কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

৬. নামাযের সময়সূচী

হাদীস নং: ৫৮৪
আন্তর্জাতিক নং: ৫৮৪
ফজরের পূর্ব পর্যন্ত নফল নামাযের অনুমতি
৫৮৫। হাসান ইবনে ইসমাঈল ইবনে সুলায়মান আইয়্যুব ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... আমর ইবনে আবাসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার উপর কে ঈমান এনেছিলেন? উত্তরে বললেন, একজন আযাদ পুরুষ আর একজন কৃতদাস [আবু বকর ও বিলাল (রাযিঃ)]। জিজ্ঞাসা করলাম, এমন কোন সময় আছে কি যাতে অন্য সময়ের তুলনায় আল্লাহ পাকের অধিক নৈকট্য লাভ করা যায়? উত্তরে বললেনঃ হ্যাঁ। রাত্রের শেষার্ধে, ফজর পড়ার পূর্ব পর্যন্ত যা মনে চায়, পড়। তারপর সূর্যোদয় হওয়া এবং লালিমা কেটে রৌদ্র প্রখর না হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকবে।

(রাবী) আইয়্যুব বলেন, যতক্ষণ সুর্যকে ঢালের মত মনে হয় এবং সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে না পড়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিরত থাকবে। তারপর খুঁটি তার মূল ছায়ার উপর অবস্থান না করা পর্যন্ত (দ্বি-প্রহরের পূর্ব পর্যন্ত) যা মনে চায়, আদায় কর। তারপর সুর্য না হেলা পর্যন্ত বিরত থাক। কেননা দ্বি-প্রহরে জাহান্নামের অগ্নি অধিক প্রজ্জ্বলিত করা হয়। তারপর আসরের পূর্ব পর্যন্ত যা মনে চায়, আদায় কর। আবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিরত থাক। কেননা সূর্যের অস্ত এবং উদয় উভয়ই শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখান দিয়ে হয়।
إباحة الصلاة إلى أن يصلي الصبح
أَخْبَرَنِي الْحَسَنُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ بْنِ سُلَيْمَانَ، وَأَيُّوبُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ أَيُّوبُ حَدَّثَنَا وَقَالَ، حَسَنٌ أَخْبَرَنِي شُعْبَةُ، عَنْ يَعْلَى بْنِ عَطَاءٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ طَلْقٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْبَيْلَمَانِيِّ، عَنْ عَمْرِو بْنِ عَبَسَةَ، قَالَ أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَسْلَمَ مَعَكَ قَالَ " حُرٌّ وَعَبْدٌ " . قُلْتُ هَلْ مِنْ سَاعَةٍ أَقْرَبُ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ أُخْرَى قَالَ " نَعَمْ جَوْفُ اللَّيْلِ الآخِرُ فَصَلِّ مَا بَدَا لَكَ حَتَّى تُصَلِّيَ الصُّبْحَ ثُمَّ انْتَهِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَمَا دَامَتْ " . وَقَالَ أَيُّوبُ فَمَا دَامَتْ " كَأَنَّهَا حَجَفَةٌ حَتَّى تَنْتَشِرَ ثُمَّ صَلِّ مَا بَدَا لَكَ حَتَّى يَقُومَ الْعَمُودُ عَلَى ظِلِّهِ ثُمَّ انْتَهِ حَتَّى تَزُولَ الشَّمْسُ فَإِنَّ جَهَنَّمَ تُسْجَرُ نِصْفَ النَّهَارِ ثُمَّ صَلِّ مَا بَدَا لَكَ حَتَّى تُصَلِّيَ الْعَصْرَ ثُمَّ انْتَهِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَإِنَّهَا تَغْرُبُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ وَتَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সূর্যোদয়কাল ও তার আগের পরের সময়টায় নামায পড়া নিষেধ কেন, সে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
(কেননা সূর্য উদিত হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে)। শয়তানের দুই শিং' বলে তার মাথার দুই প্রান্ত বোঝানো হয়েছে। প্রকৃত উদ্দেশ্য তার মাথা বোঝানো। শিংধারী পশু যেমন অন্যের উপর হামলা করার জন্য মাথা দিয়ে তাক করে, তেমনি শয়তানও সূর্যোদয়কালে মাথা উঁচিয়ে মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানায়, যাতে তাদেরকে বিপথগামী করতে পারে, তাদেরকে কুমন্ত্রণার ফাঁদে ফেলে নিজ অনুসারী বানিয়ে নিতে পারে। একশ্রেণীর মানুষ ঠিকই তার ফাঁদে পড়ে যায়। এবং সত্যদ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে সূর্যের পূজা শুরু করে দেয়। এভাবে যুগে যুগে বহু মানুষ আকল-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে সূর্যের পূজা করেছে। আজও করছে। শয়তান একই কাজ করে সূর্যাস্তকালেও। এ কারণেই এ দুই সময়ে নামায পড়া নিষেধ। কেননা এ সময়ে নামায পড়লে সূর্য-পূজারীদের সঙ্গে একরকম সাদৃশ্য হয়ে যায়।

নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে ঠিক দুপুর বেলায়ও। কেন এসময়ে নামায পড়া জায়েয নয় সে সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (কেননা তখন জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয়)। অর্থাৎ যদিও জাহান্নাম সর্বক্ষণ প্রজ্বলিত থাকে, কিন্তু দুপুরবেলা তার উত্তাপ অন্য সময়ের তুলনায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই এসময়ে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

প্রশ্ন হতে পারে, নামায আল্লাহ তা'আলার রহমত লাভের উপায়, কাজেই নামায পড়ার দ্বারা আযার দূর হওয়ার আশা থাকে, এ হিসেবে যখন জাহান্নামের আগুন বেশি উত্তপ্ত করা হয় সেই দুপুর বেলায়ই তো নামায পড়া বেশি সমীচীন মনে হয়, তা সত্ত্বেও এ সময় নামায না পড়তে হুকুম করা হল কেন?
এর প্রকৃত উত্তর তো এই যে, বিধানদাতা নিজেই যখন কোনও কারণ বর্ণনা করেন, তখন আমাদের তা বুঝে আসুক বা না-ই আসুক, বান্দা হিসেবে তা গ্রহণ করে নেওয়াই কর্তব্য। তবে কেউ কেউ এর সপক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছেন। যেমন যায়নুদ্দীন ইবনুল মুনায়্যির রহ. বলেন, আযাব ও গযবের প্রকাশকালে প্রার্থনা ফলপ্রসূ হয় না। তা ফলপ্রসূ হয় কেবল তার জন্যই, যাকে এরূপ সময় প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়, যেমন হাশরের ময়দানে চরম বিভীষিকার কালে আল্লাহ তা'আলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাফা'আত ও প্রার্থনার অনুমতি দেবেন এবং তা কবুলও করা হবে। অন্য কোনও নবীকে অনুমতি দেওয়া হবে না বলে তারা সুপারিশ করতেও সাহস পাবেন না। নামাযেও দু'আ ও প্রার্থনা থাকে। তাই যখন গযব ও ক্রোধের প্রকাশ হয়, সেই দুপুরবেলা নামায থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।

প্রকাশ থাকে যে, জাহান্নাম উত্তপ্ত করা, শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়া সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন ব্যাখ্যাদান করেছেন। তবে এ সম্পর্কে ইমাম খাত্তাবী রহ.-এর কথাই সর্বাপেক্ষা সুন্দর। তিনি বলেন, কোনও বিষয়: হারাম করা বা নিষিদ্ধ করার কারণ সম্পর্কে এরকম যা-কিছু উল্লেখ করা হয়ে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তার হাকীকত দৃষ্টিশক্তি ও অন্যান্য ইন্দ্রিয়শক্তি দ্বারা অনুভব করা সম্ভব নয়। আমাদের কর্তব্য এর উপর ঈমান আনা, এর অন্তর্নিহিত অর্থ সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং এসব কারণের সঙ্গে যে বিধি-বিধান যুক্ত করা হয়েছে তা পালন করা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সূর্যোদয়কালে, সুর্যাস্তকালে ও দুপুরবেলা নামায পড়া জায়েয নয়।

খ. ফজরের নামায আদায়ের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের নামায আদায়ের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনও নফল নামায পড়া জায়েয নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান