কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

১০. ইমামত - জামাআতের অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৬০
আন্তর্জাতিক নং: ৮৬০
মসজিদের ইমামের সাথে জামাআতে নামায আদায় করলে
৮৬১। ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ তায়মী (রাহঃ) ......... মায়মুনা (রাযিঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম সুলাইমান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর (রাযিঃ)-কে বালাত নামক স্থানে উপবিষ্ট দেখলাম আর লোকেরা তখন নামায আদায় করছিল। আমি বললাম, হে আবু আব্দুর রহমান! আপনার কি হয়েছে, নামায আদায় করছেন না কেন? তিনি বললেনঃ আমি নামায আদায় করে ফেলেছি। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, একদিনে এক নামায দু’বার আদায় করা যাবে না।
سقوط الصلاة عمن صلى مع الإمام في المسجد جماعة
أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدٍ التَّيْمِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ حُسَيْنٍ الْمُعَلِّمِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ، مَوْلَى مَيْمُونَةَ قَالَ رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ جَالِسًا عَلَى الْبَلاَطِ وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ قُلْتُ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ مَا لَكَ لاَ تُصَلِّي قَالَ إِنِّي قَدْ صَلَّيْتُ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " لاَ تُعَادُ الصَّلاَةُ فِي يَوْمٍ مَرَّتَيْنِ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, একবার ফরয নামায পড়া হলে দ্বিতীয়বার সেই নামায পড়া বৈধ নয়। তবে একবার কোন নামায একাকী পড়ার পরে নফলের নিয়তে তাতে অংশগ্রহণ করা যায়।
حَدَّثَنَا خَلَفُ بْنُ هِشَامٍ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ ح قَالَ وَحَدَّثَنِى أَبُو الرَّبِيعِ الزَّهْرَانِىُّ وَأَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِىُّ قَالاَ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ عَنْ أَبِى عِمْرَانَ الْجَوْنِىِّ عَنْ عَبْدِ الله بْنِ الصَّامِتِ عَنْ أَبِى ذَرٍّ قَالَ قَالَ لِى رَسُولُ الله كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كَانَتْ عَلَيْكَ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُونَ الصَّلاَةَ عَنْ وَقْتِهَا أَوْ يُمِيتُونَ الصَّلاَةَ عَنْ وَقْتِهَا قَالَ قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِى قَالَ صَلِّ الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ نَافِلَةٌ (رَوَاه مُسْلِمٌ فِىْ بَابِ كَرَاهِيَةِ تَأْخِيرِ الصَّلَاةِ عَنْ وَقْتِهَا الْمُخْتَارِ-١/١٣۰)

হযরত আবু যর রা. বলেন, আমাকে রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেছেন যে, তুমি কী করবে যখন তোমার উপর এমন সব আমীরের নেতৃত্ব চলবে যারা নামাযকে তার ওয়াক্ত থেকে দেরি করবে? অথবা বলেছেন নামাযের ওয়াক্ত বিনষ্ট করে দিবে? হযরত আবু যর রা. বললেন, আপনি আমাকে কী নির্দেশ দেন? রসূলুল্লাহ স. বললেন: সময়মত নামায পড়ে নাও। যদি তাদের সঙ্গে নামায পাও তাহলে আবারও পড়ো। আর সেটা হবে তোমার জন্য নফল। (মুসলিম: ১৩৪০) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযা এবং নাসাঈ শরীফে বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল: ৩৯৩১)

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন ফরয নামায একবার পড়া হলে দ্বিতীয়বার তাতে নফল হিসেবে অংশগ্রহণ করা যায়; ফরয হিসেবে নয়। আর যে ফরয নামায দু’বার পড়ারই অনুমতি নেই সে নামাযে ইমামতি করার অনুমতি মেলে কী করে?
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، وَأَبُو مُعَاوِيَةَ عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم الإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنٌ اللهمَّ أَرْشِدِ الأَئِمَّةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ. ‏(رَوَاه التِّرمٍذِىْ فِىْ بَابِ مَا جَاءَ أَنَّ الإِمَامَ ضَامِنٌ، وَالمُؤَذِّنَ مُؤْتَمَنٌ-١/٥١)‏

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: ইমাম হলেন জামিনদার আর মুআজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আলস্নাহ! ইমামদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করম্নন আর মুআজ্জিনদেরকে ক্ষমা করম্নন। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এ বিষয়ে হযরত আয়েশা, সাহাল বিন সা’দ এবং উকবা বিন আমের রা. থেকে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। (তিরমিযী: ২০৭)
এ হাদীসে রসূল স. ইমামকে জামিনদার বলেছেন। অর্থাৎ তিনি মুক্তাদীগণের নামাযের জামানত গ্রহণ করে থাকেন। আর এটা বাসত্মবসম্মত ও যুক্তিযুক্ত যে, জামানত গ্রহণের জন্য জামিনদারকে জামানতের তুলনায় বেশী শক্তিশালী হতে হয়। দুর্বল কখনো সবলের জামানত গ্রহণ করতে পারে না। আর ইমাম নফল আদায়কারী হলে তিনি তার অবস্থার চেয়ে শক্তিশালী অর্থাৎ ফরয আদায়কারী মুক্তাদীর জামানত গ্রহণ করতে পারেন না। এ কারণে আমরা বলি যে, ইমাম নফল আদায়কারী হলে তার পেছনে কোন ফরয আদায়কারীর ইক্তিদা বৈধ হবে না। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। শামী: ১/৫৭৯)
কোন কোন ইমাম অবশ্য নফল নামায আদায়কারীর পেছনে ফরয আদায়কারীর ইক্তিদা করা বৈধ বলে থাকেন এবং দলীল হিসেবে হযরত মুআয বিন জাবাল রা.-এর নিম্নবর্ণিত হাদীস পেশ করেন।
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، وَأَبُو النُّعْمَانِ، قَالاَ: حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ الله، قَالَ: كَانَ مُعَاذٌ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَأْتِي قَوْمَهُ، فَيُصَلِّي بِهِمْ (رَوَاه الْبُخَارِىُّ فِىْ بَابِ إِذَا صَلَّى ثُمَّ أَمَّ قَوْمًا-١/٩٨)

হযরত জাবের রা. বলেন, হযরত মুআয রা. রসূলুলস্নাহ স.-এর সাথে নামায পড়তেন। অতঃপর নিজ কওমে ফিরে গিয়ে তাদেরকে নামায পড়াতেন। (বুখারী: ৬৭৬)। আবু দাউদ শরীফের বর্ণনায় উলেস্নখ আছে যে, রসূলুলস্নাহ স.-এর সাথে হযরত মুআয রা. ইশার নামায পড়তেন আবার কওমে এসে ঐ নামাযের ইমামতি করতেন। (আবু দাউদ: ৫৯৯)

এ হাদীসে এটা পরিস্কার যে, হযরত মুআয রা. রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে নামায পড়ে কওমে এসে আবার ঐ নামায পড়াতেন। তবে এটা পরিস্কার নয় যে, হযরত মুআয রা. রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে ফরয পড়তেন আর কওমে এসে নফল পড়তেন। বরং পূর্ববর্ণিত সহীহ হাদীসে একই নামায এক দিনে দু’বার পড়ার নিষেধাজ্ঞা দ্বারা এটা পরিস্কার হয় যে, হযরত মুআয রা. ইশার নামায একবারই পড়েছেন; যে নামাযে তিনি তাঁর কওমের ইমামতি করেছেন। আর রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়া নামায তাঁর নফল ছিলো। এ ব্যাখ্যা মেনে নেয়া হলে মারফু’ হাদীস এবং সাহাবার আমলের মধ্যে কোন বিরোধ থাকে না। আর সঙ্গত কারণে নফল নামায আদায়কারীর পেছনে ফরয আদায়কারীর ইক্তিদা বৈধ হওয়ার দলীলও এ হাদীস দ্বারা চলে না। এ ব্যাখ্যার বিপরীতে যে সব হাদীসে বর্ণিত রয়েছে: هِيَ لَهُ تَطَوُّعٌ , وَلَهُمْ فَرِيضَةٌ “হযরত মুআয রা. যে নামায তাঁর কওমে গিয়ে পড়াতেন তা তাঁর জন্য ছিলো নফল, আর কওমের জন্য ছিলো ফরয”। (ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৭৩, হাদীস নং-২৩৬০) এটা মূলত হযরত মুআয রা.-এর নিজের মনত্মব্য নয়; বরং এটা অন্যদের ধারণা প্রসূত মনত্মব্য যা অপরের অনত্মরের নিয়তের ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু, আমর বিন দীনার সূত্রে আইয়ূব সিখতিয়ানী, (বুখারী: ৬৭৬) মানসুর বিন মু’তামির (মুসলিম: ৯২৬) এবং সুফিয়ান বিন উইয়াইনাও উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম: ৯২৪) কিন্তু তাঁদের কারো বর্ণনায় ঐ শব্দটি (هِيَ لَهُ تَطَوُّعٌ..) নেই। আবার যদি মেনেও নেয়া হয় যে, হযরত মুআয রা. ইশার ফরয নামায রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়ে নিতেন, আর দ্বিতীয়বার ঐ একই নামাযের ইমামতি করতেন তাহলে প্রশ্ন উঠবে যে, এটা রসূলুল্লাহ স. থেকে অনুমোদিত কি না? অনুমোদিত হওয়ার কোন বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং মুসনাদে আহমাদের এক বর্ণনায় বেশ পরিস্কারভাবে উলেস্নখ আছে যে, রসূলুল্লাহ স. হযরত মুআয রা.কে বলেছেন, إِمَّا أَنْ تُصَلِّيَ مَعِي، وَإِمَّا أَنْ تُخَفِّفَ عَلَى قَوْمِكَ “হয়তো আমার সাথে নামায পড়ো অথবা কওমের জন্য সহজ করো”। (মুসনাদে আহমাদ: ২০৬৯৯, ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪, হাদীস নং-২৩৬২) মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে শায়খ শুআইব আরনাউত রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ লিগাইরিহী বলেছেন। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন:فَقَوْلُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذَا لِمُعَاذٍ , يَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُ أَحَدَ الْأَمْرَيْنِ , إِمَّا الصَّلَاةَ مَعَهُ , أَوْ بِقَوْمِهِ , وَأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ يَجْمَعُهَا “রসূলুলস্নাহ স. কর্তৃক মুআয রা.কে এ কথা বলায় এটাই বুঝায় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর নিকট তাঁর দুটি বিষয়ের যে কোন একটির অনুমতি রয়েছে। হয়তো রসূলুল্লাহ স.-এর সাথে নামায পড়া। নয়তো তাঁর কওমের নামায পড়ানো। এ দু’টিকে একত্রিত করতে পারবে না। (ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪)
এ হাদীস দ্বারা এটাই পরিস্কার বুঝে আসে যে, হযরত মুআয রা. ইশার ফরয নামায রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়ে দ্বিতীয়বার ঐ একই নামাযে ইমামতি করার অনুমতি রসূলুল্লাহ স. দেননি। তাহলে এটা কীভাবে ফরয নামাযের মতো গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ের দলীল হতে পারে? সর্বোপরি কথা হলো উপরিউক্ত দলীলের ভিত্তিতে যদি কারো নিকট এটা বৈধ মনে হয়, তাহলেও সতর্কতার চাহিদা হবে এ জাতীয় বিতর্কিত বিষয় থেকে ফরয নামাযকে বাঁচিয়ে রাখা।
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ৮৬০ | মুসলিম বাংলা