কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

১৪. জুমআ'র অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩৮২
আন্তর্জাতিক নং: ১৩৮২
জুমআর পরিচ্ছদ
১৩৮৫। কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) এক জোড়া কাপড় দেখে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি আপনি এই জোড়াটা কিনে নিতেন এবং তা জুমআর দিনে পরিধান করতেন! এবং যখন কোন দল আপনার কাছে আসে তখনও! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এই জোড়া কাপড় তারাই পরিধান করবে যাদের জন্য আখিরাতে কোন অংশ নেই। তারপর একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে অনুরূপ কাপড় হাদিয়া আসলে তিনি উমর (রাযিঃ)-কে সেখান থেকে এক জোড়া কাপড় দিয়ে দিলেন, তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এই কাপড় তো আমাকে দান করলেন অথচ আপনি উতারিদের কাপড় জোড়া সম্পর্কে যা যা বলার বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমি তোমাকে তা পরিধান করার জন্য দেইনি। তখন উমর (রাযিঃ) উক্ত কাপড় জোড়া তার মক্কার এক মুশরিক ভাইকে দিয়ে দিলেন।
الهيئة للجمعة
أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، رَأَى حُلَّةً فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوِ اشْتَرَيْتَ هَذِهِ فَلَبِسْتَهَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَلِلْوَفْدِ إِذَا قَدِمُوا عَلَيْكَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ فِي الآخِرَةِ " . ثُمَّ جَاءَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِثْلُهَا فَأَعْطَى عُمَرَ مِنْهَا حُلَّةً فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَسَوْتَنِيهَا وَقَدْ قُلْتَ فِي حُلَّةِ عُطَارِدٍ مَا قُلْتَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَمْ أَكْسُكَهَا لِتَلْبَسَهَا " . فَكَسَاهَا عُمَرُ أَخًا لَهُ مُشْرِكًا بِمَكَّةَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)

কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।

প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।

হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।

খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ১৩৮২ | মুসলিম বাংলা