় রাকাত নামায পড়লেন এবং এর প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফেরান। তারপর তিন রাকাতে বিত পড়লেন, তাতে সালাম ফেরালেন শেষে।

[তারীখে দিমাশ্ক লি ইবনে আসাকির ৯/৩৬৩ আনাস ইবনে মালেক অধ্যায়। সুনানে তিরমিযী হা.৩৮৩১। আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশমীরী রহ. বলেন- এ হাদীসের সনদ শক্তিশালী, মা‘আরিফুস সুনান ৪/২০৯ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য- কানযুল উম্মাল হা.২১৯০২ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন- তাহাবী ১/২০৬ ও ইবনু আবী শাইবা হা.৬৯১০ এর সনদ সহীহ]

অন্য বর্ণনায় ছাবেত আল বুনানী বলেন-

صليت مع أنس وبت عنده قال : فرأيته يصلى مثنى مثنى، حتى إذا كان في آخر صلاته أوتر بثلات مثل المغرب. ( )

আমি হযরত আনাস রা. এর কাছে রাতি যাপন করেছি এবং তাঁর সাথে নামায পড়েছি। তাঁকে দেখেছি রাতে দুই রাকাত করে নামায পড়েছেন। এবং সব শেষে মাগরিবের নামাযের মত তিন রাকাত বিত পড়লেন। [মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা.৪৬৩৬ সালাতুল বিত লিল মারওয়াযী- পৃ. ১২৩]

৪. হযরত আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল নামাযের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন-

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يستفتح الصلاة بالتكبير، والقراءة بـ الحمد لله رب العالمين، وكان إذا ركع لم يشخصْ رأسَه ولم يصوِّبْه ولكن بين ذلك، وكان إذا رفع رأسه من الركوع لم يسجد حتى يستوى قائما، وكان إذا رفع رأسه من السجدة لم يسجدْ حتى يستوى جالسا، وكان يقول فى كلِّ ركعتين التحية ... ( )

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করতেন তাকবীর দিয়ে এবং কেরাত শুরু করতেন ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ দিয়ে। রুকুতে মাথা উপরেও উঠাতেন না আবার নিচেও নামাত্রেন না। বরং মাঝামাঝি অবস্থায় রাখতেন। রুকু থেকে সোজা হয়ে না দাড়িয়ে সেজদায় যেতেন না। এক সেজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে না বসে আরেক সেজদায় যেতেন না। আর তিনি বলতেন- নামাযের প্রতি দুই রাকাতেই একবার আত্তাহিয়্যাতু পড়বে। ... [সহীহ মুসলিম হা.১১৩৮]

উপরোক্ত বর্ণনাগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিতর নামায এক সালামে তিন রাকাত। তবে দুই রাকাতে অবশ্যই তাশাহহুদ পড়তে হবে। এ বিষয়ক আরো বর্ণনা সামনে আসছে। আর দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদ ব্যতীত বিতর পড়ার কোন দলিল নেই। এ বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা পরিশিষ্ট অংশে করা হয়েছে।

সাহাবায়ে কেরাম-তাবেয়ীনও একই নিয়মে বিত পড়তেন। এখানে কয়েকটি বর্ণনা তুলে ধরা হল:

১. মাকহুল র. বলেন-

عن عمر بن الخطاب أنه أَوْتَرَ بِثَلاَثِ رَكَعَاتٍ، لم يَفْصِلْ بَيْنَهُنَّ بِسَلامٍ. ( )

হযরত উমর রা. তিন রাকাতে বিত পড়লেন। তাতে দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফেরাননি। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯২ হা.৬৯০১]

২. মিস্ওয়ার ইবনে মাখরামা রা. বলেন-

دفنا أبا بكر ليلا فقال عمر إنى لم أوتر فقام وصففنا وراءه فصلى بنا ثلاث ركعات لم يسلم إلا في آخرهن. ( )

আমরা রাতের বেলা হযরত আবু বকর রা.এর দাফন সম্পন্ন করলাম। তখন হযরত উমর রা. বলেন- আমি বিত পড়িনি। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তাঁর পিছনে কাতার বাঁধলাম। তিনি তিন রাকাত নামায পড়লেন, তাতে সালাম ফিরালেন কেবলই শেষে। [তহাবী ১/২০৬ ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯১ হা.৬৮৯১ মুসান্নাফে আব্দুররায্যাক ৩/২০ সালাতুল বিত লিল মারওয়াযী পৃ.২৭০ কাশমীরী রহ. বলেন- এর সনদ সহীহ]

৩. হাবীব আল-মুআল্লিাম বলেন-

قيل للحسن: إن ابن عمر كان يُسلم في الركعتين من الوتر؟ فقال : كان عمرُ أفقه منه - كان ينهض في الثالثة بالتكبير. ( )

অর্থ: হাসান বসরী কে জিজ্ঞেস করা হল- আব্দুুল্লাহ ইবনে উমর রা. (তিন রাকাত) বিতের দুই রাকাতের পর সালাম ফিরিয়ে তৃতীয় রাকাত পৃথক পড়তেন? তিনি বলেন হযরত উমর রা. তাঁর থেকে বেশী পজ্ঞাবান ছিলেন- তিনি (দ্বিতীয় রাকাতে স্বাভাবিক নিয়মে বৈঠক শেষে সালাম না ফিরিয়ে) তাকবীর বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। [আলমুসতাদরাক হা. ১১৪১; সুনানে কুবরা- বাইহাকী হা. ৫০০৩; সালাতুল বিত- মারওয়াযী পৃ.২৭০ । এ হাদীসের সনদ সহীহ । হাফেজ ইবনে হাজার রহ.ও মৌনভাবে এর সমর্থন করেছেন- ফাতহুল বারী ২/৫৫৮]

৪. আবু ইসহাক বলেন-

كان أصحاب على وأصحاب عبد الله لاَ يُسَلِّمُونَ فِي رَكْعَتَيَ الْوِتْرِ. ( )

হযরত আলী রা. ও হযরত ইবনে মাসউদ রা. এর শিষ্যগণ বিতের দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফিরাতেন না। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৩ হা.৬৯১১ সালাতুল বিত লিল মারওয়াযী পৃ.২৭১]

৫. হিশাম ইবনুল গায্ র. বলেন-

عن مكحول أنه كان يُوتِرُ بِثَلاَثٍ، لا يُسَلِّمُ إلا في آخِرِهِنَّ. ( )

অর্থ: হযরত মাকহুল র. তিন রাকাতে বিত পড়তেন। সালাম ফিরাতেন তিন রাকাত পূর্ণ করেই। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৩ হা.৬৯০৬ এর সনদ সহীহ]

৬. হাম্মাদ (ইবনে আবী সুলাইমান) র. বলেন-

نهاني إبراهيم أَنْ أُسَلِّمَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ مِنَ الْوِتْرِ. ( )

বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী র. বিতের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফিরাতে নিষেধ করেছেন। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৩ হা.৬৯০৮]

৭. কাতাদাহ রহ. বলেন-

عن سعيد بن المسيب قال : لا يُسَلَّمُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ مِنَ الْوِتْرِ ( )

হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন- বিত নামাযের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফিরাবে না। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৩ হা.৬৯০৭ এর সনদ সহীহ]

৮. আবুয-যিনাদ রহ. বলেন-

عن السبعة، سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيّبِ، وعُرْوَةَ بن الزُّبَيْرِ، والقَاسِم بن محمدٍ، وَأَبِي بَكْر بن عبد الرَّحمنِ، وخَارِجَةَ بن زَيْدٍ، وعُبَيْدِ اللَّهِ بن عبد اللَّهِ، وسُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ - في مَشْيَخَةٍ سِوَاهُمْ أَهْلِ فِقْهٍ وصلاحٍ وَفَضْلٍ، وَرُبَّمَا اختَلَفوا في الشَّيْءِ فَأُخذَ بِقَوْلِ أَكثرِهِمْ وَأَفْضَلِهِمْ رَأْيًا، فَكَانَ مِمَّا وَعَيْتُ عنهم عَلَى هذه الصِّفَةِ : أَنَّ الْوِتْرَ ثلاثٌ لَا يُسَلِّمُ إلَّا فِي آخِرِهِنَّ، (قال الطحاوي:) فهذا مَنْ ذَكَرْنَا مِنْ فُقَهَاءِ الْمَدِينَةِ وَعُلَمَائِهِمْ قَدْ أَجْمَعُوا أَنَّ الْوِتْرَ ثَلَاثٌ لَا يُسَلِّمُ إلَّا فِي آخِرِهِنَّ. ( )

অর্থ: আমি মদীনার বিখ্যাত ‘সাত ফকীহ’ অথাৎ সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব, কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ, উরওয়া ইবনে যুবাইর, আবু বকর ইবনে আব্দুররহমান, খারিজা ইবনে যায়েদ, উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ও সুলায়মান ইবনে ইয়াসার- এর যুগ পেয়েছি। তাছাড়া আরো অনেক শায়খের যামানা পেয়েছি- যারা ইলম ও তাকওয়ায় অনন্য ছিলেন। কখনো তাদের মধ্যে মতভেদ হলে তাদের অধিকাংশের মত অনুযায়ী কিংবা পাজ্ঞতার বিচারে যিনি অগ্রগণ্য তার সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হত। এই মূলনীতি অনুসারে তাদের যে সব সিদ্ধান্ত আমি ধারণ করেছি তন্মধ্যে একটি হচ্ছে- তাঁরা সকলে একমত ছিলেন যে, বিত নামায তিন রাকাত; আর শেষ রাকাতেই কেবল সালাম ফিরাবে। (ইমাম তাহাবী রহ. বলেন- সুত্ররাং দেখা গেল, মদীনার যে সকল ফকীহ ও আলেমের নাম উল্লেখ করা হল তাঁরা এ বিষয়ে একমত যে, বিতর তিন রাকাত এবং সালাম হবে তিন রাকাত পূর্ণ করেই। [তাহাবী ২/২০৭ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য]

৯. আমীরুল মু‘মিনীন ফিল হাদীস- সুফ্ইয়ান ছাউরী র. তাঁর পূর্বসূরি তাবেয়ীদের বিত নামাযের বিবরণে বলেন-

كانوا يستحبون أن يقرأ في الركعة الأولى : سبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية : قل يا أيها الكافرون، ثم يتشهَّد، وينهَضُ، ثم يقرأ في الثالثة : قل هو الله أحد. ( )

অর্থ: তাঁরা তিন রাকাত বিতের প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন পড়তেন। তারপর বসে তাশাহহুদ পড়ে আবার উঠে দাঁড়াতেন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। [সালাতুল বিত- মারওয়াযী পৃ. ২৭৯ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন- এর সনদ সহীহ- নাতাইযুল আফ্কার ২/১১৪, ৫০৩]


বিতর নামায মাগরিবের মত দুই বৈঠক ও এক সালামেঃ

১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : وِتْرُ اللَّيْلِ ثَلاَثٌ كَوِتْرِ النَّهَارِ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ.( )

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- দিনের বিত মাগরিব এর মত রাতের বিতও তিন রাকাত। [দারাকুতনী হা.১৬৭২]

হাদীসটি হাসান পর্যায়ের। তবে অনেকে এটিকে ইবনে মাসউদ রা. এর বক্তব্য হিসেবে সহীহ বলেছেন। [বিস্তারিত দেখুন পর্যালোচনা অংশে]

২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন-

عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : صلاة المغرب وتر النهار فأوتروا صلاة الليل. ( )

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- দিনের বিত হল মাগরিবের নামায। তোমরা রাতের নামাযকেও অনুরূপ বিত করে পড়। [মুসনাদে আহমদ হা.৪৮৪৭ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য- শুয়াইব আরনাউত। ইবনে আবী শাইবা ৪/৪ হা.৬৭৭৩, ৬৭৭৮ আব্দুর রাযযাক হা.৪৬৭৫ তাবারানী- সগীর ও আওসাত। হাফেজ ইরাকী রহ. বলেন- এর সনদ সহীহ, আত্তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ পৃ.১৪৭ শরহুয্ যুরকানী আলাল মুয়াত্তা]

মুয়াত্তা মালেকসহ কোন কোন কিতাবে অন্য সহীহ সনদে একই কথা হযরত ইবনে উমরের বক্তব্যরূপে বর্ণিত হয়েছে। সম্ভবত বর্ণানাদুটিই (মারফু ও মাউকুফ) আপন আপন স্থানে সঠিক। আর যদি একে ‘মউকুফ’ তথা ইবনে উমরের বক্তব্যই বলা হয় তবু তা ‘মরফু’ -এর পর্যায়ভুক্ত বলে বিবেচিত্র্র্র হবে। কেননা একজন সাহাবী নামাযের মত একটি স্বতসিদ্ধ বিধানের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে না জেনে নিজের পক্ষ থেকে এরূপ বক্তব্য দিতে পারেন না। তাই ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন-

وبهذا نأخذ، وينبغي لمن جعل المغربَ وترَ صلاة النهار كما قال ابن عمر أن يكون وترُ صلاةِ الليل مثلَها لا يفصل بينهما بتسليم كما لا يفصل في المغرب بتسليم وهو قول أبي حنيفة - رحمه الله.

আমরা এ বর্ণনাটি গ্রহণ করি। যে ব্যক্তি ইবনে উমরের বক্তব্য অনুসারে বিতরকে মাগরিবের নামাযের অনুরূপ মনে করে, তার উচিত্র্র্র মাগরিবের মতই বিতর পড়া, যার দুই রাকাতের পর সালাম ফিরাবে না। এটিই ইমাম আবুহানীফা রহ. এর মত। [মুয়াত্তা মালেক- ইমাম মুহাম্মদের বর্ণনা পৃ.১৪৯] বর্ণনাদুটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পরিশিষ্টে করা হয়েছে।

৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

الْوِتْرُ ثَلاَثٌ كَصَلاَةِ الْمَغْرِبِ وِتْرُ النَّهَارِ. ( )

অর্থ: দিনের বিত মাগরিব এর মত রাতের বিতও তিন রাকাত । [ইবনে আবী শাইবা হা.৬৭৭৯ আল মু‘জামুল কাবীর হা.৯৪২১-৯৪২২ এর বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের মানোত্তীর্ণ, মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ- হা.৩৪৫৫ বাইহাকী রহ. বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। আস সুনানুল কুবরা ৩/৩০]

ইমাম বাইহাকী র.তাঁর সুনানে কুবরায় এর শিরোনাম দিয়েছেন- (باب مَنْ أَوْتَرَ بِثَلاَثٍ مَوْصُولاَتٍ بِتَشَهُّدَيْنِ وَتَسْلِيمٍ.) “দুই বৈঠক ও এক সালামে এক সাথে তিন রাকাত বিত অধ্যায়।” এটি বিতর নামাযের সেই পদ্ধতিই যা আমরা এখানে আলোচনা করছি।

৪. উক্বা ইবনে মুসলিম বলেন-

سألت عبد الله بن عمر رضي الله عنهما عن الوتر؟ فقال : أَتَعْرِفُ وِتْرَ النَّهَارِ؟ قُلْتُ : نَعَمْ ، صَلَاةُ الْمَغْرِبِ قَالَ : صَدَقْتَ أَوْ أَحْسَنْتَ . ( )

অর্থ: আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরকে বিত নামায (-এর পদ্ধতি) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন- তুমি দিনের বিত চেন না? বললাম হাঁ, মাগরিবের নামায। বললেন, ঠিক বলেছ। (রাতের বিতও ঠিক এরকমই)। [তহাবী ২/১৯৭]
৫. হাসান বছরী র. বলেন-

كان أبي بن كعب يوتر بثلاث لا يسلم إلا في الثالثة مثل المغرب. ( )

অর্থ: হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. তিন রাকাতে বিত পড়তেন এবং তাতে মাগরিবের মতই তৃতীয় রাকাতের আগে সালাম ফিরাতেন না। [মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা.৪৬৫৯-৪৬৬০ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য]

ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন-

فإنه قد ثبت أن أبي بن كعب كان يقوم بالناس عشرين ركعة في رمضان ويوتر بثلاث، فرأى كثير من العلماء أنَّ ذلك هو السنة، لأنه أقامه بين المهاجرين والأنصار ولم ينكره منكر، كذا فى الفتاوى الكبرى (২/২৪৫)

অর্থ: বিশুদ্ধ সূত্র্রে প্রমাণিত, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. তাঁর ইমামতিতে লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবীহ, অতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়তেন। তাই অনেক উলামা মনে করেন তারাবীহর এটিই প্রকৃত সুন্নত। কারণ তিনি অনেক মুহাজির-আনছারের সামনে এ নামায পড়েছেন। তাঁদের কেউই এর বিরোধিতা করেননি বা একে ভুল আখ্যা দেননি। ]আল-ফাতাওয়াল কুবা-২/২৪৫]

৬. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-

الوتر كصلاة المغرب. ( )

অর্থ: বিত নামায মাগরিবেরই অনুরূপ। ]মুয়াত্তা মুহাম্মদ পৃ.১৫০ কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনাহ ১/১৩৬]

৭. যিয়াদ ইবনে আবী মুসলিম র.বলেন-

سألتُ أبا العالية وخِلاساً عن الوتر؟ فقالا: اصنع فِيهِ كَمَا تَصْنَعُ فِي الْمَغْرِبِ.( )

অর্থ: আমি (প্রসিদ্ধ তাবেয়ী) আবুল‘আলীয়া ও খিলাসকে জিজ্ঞেস করলাম- বিত নামায কিভাবে পড়ব? তাঁরা উভয়ে বললেন- মাগরিবের নামাযে যা যা কর বিত নামাযেও তাই করবে। [ইবনে আবী শাইবা হা.৬৯০৯ [

৮. আবুখাল্দা আবুল ‘আলীয়াকে বিত নামাযের তরীকা জিজ্ঞেস করলেন। তিনি উত্তরে বললেন-

عَلَّمَنَا أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْ عَلَّمُونَا أَنَّ الْوِتْرَ مِثْلُ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ، غَيْرَ أَنَّا نَقْرَأُ فِي الثَّالِثَةِ، فَهَذَا وِتْرُ اللَّيْلِ، وَهَذَا وِتْرُ النَّهَارِ. ( )

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন- বিত নামায মাগরিবের নামাযের মতই; পার্থক্য কেবল এতটুকু যে, আমরা বিতের তৃতীয় রাকাতে কেরাত পড়ি (যা মাগরিবে নেই)। এটি রাতের বিত, আর মাগরিব হল দিনের বিত। [তাহাবী-১/২০৬ সালাতুল বিত লিল মারওয়াযী পৃ.২৭৯। এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য- নুখাবুল আফকার ৩/২৭৯ এর সনদ সহীহ- আফগানী]

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনু আব্দিল বার রহ. বলেন-

ومعلوم أن المغرب ثلاث ركعات لا يسلم إلا في آخرهن فكذلك وتر صلاة الليل.

আর এ কথা সর্বজনজ্ঞাত যে, মাগরিবের নামায তিন রাকাত। তিন রাকাত পূর্ণ করেই তবে সালাম ফিরানো হয়। ঠিক তেমনি রাতের বিতরও। [আল-ইসতিযকার ৫/২৮৩]

পসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কেউ কেউ বলে থাকেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের মত বিত পড়তে নিষেধ করেছেন, তাই বিত এক রাকাত পড়বে। আর তিন রাকাত পড়লেও দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে, অথবা দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক না করে সোজা দাড়িয়ে তিন রাকাত পূর্ণ করেব।

বিতের দুই রাকাতে মাগরিবের মতই বৈঠক হবে তবে সালাম ফিরাবে না; এর দলিল পূর্বে আলোচিত্র্র্র হয়েছে। কিন্তু বিতকে মাগরিবের নামাযের মত পড়তে নিষেধ করার উদ্দেশ্য কি, এ বিষয়ে যথার্থ বক্তব্য হল- বিতের ক্ষেত্রে শরীয়তের কাম্য এই যে, তা কিছু নফল নামায পড়ার পর আদায় করা। এজন্য নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

لا توتروا بثلاث تشبهوا بصلاة المغرب و لكن أوتروا بخمس أو بسبع أو بتسع أو بإحدى عشرة ركعة أو أكثر من ذلك. ( )

অর্থাৎ তোমরা শুধু তিন রাকাত বিত পড়ো না, এতে মাগরিবের মত হয়ে যাবে; বরং পাঁচ, সাত, নয়, এগার বা এরও অধিক রাকাতে বিত পড়ো। [আলমুসাতদরাক ১/৩০৪ হা.১১৩৭ সুনানে কুবরা-বাইহাকী ৩/৩১, ৩২]

অর্থাৎ বিত এর আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়- দুই, চার, ছয়, আট, যত রাকাত সম্ভব হয় পড়ে নাও। (বিত অধ্যায়ের (ক) এর দ্বিতীয় হাদীসে হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার ও তিন, ছয় ও তিন, আট ও তিন, এবং দশ ও তিন- বিভিন্ন সংখ্যায় রাতের নামায পড়তেন, যেখানে তিন রাকাত ছিল বিত)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিত নামায সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত হযরত আয়েশা রা. বলেন-

لا تُوتر بِثَلاَثٍ بُتْرٍ، صَلِّ قَبْلَهَا رَكْعَتَيْنِ، أَوْ أَرْبَعًا. ( )

অর্থাৎ শুধুই তিন রাকাত বিত পড়ো না। এটি অপূর্ণাঙ্গ নামায। বরং এর পূর্বে দুই বা চার রাকাত পড়ে নাও। [ইবনে আবী শাইবা, হা.৬৮৯৮ এর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ]

নবীজীর বিত নামাযের পত্র্যক্ষদর্শী অপর সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-

إنِّي لَأَكْرَهُ أَنْ يَكُونَ بَتْرَاءَ ثَلَاثًا، وَلَكِنْ سَبْعًا أَوْ خَمْسًا. ( )

অর্থাৎ রাতে শুধুই তিন রাকাত নামায পড়া আমি পছন্দ করি না। বরং অন্তত পাঁচ থেকে সাত রাকাত পড়া উচিত্র্র্র। [হাফেজ আইনী রহ. এটিকে সহীহ বলেছেন] ইমাম তহাবী র. এই বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন-

فهذا عندنا على أَنَّه كَرِه أَنَّه يُوتِرُ وِتْرًا لَمْ يَتَقَدَّمْهُ تطوُّع، وأَحَبَّ أَنْ يكون قَبْلَهُ تَطَوُّعٌ، إمَّا رَكْعَتَانِ وَإِمَّا أَرْبَعٌ.

অর্থাৎ তিনি আগে কোন নফল নামায না পড়ে কেবলই তিন রাকাত বিত পড়াকে অপছন্দ করেন। তাঁর মতে বিতের পূর্বে অন্তত দুই বা চার রাকাত নফল নামায পড়া উচিত্র্র্র। [তহাবী ১/২০৩]
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন