কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

২০. দিবারাত্রির নফল নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৬০১
আন্তর্জাতিক নং: ১৬০১
বিতর এবং তাহাজ্জুদ নামায
১৬০৪। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ......... সা’দ ইবনে হিশাম (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে তাকে বিতর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে বিশ্ববাসীর মধ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিতর নামায সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত ব্যক্তির সংবাদ দিব না? বললেন, হ্যাঁ। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বললেন, তিনি হলেন আয়িশা (রাযিঃ)।

তুমি তার খেদমতে উপস্তিত হয়ে তাঁকেই জিজ্ঞাসা করে দেখ এবং পরে আমার কাছে এসে তোমাকে দেয়া তার উত্তর সম্বন্ধে আমাকে অবহিত করে যাবে। আমি হাকীম ইবনে আফলাহের কাছে এসে আয়িশা (রাযিঃ) এর কাছে যাওয়ার জন্য তাকে সাথী বানাতে চাইলে তিনি বললেন, আমি তার ঘনিষ্ঠজন নই, আমি তাকে উষ্ট্র যুদ্ধ ও সিফফীন ইত্যকার যুদ্ধ সমুহে অংশগ্রহণকারী উভয় পক্ষ সম্পর্কে তাকে কিছু বলতে নিষেধ করলেও তিনি তা মানেন নি বরং তাতে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।

আমি হাকীম ইবনে আফলাকে আয়িশা (রাযিঃ) এর কাছে যাওয়ার জন্য শপথ দিলে তিনি আমার সাথে আয়িশা (রাযিঃ) এর কাছে গেলেন। আয়িশা (রাযিঃ) হাকীমকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সাথে এ কে? আমি বললাম, সা’দ ইবনে হিশাম (রাহঃ)। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হিশাম কে? আমি বললাম আমেরের ছেলে। তিনি তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বললেন, আমের বড় ভাল মানুষ ছিল।

সা’দ ইবনে হিশাম (রাহঃ) বললেন, হে উম্মুল মু'মিনীন! আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, তুমি কূরআন পাঠ কর না? সা’দ (রাহঃ) বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পাঠ করি। আয়িশা (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর নবী (ﷺ) এর স্বভাব চরিত্র ছিল কুরআন।

আমি যখন দাঁড়াতে মনস্থ করলাম তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দাঁড়ানোর (রাত্রে নফল নামায আদায়ের) কথা আমার মনে এসে গেল। তিনি বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন! আপনি আমাকে নবী (ﷺ) এর রাত্রে নফল নামায আদায় সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, তুমি ″ইয়া আয়্যুহাল মুযযাম্মিল″ এই সূরাটি পাঠ কর না? আমি বললাম হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পাঠ করি।

তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদকে এই সূরার প্রথমাংশে ফরয করেছিলেন, তখন নবী (ﷺ) তার সাহাবীগণ এক বৎসর পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামায আদায় করলেন, যাতে তাঁদের পা ফুলে গেল। আল্লাহ তাআলা উক্ত সূরার শেষাংশের নাযিল করা বার মাস পর্যন্ত স্থগিত রেখেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা উক্ত সূরার শেষাংশে সহজীকৃত বিধান অবতীর্ণ করলেন। অতএব তাহাজ্জুদের নামায ফরয হিসাবে অবতীর্ণ হওয়ার পর নফল হিসাবে অবশিষ্ট রয়ে গেল।

আমি পূনরায় যখন দাঁড়াতে মনস্থ করলাম তখন আমার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিতরের কথা স্মরণে এসে গেল। আমি আয়িশা (রাযিঃ) কে বললাম উম্মুল মু'মিনীন! আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিতর সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, আমরা তার জন্য মিসওয়াক এবং উযুর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম। রাত্রে যখন আল্লাহ তাআলা তাকে জাগানোর ইচ্ছা হত তাকে জাগ্রত করে দিতেন। তিনি উঠে মিসওয়াক এবং উযু করতেন এবং আট রাকআত নামায আদায় করতেন।

তাতে সালাম ফিরানোর জন্য শুধু অষ্টম রাকআতেই বসতেন। বসে আল্লাহ তাআলার যিক্‌র এবং দোয়া করতেন। অতঃপর আমরা শুনতে পারি এমন ভাবে তিনি সালাম ফিরাতেন। এরপর দু’রাকআত নামায আদায় করতেন এবং দু’রাকআতের পর সালাম ফিরিয়ে বসে থাকতেন। আবার এক রাকআত নামায আদায় করতেন। তাহলে হে প্রিয় বৎস! সর্বমোট এগার রাকআত নামায আদায় করা হল।

যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বয়স বেড়ে গেল এবং শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেয়ে গেল তিনি সাত রাকআত বিতরের নামায আদায় করতেন। আর সালামের পর বসে থেকে দু’রাকআত নামায আদায় করতেন। তাহলে হে প্রিয় বৎস! সর্বমোট নয় রাকআত নামায আদায় করা হল। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোন নামায আদায় করতেন, তা নিয়মিত আদায় করতে ভালবাসতেন।

আর যদি তাকে নিদ্রা অথবা কোন অসুখ বা ব্যাথা বেদনা তাহাজ্জুদ থেকে বিরত রাখত তাহলে তিনি দিনে বারো রাকআত নামায আদায় করে নিতেন। আমি এ ব্যাপারে পুরোপুরি অবগত নই যে, নবী (ﷺ) এক রাত্রে সম্পুর্ণ কুরআন মজীদ পাঠ করেছেন। আর তিনি সকাল পর্যন্ত পুরা রাত্র তাহাজ্জুদের নামাযও আদায় করতেন না এবং রমযান ব্যতীত পুরা মাস রোযাও রাখতেন না।

আমি ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর কাছে এসে আয়িশা (রাযিঃ) এর হাদীস থেকে বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আয়িশা (রাযিঃ) সত্যই বলেছেন। আমি যদি তার কাছে কখনো যেতাম তাহলে এ হাদীসটি তার মুখ থেকে সরাসরি শুনতে পেতাম। আবু আব্দুর রহমান (নাসাঈ) বলেন, আমার কাছে এরকমই রয়েছে কিন্তু আমি জানি না যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিতরের ব্যাপারে বর্ণনা কার থেকে হয়েছে।
باب قِيَامِ اللَّيْلِ
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ زُرَارَةَ، عَنْ سَعْدِ بْنِ هِشَامٍ، أَنَّهُ لَقِيَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَسَأَلَهُ عَنِ الْوَتْرِ، فَقَالَ أَلاَ أُنَبِّئُكَ بِأَعْلَمِ أَهْلِ الأَرْضِ بِوِتْرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ نَعَمْ . قَالَ عَائِشَةُ ائْتِهَا فَسَلْهَا ثُمَّ ارْجِعْ إِلَىَّ فَأَخْبِرْنِي بِرَدِّهَا عَلَيْكَ فَأَتَيْتُ عَلَى حَكِيمِ بْنِ أَفْلَحَ فَاسْتَلْحَقْتُهُ إِلَيْهَا فَقَالَ مَا أَنَا بِقَارِبِهَا إِنِّي نَهَيْتُهَا أَنْ تَقُولَ فِي هَاتَيْنِ الشِّيعَتَيْنِ شَيْئًا فَأَبَتْ فِيهَا إِلاَّ مُضِيًّا . فَأَقْسَمْتُ عَلَيْهِ فَجَاءَ مَعِي فَدَخَلَ عَلَيْهَا فَقَالَتْ لِحَكِيمٍ مَنْ هَذَا مَعَكَ قُلْتُ سَعْدُ بْنُ هِشَامٍ . قَالَتْ مَنْ هِشَامٌ قُلْتُ ابْنُ عَامِرٍ . فَتَرَحَّمَتْ عَلَيْهِ وَقَالَتْ نِعْمَ الْمَرْءُ كَانَ عَامِرًا . قَالَ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ خُلُقِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . قَالَتْ أَلَيْسَ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ قَالَ قُلْتُ بَلَى . قَالَتْ فَإِنَّ خُلُقَ نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْقُرْآنُ . فَهَمَمْتُ أَنْ أَقُومَ فَبَدَا لِي قِيَامُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ قِيَامِ نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . قَالَتْ أَلَيْسَ تَقْرَأُ هَذِهِ السُّورَةَ ( يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ ) قُلْتُ بَلَى . قَالَتْ فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ افْتَرَضَ قِيَامَ اللَّيْلِ فِي أَوَّلِ هَذِهِ السُّورَةِ فَقَامَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ حَوْلاً حَتَّى انْتَفَخَتْ أَقْدَامُهُمْ وَأَمْسَكَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ خَاتِمَتَهَا اثْنَىْ عَشَرَ شَهْرًا ثُمَّ أَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ التَّخْفِيفَ فِي آخِرِ هَذِهِ السُّورَةِ فَصَارَ قِيَامُ اللَّيْلِ تَطَوُّعًا بَعْدَ أَنْ كَانَ فَرِيضَةً فَهَمَمْتُ أَنْ أَقُومَ فَبَدَا لِي وِتْرُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ وِتْرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . قَالَتْ كُنَّا نُعِدُّ لَهُ سِوَاكَهُ وَطَهُورَهُ فَيَبْعَثُهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لِمَا شَاءَ أَنْ يَبْعَثَهُ مِنَ اللَّيْلِ فَيَتَسَوَّكُ وَيَتَوَضَّأُ وَيُصَلِّي ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ لاَ يَجْلِسُ فِيهِنَّ إِلاَّ عِنْدَ الثَّامِنَةِ يَجْلِسُ فَيَذْكُرُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَيَدْعُو ثُمَّ يُسَلِّمُ تَسْلِيمًا يُسْمِعُنَا ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ وَهُوَ جَالِسٌ بَعْدَ مَا يُسَلِّمُ ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَةً فَتِلْكَ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يَا بُنَىَّ فَلَمَّا أَسَنَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَخَذَ اللَّحْمَ أَوْتَرَ بِسَبْعٍ وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ وَهُوَ جَالِسٌ بَعْدَ مَا سَلَّمَ فَتِلْكَ تِسْعُ رَكَعَاتٍ يَا بُنَىَّ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا صَلَّى صَلاَةً أَحَبَّ أَنْ يَدُومَ عَلَيْهَا وَكَانَ إِذَا شَغَلَهُ عَنْ قِيَامِ اللَّيْلِ نَوْمٌ أَوْ مَرَضٌ أَوْ وَجَعٌ صَلَّى مِنَ النَّهَارِ اثْنَتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً وَلاَ أَعْلَمُ أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِي لَيْلَةٍ وَلاَ قَامَ لَيْلَةً كَامِلَةً حَتَّى الصَّبَاحِ وَلاَ صَامَ شَهْرًا كَامِلاً غَيْرَ رَمَضَانَ فَأَتَيْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ فَحَدَّثْتُهُ بِحَدِيثِهَا فَقَالَ صَدَقَتْ أَمَا أَنِّي لَوْ كُنْتُ أَدْخُلُ عَلَيْهَا لأَتَيْتُهَا حَتَّى تُشَافِهَنِي مُشَافَهَةً . قَالَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ كَذَا وَقَعَ فِي كِتَابِي وَلاَ أَدْرِي مِمَّنِ الْخَطَأُ فِي مَوْضِعِ وِتْرِهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ .
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ১৬০১ | মুসলিম বাংলা