কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

১৬. চন্দ্র-সূর্য গ্রহণ

হাদীস নং: ১৪৯৩
আন্তর্জাতিক নং: ১৪৯৩
সূর্য গ্রহণকালীন নামাযে কিরা’আতের পরিমাণ
১৪৯৬। মুহাম্মাদ ইবনে সালামা (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ লেগে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। অন্যান্য মানুষও তার সাথে ছিল, তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তাতে সূরা রাকারার পরিমাণ কিরাআত আদায় করলেন। তিনি বলেন, তারপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করলেন, তারপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন কিন্তু তা পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করলেন আর তা পূর্ববর্তী রুকু থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল, তারপর সিজদা করলেন- পরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন।

কিন্তু তা পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করলেন, আর তা পূর্ববর্তী রুকু থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল, এরপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন আর তা পূর্ববর্তী দাঁড়ানো থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। পুনরায় দীর্ঘ রুকু করলেন, আর তা পূর্ববর্তী রুকু থেকে সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর সিজদা করলেন, আর এভাবে নামায শেষ করলেন। ইত্যবসরে সূর্য আলোকিত হয়ে গিয়েছিল।

তিনি বললেন, চন্দ্র-সূর্য আল্লাহর নিদর্শন সমুহের দু’টি নিদর্শন, কারো জন্ম মৃত্যুর কারণে তাদের গ্রহণ হয় না। অতএব, তোমরা যখন তা দেখবে তখন আল্লাহর স্মরণ করবে। তারা (সাহাবীগণ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা দেখলাম যে, আপনি আপনার এ স্থানে কোন কিছু ধরতে চাইলেন। তারপর আপনাকে দেখলাম যে, আপনি পিছু হটে গেলেন।

তিনি বললেন, আমি জান্নাত দেখলাম অথবা আমাকে তা দেখানো হলো। আমি তা থেকে একটি আঙ্গুরের ছড়া নিতে চাইলাম। যদি আমি তা নিতাম তাহলে অবশ্যই তোমরা তা থেকে পৃথিবী বিদ্যমান থাকা অবধি খেতে পারতে, আর আমি জাহান্নামও দেখলাম। আমি আজ যে দৃশ্য দেখেছি তা আর কখনো দেখিনি। আর আমি তার অধিকাংশ অধিবাসী নারীদেরকে দেখেছি, তারা বলল, (এরূপ) কেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, তাদের না-শোকরীর কারণে। বলা হল, তারা কি আল্লাহর না-শোকরী করে? তিনি বললেন, তারা স্বামীর না শোকরী করে, তারা অনুগ্রহের না-শোকরী করে। যদি তুমি তাদের কারো প্রতি সুদীর্ঘকাল অনুগ্রহ করে থাক, তারপর যদি তোমার কাছে অমনোঃপূত সামান্য কোন কিছুও দেখতে পায়, তাহলে বলবে, আমি তোমার কাছে মনোঃপূত কোন কিছু কখনো দেখিনি।
باب قَدْرِ الْقِرَاءَةِ فِي صَلاَةِ الْكُسُوفِ
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ الْقَاسِمِ، عَنْ مَالِكٍ، قَالَ حَدَّثَنِي زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ خَسَفَتِ الشَّمْسُ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالنَّاسُ مَعَهُ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلاً قَرَأَ نَحْوًا مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ - قَالَ - ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلاً ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ قَامَ قِيَامًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلاً وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ انْصَرَفَ وَقَدْ تَجَلَّتِ الشَّمْسُ فَقَالَ " إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لاَ يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْنَاكَ تَنَاوَلْتَ شَيْئًا فِي مَقَامِكَ هَذَا ثُمَّ رَأَيْنَاكَ تَكَعْكَعْتَ . قَالَ " إِنِّي رَأَيْتُ الْجَنَّةَ أَوْ أُرِيتُ الْجَنَّةَ فَتَنَاوَلْتُ مِنْهَا عُنْقُودًا وَلَوْ أَخَذْتُهُ لأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا وَرَأَيْتُ النَّارَ فَلَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ مَنْظَرًا قَطُّ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ " . قَالُوا لِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " بِكُفْرِهِنَّ " . قِيلَ يَكْفُرْنَ بِاللَّهِ قَالَ " يَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ وَيَكْفُرْنَ الإِحْسَانَ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী)। এটা বলা হয়েছে জাহান্নামের একটা বিশেষ সময় সম্পর্কে। এটা সাধারণভাবে জাহান্নামের সব সময়কার কথা নয়। মূলত প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি থাকবে। পরে যারা ঈমান নিয়ে মারা যাবে, ঈমানের বদৌলতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ফলে তারা জান্নাতে চলে যাবে। তখন জান্নাতে পুরুষ ও নারী উভয়ের সংখ্যাই সমান হয়ে যাবে।

প্রথমদিকে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ অনেক মুমিন নারী প্রথমে জাহান্নামে যাবে, তারপর সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করবে। তাদের প্রথমদিকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ তাদের এমনকিছু দোষ, যা সাধারণত নারীদের মধ্যেই বেশি পাওয়া যায়। হাদীসে আছে,
تكثرن اللعن، وتكفرن العشير
“তোমরা বেশি বেশি লানত কর এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞতা কর।"

অন্যান্য পাপ নারী-পুরুষ উভয়ই সাধারণত সমানই করে। কিন্তু লানত করার পাপ তুলনামূলক নারীদের মধ্যে বেশি। আর স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা তো তাদেরই মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ কারণেই প্রথমদিকে জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হবে।

হাদীছটির এরকম ব্যাখ্যাও করা যায় যে, জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হওয়ার অর্থ পুরুষদের তুলনায় বেশি হওয়া নয়; বরং নারীদের মধ্যেই যারা জাহান্নামে যাবে তাদের একদলের তুলনায় অন্যদলের সংখ্যা বেশি বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তাদের অনেককেই বিভিন্ন কারণে জাহান্নামে যেতে হবে বটে, কিন্তু লা'নত করা ও স্বামীর অবাধ্যতা করার অপরাধে যারা জাহান্নামে যাবে তাদের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় বেশি হবে।

উল্লেখ্য : স্বামীর অবাধ্যতা করা যেমন পাপ, তেমনি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি জুলুম-নির্যাতন করাও পাপ বৈকি। অনেক স্বামীই এ পাপ করে থাকে। এর থেকে তাদের বিরত হওয়া উচিত। অন্যথায় এ কারণে তাদেরকেও আখিরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকেই জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়ে আছে।

খ. এমন কিছু পাপ আছে, যা সাধারণত মহিলারাই বেশি করে থাকে। তাদের উচিত সেগুলো ছেড়ে দেওয়া, যাতে সেসব পাপের কারণে জাহান্নামে যেতে না হয়। তারা যাতে সেসব পাপ ছাড়তে পারে, পুরুষের উচিত সে ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ১৪৯৩ | মুসলিম বাংলা