কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

১৬. চন্দ্র-সূর্য গ্রহণ

হাদীস নং: ১৫০০
আন্তর্জাতিক নং: ১৫০০
গ্রহণকালীন (নামাযের পর) খুতবার প্রকার
১৫০৩। ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুগে সূর্যগ্রহণ লেগে গেল। তখন তিনি দাঁড়ালেন ও নামায আদায় করতে লাগলেন। তিনি কিয়ামকে খুব দীর্ঘ করলেন। তারপর রুকূ করলেন এবং রুকুকেও খুব দীর্ঘ করলেন। তারপর মাথা উঠালেন আর কিয়ামকেও খুব দীর্ঘ করলেন, কিন্তু তা পূর্ববতী কিয়াম থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর রুকূ করলেন এবং রুকূকেও দীর্ঘ করলেন কিন্তু তা পূর্ববতী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর সিজদা করলেন। পরে তার মাথা উঠালেন আর কিয়ামকে দীর্ঘ করলেন। কিন্তু তা পূর্ববতী কিয়াম থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল।

তারপর রুকূ করলেন এবং রুকূকেও দীর্ঘ করলেন, কিন্তু তা পূর্ববর্তী রুকু থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর মাথা উঠালেন এবং কিয়ামকে দীর্ঘ করলেন, কিন্তু তা পূর্ববতী কিয়াম থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর রুকূ করলেন এবং রুকূকে দীর্ঘ করলেন আর তা ছিল, পুর্ববতী রুকূ থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর সিজদা করলেন। তারপর নামায থেকে অবসর হয়ে গেলেন। ইত্যবসরে সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। এরপর তিনি মানূষদের লক্ষ্য করে খুতবা দিলেন এবং আল্লাহ তাআলার তারীফ ও প্রশংসা করলেন। তারপর বললেন, কারো জন্ম-মৃত্যুর কারণে চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ হয় না।

অতএব যখন তোমরা তা দেখবে, তখন নামায আদায় করবে এবং সাদ্‌কা করবে ও আল্লাহর স্মরণ করবে। তিনি আরও বললেন, হে উম্মতে মুহাম্মাদী! কেউ আল্লাহ তাআলা থেকে বেশী আত্মমর্যাদাশীল নয় যে, তার কোন বান্দা অথবা বান্দী ব্যভিচার করবে। হে উম্মতে মুহাম্মাদী! আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তাহলে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে।
باب كَيْفَ الْخُطْبَةُ فِي الْكُسُوفِ
أَخْبَرَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدَةُ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ خَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَامَ فَصَلَّى فَأَطَالَ الْقِيَامَ جِدًّا ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ جِدًّا ثُمَّ رَفَعَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ جِدًّا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ فَأَطَالَ الْقِيَامَ وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ فَفَرَغَ مِنْ صَلاَتِهِ وَقَدْ جُلِّيَ عَنِ الشَّمْسِ فَخَطَبَ النَّاسَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ " إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لاَ يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ " . وَقَالَ " يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ إِنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ أَغْيَرَ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ أَمَتُهُ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি হাসাহাসি পসন্দ করতেন না। বেশি হাসিতে অন্তরে উদাসীনতা জন্ম নেয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন لا تكثر الضحك، فإن كثرة الضحك تميت القلب "বেশি হাসবে না। কেননা হাসির আধিক্য অন্তরের মৃত্যু ঘটায়।”

একবার তিনি সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে এক হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দেন। তাতে তিনি এই বলে তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন যে (তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পাপীদের জন্য কী কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন, কী কঠিন কিয়ামতের বিভীষিকা এবং কত কঠিন হাশরের ময়দানের পরিস্থিতি, তা আমি যেমনটা জানি তেমনি তোমরাও যদি জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। এক বর্ণনায় এরপর আছে
ولما ساغ لكم الطعام ولا الشراب، ولما نمتم على الفرش ولهجرتم النساء، ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون
"তোমাদের কাছে পানাহার ভালো লাগত না। তোমরা বিছানায় ঘুমাতে পারতে না। তোমরা নারীদের থেকে দূরে থাকতে। তোমরা চিৎকার করতে করতে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পড়তে।

হাদীছটি দ্বারা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পার্থিব জীবনযাপন সম্পর্কে এ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন যে, দুনিয়া আনন্দে মেতে থাকার জায়গা নয়। তা থাকা উচিতও নয়। তার সামনে আখিরাত আছে। সেখানকার পরিস্থিতি বড় কঠিন। সে কঠিন পরিস্থিতির ব্যাপারে চিন্তিত থাকা উচিত। মনে ভয় রাখা উচিত। উচিত আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি কাঁদা, যাতে তিনি সেখানে নাজাত দান করেন। যেন তিনি নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওয়াজ-নসীহতে হাসানো নয়; বরং কাঁদানোই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা।

খ. অল্প হাসি দোষের নয়, যদি অন্তরে আখিরাতের ভয় থাকে এবং সে ভয়ে ক্রন্দনও করা হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ১৫০০ | মুসলিম বাংলা