আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

২৮- ইজারা অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২২৬১
১৪০০. সৎ ব্যক্তিকে শ্রমিক নিয়োগ করা।
২১১৮. মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... আবু মুসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ)-এর নিকট হাযির হলাম, আমার সঙ্গে আশআরী গোত্রের দু‘জন লোক ছিল। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমি জানতাম না যে, এরা কর্মপ্রার্থী হবে। তখন (নবী (ﷺ)) বললেন, যে ব্যক্তি কর্মপ্রার্থী হয়, আমরা আমাদের কাজে তাকে কখনো নিয়োজিত করি না অথবা বলেছেন কখনো করব না।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কোন কোন বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা এমন কারও উপর এ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করি না, যে তা কামনা করে কিংবা এমন কাউকেও নয়, যে এর প্রতি লোভ করে।

হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি.-এর দুই চাচাতো ভাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সরকারি কোনও পদ প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দিতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন-
إِنَّا وَاللهِ لَا نُوَلِّي هَذَا الْعَمَلَ أَحَدًا سَأَلَهُ، أَوْ أَحَدًا حَرَصَ عَلَيْهِ (আল্লাহর কসম! আমরা এমন কারও উপর এ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করি না, যে তা কামনা করে কিংবা এমন কাউকেও নয়, যে এর প্রতি লোভ করে)। কেননা সরকারি উচ্চপদ ও ক্ষমতা এক গুরুদায়িত্ব। মনের লোভ-লালসা, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি নানা কারণে সাধারণত ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েই যায়। কাজেই এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ দায়িত্ব এক আমানত। এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে আখিরাতে আল্লাহর সামনে জবাব দিতে হবে। ফলে সেদিন এ দায়িত্ব ও ক্ষমতা অনেক বড় দুর্গতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং যার একটু বিবেক-বুদ্ধি আছে এবং আছে আল্লাহর ভয়, তার তো কিছুতেই এ গুরুভার কামনা করা উচিত নয়; বরং যথাসম্ভব এড়িয়েই চলা উচিত। তা সত্ত্বেও যদি কেউ এটা প্রার্থনা করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় সে এর লোভে পড়ে গেছে। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই এটা প্রার্থনা করছে। তার উদ্দেশ্য ইসলাম ও উম্মত এবং দেশ ও জনগণের সেবা করা নয়। এরূপ লোককে দায়িত্ব প্রদান করা কিছুতেই সমীচীন নয়। সে মানুষের দীন-দুনিয়া বরবাদ করে ফেলবে। সেইসঙ্গে সে নিজেও ধ্বংস হবে। বিশেষত এ কারণেও যে, সে দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহ তা'আলার সাহায্য পাবে না। কোনও পদ যে চেয়ে নেয়, সে আল্লাহর সাহায্য পায় না। যে আল্লাহর সাহায্য পায় না, সে সত্যিকারভাবে মানুষের সাহায্য পাওয়া থেকেও বঞ্চিত থাকে। সাহায্যবঞ্চিতরূপে তাকে ওই পদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে সে শয়তান ও নফসের কবলে পড়ে যায়।

প্রকাশ থাকে যে, কেউ যদি হালাল উপার্জনের জন্য সরকারি পদ প্রার্থনা করে এবং যোগ্যতাও থাকে, লোভ-লালসা পূরণ করা তার উদ্দেশ্য না হয়, উদ্দেশ্য হয় আমানতদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা, তখন পদ প্রার্থনা করা জায়েয আছে, যেমন হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালাম তা প্রার্থনা করেছিলেন।

এমনিভাবে নিজের যদি যোগ্যতা থাকে আর এ অবস্থায় পদ গ্রহণ না করলে কোনও অযোগ্য ব্যক্তির হাতে তা চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে কিংবা বর্তমানেও কোনও অযোগ্য ব্যক্তির হাতে সে পদ থাকায় তা দ্বারা আমানতের খেয়ানত হচ্ছে, এরকম অবস্থায়ও নিজের থেকে সে পদ চেয়ে নেওয়া বৈধ। অন্যথায় সাধারণ অবস্থায় তা বৈধ নয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদপ্রার্থীকে নিয়োগদান করতে অস্বীকার করে আমাদেরকে সাধারণ অবস্থার নিয়ম জানিয়ে দিয়েছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. শরী'আতসম্মত কারণ ব্যতিরেকে নেতৃত্ব, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় পদের জন্য আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা উচিত নয়।

খ. যে ব্যক্তি নেতৃত্ব ও ক্ষমতার অভিলাষী হয়, তাকে তা দেওয়া উচিত নয়, যদি না শরী'আতসম্মত কোনও কারণ পাওয়া যায়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন