কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ
৬. নামাযের সময়সূচী
হাদীস নং: ৫৭২
আন্তর্জাতিক নং: ৫৭২
আসরের পর নামায আদায় করা নিষিদ্ধ।
৫৭৩। আমর ইবনে মানসুর (রাহঃ) ......... আমর ইবনে আবাসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কোনো সময় আছে কি, যে সময় অন্য সময়ের তুলনায় আল্লাহ তাআলার নৈকট্যলাভের বেশী উপযোগী? অথবা এমন কোন মুহূর্ত আছে কি, সেই সময়ের যিক্র কাম্য? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রাতের শেষার্ধে আল্লাহ তাআলা বান্দার অতি নিকটবর্তী হন। সক্ষম হলে তুমিও সে মুহুর্তে আল্লাহর যিক্রকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ ঐ মুহুর্তের নামাযে ফিরিশতাগণ শামিল থাকেন এবং প্রত্যক্ষ করেন, আর এ অবস্থা সূর্যোদয় পর্যন্ত থাকে।
সুর্য শয়তানের দুই শিঙের মাঝখান দিয়ে উদিত হয়, আর তা কাফিরদের ইবাদতের সময়। কাজেই ঐ সময় নামায আদায় করা থেকে বিরত থাকবে, যতক্ষণ না এক বল্লম বরাবর সুর্য উপরে ওঠে এবং তার উদয়কালীন আলোকরশ্মি দূরীভূত হয়। আবার যোহরের নামাযে ফিরিশতাগণ শামিল হন এবং প্রত্যক্ষ করেন। দ্বিপ্রহরের সুর্য বর্শার মত সোজা না হওয়া পর্যন্ত।
কেননা তা এমন একটি সময় যে সময়ে জাহান্নামের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং আরো প্রজ্জ্বলিত করা হয়। তখন ছায়া ঝুঁকে না পড়া পর্যন্ত নামায আদায় করবে না। আবার আসরের নামাযে ফিরিশতাগণ শামিল হন এবং প্রত্যক্ষ করেন যাবৎ না সুর্য অস্ত যায়। কেননা সুর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে অস্ত যায় আর তা কাফিরদের ইবাদতের সময়।
সুর্য শয়তানের দুই শিঙের মাঝখান দিয়ে উদিত হয়, আর তা কাফিরদের ইবাদতের সময়। কাজেই ঐ সময় নামায আদায় করা থেকে বিরত থাকবে, যতক্ষণ না এক বল্লম বরাবর সুর্য উপরে ওঠে এবং তার উদয়কালীন আলোকরশ্মি দূরীভূত হয়। আবার যোহরের নামাযে ফিরিশতাগণ শামিল হন এবং প্রত্যক্ষ করেন। দ্বিপ্রহরের সুর্য বর্শার মত সোজা না হওয়া পর্যন্ত।
কেননা তা এমন একটি সময় যে সময়ে জাহান্নামের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং আরো প্রজ্জ্বলিত করা হয়। তখন ছায়া ঝুঁকে না পড়া পর্যন্ত নামায আদায় করবে না। আবার আসরের নামাযে ফিরিশতাগণ শামিল হন এবং প্রত্যক্ষ করেন যাবৎ না সুর্য অস্ত যায়। কেননা সুর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে অস্ত যায় আর তা কাফিরদের ইবাদতের সময়।
النهي عن الصلاة بعد العصر
أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ مَنْصُورٍ، قَالَ أَنْبَأَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، قَالَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو يَحْيَى، سُلَيْمُ بْنُ عَامِرٍ وَضَمْرَةُ بْنُ حَبِيبٍ وَأَبُو طَلْحَةَ نُعَيْمُ بْنُ زِيَادٍ قَالُوا سَمِعْنَا أَبَا أُمَامَةَ الْبَاهِلِيَّ، يَقُولُ سَمِعْتُ عَمْرَو بْنَ عَبَسَةَ، يَقُولُ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ مِنْ سَاعَةٍ أَقْرَبُ مِنَ الأُخْرَى أَوْ هَلْ مِنْ سَاعَةٍ يُبْتَغَى ذِكْرُهَا قَالَ " نَعَمْ إِنَّ أَقْرَبَ مَا يَكُونُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ مِنَ الْعَبْدِ جَوْفُ اللَّيْلِ الآخِرِ فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ مِمَّنْ يَذْكُرُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ فِي تِلْكَ السَّاعَةِ فَكُنْ فَإِنَّ الصَّلاَةَ مَحْضُورَةٌ مَشْهُودَةٌ إِلَى طُلُوعِ الشَّمْسِ فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ وَهِيَ سَاعَةُ صَلاَةِ الْكُفَّارِ فَدَعِ الصَّلاَةَ حَتَّى تَرْتَفِعَ قِيدَ رُمْحٍ وَيَذْهَبَ شُعَاعُهَا ثُمَّ الصَّلاَةُ مَحْضُورَةٌ مَشْهُودَةٌ حَتَّى تَعْتَدِلَ الشَّمْسُ اعْتِدَالَ الرُّمْحِ بِنِصْفِ النَّهَارِ فَإِنَّهَا سَاعَةٌ تُفْتَحُ فِيهَا أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَتُسْجَرُ فَدَعِ الصَّلاَةَ حَتَّى يَفِيءَ الْفَىْءُ ثُمَّ الصَّلاَةُ مَحْضُورَةٌ مَشْهُودَةٌ حَتَّى تَغِيبَ الشَّمْسُ فَإِنَّهَا تَغِيبُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ وَهِيَ صَلاَةُ الْكُفَّارِ "
হাদীসের ব্যাখ্যা:
সূর্যোদয়কাল ও তার আগের পরের সময়টায় নামায পড়া নিষেধ কেন, সে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
(কেননা সূর্য উদিত হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে)। শয়তানের দুই শিং' বলে তার মাথার দুই প্রান্ত বোঝানো হয়েছে। প্রকৃত উদ্দেশ্য তার মাথা বোঝানো। শিংধারী পশু যেমন অন্যের উপর হামলা করার জন্য মাথা দিয়ে তাক করে, তেমনি শয়তানও সূর্যোদয়কালে মাথা উঁচিয়ে মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানায়, যাতে তাদেরকে বিপথগামী করতে পারে, তাদেরকে কুমন্ত্রণার ফাঁদে ফেলে নিজ অনুসারী বানিয়ে নিতে পারে। একশ্রেণীর মানুষ ঠিকই তার ফাঁদে পড়ে যায়। এবং সত্যদ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে সূর্যের পূজা শুরু করে দেয়। এভাবে যুগে যুগে বহু মানুষ আকল-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে সূর্যের পূজা করেছে। আজও করছে। শয়তান একই কাজ করে সূর্যাস্তকালেও। এ কারণেই এ দুই সময়ে নামায পড়া নিষেধ। কেননা এ সময়ে নামায পড়লে সূর্য-পূজারীদের সঙ্গে একরকম সাদৃশ্য হয়ে যায়।
নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে ঠিক দুপুর বেলায়ও। কেন এসময়ে নামায পড়া জায়েয নয় সে সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (কেননা তখন জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয়)। অর্থাৎ যদিও জাহান্নাম সর্বক্ষণ প্রজ্বলিত থাকে, কিন্তু দুপুরবেলা তার উত্তাপ অন্য সময়ের তুলনায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই এসময়ে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হতে পারে, নামায আল্লাহ তা'আলার রহমত লাভের উপায়, কাজেই নামায পড়ার দ্বারা আযার দূর হওয়ার আশা থাকে, এ হিসেবে যখন জাহান্নামের আগুন বেশি উত্তপ্ত করা হয় সেই দুপুর বেলায়ই তো নামায পড়া বেশি সমীচীন মনে হয়, তা সত্ত্বেও এ সময় নামায না পড়তে হুকুম করা হল কেন?
এর প্রকৃত উত্তর তো এই যে, বিধানদাতা নিজেই যখন কোনও কারণ বর্ণনা করেন, তখন আমাদের তা বুঝে আসুক বা না-ই আসুক, বান্দা হিসেবে তা গ্রহণ করে নেওয়াই কর্তব্য। তবে কেউ কেউ এর সপক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছেন। যেমন যায়নুদ্দীন ইবনুল মুনায়্যির রহ. বলেন, আযাব ও গযবের প্রকাশকালে প্রার্থনা ফলপ্রসূ হয় না। তা ফলপ্রসূ হয় কেবল তার জন্যই, যাকে এরূপ সময় প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়, যেমন হাশরের ময়দানে চরম বিভীষিকার কালে আল্লাহ তা'আলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাফা'আত ও প্রার্থনার অনুমতি দেবেন এবং তা কবুলও করা হবে। অন্য কোনও নবীকে অনুমতি দেওয়া হবে না বলে তারা সুপারিশ করতেও সাহস পাবেন না। নামাযেও দু'আ ও প্রার্থনা থাকে। তাই যখন গযব ও ক্রোধের প্রকাশ হয়, সেই দুপুরবেলা নামায থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।
প্রকাশ থাকে যে, জাহান্নাম উত্তপ্ত করা, শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়া সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন ব্যাখ্যাদান করেছেন। তবে এ সম্পর্কে ইমাম খাত্তাবী রহ.-এর কথাই সর্বাপেক্ষা সুন্দর। তিনি বলেন, কোনও বিষয়: হারাম করা বা নিষিদ্ধ করার কারণ সম্পর্কে এরকম যা-কিছু উল্লেখ করা হয়ে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তার হাকীকত দৃষ্টিশক্তি ও অন্যান্য ইন্দ্রিয়শক্তি দ্বারা অনুভব করা সম্ভব নয়। আমাদের কর্তব্য এর উপর ঈমান আনা, এর অন্তর্নিহিত অর্থ সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং এসব কারণের সঙ্গে যে বিধি-বিধান যুক্ত করা হয়েছে তা পালন করা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সূর্যোদয়কালে, সুর্যাস্তকালে ও দুপুরবেলা নামায পড়া জায়েয নয়।
খ. ফজরের নামায আদায়ের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের নামায আদায়ের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনও নফল নামায পড়া জায়েয নয়।
(কেননা সূর্য উদিত হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে)। শয়তানের দুই শিং' বলে তার মাথার দুই প্রান্ত বোঝানো হয়েছে। প্রকৃত উদ্দেশ্য তার মাথা বোঝানো। শিংধারী পশু যেমন অন্যের উপর হামলা করার জন্য মাথা দিয়ে তাক করে, তেমনি শয়তানও সূর্যোদয়কালে মাথা উঁচিয়ে মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানায়, যাতে তাদেরকে বিপথগামী করতে পারে, তাদেরকে কুমন্ত্রণার ফাঁদে ফেলে নিজ অনুসারী বানিয়ে নিতে পারে। একশ্রেণীর মানুষ ঠিকই তার ফাঁদে পড়ে যায়। এবং সত্যদ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে সূর্যের পূজা শুরু করে দেয়। এভাবে যুগে যুগে বহু মানুষ আকল-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে সূর্যের পূজা করেছে। আজও করছে। শয়তান একই কাজ করে সূর্যাস্তকালেও। এ কারণেই এ দুই সময়ে নামায পড়া নিষেধ। কেননা এ সময়ে নামায পড়লে সূর্য-পূজারীদের সঙ্গে একরকম সাদৃশ্য হয়ে যায়।
নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে ঠিক দুপুর বেলায়ও। কেন এসময়ে নামায পড়া জায়েয নয় সে সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (কেননা তখন জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয়)। অর্থাৎ যদিও জাহান্নাম সর্বক্ষণ প্রজ্বলিত থাকে, কিন্তু দুপুরবেলা তার উত্তাপ অন্য সময়ের তুলনায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই এসময়ে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হতে পারে, নামায আল্লাহ তা'আলার রহমত লাভের উপায়, কাজেই নামায পড়ার দ্বারা আযার দূর হওয়ার আশা থাকে, এ হিসেবে যখন জাহান্নামের আগুন বেশি উত্তপ্ত করা হয় সেই দুপুর বেলায়ই তো নামায পড়া বেশি সমীচীন মনে হয়, তা সত্ত্বেও এ সময় নামায না পড়তে হুকুম করা হল কেন?
এর প্রকৃত উত্তর তো এই যে, বিধানদাতা নিজেই যখন কোনও কারণ বর্ণনা করেন, তখন আমাদের তা বুঝে আসুক বা না-ই আসুক, বান্দা হিসেবে তা গ্রহণ করে নেওয়াই কর্তব্য। তবে কেউ কেউ এর সপক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছেন। যেমন যায়নুদ্দীন ইবনুল মুনায়্যির রহ. বলেন, আযাব ও গযবের প্রকাশকালে প্রার্থনা ফলপ্রসূ হয় না। তা ফলপ্রসূ হয় কেবল তার জন্যই, যাকে এরূপ সময় প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়, যেমন হাশরের ময়দানে চরম বিভীষিকার কালে আল্লাহ তা'আলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাফা'আত ও প্রার্থনার অনুমতি দেবেন এবং তা কবুলও করা হবে। অন্য কোনও নবীকে অনুমতি দেওয়া হবে না বলে তারা সুপারিশ করতেও সাহস পাবেন না। নামাযেও দু'আ ও প্রার্থনা থাকে। তাই যখন গযব ও ক্রোধের প্রকাশ হয়, সেই দুপুরবেলা নামায থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।
প্রকাশ থাকে যে, জাহান্নাম উত্তপ্ত করা, শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়া সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন ব্যাখ্যাদান করেছেন। তবে এ সম্পর্কে ইমাম খাত্তাবী রহ.-এর কথাই সর্বাপেক্ষা সুন্দর। তিনি বলেন, কোনও বিষয়: হারাম করা বা নিষিদ্ধ করার কারণ সম্পর্কে এরকম যা-কিছু উল্লেখ করা হয়ে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তার হাকীকত দৃষ্টিশক্তি ও অন্যান্য ইন্দ্রিয়শক্তি দ্বারা অনুভব করা সম্ভব নয়। আমাদের কর্তব্য এর উপর ঈমান আনা, এর অন্তর্নিহিত অর্থ সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং এসব কারণের সঙ্গে যে বিধি-বিধান যুক্ত করা হয়েছে তা পালন করা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সূর্যোদয়কালে, সুর্যাস্তকালে ও দুপুরবেলা নামায পড়া জায়েয নয়।
খ. ফজরের নামায আদায়ের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের নামায আদায়ের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনও নফল নামায পড়া জায়েয নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: