কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

২০. দিবারাত্রির নফল নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭৩৯
আন্তর্জাতিক নং: ১৭৩৯
হাদীস বর্ণনায় মালিক ইবনে মিগওয়াল এর উপর মতানৈক্য
১৭৪২। আব্দুলাহ ইবনে সাব্বাহ (রাহঃ) ......... আব্দুর রহমান ইবনে আবযা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা” “ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” তিলাওয়াত করতেন।
باب ذِكْرِ الاِخْتِلاَفِ عَلَى مَالِكِ بْنِ مِغْوَلٍ فِيهِ
أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الصَّبَّاحِ، قَالَ حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ حَبِيبٍ، قَالَ حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ الْقَاسِمِ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبْزَى، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقْرَأُ فِي الْوِتْرِ بِـ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) وَ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ) وَ (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

তিনটি সূরা দিয়ে তিন রাকাত বিতরঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিত পড়তেন এবং তিন রাকাতে তিনটি সূরা তিলাওয়াত করতেন। যা সহীহ সনদে বহু সাহাবী থেকে হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। নমুনা স্বরূপ কয়েকটি বর্ণনা তুলে ধরছি

১. হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. বলেন-

أن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يوتر بثلاث ركعات، كان يقرأ في الأولى بــ سبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية بـ قل يا أيها الكافرون، وفي الثالثة بـ قل هو الله أحد، ويقنت قبل الركوع، فإذا فرغ قال عند فراغه سبحان الملك القدوس ثلاث مرات يطيل في آخرهن. وفي رواية (رقم ১৭০১) : ولا يسلم إلا فى آخرهن ويقول يعنى بعد التسليم : سبحان الملك القدوس ثلاثا، ( )

অর্থ: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাতে বিত পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন, তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনূত পড়তেন। ...’। একই হাদীসের অপর বর্ণনায়- ‘আর কেবল শেষ রাকাতেই সালাম ফিরাতেন’।

[সুনানে নাসায়ী ১/১৯১ হা.১৬৯৯ মুশকিলুল আছার ১১/৩৬৮ হাদীসটি সহীহ - আল্লামা আইনী, ইবনুল কাত্তান ও শায়খ শুআইব আরনাউত দ. আলওয়াহামু-ওয়াল ঈহাম ৩/৩৮৩। আলবানী সাহেবও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- র্ইওয়াউল গালীল ২/১৬৭]
২. সায়ীদ ইবনে জুবাইর রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন-

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاثٍ، يقرأ في الأولى سبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية قل يا أيها الكافرون، وفي الثالثة قل هو الله أحد.( )

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিত পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। [সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯ হা.১৪২৭ সুনানে তিরমিযী হা. ৪৬২ সুনানে দারিমী হা.১৫৮৯ ইবনে আবীশাইবা ৪/৫১২ হা.৬৯৫১ মুসনাদে আহমদ হা.২৭৭৬ শুআইব আরনাউত বলেন- হাদীসটি সহীহ, ইমাম নববী বলেছেন, এ হাদীস সহীহ]

৩. হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্যা রা.বর্ণনা করেন-

أنه صلى مع النبي صلى الله عليه و سلم الوترَ، فقرأ في الأولى بـ سبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية قل يا أيها الكافرون، وفي الثالثة قل هو الله أحد، فلما فرغ قال سبحان الملك القدوس ثلاثا يمدُّ صوته بالثالثة.( )

‘তিনি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিত পড়েছেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়েছেন। ...।

[তাহাবী ১/২০৫ হফেজ বদরুদদীন আইনী রহ. বলেছেন- এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য, নুখাবুল আফকার ৩/২৭১, মুসনাদে আবীহানীফা-জামেউল মাসানীদ ১/৪১৪ সুনানে নাসায়ী হা.১৭৩৩ মুসনাদে আহমদ হা. ১৫৩৫৪ ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১০ হা. ৬৯৪৪ কিতাবুলআছার ১/৩২৬ শুআইব আরনাউত ও শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামা এর সনদকে সহীহ বলেছেন। ইবনে হাজার আসকালানী র. আত-তালখীছুল হাবীরে বলেন-إسناده حسن ‘এই সনদ হাসান’]

উপরিউক্ত তিনটি বর্ণনাই নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিসগণের মতে সহীহ। তাতে এ বিষয়ে কোনরূপ অস্পষ্টতা নেই যে, নবীজী তিন রাকাত বিতর পড়তেন। আর রাকাতগুলোর বিবরণে স্পষ্টই উল্লেখ আছে- প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয়। অতঃপর অধিকাংশ সাহাবা-তাবেয়ীন এভাবেই তিন রাকাতে বিতর পড়তেন। এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রহ. সুনানে তিরমিযীতে সুস্পষ্টভাবে বলেন-

والذي اختاره أكثرُ أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم، ومن بعدهم أن يقرأ : بـ سبح اسم ربك الأعلى، وقل يا أيها الكافرون، وقل هو الله أحد، يقرأ في كل ركعة من ذلك بسورةٍ.

“সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী জ্ঞানীদের অধিকাংশই (বিতরে) সূরা আ‘লা’ কাফিরুন ও এখলাছ পড়াকেই গ্রহণ করেছেন। (তিন রাকাতের) প্রতি রাকাতে একটি করে সূরা পড়বে।” [সুনানে তিরমিযী-বিতরে কেরাত পাঠ অধ্যায়]
অনুরূপ ১৯ জন সাহাবী থেকে তিন রাকাত বিতরে তিন সূরা পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। [কাশফুস সিতর পৃ. ৪৭ আল হিদায়া ফি তাখরীজি আহাদীসিল বিদায়া ৪/১৪৮]
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ১৭৩৯ | মুসলিম বাংলা