কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

১২. তাত্ববীক্ব [রুকুতে দুইহাত হাঁটুদ্বয়ের মাঝে রাখা] এবং অবশিষ্ট নামাযের বিবরণ

হাদীস নং: ১১২০
আন্তর্জাতিক নং: ১১২০
সিজদায় বেশী বেশী দু'আ করার নির্দেশ।
১১২৩। আলী ইবনে হুজর মারওয়াযী (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে অসুখে ইন্‌তিকাল করেন, সে অসুস্থ অবস্থায় তিনি পর্দা খুললেন। তার মাথায় পট্টি বাধা ছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি পৌছিয়েছি, একথা তিনবার বললেন। বস্তুত যথার্থ স্বপ্ন ব্যতীত নবুয়তের সুসংবাদ ছাড়া আর কিছুই বাকি রইল না। বান্দা তা দেখে অথবা তাকে তা দেখানো হয়। তোমরা শুনে রেখ, আমাকে রুকু এবং সিজদায় কিরাআত থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব, যখন তোমরা রুকু করবে তখন তোমাদের রবের তাযীম করবে। আর যখন তোমরা সিজদা করবে তখন তোমরা বেশী বেশী দু'আ করার চেষ্টা করবে। কেননা, এটা তোমাদের দু'আ কবুলের উপযুক্ত সময়।
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ الْمَرْوَزِيُّ، قَالَ أَنْبَأَنَا إِسْمَاعِيلُ، - هُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ - قَالَ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ سُحَيْمٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَعْبَدِ بْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كَشَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم السِّتْرَ وَرَأْسُهُ مَعْصُوبٌ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ فَقَالَ " اللَّهُمَّ قَدْ بَلَّغْتُ - ثَلاَثَ مَرَّاتٍ - إِنَّهُ لَمْ يَبْقَ مِنْ مُبَشِّرَاتِ النُّبُوَّةِ إِلاَّ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ يَرَاهَا الْعَبْدُ أَوْ تُرَى لَهُ أَلاَ وَإِنِّي قَدْ نُهِيتُ عَنِ الْقِرَاءَةِ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ فَإِذَا رَكَعْتُمْ فَعَظِّمُوا رَبَّكُمْ وَإِذَا سَجَدْتُمْ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ فَإِنَّهُ قَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

অন্য বর্ণনায় হাদীসটি কিছুটা ভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে সেই হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।

নবী (ﷺ) বললেন, নবুওয়াতের কিছুই অবশিষ্ট নেই মুবাশশিরাত ছাড়া। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, মুবাশশিরাত কী? তিনি বললেন, সঠিক স্বপ্ন।

ব্যাখ্যাঃ

لَمْ يَبْقَ مِنَ النُّبُوَّةِ إِلَّا الْمُبَشِّرَاتِ (নবুওয়াতের কিছুই অবশিষ্ট নেই মুবাশশিরাত ছাড়া)। অর্থাৎ আমিই সর্বশেষ নবী। আমার পর কোনও নবী নেই। কাজেই আমার মৃত্যুতে ওহীর ধারা বন্ধ হয়ে যাবে। যখন ওহীর ধারা বন্ধ হয়ে যাবে, তখন ভবিষ্যতে যা ঘটবে তা জানার কোনও মাধ্যম থাকবে না। থাকবে কেবল মুবাশশিরাত। মুবাশশিরাত অর্থ সুসংবাদদাতা।

সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, মুবাশশিরাত কী? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- اَلرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ (সঠিক স্বপ্ন)। অর্থাৎ বাস্তবসম্মত স্বপ্ন। যে স্বপ্নের ফল বাস্তবে পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে যা ঘটবে ঠিক তাই যে স্বপ্নে দেখা হয় বা জানানো হয়, সেটাই সঠিক স্বপ্ন। কোনও কোনও হাদীছে এরূপ স্বপ্নকে الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ (সত্য স্বপ্ন)-ও বলা হয়েছে। এটা সুসংবাদ-দুঃসংবাদ দু-ই হতে পারে। ভবিষ্যতে ভালো যা ঘটবে, স্বপ্নে আগাম তা জানিয়ে দেওয়া হয় বলে এরূপ স্বপ্নকে মুবাশশিরাত বা সুসংবাদ হয়, যার সম্পর্ক ভবিষ্যতের মন্দ বা অপ্রীতিকর কোনওকিছুর সঙ্গে। এরূপ স্বপ্ন দ্বারা বান্দাকে আগেভাগে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া, যাতে সে আগে থেকেই সেই বিষয়ে মানসিক ও বাস্তবিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। তাহলে দেখা যাচ্ছে সঠিক স্বপ্ন দু'প্রকার। সুসংবাদদাতা স্বপ্ন ও সতর্ককারী স্বপ্ন। হাদীছে উভয়প্রকার স্বপ্নকেই সুসংবাদদাতা বলা হয়েছে। এটা বলা হয়েছে ভালোকে মন্দের উপর প্রাধান্যদানের নীতিতে। এটা আরবী অলংকারশাস্ত্রের একটা নিয়ম। অনেক সময় দু'টি বিষয়ের একটিকে অন্যটির উপর প্রাধান্য দিয়ে উভয়ের জন্য একই শব্দ বা একই নাম ব্যবহার করা হয়। পরিভাষায় একে 'তাগলীব' বলা হয়।

এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যাচ্ছে সত্য-সঠিক স্বপ্ন নবুওয়াতের একটা অংশ। তা এ হিসেবে যে, নবুওয়াত দ্বারা যে বিভিন্ন রকমের জ্ঞান লাভ হয়ে থাকে, তার মধ্যে একটা হল ভবিষ্যৎ বিষয়ে আগাম খবর। এ ধরনের জ্ঞান স্বপ্ন দ্বারাও লাভ হয়। স্বপ্নে ভবিষ্যৎ বিষয়ে হয়তো সুসংবাদ জানানো হয় অথবা সতর্ক করা হয়। কেবল এই এতটুকু বিষয়ে নবুওয়াতের সঙ্গে মিল আছে। সে হিসেবেই স্বপ্নকে নবুওয়াতের অংশ বলা হয়েছে। কিন্তু নবুওয়াত অনেক ব্যাপক। বিশেষত তা দ্বারা শরী'আত বা বিধি-বিধানের জ্ঞান লাভ হয় এবং নবুওয়াতী জ্ঞান অকাট্য ও সন্দেহাতীত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে স্বপ্ন দ্বারা কখনও বিধি-বিধান সাব্যস্ত হয় না এবং তা অকাট্য ও সন্দেহাতীতও নয়। পার্থক্য বিপুল।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. স্বপ্ন মাত্রই ভিত্তিহীন নয়। কোনও কোনও স্বপ্ন বাস্তবসম্মতও বটে।

খ. সত্য ও সঠিক স্বপ্ন দ্বারা ভবিষ্যতে ঘটবে এমন প্রীতিকর বিষয়ে সুসংবাদ দেওয়া হয় কিংবা অপ্রীতিকর বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়।

গ. হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনও নবী নেই। ফলে তাঁর মৃত্যুতে ওহী নাযিলের ধারা সমাপ্ত হয়ে গেছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন